ইসলামের মূল্যবোধ-১
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ২৪ এপ্রিল ২০২০, ০৬:২৭
ইসলামের বিভিন্ন দিক হচ্ছে এর আকিদা, আইন, মূল্যবোধ। আকিদার মধ্যে রয়েছে ইসলামের মূল বিশ্বাসগুলো, যেমন- তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, আল্লাহর কিতাবের বিশ্বাস, ফেরেশতাদের ওপর বিশ্বাস। আইনের মধ্যে রয়েছে কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত সব রকমের আইন, তা সে খাবার সম্পর্কে হোক, পোশাক সম্পর্কে হোক, রাষ্ট্রীয় নীতিমালা হোক বা অর্থনৈতিক নীতিমালা হোক। কুরআনের প্রায় ৫০০ আয়াতে আইন দেয়া হয়েছে, যা মানবজীবনের সব বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত, বিস্তৃতভাবে হোক বা সংক্ষিপ্ত বা মূলনীতি আকারে।
মূল্যবোধ হচ্ছে ওই সব নীতিমালা যা করতে আল্লাহ তায়ালা উৎসাহিত করেছেন বা নিষেধ করেছেন। এসব মূল্যবোধই মুসলিমদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় চরিত্র কী রকম হবে (আখলাক কী রকম হবে) তার ভিত্তি। কুরআন ও সহি সুন্নায় ১৫০-এর মতো মূল্যবোধের উল্লেখ রয়েছে। যেমন- পৃথিবীতে ফ্যাসাদ করো না, হত্যা করো না, জিনা করো না, স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ করো, রাগ হজম করো, মানুষকে ক্ষমা করো ইত্যাদি।
এই বিষয়টির ওপর আমি কয়েকটি কলাম লিখব ইনশা আল্লাহ। আজকের কলামে কুরআনের উল্লিখিত কয়েকটি মূল্যবোধ আলোচনা করব-
১. লা তুফসিধু ফিল আরদ (পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না) (সূরা বাকারা, আয়াত-১২)। এটা মুসলিম ব্যক্তি ও জাতিকে পালন করতে হবে। পৃথিবীতে অন্যায়-অবিচার করা যাবে না কোনো মানুষের প্রতি না, সে ব্যক্তি ধর্ম-দেশ-গোত্র-বংশ যা-ই হোক। এ বিষয়ে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে। এগুলো আমাদের দূর করতে হবে।
২. আশিরুহুন্না বিল মারুল (স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করো) (সূরা নিসা, আয়াত-১৯)। আমরা আল্লাহ তায়ালার এই আদেশ অনেকে পালন করি না। অনেক মহিলা আমাকে বলেন, তারা তাদের স্বামী, শ্বশুরপক্ষের লোকজন, এমনকি নিজের আত্মীয়দের থেকে নির্যাতনের সম্মুখীন হন। তাদের সম্পত্তির অধিকার দেয়া হয় না। অধিকার চাইলেই আত্মীয়রা অসন্তুষ্ট হন। নারীরা সম্পত্তির অধিকার না পেলে, কোনো কারণে তালাক হলে যাওয়ার জায়গা থাকে না। সুতরাং নারীর বাপের বাড়ির সম্পত্তির অংশ পাওয়া অন্তত জরুরি। এ বিষয়টি গোটা জাতিকে ভাবতে হবে। নারী নীচ নয়, সব মানুষের মতো তারাও সম্মানিত, মুসলিম জাতির এ রোগ দূর করার জন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হবে। তবে এ আয়াতে না বলা হলেও অন্যান্য আয়াতের আলোকে বলা যায়, নারীকেও স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
৩. রাগ হজম করা (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৪)। আল্লাহ তায়ালা রাগ হজম করতে বলেছেন। এটিকে মুত্তাকিদের গুণ বলে বর্ণনা করেছেন। রাগী ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে মুত্তাকিন ব্যক্তি নন (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৩-১৩৪)। রাগ দুনিয়ার বেশির ভাগ অনর্থের কারণ। এ জন্যই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয়, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও শ্রেণীর মধ্যে সঙ্ঘাত হয়। বেশির ভাগ লোকই রাগী। অনেকে রাগী হওয়া ভালো মনে করেন। অথচ আল্লাহ তায়ালা রাগ হজম করতে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছেন। রাগ করা ভালো হলে আল্লাহ তা বলতেন না।
৪. সচ্ছল অবস্থায় ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করা (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৪)। আল্লাহর কাছে এটাও মুত্তাকিদের গুণ। দান করা যে একটি জাতীয় প্রয়োজন আমরা হয়তোবা বুঝি। সমাজের অসংখ্য
লোক অভাবী, দরিদ্র। তাদের সাহায্য করা জরুরি। অভাব দূর করা ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রে সব অসহায়দের দায়িত্ব রাষ্ট্রের (যাদের দেখভালের দায়িত্ব তারা নিজেরা বহন করতে পারে না এবং তাদের আত্মীয়স্বজনরাও পারে না)। মন্দ অবস্থায়ও সাধ্যমতো দান করা আল্লাহর ইচ্ছা। এটা ইসলামের মূল্যবোধ।
৫. অন্যকে ক্ষমা করা (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৪)। এটাকেও আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকিদের গুণ বলেছেন (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৩-১৩৪)। মানুষ ছোটখাটো দোষও খুব ধরাধরি করে। এগুলো বাড়াবাড়ি। যে যত ক্ষমা করতে পারবে, সে তত শান্তি পাবে। আল্লাহর কাছেও সে ক্ষমা আশা করতে পারে। যে জাতি যত বেশি ক্ষমা করবে, সে জাতি তত বেশি শান্তিতে থাকবে। ক্ষমা করলে অনেক ঝগড়া শেষ হয়ে যায়।
তবে কেউ যদি খুন, হত্যা করে- সে ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া ইসলামের মতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটি ব্যক্তিপর্যায়ের ব্যবহারের বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও যদি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া না হতো, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হতো।
ইসলামের কয়েকটি মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। সামনে কয়েকটি লেখায় ইসলামের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আশা করি, পাঠক ইসলামের মূল্যবোধের অনুসরণ করবেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা