২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বহমান এই সময়ে

নাৎসিবাদের আলামত এখন ইসরাইলে

জেরুসালেম - সংগৃহীত

ইউরি অ্যাভনেরি ছিলেন একজন ইসরাইলি লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং দ্য পিস ব্লক কোয়ালিশন ‘গুশ শালুম পিস মুভমেন্টে’র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৯৫ বছর বয়সে মারা যান ২০১৮ সালের ৩ জুলাই। তরুণ বয়সে ছিলেন জায়নবাদী ইসরাইলের আধা সামরিক সংগঠন ইরগুনের সদস্য। ইরগুন ১৯৩১-৪৮ সময় পরিধিতে সক্রিয় ছিল ম্যান্ডেটেড ফিলিস্তিনে। দুই মেয়াদে নেসেট সদস্যও ছিলেন। একটি সংবাদ সাময়িকীও প্রকাশ করেন ১৯৫০ থেকে ১৯৯৩ সালে তা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বিষয়ে।

তার এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলন : ‘প্লিজ ডোন্ট রাইট অ্যাবাউট ইয়াইর গোলান। আরো বলেছিলেন : ‘বামপন্থীদের মতো তার বিরুদ্ধে কিছু লিখলে, তা তার জন্য ক্ষতিকর হবে।’ ইয়াইর গোলান হচ্ছেন ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। ২০১৬ সালেও তিনি ছিলেন ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব জেনারেল স্টাফ। বর্তমানে তিনি ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের একজন নেসেট সদস্য।

বন্ধুর কাছ থেকে এই সতর্ক-পরামর্শ পেয়ে ইউরি অ্যাভনেরি এক অস্বস্তি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ লেখা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু এর কয়েক সপ্তাহ পর তিনি আর চুপ থাকতে পারেননি। তখন তিনি একটি লেখায় উল্লেখ করেন, তিনি ইসরাইলে নাৎসিবাদের নানা আলামত দেখতে পাচ্ছেন। এই লেখায় তিনি ইসরাইলের নাৎসিবাদ-সমতুল্য আচরণ দেখে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন মৃত্যুর দুই বছর আগে। তখনো ইয়াইর গোলান ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।

ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ থাকার সময় ইয়াইর গোলান ‘হলোকাস্ট মেমোরিয়েল ডে’-র এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছিলেন ইউনিফর্ম পরে। তার ভাষণটি ছিল আগে থেকে তৈরি করা। একটি সুবিবেচিত ভাষণ। এই ভাষণ নিয়ে তখন বেশ একটা হইচই পড়ে যায়, যা আজো থামেনি। এই ভাষণের পরপর লেখা হয় ডজন ডজন লেখা। এসব কিছু লেখায় তার প্রতি ছিল নিন্দা জ্ঞাপন। আবার কিছু লেখায় তাকে উচ্চ প্রশংসা করা হয়। তখন তার ভাষণে ছিল কিছু সত্য উচ্চারণ : ‘কেউই অনুত্তম বা নিঃস্পৃহ থাকতে পারে না।’ তার ভাষণে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাক্য ছিল এমন : 'If there is something that frightens me about the memories of the Holocaust, it is the knowledge of the awful processes which happened in Europe in general, and in Germany in particular, 70, 80, 90 years ago, and finding traces of them here in our midst, today, in 2016.'
এর মোটমুটি অর্থ দাঁড়ায় : ‘হলোকাস্টের কোনো স্মৃতি যদি আমাকে ভীতসন্ত্রস্ত করে থাকে, তবে তা হচ্ছেÑ সেই ভয়ানক প্রক্রিয়ার জ্ঞান, যা সাধারণভাবে ঘটেছিল ইউরোপে এবং বিশেষত জার্মানিতে সেই ৭০, ৮০, ৯০ বছর আগে এবং তার আলামত আজ এই ২০১৬ সালে এসে আমাদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।’

২০১৬ সালে ইয়াইর গোলান তার তোলপাড় করা এ বক্তব্যটি দিয়েছিলেন। সে হিসাবে ৯০ বছর আগে ছিল ১৯২৬ সাল। সেটি ছিল জার্মান প্রজাতন্ত্রের শেষ কয়টি বছরের একটি। আর ৮০ বছর আগে ছিল ১৯৩৬ সাল। এটি ছিল নাৎসিদের ক্ষমতায় আসার তৃতীয় বছর। আর ৭০ বছর আগের বছরটি ছিল ১৯৪৬ সাল, যে সালটি হচ্ছে হিটলারের আত্মহত্যার পরের বছর এবং সেই সাথে নাৎসি রাইখের পরিসমাপ্তির বছর।

এ বক্তব্য দেয়ার সময় ইউরি অ্যাভনেরি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেন, এ বক্তব্য বিষয়ে তার লেখা উচিত। তিনি তার এক লেখায় জানান, ‘একজন শিশু হিসেবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি ওয়েমার রিপাবলিকের শেষ বছরগুলো। জার্মানিকে ওয়েমার রিপাবলিক বলার কারণ এর সংবিধানের রূপদান করা হয়েছিল ওয়েমার শহরে। এটি ছিল গেঁটে ও শিলারের শহর। একজন রাজনীতি-সচেতন বালক হিসেবে আমি দেখেছি নাৎসিদের ক্ষমতায় আরোহণ এবং নাৎসি শাসনের প্রথম বছরের প্রথম অর্ধেকটা সময়। আমি জানি ইয়াইর গোলান কী বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। যদিও আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের মানুষ, আমাদের প্রেক্ষাপট ছিল একই। আমাদের উভয়ের পরিবার এসেছিল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের ছোট্ট এক শহর থেকে।’

তিনি বলেন : ‘ইসরাইলে কড়া ঐশিক আদেশ বা কমান্ডমেন্ট রয়েছে : কোনো কিছুকেই হলোকাস্টের সাথে তুলনা করা যাবে না। হলোকাস্ট হচ্ছে অনন্য। এটি ঘটেছিল আমাদের ওপর, ইহুদিদের ওপর। কারণ আমরা অনন্য।’ ধার্মিক ইহুদিরা আরো বাড়িয়ে বলবে : ‘কারণ ঈশ্বর আমাদের বেছে নিয়েছেনÑ বিকজ গড হ্যাজ চুজেন আস’।

ইউরি অ্যাভনেরি বলেন : ‘আমি সেই কমান্ডমেন্ট ভঙ্গ করেছি। গোলানের জন্মের ঠিক আগে আমি হিব্রু ভাষায় একটি বই প্রকাশ করি। এর নাম : The Swastika। এতে আমার শৈশবের স্মৃতিচারণ রয়েছে এবং চেষ্টা করেছি তা থেকে একটা উপসংহার বা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে।’

প্রসঙ্গত, হিটলারের সহযোগী অ্যাডলফ আইখম্যান ছিলেন ‘ফাইনাল সলিউশন’ বাস্তবায়নের অন্যতম কারিগর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ছিলেন ইহুদি বিতাড়ন ও জার্মানির কিলিং সেন্টারগুলোর পরিচালনা ও হলোকাস্টের মূলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকান কর্তৃপক্ষ আইখম্যানকে গ্রেফতার করে বন্দিশিবিরে আটকে রাখে। তবে জাল কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি পালতে সক্ষম হন। পালিয়ে আর্জেন্টিনায় চলে গিয়ে রিকার্ডো ক্লিমেন্ট নামে পরিবারের সাথে শান্তিতেই বসবাস করছিলেন। আর কাজ করছিলেন বুয়েন্স আয়ার্সের মার্সিডিজ-বেঞ্চ কারখানায়। ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোশাদ তাকে আর্জেন্টিনা থেকে অপহরণ করে ১৯৬০ সালের ২০ মে ইসরাইলে নিয়ে আসে। এ নিয়ে অবশ্য তখন নানা প্রশ্ন ওঠে। আর্জেন্টিনা অভিযোগ করে : এর মাধ্যমে ইসরাইল জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। ইসরাইলে আইখম্যানের বিচার শুরু হয় ১৯৬১ সালে। তখন হলোকাস্ট বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় আসে।

হলোকাস্টের মূল সংগঠক আইখম্যানের বিচারের প্রাক্কালে ইউরি অ্যাভনেরি বিস্মিত হয়ে লক্ষ করলেন, তখনকার ইসরাইলের তরুণদের মাঝে নাৎসি যুগের সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান-ঘাটতি রয়েছে। তার বইয়ের মধ্যে আলোকপাত নেই সে সম্পর্কে। যখন হলোকাস্ট সঙ্ঘটিত হয়, এর আগেই তিনি ইসরাইলে গিয়ে বসবাস করছিলেন। কিন্তু তখন বছরজুড়ে তিনি একটি বিষয় নিয়ে ভাবিত ছিলেন। এমনকি পরবর্তী জীবনেও। তার প্রশ্ন ছিল : বিশ্বের সবচেয়ে সংস্কৃতিবান দেশ জার্মানিতে কী করে এমন একটি হলোকাস্ট ঘটতে পারল। এটি গেঁটের, বিটোভেনের ও কান্টের জন্মভূমি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল : কী করে এরা গণতান্ত্রিকভাবে হিটলারের মতো একজন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা মানসিক বৈকল্যের মানুষকে তাদের নেতা নির্বাচিত করল?

ইউরি অ্যাভনেরির লেখা বইটির শেষ অধ্যায়ের শিরোনাম : ‘ইট ক্যান হ্যাপেন হিয়ার!’ তিনি এই শিরোনামটি নিয়েছিলেন আমেরিকান ঔপন্যাসিক সিনক্লেয়ারের বই “ইট ক্যান’ট হ্যাপেন হেয়ার” থেকে। বইটিতে বর্ণনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নাৎসিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। সে যা হোক, ইউরি অ্যাভনেরি এ অধ্যায়ে আলোচনা করেন নাৎসিদের মতো ইহুদি পার্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে ইসরাইলে ক্ষমতায় আসার। তার উপসংহার ছিল : ‘নাৎসি পার্টি বিশ্বের যেকোনো দেশের ক্ষমতায় আসতে পারে। আর পরিস্থিতি অনুকূল হলে ইসরাইলেও।’

এই বইটি ব্যাপকভাবে এড়িয়ে চলে ইসরাইলি জনতা। তখন ছিল অভাবিত নির্বাচনী ঝড়ো-হাওয়া। তা ছাড়া তখন ইসরাইলিরা প্ররোচিত হচ্ছিল আইখম্যানের বিচারসংশ্লিষ্ট নানা উদঘাটন নিয়ে। তখন একজন সুখ্যাত পেশাজীবী সৈনিক ইয়াইর গোলান বললেন সেই একই বিষয় নিয়ে। এটি তাৎক্ষণিভাবে তৈরি করা কোনো মন্তব্য ছিল না। বরং এটি ছিল সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে একজন জেনারেলের সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেয়া মন্তব্য, যা আগে থেকেই সুচিন্তিতভাবে তৈরি করা। তার এই ভাষণ যে ঝড় তোলে, তা এখনো শেষ হয়নি।

ইসরাইলিদের রয়েছে একটি আত্মরক্ষামূলক অভ্যাস : যখন কোনো অপ্রচলিত সত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তখন এরা এর নির্যাসটিই এড়িয়ে মেতে ওঠে গুরুত্বহীন মাধ্যমিক কোনো বিষয় নিয়ে। দেখা যাবেÑ মুদ্রণ গণমাধ্যমে, টেলিভিশনে ও রাজনৈতিক প্লাটফর্মে প্রকাশ করা ডজন ডজন প্রতিক্রিয়ায় কোনোটিতেই জেনারেলের এই যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য নিয়ে কোনো বাদানুবাদ তোলা হয়নি। বরং এই প্রশ্নে যে তীব্র বিতর্ক চলল, তা হচ্ছেÑ একজন উচ্চপদস্থ কোনো সামরিক কর্মকর্তা কি এমন মতামত দিতে পারেন, যা সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন করে? সামরিক পোশাক পরে তিনি কি তা করতে পারেন? অধিকন্তু একটি সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি কি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন?

কিন্তু প্রশ্নটা হওয়া উচিত ছিল : একজন সামরিক কর্মকর্তার কি তার রাজনৈতিক দৃঢ়বিশ্বাস বা প্রত্যয় সম্পর্কে চুপ থাকা উচিত? কিংবা তিনি কি তা প্রকাশ করতে পারবেন শুধু কোনো সীমাবদ্ধ অধিবেশনেই? ক্ষুব্ধ বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর কথা মতো তা কি শুধু প্রকাশ করা যাবে ‘রিলিভেন্ট কোনো ফোরামে’?

জেনারেল গোলান সেনাবাহিনীর ভেতরে একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অফিসার ছিলেন। তার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল ডেপুটি চিফ অব স্টাফ থেকে চিফ অব স্টাফ হওয়ার। কিন্তু জেনারেল গোলানের সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। তবে তিনি অনন্য এক সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। ইসরাইলের ফিলিস্তিনি নিধন ও দমনপীড়ন নিয়ে মহাসত্যটির প্রতিই তিনি কৌশলী ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে তার ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট : ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর নাৎসিদের মতো ফ্যাসিবাদ চালাচ্ছে। বিবেকবান মানুষই শুধু এ ধরনের সাহস দেখাতে পারেন।

এ ধরনের সাহসের ইতিহাস আরো আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ‘দ্য পাঞ্চ’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি লেখা থেকে জানা যায়, তখন জার্মানিতে একদল জুনিয়র সামরিক কর্মকর্তা আয়ারল্যান্ড প্রশ্নে সরকারি নীতির বিরোধিতা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। এসব তরুণ সামরিক কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা তাদের রাজনৈতিক প্রত্যয়ের প্রতি অবিচল থেকে এই বিবৃতি দিয়েছেন। এ জন্য প্রয়োজনে তারা তাদের চাকরিজীবন উৎসর্গ করতে পারেন।

১৯২৯ সালে শুরু হয় নাৎসিদের ক্ষমতায় আরোহণের পালা। তখন ভয়ানক বিশ্ব-অর্থসঙ্কট জার্মানিতেও আঘাত হানে। একটি ছোট্ট চরম ডানপন্থী পার্টি হঠাৎ করেই হয়ে ওঠে আমলযোগ্য এক রাজনৈতিক শক্তি। সেখান থেকে চার বছরেই এটি হলো সে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আর ক্ষমতায় এলো কোয়ালিশন করে।

ইউরি অ্যাভনেরি বলেন : ‘জেনারেল গোলানের বিরুদ্ধে অভিযোগÑ তিনি ইসরাইলকে নাৎসি জার্মানির সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, ইসরাইলে যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে যা ওয়েমার রিপাবলিককে ধ্বংস করেছিল, তবে ইসরাইলও এক দিন একইভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটি ছিল একটি অর্থপূর্ণ তুলনা। ১৯১৬ সালের নির্বাচনের পর থেকে তেমন সব ঘটনাই ঘটে চলেছে। এসব ঘটনার সাথে নাৎসিদের ঘটানো ঘটনার ভয়ানক মিল রয়েছে। তবে এটি সত্য, প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি ভিন্ন। জার্মানির ফ্যাসিবাদের জন্ম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবমাননাকর আত্মসমর্পণ, ১৯২৩-২৫ সময় পরিধিতে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের জার্মানির কয়লাখনি ও শিল্প এলাকা দখল, ১৯২৯ সালের ভয়ানক অর্থনৈতিক সঙ্কট ও লাখ লাখ মানুষের বেকারত্বের ঘটনাগুলোর সম্মিলিত প্রভাব থেকে। এখন আমরা ইসরাইলিরা সামরিক দিক থেকে এক বিজয়ী জাতি। যাপন করছি আয়েশি এক জীবন। তবে আমাদের সামনে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির বিপজ্জনক একটা হুমকি অবশ্যই আছে : এসব বিপদের সৃষ্টি হয়নি আমাদের পরাজয়সূত্রে, যেমনটি ঘটেছিল জার্মানির বেলায়। অবশ্য আজকের ইসরাইলের ও সে কালের জার্মানির মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। কিন্তু মিল যেটুকু আছে তার উল্লেখ করার জন্য যথেষ্ট। দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের প্রতি প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসরাইলের বৈষম্য নাৎসি জার্মানির প্রথম পর্যায়ের সাথে তুলনীয়। অধিকৃত ফিলিস্তিনে তাদের ওপর ইসরাইলিদের পরিচালিত দমন-পীড়নের সাথে তুলনা করা যায় মিউনিখ বিট্রেইলের পর প্রটেক্টরেটে চেকদের ওপর জার্মানদের দমন-পীড়নের সাথে।’

তিনি স্বীকার করছেন : ‘ইসরাইলি নেসেটে বৃষ্টির মতো ফ্যাসিবাদী বিল পাস করা হচ্ছে। আর যেগুলো এরই মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে, তা চরমভাবে মিলে যায় নাৎসি শাসনের প্রথম দিকে রাইখস্ট্যাগে গৃহীত আইনগুলোর সাথে। কিছু রাবিশ আইনে আহ্বান রয়েছে আরব দোকানগুলো বয়কটের, যেমনটি ঘটেছিল তখনকার জার্মানিতে। নিয়মিত ফুটবল মাঠে ইসরাইলিরা চিৎকার করে বলে : ‘ডেথ টু অ্যারাবস’। পার্লামেন্টের একজন সদস্য বলেছেন, হাসপাতালে ইহুদি ও আরব নবজাতকদের আলাদা রাখতে হবে। একজন প্রধান রাব্বি ঘোষণা দিয়েছেন : ঈশ্বর গয়িম তথা অ-ইহুদিদের বানিয়েছেন ইহুদিদের সেবা করার জন্য। শিক্ষা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ব্যস্ত সব চরম ডানপন্থী আদলে স্কুল, থিয়েটার ও শিল্পকলা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বশীভূত করার কাজে। এটি চলছে কর্তৃত্ববাদী জার্মানির Gleichschaltung-এর আদলে। ইসরাইলের গৌরব সুপ্রিমকোর্ট বিরতিহীনভাবে জাস্টিস মিনিস্টারের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। গাজা উপত্যকা এখন বিশাল এক ঘেটো। অবশ্য ইসরাইলে এমন একজন সুজন নেই যিনি ফ্যাসিবাদী হিটলার ও ফ্যাসিবাদী নেতানিয়াহুর মধ্যে দূরতম তুলনাটুকু করতে পারেন। ইসরাইলের প্রতিটি রাজনৈতিক দল কেবল ফ্যাসিবাদী গন্ধই ছড়ায়। আজ নাৎসি কোনো সরকার বেঁচে থাকলে সেখানে নেতানিয়াহু নিশ্চিত একটি স্থান পেয়ে যেতেন।’

ইসরাইলের বর্তমান সরকারের একটি স্লোগান হচ্ছে : ‘রিপ্লেস ওল্ড এলিটস’। অপর দিকে নাৎসিদের স্লোগান ছিল : ‘রিপ্লেস দাস সিস্টেম’। যখন নাৎসিরা ক্ষমতায় এলো তখন সব উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন নাৎসিবিরোধীদের গোঁড়া সমর্থক। এমনকি তারা হিটলারবিরোধী অভ্যুত্থানের কথাও ভাবছিলেন। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক নেতাকে এক বছরের মাথায় ফাঁসি দেয়া হয়। হিটলার তার দলের বিরোধীদের নিষ্ক্রিয় করেন।

অতএব যথার্থ উচ্চারণ : ইসরাইলিরা আসলেই নাৎসি ফ্যাসিবাদের সতেজ ক্রীড়া ক্ষেত্র। 


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশে সরবরাহ কমেছে, শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় আদানি বিপিএলের মিউজিক ফেস্ট শুরু ট্রেন দুর্ঘটনার প্রতিবাদে সার্বিয়ার রাজধানীতে বিক্ষোভ সরকারি-বেসরকারি স্কুলে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা জুনে, বার্ষিক নভেম্বরে ফেনীতে প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণ লক্ষ্মীপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু দৌলতদিয়ায় ৫২ হাজারে পদ্মার বোয়াল বিক্রি দেশের মেরিন অ্যাকাডেমিগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে : নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে : অধ্যাপক মুজিবুর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের নামে মামলা ইমরান খান ও বুশরার বিরুদ্ধে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় স্থগিত

সকল