২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘সীরাতে আয়েশা রা:’ পুস্তকটি পর্যালোচনা

শাহ্ আব্দুল হান্নান - ছবি : সংগ্রহ

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা:-এর জীবনীর ওপর সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী রহ: রচিত ‘সীরাতে আয়েশা রা:’ গ্রন্থটি পড়লাম। সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমদের একজন ছিলেন। তিনি বইটি উর্দুতে লিখেছেন এবং তার অনেক সংস্করণ ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাওলানা মোহাম্মদ রাফিকুল ইসলাম এবং প্রকাশ করেছে রাহনুমা প্রকাশনী, ইসলামী টাওয়ার, ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা। ৫০০ পৃষ্ঠার এ বইটি পড়লে বোঝা যায়, হজরত আয়েশা রা:-এর বিবাহিত জীবন, বিভিন্ন খলিফার সময়ে তার অবস্থান, হাদিস রেওয়ায়েত এবং হাদিস ব্যাখ্যায় তার স্থান, ফিকাহ, ফতোয়া ও ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তার স্থান, তার শিক্ষালয় ও ছাত্র-ছাত্রী ইত্যাদি বিষয়।

কুরআন মজিদের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের মধ্যে হজরত আয়েশা রা: একজন। তাঁর নিজস্ব কুরআনের মাসহাফ (কপি) ছিল, যা তিনি নিজে বলতেন এবং আবু ইউসুফ নামে একজন কর্মচারী তার কথাগুলো শুনে লিখতেন (পৃ. ২৫৫, সীরাতে আয়েশা)।
তিনি ছিলেন কুরআনের শ্রেষ্ঠ তাফসিরকারকদের একজন। হজরত আয়েশা রা: অনেক আয়াতের তাফসির করেছেন। এর কিছু সীরাতে আয়েশার ২৫৭-২৬৬ পৃষ্ঠায় দেখা যায়। হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রেও হজরত আয়েশা রা: প্রধান সাতজন সাহাবির মধ্যে একজন, যারা দুই হাজারের বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তবে হাদিস বোঝার ক্ষেত্রে তার অবস্থান ছিল অসামান্য। তার বর্ণিত হাদিসকে অন্যদের বর্ণনার ওপর প্রাধান্য দেয়া হতো। তিনি হাদিস বর্ণনায় খুব সতর্ক ছিলেন এবং অন্য সাহাবাদের হাদিস বর্ণনায় ভুল হলে তিনি তা সংশোধন করতেন (পৃ.২৭৭-২৯৬)।

হজরত আয়েশা রা: ফিকাহের ক্ষেত্রে খুবই গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তার ইজতিহাদের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে (পৃ. ২৯৮-৩১২)। অন্যান্য সাহাবা থেকে তিনি ফিকাহ ক্ষেত্রে যেসব মতপার্থক্য পোষণ করেছেন তার কিছু উদাহরণ এই পৃষ্ঠাগুলোতে দেয়া হয়েছে। তার কাছে খলিফাদের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ সাহাবাদের পক্ষ থেকে এবং সারা মুসলিম জাহান থেকে ফতোয়া চাওয়া হতো।

হজরত আয়েশা রা: মদিনায় তার শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন। সেটি ছিল মসজিদে নববীর পাশের একটি ছাউনি। তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন অনেক সাহাবি যেমন আবু মুসা আশয়ারী, হজরত আবু হুরাইরা, ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস। সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী হজরত আয়েশার পুরুষ ও নারী শিষ্যদের তালিকা দিয়েছেন (পৃ. ৩৬৮-৩৭৬)।
নারীদের মধ্যে এবং পুরুষ নির্বিশেষে সাহাবিদের মধ্যে হজরত আয়েশার স্থান কী ছিল সে সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজাম বলেছেন, ‘শুধু নারীদের মধ্যে নয়, সব সাহাবির মধ্যেও রাসূল সা:-এর পর তার স্থান ছিল শ্রেষ্ঠ।

ইবনে তাইমিয়াহ বলেছেন, যদি জ্ঞান প্রজ্ঞার পূর্ণতা ব্যাপক পরিসরে ধর্মীয় কার্যক্রম এবং রাসূল সা:-এর রেখে যাওয়া শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবনাদর্শের প্রচার-প্রসারের দিকটি সামনে আনা হয়, তাহলে হয়েতো আয়েশা রা:-এর সমকক্ষ কেউ হতে পারেন না (সীরাতে আয়েশা পৃ. ৪১৬-৪১৭)।

রাসূলের সাথে বিয়ের সময় হজরত আয়েশা রা:-এর বয়স কত ছিল, এ ব্যাপারে সুলাইমান নদভী সাধারণভাবে বর্ণিত মতই গ্রহণ করেছেন যে, তখন তার বয়স ছিল ৯-১০ বছর। তবে তিনি মাওলানা মোহাম্মদ আলীর দেয়া ভিন্ন মত, অর্থাৎ তখন আয়েশার রা:-এর বয়স ছিল অন্তত ১৬, সে মত ও তার যুক্তি দেখিয়েছেন। এরপর গত ৬০-৭০ বছর ধরে যে গবেষণা হয়েছে, তাতে এখন প্রায় সর্বসম্মত মত হচ্ছে- বিয়ের সময় হয়তো আয়েশা রা:-এর বয়স ছিল ১৬ বা তার বেশি। আমি আশা করব, সবাই এই গুরুত্বপূর্ণ বইটি পড়বেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement