২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জনভাগাড় হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

-

অধিকৃত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসামের নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে কারো কবুল করে নিতে দ্বিধা নেই, আসামের নাগরিক পঞ্জি দিল্লির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এটিই শেষ কথা নয়। প্রতিবেশী দেশও যে এর উত্তাপে পুড়বে সেই লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

আসামের নাগরিক পঞ্জি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভারতের সরকার ও ক্ষমতাসীন দল এখনো মিশে একাকার হয়ে যায়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জিটি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) খায়েশ পুরো পূরণ করতে পারেনি। এ পঞ্জিতে বিজেপির টার্গেট করা সবাই ‘বহিরাগত’ হয়ে যায়নি। বিজেপি ব্যাপারটি ঠাহর করতে পারেনি যে, এই কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসামে জড়ো হওয়া হিন্দু নাগরিকরা তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। তাই চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর ক্ষিপ্ত হয়ে দলীয় নেতারা বলছেন, হিন্দুস্থানে হিন্দুরা কিছুতেই বহিরাগত হতে পারে না। অন্যদিকে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নাগরিকপঞ্জি তৈরি করা একটা স্বচ্ছ, বিধিসম্মত ও আইনিপ্রক্রিয়া। সবকিছুই হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ও তদারকিতে। আর যে পদ্ধতিতে এনআরসি তৈরি করা হয়েছে, তা বিজ্ঞানভিত্তিক।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি রণজিৎকুমার দাশ বলেন, ‘তালিকা থেকে বাদ পড়া বৈধ ভারতীয় নাগরিকরা যদি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নাগরিকত্ব ফিরে না পান, তাহলে তাদের সুরক্ষায় আমরা নতুন আইন করব।’ এর অর্থ বাদ পড়া হিন্দুরা যদি ট্রাইবুন্যালেও তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে তাদের জন্য বিশেষ আইন করা হবে। কারণ যেকোনোভাবে হোক হিন্দুদের ভারতের নাগরিক করে রাখতে হবে। অন্যদিকে মুসলমানদের বাদ দিতে যতটা কারসাজি করা যায়, তাও করা হবে। এ কূটকৌশলের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে নাগরিকত্ব নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনাল। এটি গঠনের কর্তৃত্ব সরকারের। হয়তো আদালতকে দিয়ে ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনের পথে হাঁটবে বিজেপি সরকার।

নাগরিকত্ব মামলার সুরাহা করতে ট্রাইবুন্যাল যে ঠিক করেনি, ইতোমধ্যে তা আলোচনায় এসেছে। আবেদনকারীর দাখিল করা কোনো তথ্য উপাত্ত বিবেচনা ছাড়াই ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। নাগরিকপঞ্জিতে বাদপড়া নাগরিকদের তালিকাতেও অনিয়ম বহু দেখা যাচ্ছে। মা-বাবা-ভাইবোন সবাই সনদ পেয়েছেন; বাদ পড়েছেন এক সন্তান। বাবা-মা বৈধ নাগরিক হলে সন্তান কিভাবে অবৈধ হয়, আদালত তা না বোঝার ভান করেছেন। বাদ পড়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সৈনিক সরকারের উচ্চপদে থাকা অনেকে এমন কি রাজ্যসভার বিধায়করাও।

তালিকা থেকে বাদপড়াদের বেশির ভাগ বাঙালি হিন্দু; যারা বিজেপির ভোট ব্যাংক। বিজেপির টার্গেট হচ্ছে কাগজপত্র থাকুক না থাকুক, তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব সনদ জোগাড় করে দিতে হবে। সে জন্য লক্ষ্য হচ্ছে এমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যাতে মূলত বিজেপির খায়েশ পুরণ করা যায়। এতে করে এ আশঙ্কাই থেকে যায় যে, নাগরিত্ব পাওয়ার উপযুক্ত দাবিদাররা বঞ্চিত হয়ে যাবেন। আসামের নাগরিকপঞ্জি তৈরিতে সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে কাজ করেছে, ট্রাইব্যুনাল গঠন ও এর বিচার প্রক্রিয়ায় একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব নাও থাকতে পারে। কারণ উচ্চ আদালতের অধীনে তৈরি হওয়া নাগরিকপঞ্জি ক্ষমাতসীন বিজেপির মনঃপূত হয়নি। তাদের ওপর আবার বিজেপি ভরসা রাখবে না এবং নাগরিকত্ব নির্ধারণপ্রক্রিয়ায় এবার তারা সরাসরি প্রভাব খাটানোর পথ বেছে নিতে চাইবে। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে দলীয় প্রভাব খাটানোর বহু নজির ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ভারতের নির্বাচন কমিশন সরাসরি বিজেপির পক্ষে কাজ করেছে। রাষ্ট্রীয় আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দলটি নিজেদের পকেটস্থ করতে পেরেছে। এতে করে ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার দায়ভার নেয়ার পরও বাংলাদেশ সরকার পাশের সীমান্তে তৈরি হওয়া সঙ্কট নিয়ে নিশ্চুপ। রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়নের কাজটি হঠাৎ করে হয়নি। কয়েক দশকে মিয়ানমার স্বদেশ ভূমি থেকে রোহিঙ্গাদের চূড়ান্তভাবে বিতাড়নের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করেছে। দীর্ঘ এ সময়ে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। রোহিঙ্গাদের প্রথমে নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে তাদের মৌলিক অধিকার সঙ্কুচিত করা হয়। সর্বশেষ, গণহত্যা চালিয়ে দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়। যদি এর কোনো একটিপর্যায়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশে অমানবিক কাজের ব্যাপারে প্রতিবাদ করত, তাহলে আজ হয়তো এ বিশাল বোঝা বহন করতে হতো না।

যা হোক, আসামে যারা নাগরিকত্ব হারালেন, চূড়ান্তভাবে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে তাদের ক্ষেত্রে কী ঘটবে তা ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা আগেভাগে হুমকি দিয়ে রেখেছেন। তবে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আগেভাগেই হুমকি দেয়নি যে, তাদের বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়া হবে। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে অগ্রিম বলা হচ্ছে আসামের নাগরিকত্ব হারানো মানুষরা ‘বাংলাদেশের নাগরিক।’ তাই তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ব্যক্তি পর্যন্ত এ কথা বলেছেন। অথচ এখন পর্যন্ত সরকারের সাথে সমানতালে বাংলাদেশের বেশির ভাগ বুদ্ধিজীবী বলছেন, বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিয়েছেন এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের বড় একটি অংশ। তারা বরাবরই ভারত ও বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুকে আড়াল করতে চান। প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন তারাই। ইস্যুগুলো জনগণের মধ্যে আলোচনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এই আচরণ সত্যিই রহস্যাবৃত। এর ওপর বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান দুর্বল ও নমনীয়, তাই দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের রয়েছে স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক ইস্যু। এগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে জোরালো জনমত সৃষ্টি হতে না পারায়, আলোচনার টেবিলে সমানে সমানে দরকষাকষি করতে পারছে না বাংলাদেশ।

এজন্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো ঝুলে রয়েছে; কিংবা বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা পাচ্ছে না। আসামে নাগরিকত্ব হারাতে যাওয়া মানুষদের নিয়ে অচিরেই বাংলাদেশ বিপদে পড়তে পারে। এ অবস্থায় দেশের অভ্যন্তর থেকে জোরালো আওয়াজ তোলা না হলে রোহিঙ্গাদের মতো আরো এক বিশাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা অসম্ভব নয়। তা হলে আমাদের দেশটি হয়ে যেতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘উচ্ছিষ্ট মানুষের ভাগাড়’; মানে, অ-নাগরিক ও রাষ্ট্রবিহীন মানুষের আবাসস্থল। যাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করা হচ্ছে না, তাদের কোনো ধরনের মৌলিক মানবাধিকার দেয়া তো আরো দূরের বিষয়। সেই অর্থে তারা এক প্রকার ‘উচ্ছিষ্ট মানুষ’।

রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা যেভাবে বাংলাদেশ পাশে থেকে দর্শক হয়ে দেখেছে, এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন না হয়ে আসামে রাষ্ট্রহীন হতে যাওয়া মানুষের অধিকার নিয়ে ঢাকার কথা বলা জরুরি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ যদি মনে করে, এতে বৃহৎ বন্ধুপ্রতিম ভারত চটে যাবে, তা হবে বড় ভুল। কারণ প্রতিবাদ প্রতিরোধে সোচ্চার না হলে পরিণতি হবে আরো বেশি ভয়াবহ। এ ইস্যু বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য হয়ে উঠতে পারে বড় হুমকি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব আন্তর্জাতিক আইন কানুন এবং মানুষের সহানুভূতি থাকার পরও মিয়ানমারের সাথে মোটেও পেরে উঠছে না বাংলাদেশ। চীন ও রাশিয়ার মদদের কারণে গণহত্যা চালিয়ে নিজের দেশের নাগরিকদের উৎখাত করে বহাল তবিয়তেই আছে মিয়ানমার। অন্যদিকে বাস্তুহারানো মানুষদের আশ্রয় দিয়ে সাহায্য দিয়েও চাপে রয়েছে বাংলাদেশে। এরপরও কি বলা যাবে না, রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ? একই ধরনের ব্যাপার ভারতের দিক থেকে ঘটলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কোনো ফোরামে বিষয়টি যথাযথভাবে তুলতেও পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। রোহিঙ্গারা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে পীড়নের শিকার হলেও বাংলাদেশ এই ব্যাপারটি ব্যবহার করতে পারেনি। তাই মুসলিম দেশগুলো থেকে সমন্বিত সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি মুসলিম স্বার্থের পরিবর্তে ভারতঘেঁষা স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ। ভারত নিজেই যখন আমাদের প্রতিপক্ষ হবে, তখন আমরা মুসলিম বিশ্বের সহায়তা পাওয়ার যুক্তি কিভাবে প্রদর্শন করব।’

আসামের মানুষের নাগরিক অধিকার নিয়ে এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সোচ্চার হওয়া জরুরি। প্রতিবেশী নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ মুখ খুলতে হবে। এটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে চুপ করে থাকলে মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে আমাদের অবস্থান প্রমাণ হয় না। এরপর যে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, এর সরাসরি ভুক্তভোগী বা শিকার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকা এবং দেশকে নিরাপদ করার দায়িত্ব ভারতের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

জাতিসঙ্ঘ ১৯৪৮ সালে ‘সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ’ ঘোষণা করেছে। জন্মগতভাবে সব মানুষের অধিকার সমান। কোনো ধরনের ধর্মীয় বা জাতীয় পরিচয়ের কারণে কারো ওপর কোনো বৈষম্য চাপিয়ে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ প্রতিবেশী অসমিয়াদের মানবাধিকার নিয়ে আওয়াজ তুলতে পারে। ভারত সরকার যে প্রক্রিয়ায় তার বিশাল একটি গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রহীন করতে চলেছে, তা যে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও মানবতাবিরোধী তা জোরালো ভাষায় বলতে হবে। মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য ভারতের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সেটাও স্মরণ করিয়ে দেয়া যায়। জাতিসঙ্ঘের একটি বৃহৎ সদস্য হিসেবে এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ভারত দায়বদ্ধ।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সর্বাধিক রাষ্ট্রহীন মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসেবে, বিশ্বে নাগরিকত্বহীন মানুষের সংখ্যা ৩৮ লাখ। এবার ভারত নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষ। রোহিঙ্গাদের মতো ওরাও পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একাই অর্ধেকের বেশি রাষ্ট্রহীন মানুষের আশ্রয়দাতা হতে হবে। নাগরিকত্ব হারাতে যাওয়া ১৯ লাখ ভারতীয়দের অবস্থান বাংলাদেশ সীমান্তে। তাদের পরিচিতি তারা বাংলাভাষী। কোনোভাবে প্রশ্ন আসে না, ভারত তাদের চীন কিংবা পাকিস্তানে ঠেলে দেয়ার সাহস দেখানোর। ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে এমন কথা কেউ বলছেনও না। বরং বলা হচ্ছে, এরা বাংলাদেশের নাগরিক। আসামের অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, যাতে এসব বাঙালিকে বাংলাদেশ ফিরিয়ে নেয়।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভাজন প্রকট। জনগণের সমর্থনে শক্তিশালী সরকার এখানে নেই। এ সুযোগটি ভারত নিতে পারে। ভারত বাংলাদেশকে যেসব অঙ্গীকার প্রদান করে সেগুলো রক্ষা করার দায় বোধ করে না। দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো সুরাহার ক্ষেত্রে ভারত বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দিল্লির দেয়া প্রতিশ্রুতির মেয়াদ অনেক আগেই অতিক্রান্ত। আগে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা থাকলেও সেটা মরীচিকায় পরিণত হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় নেতাদের প্রতিশ্রুতির ভাষা সব সময় বাহ্যিকভাবে থাকে জোরালো। অভিন্ন নদীগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রত্যেকটি নদীর উজানে পানি প্রত্যাহার করে এককভাবে ব্যবহার করছে ভারত। অন্যদিকে বর্ষার মওসুমে সব বাঁধ খুলে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে বন্যায় ভাসিয়ে দেয়া হয়। সীমান্তে হত্যা আগের চেয়ে বাড়ছে। নতুন নতুনভাবে বর্বরোচিত কায়দায় সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান, এমনকি রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা হবে। সীমান্তে বন্ধ করা হবে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার।’ এসব প্রতিশ্রুতি কেবল কথার কথা ছাড়া আর কিছু নয়। সময় চলে গেলে আরেকটি রোহিঙ্গা স্রোত আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ফলে এ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও শান্তি তখন আরো ভঙ্গুর হয়ে পড়বে।
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement