২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ট্রাম্পের ইরান ‘ট্রাম্পকার্ড’

ট্রাম্প ও রুহানি - ছবি : সংগ্রহ

ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী মনোভাব আবারো বিশ্ব পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলেছে। একটি বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি হরমুজ প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা ড্রোন বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইরান। বলেছে, ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এটি গোয়েন্দা ড্রোন ছিল না। তবে ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। ওমান উপসাগরে দু’টি তেলের ট্যাংকারে হামলার ঘটনা পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি এই আক্রমণ চালিয়েছে। তারা কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে বলছে, ইরানি বাহিনী এই হামলায় জড়িত, এর ‘অকাট্য’ প্রমাণ ওই ভিডিও চিত্র। তেহরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, আমেরিকার এসব দাবি বানোয়াট। কিন্তু তাতে উত্তেজনা কমেনি বরং ইরানকে ঘিরে আশপাশের মিত্র দেশগুলোতে রণপ্রস্তুতি জোরদার করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দফতর এবং বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর আটজন জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এরপর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইরানের হাজার হাজার কোটি ডলারের অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে পারে আমেরিকা।
তেলের ট্যাংকারে কথিত ইরানি হামলার ছবি প্রকাশের পর মার্কিন অস্থায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান জানান, আত্মরক্ষার্থে মধ্যপ্রাচ্যে আরো এক হাজার মার্কিন সৈন্য পাঠানো হচ্ছে। গত মাসেই সেখানে দেড় হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইরাকে আগে থেকেই পাঁচ হাজারের মতো মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। এক বিবৃতিতে শানাহান বলেন, ইরানের বাহিনী এবং তাদের পোষ্যরা যে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থ এবং সৈন্যদের জন্য হুমকি তৈরি করেছে, ইরানের সাম্প্রতিক হামলা সেটাই প্রমাণ করে। হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ‘ইরানকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা। তিনি বলেছেন, আমেরিকার মূল লক্ষ্য ইরানকে একঘরে করা।’ এদিকে, হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নানা রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনের সাথে গলা মিলিয়ে ট্যাংকারে হামলার জন্য ইরানকেই দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো মিত্র ব্রিটেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না (ইরান ছাড়া), অন্য কেউ এ কাজ করতে পারে।’ তবে তিনি দুইপক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনেরও অনুরোধ করেছেন।

এ দিকে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই হামলা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসঙ্ঘকে অনুরোধ করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, ‘মার্কিন এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দারা যা বলছেন, তাতে আপনি প্রায় নিশ্চিত হতে পারেন যে, এটা ইরানের কাজ। আমরা আমাদের সূত্রে পাওয়া তথ্যের সাথে তা মিলিয়ে দেখছি। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে খুব সতর্কভাবে এগোতে হবে।’

ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিসো বলেছেন, অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। লুক্সেমবার্গের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ আসেলবর্ন ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার আগে ভুল গোয়েন্দা রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি বলেন, ১৬ বছর আগেও যেমন তেমনি আজো আমি বিশ্বাস করি, বন্দুক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা ভুল হবে। রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করে যুদ্ধের ‘উসকানি’ না দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিবকভ বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সেই সাথে সামরিক চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। অস্থিতিশীল এ অঞ্চলে এ ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত কাজ থেকে বিরত থাকতে আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) এবং ওই অঞ্চলে তাদের মিত্রদের বারবার সাবধান করেছি।

চীনও উপসাগরে ‘সংযত’ আচরণের জন্য ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির যে কৌশল, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তা পরিহার করা। একতরফা আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।’ সৌদি আরব ট্যাংকারে হামলার বিরুদ্ধে ‘শক্ত’ অবস্থান নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না; কিন্তু আমাদের জনগণ, দেশ ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে, আমরা জবাব দিতে কুণ্ঠাবোধ করব না।’

তেলের ট্যাংকারে ইরানই যে হামলা করেছে তা কিন্তু চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত নয়। ওয়াশিংটন যে ফুটেজ প্রকাশ করেছে, তা ঘটনার কয়েক মিনিট পরের। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই ঘটনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। এটা সবাই জানে। তাহলে ট্যাংকারে কারা, কখন মাইন পেতে রেখেছিল, সেই ছবি প্রকাশ না করে কয়েক মিনিট পরের ছবি কেন প্রকাশ করা হলো? এসব প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে পাশ্চাত্যের মিডিয়াতেই সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। এতসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে মিডিয়ায় জল্পনা-কল্পনার অবতারণা করা হচ্ছে যে, ইরান-মার্কিন যুদ্ধ কি আসন্ন? যুদ্ধ শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? যুদ্ধ কি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে? ইরান কী করতে পারে? যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে কী হবে? এই যুদ্ধ কোথায় নিয়ে যাবে বিশ্বকে? এমন সব প্রশ্ন তুলে ‘নানা মুনি নানা মত’ দিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসী নীতি কেন? এর জবাবে বলা যায়, দৃশ্যত ইরানের তীব্র বিরোধিতার কারণেই গোটা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বৈদেশিক নীতি কার্যকর হতে পারছে না। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার পর আমেরিকা ওই অঞ্চলে একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টির স্বপ্ন দেখেছিল, সেই স্বপ্ন পূরণের পথে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরান। সিরিয়ায় বাশার সরকারকে হটিয়ে নিজেদের একান্ত বংশবদ সরকার কায়েমের উদ্দেশ্য সফল হয়নি ইরানের কারণে বরং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বলয় শক্তিশালী হয়েছে বলে প্রতীয়মান। রাশিয়া ও ইরানের মৈত্রী আমেরিকাকেই বরং কিছুটা কোণঠাসা করে ফেলেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ পরিস্থিতি মেনে নিতে প্রস্তুত নন। তিনি আরো বড় লক্ষ্য নিয়ে খেলছেন। এর আগের একটি লেখায় আমরা বলেছিলাম, ইসরাইলের কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি চুক্তি করেছেন। ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ বলে অভিহিত এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ-বিধারক এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন নামে কোনো দেশ থাকবে না। ফিলিস্তিনের নতুন নাম হবে ‘নিউ প্যালেস্টাইন’। এই চুক্তির শর্তাবলি না মানলে প্রয়োজনে ইসরাইল ফিলিস্তিনি নেতাদের হত্যা করতে পারবে। চুক্তিটি বাস্তবায়নে ট্রাম্প সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে তার পাশে পেয়েছেন বলে ইসরাইলি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এই চুক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইরান নীতি। ট্রাম্প যে বারবার ইরানের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করছেন, এর পেছনে আছে তার ইসরাইলকে প্রমোট করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। তিনি এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান যাতে সৌদি আরব, মিসর ও তাদের অন্য মিত্রদের মতোই ইরানও অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নিয়ে মার্কিন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ সুগম করে দিতে বাধ্য হয়।

সেই সাথে আছে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত করার তাগিদ। ‘আমেরিকাকে আবার মহান করো’ স্লোগানে ক্ষমতাসীন ট্রাম্প এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এমন কোনো উল্লেখযোগ্য অর্জন দেখাতে পারেননি, যা আমেরিকাকে মহান করেছে। জনসমর্থন তার এখন প্রায় তলানিতে। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মার্কিন জনগণকেও লোকরঞ্জনবাদী বা জনতুষ্টিমূলক প্রপাগান্ডার মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত করতে না পারলে নির্বাচনে ট্রাম্পের ভরাডুবির সমূহ সম্ভাবনা। এখন ইরানকে একটি ইস্যু হিসেবে সামনে এনেছেন ট্রাম্প। একই কারণে সম্ভাব্য সবার বিরুদ্ধেই একটা ‘যুদ্ধ-যুদ্ধ’ আবহ তৈরি করার জন্য তৎপর ওয়াশিংটন। ইরান, চীন, ভেনিজুয়েলা কেউ বাদ নেই এ তালিকা থেকে। চীনের সাথে চলছে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’। ভেনিজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে না বলে মত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। আর ইরানের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন রণতরীর উসকানি। আর এ সবকিছুকে ট্রাম্পের ‘দৃঢ় নেতৃত্বের প্রমাণ’ হিসেবে হাজির করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।

তবে এই ‘ট্রাম্পকার্ড’ ট্রাম্পের জন্য পরবর্তী নির্বাচনে কতটা সুবিধা এনে দিতে পারবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।

মূলত মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের স্বার্থ নিশ্চিত করা এবং নিজের পুনর্নির্বাচিত হওয়াÑ এ দুই তাগিদ থেকেই ট্রাম্প বলছেন, তেহরান নিজেদের অবস্থান থেকে সরে না আসা পর্যন্ত অর্থনৈতিক চাপ বজায় রাখা হবে। একইভাবে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে বাধা দিতে ইরানের ওপর আরো ‘গুরুতর’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলেন তিনি। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সীমার বিষয়ে পরাশক্তিগুলোর সাথে ইরানের চুক্তি হয়েছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র গত বছর একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অপর দিকে, সম্প্রতি ট্রাম্প ইরানের ‘কল্যাণ’ কামনা করে বলেছেন, ‘যদি ইরান একটি সমৃদ্ধ জাতি হতে চায়..., তবে সেটি আমার কাছে ঠিক আছে। কিন্তু তারা তা কখনোই হতে পারবে না যদি না তারা পাঁচ-ছয় বছর ধরে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে থাকে।’ তিনি ‘ইরানকে আবার মহান’ বানানোর জন্য ইরানি নেতাদের সবক দিয়েছেন। আর ট্রাম্পের মনের কথা হলো, সেজন্য তাদেরকে কেবল একটি কাজ করতে হবে; সেটি হলো আমেরিকার হুকুম মেনে চলা। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রাষ্ট্রের মতো আমেরিকার চির বশংবদ হয়ে থাকা। এই হীন কাজটি ইরানিরা করতে চাইছে না।

সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে ইরান সফর করেছেন। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। ইরানি নেতা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে শিনজো আবেকে বলে দিয়েছেন, তারা ট্রাম্পকে ‘আলোচনার যোগ্য ব্যক্তি’ বলে মনে করেন না। তাই ট্রাম্পের জন্য তারা কোনো বার্তা শিনজোর কাছে দিতে পারছেন না। এরপর ওমানের মাধ্যমেও ট্রাম্প ইরানকে একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানা যায়। সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। সম্ভবত ওইসব ঘটনায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে অসম্মানিত বোধ করে থাকবেন। আর সেজন্যই এখন সর্বোচ্চ নেতার দফতরকে অবরোধের আওতায় এনেছেন। এর আগে বিপ্লবী গার্ড বা রক্ষীবাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’র তকমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যা হোক, যুদ্ধ যে শেষাবধি বাধবে না তা এই মুহূর্তে জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস এক বিশ্লেষণে বলেছেন, ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ কথাও বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা এখনো আছে। মার্কাস বলছেন, ট্রাম্প গত সপ্তাহে ইরানে হামলার নির্দেশ দিয়ে যদি পরে সেটা স্থগিত না করতেন তাহলে কী হতো? তার মতে, হামলা হলেও সেটা হতো সীমিত পর্যায়ের। হয়তো আমেরিকা আক্রমণ চালাত ইরানের কিছু রাডার বা ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনার ওপর এবং তার সাথে যোগ হতো কিছু কূটনৈতিক সতর্কবাণী।

মার্কাসের বক্তব্য, ইরানি শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করতে পূর্ণমাত্রার মার্কিন স্থল অভিযান ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর কারণ, সামরিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে ইরান অনেক বেশি জটিল এক চ্যালেঞ্জ। তারা সাদ্দাম হোসেনের ইরাক নয়। তিনি বলেন, চাপের মুখে পড়লে ইরান এই সঙ্ঘাত ছড়িয়ে দিতে পারে। তার প্রক্সি দেশ যেমন ইরাক, সিরিয়া বা অন্যদেরকে আহ্বান জানাতে পারে মার্কিন লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানতে। এমনকি এটাও হতে পারে, হিজবুল্লাহ বা সিরিয়ায় মোতায়েন করা ইরানি সৈন্যদের সমন্বয়ে ইসরাইলের ওপর রকেট হামলা করা হতে পারে। এর লক্ষ্য হবে ওয়াশিংটনকে এটা দেখানো যে, ইরানের ওপর কোনো ছোট আকারের আঘাতও পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দিতে পারে।

অবশ্য ইরান-আমেরিকা যুদ্ধ হলে তা যে এক অসম যুদ্ধ হবে, সেটি বলতে ভোলেননি মার্কাস। কারণটা সহজেই বোধগম্য।


আরো সংবাদ



premium cement