সঙ্কট সর্বত্র
- আলমগীর মহিউদ্দিন
- ১৮ জুন ২০১৯, ১৭:৪২
ব্যক্তিগত, সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয় জীবনে কোথাও স্বাভাবিক সম্পর্কের দেখা মেলা ভার। যেমন- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসরাইল হামাসের ওপর আক্রমণ, মার্কিন বর্ডারে অত্যাচারিতের ওপর নতুন অত্যাচার, সিরিয়া জ্বলছে, ইরানকে একঘরে রাখার পরাশক্তির কর্মকাণ্ড, চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির বিশাল বিকাশ ইত্যাদি এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটি এমন, এটা হওয়ার কথাই এবং তার জন্য দায়ী এই কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষতিগ্রস্তরাই।
এটা সত্য, বিশ্বের ইতিহাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ-সংঘর্ষের সময় শান্তির সময়ের চেয়ে অনেক দীর্ঘ এবং এটাও সত্য, এর পেছনে দু’টি কারণ। তা হলো- যেকোনো ঘটনা অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটতে পারে, আবার কোনো ঘটনা ঘটে পরিকল্পিতভাবে। তবে সর্বত্রই দেখা গেছে, ক্ষমতাবানেরা বা ক্ষমতালোভীরা এ অবস্থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ জন্যই কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও তার রেশ চলতে থাকে।
অনুসন্ধানী বোদ্ধাজনেরা মন্তব্য করেছেন, ‘শুধু অজ্ঞজনেরা কোনো ঘটনা হঠাৎ করে ঘটে বলে গ্রহণ করে। কিন্তু ওয়াকিবহালেরা জানেন, কোনো ঘটনাই হঠাৎ ঘটে না। প্রতিটি ঘটনার পেছনে থাকে পরিকল্পনা এবং শ্রম। একটি বিশাল শক্তি এই ঘটনাগুলো ঘটায়।’ এই শক্তিই সবার অজ্ঞাতে থেকে এরা সিরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, জাতিসঙ্ঘসহ সব অবস্থানকে নির্মমভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। সামান্যতম প্রতিবাদ বা বিরোধিতা এখানে স্থান পাচ্ছে না। আসলে এই শক্তিগুলো এই নির্মমতার আশ্রয় নেয় শুধু তাদের সত্যিকারের পরিচয় এবং চেহারা যেন জনগণের সামনে প্রকাশ না পায়। বিশ্ব সমস্যার কোনো ছেদ না হওয়ার পেছনের প্রধান কারণ এই বিশ্ব খেলোয়াড়রা কখনো সমস্যার সত্যিকারের সমাধান চান না। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি কোনো শান্তিও নয়। এ জন্যই একের পর এক যুদ্ধ-সঙ্ঘাত লেগেই আছে। এই অদৃশ্য শক্তি কারা? নানাভাবে তাদের বর্ণনা করা হয়েছে। তবে আধুনিক সময়ে তাদের এক বিরাট অংশ করপোরেশন বা করপোরেট শক্তি বলে পরিচিত। জাতিসঙ্ঘের সৃষ্টি হয়েছিল প্রধানত এই অদৃশ্য শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিহত করে সব রাষ্ট্রের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু কখনোই এই অধিকার সত্যিকারভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ঠিক একইভাবে বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা দেয়ার দাবিকেও নানাভাবে নানা দিকে চালনা করে জনগণের জন্য যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কথা, তা সম্পূর্ণ নয়। ভারতে অনেকগুলো বিচারিক দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের চারজন বিচারক এক বিবৃতিতে ‘বিচার ব্যবস্থা এখন সঙ্কটে’ বলে বলেন, যদি এই প্রতিষ্ঠানকে তার ওপর জনগণের আস্থাকে রক্ষা করতে চায় তবে এর অখণ্ডতাকে রক্ষা করতে হবে। জনগণের দৃষ্টি সব সময় বিচারব্যবস্থার ওপর থাকে। বারবার এ ব্যবস্থা নানা প্রতিকূলতার সামনে পড়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্র এবং ক্ষমতাসীনেরা এর অবস্থানকে নড়বড়ে করতে সদা সচেষ্ট বলে নানা সমীক্ষায় এসেছে। সেজন্যই সঙ্কট উত্তরণের জন্য বিচারকদের সজাগ থাকার দাবি এসেছে। আসলে বিচারব্যবস্থা তখনই সঙ্কটে পড়ে যখন রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে হস্তান্তরিত হয় অথবা ক্রুর ক্ষমতা তা দখল করে।
বিচারব্যবস্থায় সঙ্কট সবাইকে আপ্লুত করে এ জন্য যে, সুন্দর জীবনযাপন এবং গণতন্ত্রের অবস্থান এর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। যদি একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন বিচারব্যবস্থা বিরাজ করে, তখন জীবন নিশ্চিত হয় এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী থাকে।
বলা হয়, যে রাজনীতিবিদ যত সিদ্ধহস্ত এবং শক্তিশালী, তিনি তত সঙ্কট নির্মাণে পারঙ্গম। এরা সঙ্কট নির্মাণ করে এবং তা কঠিন হস্তে নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করে। সাথে থাকে প্রচার। ফলে জনগণের আস্থা তাদের ওপর ন্যস্ত হয়। শান্তির সময়ে এই আস্থা নির্মাণ করতে হলে ক্ষমতাবান বা ক্ষমতালোভীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয় এবং নানা স্তরে তাদের চারিত্রিক প্রতিফলন থাকতে হয়। সেজন্যই অশান্তির প্রয়োজন।
বিশ্বের ইতিহাসে এই নাটক বারবার অভিনীত হয়েছে। এখন এই নাটকের চিত্র অনেক জটিল হলেও ফল একই- জনগণের যন্ত্রণা এবং ক্ষমতাবানদের সুখ।
সম্প্রতি অনুসন্ধানী ডেভিড হেল্ড এক চমৎকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য নানা চাপে সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার ফলে নতুন ক্ষমতার উদ্ভব হয়েছে। এর প্রধান খেলোয়াড় চীন-রাশিয়া-জাপান। এরা সমস্যাকে কখনো জটিল করছে, আবার কখনো দেখাচ্ছে আশার আলো।
তবে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এই সঙ্কটগুলোকে ১০ ভাগে ভাগ করেছে এবং মন্তব্য করেছে- এগুলোর ওপর নজর রাখা খুব প্রয়োজন। এগুলোর প্রথম হলো- ১. খাদ্যের নিরাপত্তা। কারণ বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯ বিলিয়ন। খাদ্য উৎপাদন এখন সীমিত। জাতিসঙ্ঘ ১৭টি লক্ষ্য স্থির করেছে ২০৩০ পর্যন্ত এ সমস্যা সমাধানের জন্য; ২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন সার্বজনীন হতে হবে। কারণ বর্তমান উন্নয়নের সাথে সাথে ধনী-গরিবের পার্থক্য বাড়ছে; ৩. কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যবস্থা সঠিকভাবে করার ওপর ভবিষ্যৎ সামাজিক শান্তি নির্ভর করবে; ৪. বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত ৫০ বছরে ০১ ডিগ্রি বেড়েছে। কিন্তু এখন মাত্র ০৫ ডিগ্রি বাড়লে তা হবে গত আট লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে খরাসহ নানা বিশাল সমস্যা ঘনীভূত হবে; ৫. ভবিষ্যৎ বিশ্ব অর্থনীতি অত্যন্ত সঙ্কটময় হবে, যদি এখন থেকেই প্রচেষ্টা না নেয়া হয়; ৬. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হবে ইন্টারনেট। এটা ভবিষ্যতে জীবনকে কেমনভাবে পরিচালিত করবে; ৭. একটি প্রশ্ন প্রবল হবে, তা হলো- লিঙ্গ সমতার বিষয়; ৮. বিশ্ব ব্যবসা ও বিনিয়োগ; ৯. ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির কর্মকাণ্ড এবং ১০. কেমন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশ্ব জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে।
এ ছাড়া বর্তমানের ১০ সঙ্ঘাত-সংঘর্ষে আবৃত ১০টি দেশের কথা এসেছে এ আলোচনায়। এ ১০টি দেশ হলো- সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সিরিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ভেনিজুয়েলা, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও ইয়েমেন। এ দেশগুলো সঙ্ঘাত-সাংঘর্ষিক অবস্থার সামান্য ভেতরে ঢুকলেই বোঝা যায় এগুলো পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। এসব আন্দোলন বা সংঘর্ষে কোনো দেশের জনগণই উপকৃত হয়নি বা তাদের কাছে উপকারগুলো পৌঁছেনি। এর কারণও এক। এক শক্তিশালী গোষ্ঠী। এরাই নিষ্ঠুরভাবে সঙ্ঘাতময় দেশগুলো থেকে স্বার্থ উদ্ধার করছে।
এ সমস্যাগুলো ঠেকাতে প্রধানত জাতিসঙ্ঘের সৃষ্টি হয়েছিল। এ শক্তিগুলো কৌশলে সেই সংস্থাকেও সরাসরি বা পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একজন অনুসন্ধানী দাবি করেছেন, চারটি কারণে এগুলো ঘটছে। তা হলো- ১. বহুমাত্রিকতা; ২. সমস্যার ঘনীভূতকরণ; ৩. প্রাতিষ্ঠানিক স্থবিরতা এবং ৪. প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ভাগ হওয়া।
সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না আরো কয়েকটি কারণে, যেমন- আন্তর্জাতিক সমঝোতা ক্রমে কঠিন হয়ে পড়ছে, আবার আন্তর্জাতিক সমস্যা বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে; জাতিসঙ্ঘ ক্রমে অকার্যকর হয়ে পড়ছে ক্ষমতাশালী দেশগুলোর জন্য। বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান নানা পরস্পরবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন দেশে সঙ্কট সৃষ্টি করছে।
এ সমস্যাগুলো উত্তরণের উপায় কী? জবাবটা সমস্যার মতো জটিল নয় এবং মাত্র একটি শব্দেই হয়তো বলা যায়। তা হলো- ঐক্যবদ্ধ হওয়া। বিশ্বের দেশগুলো যদি এ সমস্যা সমাধানে ঐকমত্য পোষণ করে এবং এদের সমাধানের প্রচেষ্টাকে সাহায্য ও সমর্থন দেয়, তাহলে এগুলো অতি সহজেই সমাধানের পথে চলতে থাকবে। সর্বত্র সঙ্কট আর এমন গভীরভাবে নাড়া দেবে না।
আগেই বলা হয়েছে, শক্তিশালী অদৃশ্য গোষ্ঠীও সর্বদা সজাগ এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে। তবুও প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং তার সহজ পদ্ধতি হলো- সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে হবে যেমনটি ভারতের মোদি একটিমাত্র শব্দ পৌঁছে দিয়ে ক্ষমতা দখল করলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা