২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খাদ্যে ভেজাল : দুর্নীতির মহা উল্লাস

- ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর সম্ভবত একমাত্র জাতি আমরা, যারা নিজেদের খাদ্যে নিজেরাই ভেজাল মেশাই। ভেজালের প্রকৃত তথ্য জানলে অনেকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিতেন হয়তো। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যেতেন। বাস্তবে এমন অনেক ঘটনা ঘটছেও। পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে এক পাঠক লিখেছেন, আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের ছেলে। বাড়িতে গেছি। আনারসের প্রচুর সমাগম। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ আনারসের চালান যাবে। টসটসে দেখে একজনকে জানালাম, আনারস খাবো। তিনি বললেন, এ আনারস খাবেন না। এগুলো কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়েছে। এগুলো খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করে ফল পাকানোর ব্যাপারটি স্থানীয় জনগণ জানেন। তাই তারা এটি খান না। কিন্তু সারা দেশের মানুষ এ রাসায়নিক-মিশ্রিত ফলই খাচ্ছেন।

ঢাকায় প্রতি বছর আমের মওসুমের ঠিক আগে আগে এক ধরনের আমে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে, এসব আম প্রাকৃতিকভাবে পাকা নয়। এগুলোর কিছুটা রঙিন। দেখলেই বোঝা যায়, এমন রঙ কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না। কাঁচা অপরিপক্ব আম, আগের বছরের অবিক্রীত হিমায়িত করে রাখা আম রাসায়নিক মিশিয়ে ঠিক পরের মওসুম শুরু হওয়ার আগে বাজারে ছেড়ে ভোক্তাদের প্রতারিত করা হচ্ছে। এবার আমের মওসুমের কয়েক দিন আগে ঢাকার কাওরানবাজারে ভেজালবিরোধী অভিযানের বিশেষ টিমের বৈঠক হয়। ফল ব্যবসায়ীদের সাথে বিএসটিআই, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও র‌্যাব কর্মকর্তারা এ বৈঠক করেছেন।

ব্যবসায়ীরা বৈঠকে অঙ্গীকার করেন, ২৩ মের আগে তারা আম বিক্রি করবেন না। হিসাব মতে, বাগানে পাকা আম কোনোভাবেই ২৩ মের আগে ঢাকার বাজারে পৌঁছার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা ওই অঙ্গীকার করলেও ঢাকার বাজারে চলতি সপ্তাহে রাজশাহীর আম দেখা গেছে। এমন আম পরিপক্ব নয়, ‘জোর করে পাকানো’। ফলের দোকানে একটি ফলও এখন এমন পাওয়া যায় না, যেটি সন্দেহমুক্ত। রাজধানীতে পাওয়া এসব ফলে সাধারণত পচন ধরতে দেখা যায় না। দিনের পর দিন রেখে দিলেও এতে পচন ধরে না। এর বহিরাবরণে প্রকৃতির সেই ফ্রেশনেস বা সজীবতা পাওয়া যায় না।

দেশীয় মওসুমি ফল কমই পাওয়া যায় দোকানে। বিদেশী ফলের ছড়াছড়ি সব সময়। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। অতিরিক্ত গরমে মানুষে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব রোগের মূল ওষুধ রয়েছে সে মওসুমের ফলেই। অল্প কিছু বিদেশী ফলে বাজার সয়লাব হয়ে থাকলেও মওসুমি ফল সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এর সাথে এ ফলের প্রতি ফল ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদেরও কদর তৈরি হয়নি। এসব ফলের তুলনামূলকভাবে দামও অনেক কম। দেশীয় ফলের টেকসই মোড়কজাত ও সময়মতো বাজারজাত করতে সবার মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠা বড়ই প্রয়োজন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রণোদনা দেয়া সরকারের উচিত। ক্রেতা-বিক্রেতা সবার দেশীয় ফলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। এখন মওসুমি ফলও ফরমালিনযুক্ত হয়ে পড়েছে।

মাছ, গোশত ও সবজিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলের মতো মাছও দিনের পর দিন রেখে দিলেও পচন ধরে না। এসব মাছ দীর্ঘ দিন খেলে স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। শাকসবজির অবস্থাও একই। হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবার-দাবারে ভেজাল ও পচা মাছ-গোশতের সন্ধান মিলছে। ফ্রিজে পচা-বাসি খাবার রেখে দেয়া হচ্ছে। সেই খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে ভোক্তাদের। রেফ্রিজারেটরে ভর্তি করে রাখা হচ্ছে পচা গোশত। র‌্যাব অভিযান চালিয়ে কাওরানবাজার থেকে বস্তায় বস্তায় এমন পচা গোশত জব্দ করেছে। র‌্যাব ধারণা করছে, লাল পানিতে ভিজিয়ে এ পচা গোশত বিক্রি করা হয়।

মাছের বাজার প্রায় পুরোটাই হাইব্রিডের দখলে। এ মাছ অল্প সময়ে দ্রুত বাড়ে। এ মাছের খাদ্য হিসেবে এমন সব উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দেশীয় মাছের এসব হাইব্রিড সংস্করণ স্বাদের দিক দিয়ে দেশীয় মাছের ধারে-কাছেও নেই। মানুষ বাধ্য হয়ে কোনো বিকল্প না পেয়ে এসব মাছ খাচ্ছেন। বাজারে পাওয়া মুরগি, গরুর গোশত ও দুধ- প্রতিটিতে ভেজাল শনাক্ত করা হয়েছে। এসব খাবার খেয়ে মানবদেহে এমন সব রোগের জন্ম হচ্ছে; যেগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

বিএসটিআইর ২ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা করা ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৫২টি নি¤œমানের অথবা ভেজালযুক্ত। ওই দিন ও তার পরের দিন বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া ও দৈনিক পত্রিকা এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরপর সচেতন ভোক্তা সমাজের পক্ষ থেকে ত্বরিত লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় খাদ্যসচিব, শিল্প ও বাণিজ্যসচিব, বিএসটিআই ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রতি। ওই নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নি¤œমানের ও ভেজাল পণ্যগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। তবে কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। এরপর সচেতন ভোক্তা সমাজের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। উচ্চ আদালত এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ডেকে, কেন তারা পণ্যগুলো বাজার থেকে তুলে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

ওই রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নি¤œমানের ও ভেজালযুক্ত ৫২টি ভোগ্যপণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিএসটিআই, বাংলাদেশ খাদ্যনিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে আদালত যত দ্রুত সম্ভব এ নির্দেশ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন। যত দিন না তারা বিএসটিআইর কাক্সিক্ষত মান অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবে; তত দিন এর উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ বলবৎ থাকবে। খাদ্যনিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন ২৩ মের মধ্যে এ ব্যাপারে অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করতে। বিষয়টি আদালত কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন; তাদের বক্তব্যে তা প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের প্রতি খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন আদালত। এ যুদ্ধের প্রকৃতিও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আদালত বলছেন, মাদক চোরাকারবারি ও সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ করা হয়েছে; তেমন যুদ্ধ যেন খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধেও চালানো হয়। খাদ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সরকার প্রয়োজনে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করতে পারে, এমন নির্দেশনাও দিয়েছেন আদালত।

আদালত পর্যবেক্ষণে জানান, এ দেশে বসবাস অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমন পর্যবেক্ষণ থেকে এটি স্পষ্ট, সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা কতটা অস্বস্তিকর। শহরে বসবাসকারীরা নিরাপদ পানি পাচ্ছেন না। গ্রামেও পানি হয়ে উঠছে দু®প্রাপ্য। গরিব জনসাধারণের সুপেয় পানিপ্রাপ্তি আরো কঠিন হয়ে উঠছে। ভেজাল ও নি¤œমানের খাদ্য প্রসঙ্গে আদেশ দিতে গিয়ে একই আদালত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পানি সরবরাহকারী ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে, পাইপলাইনে করে গরিব জনগোষ্ঠীকে যেন নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়, সে ব্যাপারে আদালত জোর দিয়েছেন। রাজধানীতে বস্তি ও গরিব মানুষের দুঃসহ পানির কষ্ট নিশ্চয়ই আদালতের নজরে এসেছে।

ভেজালের বিরুদ্ধে কেন আইন কার্যকর হচ্ছে না, সে বিষয়টিও আদালতের পর্যবেক্ষণে এসেছে। অপরাধীদের ধরে শাস্তির মুখোমুখি করার কোনো উদ্যোগ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে র‌্যাবের কিছু অভিযানের মধ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে পরিচালিত, কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। ভেজালের বিস্তৃতি বেড়েই চলেছে। আদালত এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন কার্যকর রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে এখন কোনো অসুবিধা নেই। ভেজালের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্টদের আদালত উৎসাহিত করেছেন। রমজান এলে ভেজালের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা দেখা যায়। ভেজালের বিরুদ্ধে সারা বছরই অভিযান চালানো উচিত বলে আদালত তার আদেশে বলেছেন।

আমাদের দেশে খাদ্যের বাজারে কার্বাইড আর ফরমালিনের আধিপত্য। কোনো বাছবিচার ছাড়াই যথেচ্ছভাবে এর অপব্যবহার চলছে। এভাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনছি। সামান্য লাভের আশায় পুরো জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। আত্মশুদ্ধি, আত্মসংশোধন ও কৃচ্ছ্র সাধনের মাস রমজান এলে ভেজালের দৌরাত্ম্য আরো বেড়ে যায়। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে ভেজালপণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। সেমাই, চিনি, গুড় এখন ভেজালের প্রধান উৎস। অথচ মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানুষকে লক্ষ্য করে কুরআনে বলা হচ্ছে- ‘খাও হালাল ও ভালো ভালো জিনিস। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিশ্চয়ই তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন (সূরা : বাকারা, আয়াত- ১৬৮)। আমাদের জাতীয় কর্মকাণ্ডে এটিই প্রমাণ করে, পুরো জাতি যেন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। খাবার-দাবারের সাথে শয়তানের সংযোগ বেশি। ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লালসায় ভেজাল ও নি¤œমানের পণ্য উৎপাদন এবং বাজারে বিক্রি করেন। আর এমন ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করে মানবপ্রকৃতিতে নানা ধরনের বিঘœ ঘটছে।

মানুষের নৈতিক বাঁধন ঢিলেঢালা হয়ে গেছে; কোনো কোনো ক্ষেত্রে একদম ছিঁড়ে গেছে। প্রায় সবার মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা- কত বেশি সুবিধা লোটা যায়। সুযোগ পেলেই চলছে ধর্ষণ। কোনো বাছবিচার নেই। শিশু-কিশোরী-যুবতী কেউ রেহাই পাচ্ছে না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশে তিন শতাধিক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার অর্ধশত। নতুন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে চলন্ত বাসে ধর্ষণ। দিল্লির ঘটনার ছোঁয়াছে রোগ আমাদের সমাজকে যেন আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ওই ঘটনার পর ভারতে এর পুনরাবৃত্তি আর দেখা যায়নি। অথচ আমাদের দেশে এই জঘন্য ও পাশবিক ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে।

শেয়ারবাজার লুট করা হয়েছে কয়েকবার। ঠাণ্ডা মাথায় এমন লুটপাট হচ্ছে। ব্যাংকগুলোও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। অপরাধীদের বিচারের আয়োজন নেই। উল্টো ‘সাফসুতরো’ করার উদ্যোগ বেশি দেখা যায়। সোজা কথায় অপরাধের প্রণোদনা চলছে। আর উন্নয়নের চলছে বিপুল আয়োজন। এ আয়োজন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই। যারা প্রশ্ন করবেন, তারা ‘জাতির শত্রু’ বনে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই কেউ আর আগবাড়িয়ে প্রশ্ন তুলতে সাহস পান না। তবে ভেতর থেকে মহাদুর্নীতির খবর ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। রূপপুর পরমাণু প্রকল্পে হরিলুটের তথ্য ফাঁস হয়েছে। মাত্র একটি বালিশ বাসায় তুলতে খরচ পড়ছে ৭৬০ টাকা। বালিশটির দাম প্রায় ছয় হাজার টাকা। প্রতিটি খাট কেনায় খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। ওঠাতে খরচ লেগেছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা। প্রতিটি বৈদ্যুতিক চুলা কিনতে খরচ পড়েছে সাত হাজার ৭৪৭ টাকা এবং প্রতিটি ওঠাতে খরচ হয়েছে ছয় হাজার ৬৫০ টাকা। প্রতিটি বৈদ্যুতিক কেটলি কেনার জন্য খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার ৩১৩ টাকা। ওঠাতে লেগেছে দুই হাজার ৯৪৫ টাকা। আসবাবপত্র ক্রয় ও তা বাসায় ওঠানোর খরচের বিস্তারিত ফিরিস্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মূল প্রকল্পের সামান্য একটি অংশ আবাসন প্রকল্প। তাতেই এই সীমাহীন দুর্নীতি।

প্রকল্পের বাংলাদেশী অংশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের খবরও প্রকাশিত হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক বেতন পাচ্ছেন প্রায় সাত লাখ টাকা। তার গাড়ি চালকের বেতন ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৭০৮ টাকা। রাঁধুনি ও মালীর বেতন ৬৩ হাজার ৭০৮ টাকা। প্রকল্পের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি। এ প্রকল্পের এটি একটি পরিপূরক সামান্য অংশ। এ প্রকল্পের এক লাখ ১৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার বরাদ্দ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় উঠতে যাচ্ছে। সুতরাং অনুমান করা যায় এর আকার-আয়তন কতটা। প্রকল্পব্যয় নিয়ে স্বচ্ছ কোনো হিসাব নেই। এর ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে কারো কাছে কোনো জবাবদিহি রয়েছে; তাও জানা যায়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশের উন্নয়নের বিপুল আয়োজন নিয়ে গোলক ধাঁধা তৈরি হচ্ছে।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement