ঘণ্টা বাঁধবে কে?
- মীযানুল করীম
- ১৭ মার্চ ২০১৯, ১৯:২৭
এখন সারা বিশ্বে আলোচ্য বিষয়গুলোর একটি হলো কাশ্মির। অর্থাৎ সেখানে পাক-ভারত পাল্টাপাল্টি হামলা ও অভিযোগ। এই ইস্যুর গোড়া হচ্ছে, কাশ্মিরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দাবি। বর্তমানে সেটা যেন গৌণ। বরং মুখ্য হয়ে উঠছে কাশ্মিরের দুই পাশের দুই রাষ্ট্রের ‘ঐতিহ্যবাহী’ দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত।
১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জনের মতো ভারতীয় আধা সামরিক সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা বিরাট চমক সৃষ্টি করেছিল। তবে ২৬ ফেব্রুয়ারি খোদ পাকিস্তান ভূখণ্ডে জঙ্গিদের কথিত আস্তানা বরাবর ভারতের ডজনখানেক যুদ্ধবিমানের প্রচণ্ড হামলা আরো বড় চমক সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে, তখন এক হাজার টন বোমা ফেলা আর ২৫০ থেকে ৩০০ জঙ্গি হত্যার ভারতীয় দাবি চমকের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এর আগে থেকেই দুই দেশের কাণ্ডারিদের পরস্পরকে দেয়া ধমকের সুর এবার খুব চড়াগলায় উন্নীত হলো।
ভারতের হামলার পরদিনই পাকিস্তানে প্রতিবেশী দেশটির একটি জঙ্গি বিমান অনুপ্রবেশ করলে সেটি ধাওয়া করে ভূপাতিত করা হয়। ধরা পড়ে যান ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। অত্যন্ত দীর্ঘ গোঁফের অধিকারী ওই ব্যক্তি বিমানবাহিনীর একজন উইং কমান্ডার। তার বাবা ছিলেন একই বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। ধরা পড়ার পর পাকিস্তানি সৈন্যরা অভিনন্দনকে এলাকাবাসীর গণপিটুনি তথা বেঘোরে প্রাণ হারানো থেকে রক্ষা করেছে। এই অপ্রত্যাশিত সদাচরণে মুগ্ধ, অভিনন্দনের জন্য আরো বড় চমক ছিল অপেক্ষমাণ। পরদিনই তাকে মুক্ত করে ভারতে ফিরিয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশে। এই অভাবনীয় সৌজন্যকে সাবেক ক্রিকেট সুপারস্টার ইমরানের সর্বশেষ ‘ছক্কা’ বলে প্রশংসা করা হচ্ছে। এটি বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের সাবেক অধিনায়কের চার না ছয় রানের ‘মার’, সে বিতর্ক আপাতত না হয় তোলা থাক।
বড় চমক হলো, বালাকোটে ভারতীয় হামলার ঘটনা। প্রথমে পাকিস্তানের জিও টিভির প্রধান এবং প্রখ্যাত মিডিয়াব্যক্তিত্ব হামিদ মীর নিজের সরেজমিন পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের ভিত্তিতে বলেছেন, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটের জঙ্গলে ভারতীয় বিমান হামলায় কেবল কিছু গাছপালা নষ্ট হয়েছে, আর একটা ‘মরা কাউয়া’ (মৃত কাক) পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এটি না হয় পাকিস্তানি একটি টিভি চ্যানেল কিংবা সে দেশেরই একজন সাংবাদিকের ভাষ্য। কিন্তু খোদ ভারতের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শুরুতেই সন্দেহ করেছেন ভারতের সেই হামলায় নিহত জঙ্গির সংখ্যা নিয়ে।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ চমক হলো, বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছে, ভারতের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভুয়া ছবি দিয়ে প্রমাণের প্রয়াস পেয়েছেন বালাকোট হামলার ঘটনা। জানা গেছে, ইউনিয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং টুইটে সংযুক্ত ভিডিওতে দাবি করেছেন, বালাকোটে বিমান হামলায় জঙ্গি গোষ্ঠীর ট্রেনিং ক্যাম্প ধ্বংস হয়েছে। এতে দু’টি ছবি দেখানো হয়, যার একটি ওই হামলার আগের; অন্যটি হামলার পরের বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ভারতের একটি নামকরা টিভি চ্যানেল এবং ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে সম্প্রচারিত ভিডিওটির সত্যতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
আলোচ্য ভিডিওর প্রথম স্যাটেলাইট চিত্র হামলার আগে, ২৩ ফেব্রুয়ারির বলে দাবি করা হয়। আর দ্বিতীয়টি ২৬ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ বালাকোটে হামলার দিন ওই ঘটনার পরে তোলা বলে দাবি করা হয়েছে। এতে বিধ্বস্ত একটি ভবন দেখিয়ে বলা হলো, এটিকে ধ্বংস করেছে ভারতীয় বিমান। অপর দিকে, বিবিসির ঋধপঃ পযবপশ দলের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আসলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নয়; এই ছবি বেশ কয়েক বছর আগেই তোলা। ভিডিওতে যে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের উল্লেখ রয়েছে, তার ভিত্তিতে বিবিসি বলেছে, এ ছবি ‘জুম আর্থ’ নামের ওয়েবসাইটের। এর প্রতিষ্ঠাতা পল নিভ বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিমান হামলার সাথে ওই ছবিটির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ছবিতে দেখা যায়, ওই ভবনের নির্মাণকাজ চলছে।’
গত ৭ মার্চ সংবাদপত্র নয়াদিল্লি থেকে রয়টার্স পরিবেশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর ছাপিয়েছে। এর বিষয় হলো, বালাকোটে ভারতের প্রচণ্ড হামলা সত্ত্বেও জয়েশ-ই-মোহাম্মদের মাদরাসা অক্ষত রয়েছে। খবরের সাথে কোনো কোনো পত্রিকায় হাই রেজুলেশনের একটি উপগ্রহ চিত্র দেয়া হয়েছে। এটি বালাকোটের সেই অক্ষত মাদরাসার ছবি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্যাটেলাইট অপারেটর প্রতিষ্ঠান প্ল্যানেট ল্যাবসের উপস্থাপিত আলোকচিত্রে দেখা গেছে ৪ মার্চের, অর্থাৎ ভারতীয় হামলার প্রায় এক সপ্তাহ পরের অবস্থা। সেদিনও এলাকার ছয়টি ভবন আগের মতো দাঁড়িয়েছিল। গত বছর এপ্রিলে একই স্থানের উপগ্রহ চিত্রের দৃশ্যের সাথে এর পার্থক্য নেই।
মলার পরপরই ভারত দাবি করেছে, এবার সেখানে বিমান হামলায় জয়েশের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে নিহত হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ জঙ্গি। উপগ্রহের মাধ্যমে গৃহীত ছবিতে দেখা গেছে, অক্ষুণœ ভবনগুলোর গায়ে হামলাজনিত কোনো ছিদ্র বা ফুটো নেই। কোনো গাছপালাও ভেঙে পড়েনি মাদরাসার পাশে। এ অবস্থায় জঙ্গি টার্গেটে কার্যকর প্রচণ্ড হামলার যে দাবি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ আরো বেড়েছে। রয়টার্স বলেছে, বালাকোটে ভারত কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। স্যাটেলাইট ইমেজের দুইজন মার্কিন পর্যবেক্ষক বলেছেন, বড় ধরনের অস্ত্র ব্যবহৃত হলে তার প্রমাণ স্যাটেলাইটে ধরা পড়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।’
পাশ্চাত্যের রয়টার্স ছাড়াও শুরুতেই অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, হাফিংটন পোস্টের সাংবাদিকেরা জানান, ভারতের উল্লিখিত হামলার স্থানে ধ্বংসের কোনো চিত্র চোখে পড়েনি। কিছু পাইনগাছ পড়ে গেছে, একজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন এবং ফাঁকা মাঠে গর্ত দেখা গেছে। পাকিস্তান সরকার বলেছে, বালাকোটে হামলায় প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এ দিকে, পাকিস্তানে ভূপাতিত ভারতীয় যুদ্ধবিমানের আটক এবং পরে মুক্ত বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমানের দীর্ঘ গোঁফজোড়া যেমন তার ব্র্যান্ড; তেমনি পাকিস্তানে সিগারেটের একটি বিজ্ঞাপনে তার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, তার হাতে ধরা সিগারেট; আর তিনি সুখটান দিয়ে বলছেন, কী চমৎকার। এর চেয়েও বড় খবর, হিন্দু ধর্মের প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের এক মন্ত্রী হঠাৎ তার মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ডেকে এনে তাকে পদত্যাগ করতে বলার পর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সাম্প্রদায়িক মনোভাব কিংবা কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা অবশ্যই নিন্দনীয়। পাকিস্তানের এ দৃষ্টান্ত ভারতের হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন মহলকে মানবিক হতে উদ্বুদ্ধ করুক- এটাই সবার কামনা।
কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতের সিআরপিএফ সদস্যদের হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী করা হয়েছে ‘জঙ্গি’ সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদকে। গত কয়েক দিনে তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তানের প্রশাসন। বাহওয়ালপুরে তাদের সদর দফতরসহ কিছু স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অপারেশনের ধারাবাহিকতায় ১৮২টি মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। তবে ‘জয়েশ’ নিয়ে পাক সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের স্ববিরোধী বক্তব্য বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে। এতে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ইমরান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ধার কমে যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেছেন, জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার আছেন পাকিস্তানেই। কিন্তু সামরিক বাহিনীর একজন মেজর জেনারেল এবং আইএসপিআরের মহাপরিচালক আসিফ গফুর বলেছেন, জয়েশের কোনো অস্তিত্ব পাকিস্তানে নেই। এ দিকে ভারতের এনডিটিভির খবরে প্রচার করা হয়েছে, সাবেক পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ও এক সময়ের সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ বলেছেন, তার আমলে আইএসআই ভারতে হামলার কাজে ব্যবহার করেছিল জয়েশ-ই-মোহাম্মদকে। উল্লেখ্য, ওই সশস্ত্র সংগঠন পাকিস্তানে নিষিদ্ধ এবং এটি জাতিসঙ্ঘেরও নিষেধাজ্ঞাভুক্ত।
উপমহাদেশের দুই প্রধান রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক বিরোধের প্রধান উৎস কাশ্মির। দেশ দুটো একে অন্যের প্রতি আজন্ম বৈরী। ইস্যুটি ৭২ বছর আগে তাদের জন্মলগ্ন থেকেই। কাশ্মির নিয়ে দেশ দু’টি যুদ্ধ করেছে ১৯৪৮ ও ১৯৬৫ সালে (’৭১ সালে তারা যুুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে)। উভয়ের অভিন্ন দাবি, আমরাই যুদ্ধে জিতেছি। কার্যত উভয়েই এটা করে বিরাট ক্ষতির অঙ্ক গুনেছে। এবার বালাকোটে ভারতের বিমান হামলার পরও একই ধরনের দাবি দুই দেশেরই। ভারত বলেছে, আমাদের জঙ্গিবিমানের মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিবিমান পালিয়ে গেছে। পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় বিমানগুলো আমাদের বিমানের তাড়া খেয়ে পালিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কার বিমান তাড়িয়েছে, কার বিমান পালিয়েছে, সে বিতর্কের পাশাপাশি এটাও সত্য, দুই দেশের যুদ্ধোন্মাদনার মধ্যে কাশ্মির সীমান্তের নিরীহ লোকজনের অনেকে প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের দাবি, কাশ্মির আমাদের। ভাষ্যকাররা বলছেন, Both India and Pakistan claim the whole of kashmir, but rule only its part. অর্থাৎ দুই দেশেরই দাবি গোটা কাশ্মিরের ওপর। তবে তারা আলাদাভাবে কাশ্মিরের মাত্র অংশবিশেষই শাসন করছে।’ কাশ্মির নিয়ে তাদের মধ্যে Low intensity war চলছে বহুদিন ধরে। সেটা এবার বিমান হামলা ও পাল্টা হামলার সূত্রে high intensity war হওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
তবে শেষ অবধি হয়তো পুরোদস্তুর যুদ্ধে ভারত-পাকিস্তান লিপ্ত হবে না। এর কারণ- প্রথমত, উভয়ের হাতেই পারমাণবিক মারণাস্ত্র বা অ্যাটম বোম রয়েছে। ফলে এক ধরনের ভারসাম্য দেখা যায়- যা শক্তির যতটা, তার চেয়ে বেশি ভয়ের। স্নায়ুযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্র ও তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়ার পূর্বসূরি) মধ্যে এমন পারস্পরিক ‘ভয়ের ভারসাম্য’ বা ‘দাঁতাত’ দেখা যেত। কারণ, মস্কো আর ওয়াশিংটন, উভয়ই মজুদ করেছিল পরমাণু অস্ত্রসম্ভার। দ্বিতীয়ত, এবার পুলওয়ামায় জঙ্গিদের ভয়াবহ নাশকতার জের ধরে, পাকিস্তানের উত্তর প্রান্তে ভারত যে প্রচণ্ড হামলা চালিয়েছে, এর সামরিক তাৎপর্যের চেয়ে রাজনৈতিক গুরুত্ব বেশি। ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে পাকিস্তানবিরোধী প্রপাগান্ডা ও প্রস্তুতি যত তুঙ্গে তোলা যাবে, দিল্লির ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী মহলের জন্য তা হবে ততই লাভজনক, এমন হিসাব করেছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপিসহ ‘সঙ্ঘপরিবার’। অবশ্য অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তান কর্তৃক আটক ভারতীয় পাইলটের মুক্তিদানের পদক্ষেপ মোদির রাজনৈতিক ফায়দা তোলার মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কাশ্মির মানচিত্রে আছে প্রাচীনকাল থেকে। কাশ্মির সমস্যা আছে, বিশেষত ১৯৪৭ সাল থেকে। সেখানে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত ঝুলছে প্রায় ৭০ বছর। আর ইনতিফাদা বা গণ-অভ্যুত্থান চলছে তিন দশক ধরে। এসব কিছুই অনস্বীকার্য। যত দিন কাশ্মিরের জনগণ স্বাধীনভাবে মত দিতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তারা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার পাবে, সে পর্যন্ত এই সঙ্কটের অবসান দূরে থাক, তা দিন দিন বাড়বে।
অর্থাৎ কাশ্মির নিয়ে উপমহাদেশে উত্তেজনা এবং দুই দেশের রণসজ্জা ও যুদ্ধাশঙ্কার মূল কারণ থেকেই যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা বারবার বলছি, কাশ্মিরের মানুষ কোন দেশের সাথে যোগ দেবে, নাকি নিজেরা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করবে- এই ইস্যুতে অবিলম্বে সুষ্ঠু, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। কথাটি নিঃসন্দেহে খুব ভালো। কিন্তু এই গণভোট তো ভারতের সদিচ্ছা ছাড়া বাস্তবে সম্ভব নয়। ভারতই কাশ্মির ইস্যুকে প্রথমে জাতিসঙ্ঘে নেয়ার মাধ্যমে এর আন্তর্জাতিকীকরণ করেছে এবং গণভোটের ব্যাপারে স্পষ্ট সম্মতি দিয়েছিল। তবে এযাবৎ যে অভিজ্ঞতা সবার, তাতে বলতে হয়, ভারত এখন গণভোট করতে চাইবে না মোটেও।
কারণ, সে বারবার বলে আসছে, কাশ্মির তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাশ্মিরের যে বিশেষ অধিকার দেয়া হয়েছিল, ভারতীয় সংবিধানে তা অনেক আগেই কার্যত বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আর জাতিসঙ্ঘ প্রসঙ্গে বলা যায়, বিশ্বসংস্থাটি নানাভাবে দুর্বল, দোদুল্যমান ও পরনির্ভরশীল। জাতিসঙ্ঘ কখনো ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম’, কখনো পরাশক্তিবিশেষের মোড়লিপনার কাছে অসহায় (আর মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যের ব্যাপক অভিযোগ তো আছেই)। জাতিসঙ্ঘ কাশ্মিরে গণভোটের জন্য নিজের সিদ্ধান্ত নিজে ৭০ বছরেও বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণ এটাই।
কাশ্মির ইস্যুর স্থায়ী সুরাহার জন্য ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে হবে’। কিন্তু কাজটি করবে কে?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা