২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নির্বাচনী তামাশা

-

রোববার উত্তর কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘সাধারণ নির্বাচন’। দেশটির কোনো খবর আমাদের কাছে খুব একটা গুরুত্ব রাখে না। নির্বাচনের খবরটিও তাই আমাদের দেশের মিডিয়ায় সেভাবে আসেনি। আন্তর্জাতিক সংবাদ হিসেবে ভেতরের পাতায় একটি পত্রিকা ‘ঘাড় ধরে ভোট গ্রহণ’ শিরোনামে উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনের খবর ছেপেছে। ঠিক আমাদের দেশে যেদিন ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে; সেদিন এ ধরনের একটি শিরোনাম দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অনেকের।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনের খবরাখবর নেয়ার চেষ্টা করে জানা গেল, প্রতি পাঁচ বছর পর দেশটিতে ‘সাধারণ নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলির এই নির্বাচনে ৬৮৭ সদস্য নির্বাচিত হন এ দিন। আগেরবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটার ‘অংশগ্রহণ’ ছিল ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর মনোনীত প্রার্থীদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে শতভাগ ভোটার। এবারো ভোটারের অংশগ্রহণ হার কিছুটা এদিক-ওদিক হলেও ক্ষমতাসীনদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার হার শতভাগ অর্থাৎ একই রকম।
‘ঘাড় ধরে’ অংশ গ্রহণের ব্যাপারটির ব্যাখ্যা পাওয়া গেল। গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থার সাথে উত্তর কোরিয়ার এ নির্বাচনের কোনো মিল নেই; যদিও দেশটির নাম হচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া। দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য এ ভোট কোনো অবদান রাখে না। ভোটাররা প্রার্থী বাছাই করার কোনো সুযোগ পান না। ব্যালটে কেবল একজন প্রার্থীর নাম থাকে। কাকে নির্বাচন করতে হবে, সেটি ঠিক করে দেয় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি। সেই ব্যালট নিয়ে প্রকাশ্যে বাক্সে ভর্তি করতে হয় ভোটারদের। ভোটারেরা শুধু ব্যালট পেপার বাক্সে ভরার কাজটি করেন। একটি পেনসিল রাখা থাকে ভোটারদের জন্য। তিনি চাইলে কোনো প্রার্থীকে ক্রস চিহ্ন দিয়ে তার ভিন্ন মত প্রকাশ করতে পারেন। বাস্তবে এমনটি করার দুঃসাহস কেউ করেন না।
জবরদস্তিমূলক এমন ভোটে অংশগ্রহণের পর ভোটকেন্দ্রের প্রাঙ্গণে গিয়ে ভোট দিতে পারার জন্য নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হয় ভোটারদের। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে নাচগানে ব্যস্ত একদল চিয়ার লিডার রয়েছেন। সুরের মূর্ছনায়, গানের তালে তারা নাচতে থাকেন। সবাইকে তাদের সাথে নেচে গেয়ে দেখাতে হয় যে, শাসকদের প্রতি তারা সন্তুষ্ট। ভোট দেয়া প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক। উত্তর কোরিয়ায় প্রত্যেক নাগরিককে শাসক কিম পরিবারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করতে হয়। আর এই ভোট সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে করে দেখানোর একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ কাজ হয়ে যায়। কতজন নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, ভোটারের অংশগ্রহণ দেখে সেটি নিশ্চিত হতে চায় ক্ষমতাসীনেরা।
তিনটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে দেশটিতে। একটি ক্ষমতাসীন একচ্ছত্র নেতা কিম জং-উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি। অন্য দু’টি দলের দৃশ্যমান কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। মূলত সাজানো গণতন্ত্রের প্রয়োজনে নামমাত্র দল রাখা হয়েছে। জনগণের কথিত ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্টেরও কোনো ক্ষমতা নেই। তারা শুধু সুপ্রিম লিডারের পছন্দ করা আইনকানুন পাস করিয়ে নেন। একক নেতার ইচ্ছার প্রতিফলন করার জন্য এটি একটি রাবার স্ট্যাম্প সংসদ।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সাথে উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনী ব্যবস্থার কোনো মিল নেই। কারণ, এখানে অসংখ্য প্রার্থী। যে কেউ চাইলেই নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন। দৃশ্যত ভোটারদের ‘স্বাধীনতার’ অন্ত নেই। চাইলে তারা ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন। অবশ্য না এলে আরো ভালো। তবে কখনো কখনো একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীকে তারা ভোট দিতে বাধ্য হন। একটু বাড়াবাড়ি এ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীনেরা করে থাকেন। সেটা খুব বেশি ক্ষেত্রে হয় না। নির্বাচনে কে জিতবেন, সে ব্যাপারে কেউ খুব বেশি কিছু করতে পারেন না। সাধারণত ক্ষমতাসীন দল এটা নির্ধারণ করে থাকেন। নির্বাচন কমিশন অনেক সময় এসব ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখেন। রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে ফেললেও তাতে তাদের কোনো আপত্তি থাকে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে থাকে; কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারাও চোখ বন্ধ করে রাখেন। সেই অর্থে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার মতো আরেকটি ‘অনন্য’ নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে। ‘সভ্য বিশ্বের’ কোনো শাসক যদি উত্তর কোরিয়ার মডেলটি পছন্দ না করেন, তাহলে তারা বাংলাদেশের মডেলটি গ্রহণ করার কথা ভেবে দেখতে পারেন। এ ধরনের ব্যবস্থায় সহজেই ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যায়। বাইরের গণতান্ত্রিক বিশ্বও ‘গণতন্ত্র’ চর্চা হচ্ছে বলে কপট হাসি হাসতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচনে আরেকটু বৈচিত্র্য ছিল। সম্ভবত, নুরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হওয়ার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো: আখতারুজ্জামানের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় এই বৈচিত্র্য দেখা গেল। ডাকসুর একেবারে শীর্ষ পদটি পেয়ে গেলেন এমন একজন, যিনি ক্ষমতাসীন দলের কেউ নন। জাতীয় নির্বাচনের বাইরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমনটি চিন্তাও করা যায়নি। সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন ‘সফলভাবে’ স্থানীয় সরকারের সবগুলো শীর্ষ পদে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দের লোকদের বসিয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে এবারের আয়োজন ছিল ব্যতিক্রম। ভোট শুরু হওয়ার আগেই ব্যালটে সিল মেরে রাখা, প্রার্থীদের মারধর ও বাধা দান, কৃত্রিম লাইন তৈরি করে সাধারণ ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করা, ইত্যাদি হয়েছে। আগে থেকে নির্বাচন কমিশনের মতো কিছু ডক্টিরিং ডাকসু কর্তৃপক্ষও করেছে। যেমন, হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট নেয়া, আগের দিনই ব্যালট পেপার হলে পাঠিয়ে দেয়া ইত্যাদি। সংবাদমাধ্যম কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সীমিত সংখ্যক মিডিয়া কর্মীকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে দেয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে ছাত্রলীগ ছাড়া সবাই কর্তৃপক্ষের সাথে দ্বিমত পোষণ করলেও নির্বাচন কমিশনের মতো ডাকসু কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের হাত ধরাধরি করে চলেছে।
নির্বাচনে চরম অনিয়মের কারণে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বিব্রত হয়েছেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন, লজ্জাবোধ করেছেন, হতাশ হয়েছেন। অপর দিকে উপাচার্য মো: আখতারুজ্জামান এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি খুব আনন্দ অনুভব করছি, আমাদের শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা রেখে যেভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে; এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। অর্থাৎ একটি নির্বাচনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল দু’জন ব্যক্তির মনোভাব স¤পূর্ণ বিপরীত। একটি ব্যাপারে বিপরীতমুখী দুটো কথা একসাথে কখনো সত্যি হতে পারে না। তবে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের মনোভাবের সাথে অনেকের মনোভাব মিলে যাচ্ছে। যেমন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, পাকিস্তান আমলের ইয়াহিয়া-আইয়ুবের আমলকেও হার মানিয়েছে এ ডাকসু নির্বাচন। প্রায় কাছাকাছি মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপিদের অনেকে।
বাস্তবে নির্বাচন কমিশনের চমৎকার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মো: আখতারুজ্জামান। ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ‘সার্চ কমিটি তাকে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো: আখতারুজ্জামানকে) খুঁজছে আগামীর ইসি পদে।’ ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার একটি কার্টুন ছেপেছে নির্বাচনের পরদিন তাদের প্রথম পাতায়। ওই কার্টুনটি দেখে যে কেউ ভাবনায় পড়ে যাবেন। ব্যাপারটা কী? একজন চশমাওয়ালা, যার চেহারার বাম পাশটা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি ও গোঁফ। অন্য দিকে, ডান পাশটায় ক্লিন শেভড। চেহারার একপাশে লেখা ‘সি’ অপরপাশে ‘ইসি’। একজন অনেকক্ষণ ভাবনার পর ঠিক ধরে ফেলবেন দু’জন মানুষকে সেঁটে দেয়া হয়েছে একই ফ্রেমে। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির সিইসি নুরুল হুদার সাথে ক্লিন শেভড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো: আখতারুজ্জামানের চেহারার এতটা মিল! ডেইলি স্টার এ দিন তাদের প্রধান খবরের শিরোনাম করেছে ‘শঙ্কা সত্যে পরিণত হলো’। আর নিচের কার্টুনটিতে তারই কারিগর হিসেবে সিইসির সাথে অর্ধেক চেহারা মিলিয়ে দেয়া হলো ভিসির। দারুণ একটা প্রদর্শনী।
বাংলাদেশের অনন্য নির্বাচনী ব্যবস্থায় সরকার, রাষ্ট্র ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন সবাই একাকার হয়ে গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেছেন, ইভিএম চালু করলে আর রাতে ভোটবাক্স ভরাট করার সুযোগ থাকবে না। একটি পত্রিকা কার্টুন এঁকে তার ওপর লিখেছেÑ ‘এবার রাত জেগে বাক্স ভরতে হবে না!’ এখন...‘যে কথাটি কার্টুনে প্রকাশ করা হলো না সেটা হচ্ছে, এখন ইভিএম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে কাজটা দিনেই সারা যাবে। এ জন্য কষ্ট করে রাত জাগতে হবে না।’ আগের রাতে ভোটবাক্স ভর্তি করার অভিযোগ তিনি এর আগে অস্বীকার করে আসছিলেন। আর আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেমন হবে, সে ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘ঠিক জাতীয় নির্বাচনের মতোই সুষ্ঠু হবে স্থানীয় নির্বাচন।’
এরপর স্থানীয় সরকারের প্রথম নির্বাচনে (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) দেখা গেল ভোটাররা হাওয়া হয়ে গেছেন। ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী সকালবেলায় সম্ভবত ভোটারশূন্য কেন্দ্র দেখে আহ্বান জানান খিচুড়ি খেয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য। বস্তুত বাংলাদেশে নির্বাচন থেকে ভোটাররা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের ডাকাডাকি করেও ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে আনা যাচ্ছে না। এরপর প্রথম দফায় ৭৮ উপজেলার নির্বাচনে একই চিত্র দেখা গেল। একটি পত্রিকা ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত এই উপজেলা নির্বাচনের একটি কেন্দ্রের ছবি দিয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন পোলিং এজেন্ট দুপুর ১২টায় সটান ঘুমাচ্ছেন ভোটের বাক্স একপাশে রেখে। পত্রিকাটি ‘সরেজমিনে জয়পুরহাট’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদকেরা লিখেছেন, কেন্দ্রের বিভিন্ন ভোট কক্ষে বসে আছেন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ২২ কর্মকর্তা। কেন্দ্রে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ জন সদস্যও। ভোট নেয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত। প্রথম দেড় ঘণ্টায় এলেন তিন ভোটার। সারা দিনে ভোট পড়েছে ৬৭টি। ভোট পড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এটি একটি নারী ভোটকেন্দ্র হলেও অন্য সব কেন্দ্রেও ভোটার উপস্থিতি একই ধরনের ছিল। ভোটের দিনের ভোটকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগ সময় গেছে ভোটারশূন্য অবস্থায়।
পত্রিকাটি উপজেলা নির্বানের পরের দিন শিরোনাম করেছে, ‘পর্যাপ্ত আয়োজন, ছিল না তেমন ভোটার।’ সংবাদের ওপর হাইলাইট করে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘ইসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ছিল। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের সময় কাটে ভোটারের অপেক্ষায়।’ নির্বাচনী ব্যবস্থা যে একটা পরিপূর্ণ ছেলেখেলায় পরিণত হয়েছে সেটাই বোঝা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন এর জন্য স¤পূর্ণ দায়ী। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করাই ছিল তাদের একমাত্র দায়িত্ব। সেটি না করে তারা স¤পূর্ণরূপে ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্য করেছে। ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন এখানে প্রাসঙ্গিক। দেশটির কর্তৃত্ববাদী শাসক সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন সৈন্য পাঠিয়ে দেশটির প্রধান বিচারপতিকে গ্রেফতার করে জেলে ভরেছেন। কিন্তু ধরা খেয়ে গেছেন দেশটির নির্বাচন কমিশনারদের কাছে। তারা ইয়ামিনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করেন। এই অবস্থায় ফল পাল্টে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনারদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ইয়ামিন। তারা এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। অবশ্য তারা শেষ পর্যন্ত পালিয়ে শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো অবস্থায় নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছু হটেননি তারা।
বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অর্থহীন হওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ভোটাররা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী, ভোট দেয়ার অধিকার হারালেন এ নির্বাচনে। তার আগেই বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা চরম বিতর্কিত হয়ে গেছে। এরপরও সাধারণ ভোটাররা আশা করেছিলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে হয়তো তারা ভোটাধিকার চর্চা করার সুযোগ পাবেন। বাস্তবে এমনটি ঘটেনি। আর এখন প্রতিটি নির্বাচন যেন এক একটি তামাশা।
ললংযরস১৪৬@ুধযড়ড়.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement