’৬৯-র গণ-অভ্যুত্থান : এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস
- মীযানুল করীম
- ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:১৮
‘ট্রাক ট্রাক ট্রাক/শুয়োরমুখো ট্রাক এসেছে দুয়োর বেঁধে রাখ’- ’৬৯-র ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমিকায় কবি আল মাহমুদের এ কবিতা অনেকেরই জানা। তিনি কবিতায় সে আন্দোলনের নায়কদের স্মরণ করেছেন। আসাদ ও মতিউরসহ অনেকেই তখন জাতির মুক্তিসংগ্রামের একটি অবিস্মরণীয় পর্বে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
প্রতি বছর নতুন ক্যালেন্ডারের নতুন পাতা উল্টিয়ে জানুয়ারির পথ চলা। মাসটির বিশ ও চব্বিশ তারিখ যথাক্রমে আসাদ ও মতিউরের মৃত্যুদিবস। ওই গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা মূলত আগের মাসে অর্থাৎ ’৬৮ সালের ডিসেম্বরে। ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বা আসাদের জীবনদানের ঘটনা গণ-আন্দোলনের আগুনের উত্তাপ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের উত্তেজনা চার দিন পরেই ২৪ জানুয়ারি যেভাবে বিস্ফোরিত হয়, তাতে দিনটি ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’-এর মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। আর এই নজিরবিহীন আন্দোলন একনাগাড়ে চলেছিল অন্তত সে বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত।
অতীতের মতো এবারো ২০ ও ২৪ জানুয়ারি এসেছিল। তারিখ দুটি এসেছে, আবার চলেও গেছে। যারা সে গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত ছিলেন, নিদেনপক্ষে ঐতিহাসিক সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের মনে স্বাভাবিকভাবেই তার কিছুটা অনুরণন অনুভূত হয়। তবে নতুন প্রজন্ম ১৯৬৮-৬৯ সালের অগ্নিঝরা সে দিনগুলোর কথা বেশি জানে বলে মনে হয় না। আজো এ জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ঊনসত্তরের ঠিক আগেই আটষট্টি। তেমনি, ১৯৬৯ সালের জনজাগরণের ইতিবৃত্ত অনুধাবনের জন্য এর পটভূমি জানার দরকার পড়ে। ’৬৮ সালের মাঝামাঝি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে সবিশেষ আকর্ষণ ও গুরুত্বের বিষয় ছিল ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি। একদিকে তদানীন্তন পাকিস্তানের সেনা শাসকের স্বৈরাচারিতার এক দশক পূর্ণ হচ্ছে, অন্য দিকে নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চেতনা তীব্র হয়ে উঠেছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে পত্রিকায় প্রতিদিন আগরতলা মামলার শুনানির বয়ান বিস্তারিত ছাপা হচ্ছে। বলাই বাহুল্য, এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত, তথা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি তখনো ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে অভিহিত হননি। ঘনিষ্ঠজনদের কারো ‘মুজিব ভাই’, কারো বা ‘শেখ সাহেব’ ১৯৬৬ সাল থেকেই কারাবন্দী। তখন তার নেতৃত্বে ৬ দফা আন্দোলন বিশেষ করে ছাত্র-শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ফলে ’৬৬ সালের ৭ জুনের হরতাল দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর মুজিবের গ্রেফতারসহ সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে তার দলের কর্মকাণ্ড আপাতত কম দৃশ্যমান হতো। কিন্তু তাদের ব্যাপক সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক ও অভ্যন্তরীণ অব্যাহত তৎপরতা এবং এর বিপরীতে, নানাবিধ বৈষম্যজনিত কারণে জনমনে ক্ষোভের বিস্তার ও সরকারের জনভিত্তির অভাব- এসব মিলে একটি বড় ধরনের গণ-আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছিল।
সে সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পত্রপত্রিকা ছিল আজকের তুলনায় অনেক কম। আওয়ামী লীগ সমর্থক দৈনিক ইত্তেফাক তখন বন্ধ; দৈনিক পাকিস্তান (পরে দৈনিক বাংলা) ও ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজ ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত; বামপন্থী হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংবাদ-এর প্রচার সংখ্যা ছিল বরাবরের মতো সীমিত। এর বাইরে প্রথমেই নাম করতে হয় বাংলা পত্রিকার মধ্যে দৈনিক আজাদ এবং ইংরেজি ডেইলি পাকিস্তান অবজার্ভারের। পত্রিকা দু’টি মোটামুটিভাবে বিরোধী দলকে প্রাধান্য দিত এবং গণতন্ত্রের সমর্থনে কলম চালিয়েছিল। ১৯৩৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত আজাদ-এর মহীরুহতুল্য শতবর্ষী মালিক-সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ তখন মৃত্যুশয্যায় (তিনি ’৬৮ সালের ১৮ আগস্ট ইন্তেকাল করেন)। এ সময়ে আজাদ-এর পাতায় ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলার শুনানি অর্থাৎ আদালতে সওয়াল জওয়াব, জেরা ও জবানবন্দীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খবর বিস্তারিত প্রকাশ করা হতো। এতে পত্রিকাটির চাহিদা ও প্রচারসংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এই মামলার খবরাখবর জনমনে বিরাট প্রভাব ফেলে এবং এর প্রভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণা অনেক পুষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রায় একই সময়ে ১৯৬৮ সালের আগস্ট মাসে আরেকটি ইস্যু প্রধানত ধর্মীয় মহলে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। ‘দক্ষিণপন্থী’ হিসেবে পরিচিত দলগুলো এই ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস পায়। ইস্যুটি হলো, একনায়ক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের একজন উপদেষ্টা কর্তৃক লিখিত একটি বই। এতে তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনা করেছিলেন ইসলাম নিয়ে। আলেমসমাজ এটাকে ভ্রান্তিপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
এদিকে জেনারেল আইয়ুবের ‘উন্নয়নের দশক’ পূর্তি উদযাপনের ব্যাপক তোড়জোড় চলছিল সরকারের উদ্যোগে পুরো দেশে। ১৯৫৮ সাল থেকে একনাগাড়ে দশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন সেনাপ্রধান হিসেবে কথিত বিপ্লব ঘটিয়ে ক্ষমতা বাগানো আইয়ুব। বুনিয়াদি গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রের বুনিয়াদ ধ্বংস করা, ইলেকটোরাল কলেজ গঠন করে সর্বজনীন ভোটাধিকার ক্ষুণœ করা, প্রহসনের রেফারেন্ডাম ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ‘নিয়ন্ত্রিত’ পার্লামেন্ট নির্বাচন, মুসলিম লীগের একাংশ নিয়ে ধামাধরা দল গঠন, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা কুক্ষিগত করা, কালাকানুন ও পুলিশ দিয়ে দমন-নিপীড়ন, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ, সুশাসনকে গৌণ করে উন্নয়নের চমক সৃষ্টি, প্রভৃতির মধ্য দিয়ে আইয়ুব খান তার নিরঙ্কুশ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং আনুষঙ্গিক সন্ত্রাসকে একটানা দশ বছর প্রলম্বিত করেছিলেন। তার ‘উন্নয়ন দশক’ উদযাপনের অংশ হিসেবে রাজধানী থেকে মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন ছিল।
আমাদের স্কুলের লাগোয়া কলেজ। ’৬৮ সালের অক্টোবর মাসের একদিন শেষবিকেলে উন্নয়ন দশক-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে কলেজের বিরাট হল ঘরে। স্কুল মাঠের একপ্রান্ত থেকে দেখা গেলো, অনুষ্ঠানের মঞ্চে এক যুবক মাইকে বলা শুরু করতেই হঠাৎ তার ওপর হামলা। প্রচণ্ড ঘুষি খেয়ে সে দাঁত মুখ চেপে ধরে সরে গেল। মূলত এটি ছিল তখনকার সরকারের ওপর জনমনে সঞ্চিত প্রচণ্ড ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সেদিন, বোধহয় উন্নয়নের জয়গান গাওয়া আর সম্ভব হয়নি। এ ঘটনা ঘটেছিল ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ পটভূমিতে।
সরকার দেশের যতই দৃশ্যমান উন্নয়ন করুক, তা জনগণের দ্বারা সমাদৃত হওয়া যেমন আবশ্যক, তেমনি কেবল উন্নয়নই জাতিকে এগিয়ে নিতে পারে না। প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনে উন্নয়ন চলে সুশাসনের হাত ধরে। ভাত-কাপড়-ঠাঁইয়ের অধিকারের মতো চিন্তা, বিশ্বাস ও মত প্রকাশ এবং সংগঠনের অধিকারও সভ্য সমাজে অপরিহার্য।
আবার অতীতে ফিরে যাই। আটষট্টির শেষ দিকে তৎকালীন পাকিস্তানের দু’অংশেই সরকারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। ‘পশ্চিম’ পাকিস্তানেও গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ‘পূর্ব’ পাকিস্তানে গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা হলো মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে। পরে এর চালিকাশক্তি হয়ে যায় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছাত্র নেতৃত্ব।
আমাদের সে মফস্বল শহরে জানুয়ারি থেকে সমাবেশের বক্তৃতায় আর মিছিলের স্লোগানে রাজপথ কেঁপে উঠছিল। প্রায় প্রতিদিন রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকত। নতুন ক্লাসের পড়া শুরু হবে কী? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মঘটে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। আমরা পড়তাম সরকারি পাইলট হাইস্কুলে। এক দিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান; অন্যতম জনদাবির জোয়ার। ছাত্ররা একে তো মিটিং-মিছিল করায় উৎসাহী; তদুপরি এ সুযোগে ক্লাস রুমে কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকার হাত থেকে রেহাই মিলবে। শিক্ষকদের প্রায় সবাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একাত্ম। কিন্তু স্কুল তো সরকারের নিয়ন্ত্রণে। অতএব, দু’কূল রক্ষার ব্যবস্থা করা হলো। ঠিক হলো, আমরা সর্বদলীয় মিছিলে অংশ নিয়ে দুপুরে ফিরে আসব স্কুলে। তখন স্যাররা কয়েক ঘণ্টা ক্লাস নেবেন। এভাবেই ‘সাপও মারা হলো, লাঠিও ভাঙল না।’ আমাদের মিছিলে যেতে না দিয়ে আসলে উপায় ছিল না। কারণ, তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত হতেন গণবিরোধী ও স্বৈরতন্ত্রী সরকারের সমর্থক হিসেবে। কেই বা জেনে শুনে নিজের গায়ে কালিমলেপন করতে চায়?
তবে বেশি দিন মিছিলের অগ্রভাগে গলা ফাটিয়ে শহর ঘুরে আসার সুখ সইল না শিক্ষার্থীদের কপালে। কারণ সব রাজনৈতিক দল আর সব ছাত্র সংগঠনের ঐক্য অচিরেই টুটে গেল। আবার যে যার পথে চলতে থাকে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও সমালোচনা থাকে অব্যাহত। জাতীয় পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি বা ‘ডাক’ গঠিত হয়েছিল ’৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে। এর প্রভাবে সারা দেশে ডান-বাম, ইসলামী ও সেকুলারÑ সব দলের লোকজন যৌথ মিটিং মিছিলসহ আন্দোলনে অবতীর্ণ হলেন ঐক্যবদ্ধভাবে। এতে নিশ্চয়ই অগণতান্ত্রিক সরকারের বুকে কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পরে যখন বিরোধী দলের ঐক্যের অবসান হলো এবং ‘ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই’ দশা দেখা গেল, তখন নিঃসন্দেহে আইয়ুব-মোনেম সরকার স্বস্তিবোধ করেছিল। ’৬৯-র গণ-আন্দোলনের এই অভূতপূর্ব ঐক্য আর দুঃখজনক অনৈক্যের বিষয়ে যথাযথ গবেষণা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিস্তারিত তুলে ধরা দরকার।
’৬৯-র গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও পরিণতিসহ এর রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কয়েক মাস স্থায়ী এই গণবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে যে রূপান্তর সবিশেষ লক্ষণীয়, তা হলো- স্বায়ত্তশাসনের দাবির মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়ে স্বাধিকার বা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের চেতনা সঞ্চারিত হয়েছিল। এটা ’৬৯ সালে ততটা প্রকাশ্য না হলেও ’৭০ সালের নির্বাচনের প্রচারণা ও পরিণীতির মাঝে মূর্ত হয়ে উঠেছিল।
’৬৯-র গণ-অভ্যুত্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয় যতটা গুরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়ে আজো ততটা পর্যালোচনা করা হয়নি বলা চলে। এর মধ্যে দৃষ্টান্তস্বরূপ প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংগ্রামী ভূমিকার কথা। ’৬৮ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে তিনিই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে গণ-আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ২০ জানুয়ারি মিছিলে প্রাণোৎসর্গকারী ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান তার দলের একজন সংগঠক। তবে বিশেষত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে ভাসানীসহ বামপন্থীদের নেতৃত্ব ও প্রভাব হ্রাস পেয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বদানের বিষয়। প্রধানত মওলানা ভাসানীর আন্দোলনে শেখ মুজিব ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়ার পর তিনিই পুরো আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।
দ্বিতীয়ত, তখনকার জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান সঙ্কট ছিল স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এ জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্রের ফেডারেল কাঠামো, সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন এবং সর্বজনীন ভোটাধিকারের নিশ্চয়তাসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং এ পথে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন। এসব দাবি নিয়ে ’৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তৎকালীন পাকিস্তানের রাজধানীতে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে বিরোধী দলের নেতাদের সাথে দফায় দফায় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু জনগণের বিপুল প্রত্যাশা সত্ত্বেও বৈঠক ব্যর্থ হয়। শুধু তাই নয়, বিরোধী দল বৈঠকে কোনো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে পারেনি এবং এরপর তাদের নিজেদের মধ্যে প্রকট বিদ্বেষ ও বৈরিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এর কারণ কী এবং এ জন্য কারা কতটুকু দায়ী, সে ব্যাপারে তথ্যবহুল আলোকপাত করা আবশ্যক। স্মর্তব্য, ’৬৯-র সে গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ না হলে হয়তো জাতি ১৯৭০ সালের বছরখানেক আগেই গণতন্ত্রের প্রশ্নে তাদের নির্বাচনী রায় প্রদান করতে সক্ষম হতো।
সর্বোপরি, ’৬৯-র ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতিতে আইয়ুব খান, তথা স্বৈরশাসকের পতন হলেও ক্ষমতায় এসেছিলেন তার মতো আরেক প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া খান। এই জেনারেল ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ তার ‘বস’-কে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখল করেন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান আইয়ুব খান একই কায়দায় তার ‘বস’ ইস্কান্দার মির্জাকে তাড়িয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ইয়াহিয়া ’৬৯ সালের ২৫ মার্চ প্রেসিডেন্টের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক দু’বছরের মাথায় ’৭১-এর একই দিনে ঢাকায় নজিরবিহীন গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কালো ইতিহাস রচনা করেছিলেন।
সফল গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতিতে দেখা যায়, স্বৈরাশাসকের পতন ঘটে এবং এর অব্যবহিত পরই গণতান্ত্রিক সরকার কায়েমের আয়োজন বা প্রস্তুতির সূচনা হয়। ’৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের অবসান ঘটেছিল ইয়াহিয়া খানের সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। কেন ও কিভাবে এই অদ্ভুত ফল জাতিকে গলাধঃকরণ করতে হয়েছিল, সে বিষয়ে প্রাসঙ্গিক সব কিছু জানা ও পর্যালোচনা করা উচিত বৈকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা