করজে হাসানার ইসলামী নীতির ব্যাপক প্রচলন প্রয়োজন
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৪১
কোরআনের কয়েকটি আয়াতে ‘করজে হাসানা’র কথা বলা হয়েছে। করজে হাসানার অর্থ হচ্ছে এমন ঋণ বা করজ দেয়া যেটা সময়মতো পরিশোধ করা হবে; কিন্তু দাতা কোনো অতিরিক্তি অর্থ বা বেনিফিট নিতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা। সেটি হচ্ছেÑ ব্যবসা বাণিজ্যের বাইরেও নানা কারণে মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের করজে হাসানার দরকার হতে পারে। সবসময় ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে না। কিন্তু সম্ভাবনা থাকে যে, পরে তা থাকবে। এবং সেই অর্থ দিয়ে করজ পরিশোধ করা সম্ভব হবে। সুদকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। ফলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে সুদের ভিত্তিতে অর্থ নেয়া সম্ভব ছিল না বা উচিত নয়। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা করজে হাসানার নিয়ম করে দিয়েছেন; যেন মানুষ সাময়িকভাবে করজে হাসানা নিতে পারে সুদ ছাড়া এবং পরে তা দিয়ে দিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে করজে হাসানার বিষয়ে কুরআনের আয়াতগুলো দিচ্ছি : “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ‘করজে হাসানা’ দিতে প্রস্তুত, তাহা হইলে আল্লাহ তাহাকে কয়েক গুণ বেশি ফিরাইয়া দিবেন। হ্রাস-বৃদ্ধি উভয়ই আল্লাহর হাতে নিহিত। আর তাহাদের নিকট তোমাদের ফিরিয়া যাইতে হইবে (বাকারা-২৪৫)।
আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্য থেকে বারোজন সর্দার নিযুক্ত করেছিলেন। আল্লাহ বলেন- আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠিত কর, জাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাদের সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় করজে হাসানা দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গোনাহ দূর করে দেব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতভাবেই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে (আল মায়িদাহ-১২)।
কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম করজে হাসানা দেবে, এরপর তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার (আল-হাদীদ-১১)।
নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীল নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে করজে হাসানা দেয়, তাদের দেয়া হবে বহু গুণ এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার (আল-হাদীদ-১৮)।
যদি তোমরা আল্লাহকে করজে হাসানা দান কর, তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহনশীল (আত-তাগাবুন-১৭)।
“আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি ইবাদতের জন্য দণ্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দণ্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব, তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হয়েছেন। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জিহাদে নিয়োজিত হবে। কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি করো। তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু (আল মুযযামমিল-২০)।”
আপনারা কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকে করজে হাসানার ব্যাপারে জানতে পারলেন। প্রত্যেকটিতে করজে হাসানা বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ এতগুলো আয়াতে কেন করজে হাসানার বিষয়টি বললেন, এটা আমাদের চিন্তা করা দরকার। আল্লাহ তায়ালাকে ঋণ দেয়ার অর্থ হচ্ছে গরিব-দুঃখী, অভাবীদের, যাদের প্রয়োজন, তাদের ঋণ দেয়া। এটা ইসলামী অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য যা আজ কমে গেছে। করজে হাসানা চালু না থাকলে সুদের প্রচলন বাড়ে, বাংলাদেশে এটাই হয়েছে। এখানে মহাজনী সুদ ব্যবসা বা ব্যক্তিপর্যায়ে সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের সুদের হার মাসিক ১০ শতাংশ অর্থাৎ বছরে ১২০ শতাংশ, যা খুবই ভয়াবহ। এই ব্যবসা বাংলাদেশের কিছু মুসলিম নামধারী লোক করছে। পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে রিপোর্টে দেখা যায়- এই সুদখোরদের তাড়ায় মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। তাই করজে হাসানার ব্যাপক প্রচলন করতে হবে ব্যক্তিপর্যায়ে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রত্যেক ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি আলাদা ‘করজে হাসানা ফান্ড’ থাকা দরকার। আশা করি, এ ব্যাপারে আপনারা জনমত সৃষ্টি করবেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা