শীতের মওসুমে নির্বাচনের গরম
- মীযানুল করীম
- ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:১১
প্রকৃতিতে শীত এগিয়ে আসছে আর হাওয়া হচ্ছে শীতল। এর পাশাপাশি, রাজনীতিতে নির্বাচন এগিয়ে আসছে আর হাওয়া হচ্ছে উষ্ণ। নির্বাচনী হাওয়া যত চাঙ্গা হয়, ততই নির্বাচনী খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। তবে ইদানীং এই খাওয়ার চেয়ে ধাওয়ার অঘটন বড় খবর হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে, দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কেন্দ্র করে কেবল ধাওয়া নয়, দস্তুর মতো হামলা ও হত্যার ঘটনাও ঘটে গেছে। বেশ ক’জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এই সহিংসতার বলি হয়ে। একজন রাজনীতিক দিন কয়েক আগে বলেছেন, ‘এবার ভোটের মওসুমে বহু মানুষের জান যাবে।’ এখনও নিহতের সংখ্যা ‘বহু’ হয়নি বলে হয়তো ক্ষমতালোভীদের অনেকে এর অপেক্ষায়।
এবার বাংলাদেশে ডিসেম্বর মাসটা যতটা শীতের মওসুম, তার চেয়ে বেশি ভোটের মওসুম। এই নির্বাচনী হাওয়া প্রবল হওয়ার প্রধান দুই উপাদান- খাওয়া আর ধাওয়া। নির্বাচনে খাওয়ার প্রসঙ্গ এলে মনে পড়ে বাল্যকালের একটা ঘটনা। পৌরসভার নির্বাচন। পাড়ার এক গরিব ও নিরক্ষর মহিলা ভোট দিয়ে আমাদের বাসায় এসেছেন মায়ের কাছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ইলেকশনের ব্যাপারে। মহিলাটি অকপটে বললেন, ‘আপনারা তো কেবল ভোট দিয়েছেন। আমরা ভোট খেয়েছিও।’ আমার মা অবাক হয়ে জানতে চান, ‘সেটা আবার কী? ভোট কি খাওয়ার জিনিস?’ ওই মহিলা বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, যিনি মেম্বর পদে দাঁড়িয়েছেন, তিনি ভোট দিতে যাওয়ার জন্য রিকশার ব্যবস্থা করা ছাড়াও চা ও পান খাইয়েছেন।’
এখন চলছে নির্বাচনী খাওয়ার পালা। বলা বাহুল্য, ফ্রি চা-নাশতা ও পান ছাড়াও সিগারেটের ব্যবস্থা রয়েছে ভোটারদের জন্য। আগে নানা ব্রান্ডের চল থাকলেও আজকাল ধাঙ্গর-মেথরও বিড়ি ফোঁকে না, সিগারেট টানে। সত্যিই, বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে একটি পত্রিকা লিখেছে, ভোটের সুবাদে মুফতে পেয়ে ‘কেউ কেউ দিনে পাঁচ-দশ কাপ চা-ও পেটে চালান করে দেন। কথায় বলে, ফ্রি পেলে বাঙালি নাকি আলকাতরাও খায়। আর এটা তো ভোটের চা!’
‘ধাওয়া’র কথা যদি বলেন, বলতে হয়- এটাও এক ধরনের ‘খাবার’। কারণ, আমরা বলি বা লিখি ‘ধাওয়া খেয়েছে।’ শুধু ধাওয়া নয়, প্রতিপক্ষ বা পুলিশের পিটুনিও অনেকের বরাতে বিনা পয়সায় মিলে যায় না চাইতেই। কয়েক দিন আগে, বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে পুলিশের অকারণ ধাওয়ার চেয়ে বড় ঘটনা হলো, ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি বড় দলের দু’গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে গাড়িচাপা পড়ে দুই কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু। সত্যি হলো, এ দেশে গণতন্ত্র এসে ঠেকেছে পাঁচ বছর পর পর মাত্র একটা দিনের মধ্যে। তখন ভোটারেরা ‘একদিন কা বাদ্শাহ’। এরপর আর তাদের দাম নেই। এক দিনের গলাগলির পর ভোটারের ভাগ্যে জোটে পাঁচ বছরের গালাগালি। এখন এটাও নির্ভেজাল নয়। নির্বাচনী ধাওয়া খেয়ে আসল খাবার বদহজম হওয়ার উপক্রম।
দেশে অনেক ফালতু কথার মতো কিছু অপ্রয়োজনীয় ও উদ্দেশ্যমূলক ইস্যু ও বিতর্ক তোলা হচ্ছে। যেমন- ‘শুধু নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়। সংবিধানের আওতায় সব কিছু করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য এ সরকারকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে’ ইত্যাদি। আরো বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই চলে না, নির্বাচন কমিশনের দক্ষতাও লাগে।
এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, বিগত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ছিলেন কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। কিন্তু এই সিএসপি কর্মকর্তা নির্বাচন পরিচালনায় না সাহস, আর না যোগ্যতা দেখিয়েছেন। মাঝে মধ্যে নীতিবাক্য আওড়াতেন। কিছুটা গর্জনও শোনা যেত। কিন্তু অর্জনের ভাণ্ডার শূন্য। লোকে টিপ্পনি কাটত, ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই।’ আমরা এমন নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাই না যা হবে সুকুমার রায়ের ছড়ার সেই ঢোঁড়াসাপ। এটা ‘করে না তো ফোঁস ফাঁস,/মারে নাতো ঢুঁশঢাঁশ।’ সংবিধান ইসিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, তা পুরোপুরি এবং সময় মতো প্রয়োগ করতে হবে। অপর দিকে, ইসিকে সরকার শতভাগ সাহায্য-সহায়তা জোগানো সংবিধানেরই নির্দেশ। নির্বাহী বিভাগ এই দায় এড়াতে পারে না কোনো অজুহাতেই।
বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট
বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ দিন যেমন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, এর আগে পাকিস্তান আমলে বহু বছর আন্দোলন করতে হয়েছিল স্বায়ত্তশাসন ও মৌলিক অধিকারের দাবিতে, যা পরে সার্বিক স্বাধিকার বা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবির পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। এ দিকে, বাংলাদেশে নিকট অতীত থেকে গণতন্ত্রমনা জনগণের আন্দোলন চলছে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে। এই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক। ইদানীং ‘অংশগ্রহণমূলক’ কথাটি বেশি শোনা যাচ্ছে। সরকারও ২০১৪ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে ভোটারবিহীন ‘ভোটাভুটি’ এবং প্রার্থীবিহীন ‘বিজয়’-এর প্রেক্ষাপটে এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বলে প্রতীয়মান। তবে সাবধানী অনেকের আশঙ্কা, হয়তো এমন ছকে সব কিছু সুকৌশলে সাজানো থাকবে যে, নির্বাচন দৃশ্যত ‘অংশগ্রহণমূলক’ হবে, তবে অবাধ বা সুষ্ঠু হবে না। আবার অনেকে বলছেন, নির্বাচন বাহ্যিকভাবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, তবে মূলত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না।
প্রসঙ্গক্রমে একটি কৌতুক উল্লেখ করা যায়। একজন আরেকজনকে বলছেন, ভাই, ইলেকশন কেমন হলো? জবাব : দু’ঘণ্টা পর থেকে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ ছিল। প্রথমজনের জিজ্ঞাসা- ‘দু’ ঘণ্টা পর থেকে’ মানে? জবাব : সরকার পাট্টি পয়লা দু’ঘণ্টায় যা যা করা দরকার, তা সারিয়ে ফেলেছে।’ কিছু দিন আগে এমনটা হতে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন সিটির নির্বাচনে। দেশবাসী এ ধরনের কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না। তারা চান ‘মেরুদণ্ডী’ নির্বাচন কমিশন, যার সততা ও সাহস এবং দক্ষতা ও দৃঢ়তা অবশ্যই থাকবে। দেশবাসী ‘কাছা খোলা’ কিংবা নতজানু কমিশন মেনে নিতে পারেন না।
মিনিবাসে লেখা থাকে ‘মলম পার্টি থেকে সাবধান’। কখনোবা ‘মলমপার্টি’র স্থানে লেখা হয় ‘অজ্ঞান পার্টি’। কিন্তু ‘জ্ঞান আছে’ এমন ব্যক্তিদের পরিচালিত, এমনকি ‘জ্ঞানী’ ব্যক্তিদের নেতৃত্বাধীন পার্টিগুলো জনগণকে কী জ্ঞান দান করছে? এসব পার্টির ব্যাপারেও যদি ভোটারেরা সাবধান বা সজাগ না থাকে, তা হলে আখেরে পস্তাতে হবে। তখন আফসোস আর আহাজারিই হবে নিট প্রাপ্তি। অজ্ঞান পার্টি বাস-মিনিবাসে দু-চারজনের সর্বনাশ ঘটায়। কিন্তু জ্ঞান পার্টি বা রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তত অধিকাংশই গণতন্ত্রের মুখোশে স্বেচ্ছাচার বা স্বৈরতন্ত্রের মুখ লুকিয়ে রেখে গোটা জাতির সর্বনাশ ঘটাতে তৎপর থাকে। নির্বাচনী ঋতুতে এমন প্রার্থীর সংখ্যা বিস্তর, যারা মনে করেন, ‘আমদানি’ মানে ‘যাহা আমার পকেটে আসিবে’, আর ‘রফতানি’র অর্থ, ‘যাহা তোমার পকেট হইতে যাইবে’।
নির্বাচন যত কাছে আসে, তারাও জনমানুষের ততই কাছে আসেন। কিন্তু একবার কোনোমতে ভোট বাগিয়ে জিততে পারলেই হলো, এরপর তাদের দৃষ্টিতে ‘গাঙ পার হলে নাইয়া শালা।’ এই সুযোগসন্ধানী ও চাপাবাজদের চরিত্র ‘ধুতরা ফুলের মতো পবিত্র’। প্রখ্যাত লেখক আবুল মনসুর আহমদের গল্পের নায়ক এয়াকুব রাজনীতিতে ধাপে ধাপে উন্নতি করে একদিন ‘লর্ড জ্যাকব’ হয়ে জনগণের নাগালের ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছিল। এ দেশের রাজনীতির নীতিহীন রাজাদের স্বভাবও এর চেয়ে ভিন্ন নয়।
কয়েক দিন আগে দেখি, একটা মিনিবাসের ভেতর দিকে স্টিকার লাগানো। এতে লেখা আছে, ‘আপনার পকেটের নিরাপত্তার দায়িত্ব অন্য কাউকে দেবেন না। নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেই পালন করুন।’ অর্থাৎ নিজের নিরাপত্তা, তথা অধিকার নিশ্চিত করতে নিজেকেই আগে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বেলায়ও এ কথা প্রযোজ্য। ভোটারদের সচেতনতা থাকলে তারা ভোটের গুরুত্ব, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার দায়িত্ব, ভোটের আমানতদারি- এসব কিছুই উপলব্ধি করতে পারবেন। ‘আমার ভোট আমি দেবো; যাকে খুশি তাকে দেবো’- এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যতটা ঢিলেমি দেবেন, ততই অসৎ ও অন্যায়কারীরা বলার সুযোগ পাবে, ‘আপনার ভোটও আমি দেবো। আপনাকে কষ্ট করে ভোট দিতে যেতে হবে না।’
জনগণ ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন চায়। শুধু কিছু দল, এমনকি বড় বড় বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিলেই হবে না। সবার জন্য একই সুযোগসুবিধা এবং সবার সমান অধিকার থাকা চাই। তা না হলে নির্বাচনী খেলার মাঠ অসমতলই থেকে যাবে। জনগণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। কিন্তু এ শান্তি হতে হবে গণতন্ত্রের শান্তি; ‘কবরের শান্তি’ নয়। ভোটকেন্দ্রের ধারে কাছেও বিরোধী দল ঘেঁষতে না পারলে এবং তাদের ভোটাররা ভয়ে বা হুমকিতে ঘর থেকে বের হতে না পারলে, কেন্দ্রে শুধু বিশেষ একটি পক্ষের এজেন্ট ও ভোটারদের উপস্থিতি থাকবে। তখন পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রকাশ্যে ব্যালটের বান্ডিলে ধুমসে সিল মারলেও কেউ বাধা দেবে না। দৃশ্যত ‘শান্তিপূর্ণ’ পরিবেশে তখন জনগণের ভোটাধিকার পদদলিত হবে। ‘বাইরে ফিটফাট,/ভেতরে সদর ঘাট’ দেখতে চায় না বাংলাদেশের মানুষ।
স্টালিনের মহাবচন ও একটি পোস্টার
স্টালিন (১৮৭৯-১৯৫৩) ছিলেন রাশিয়ার কমিউনিস্ট বিপ্লবের অন্যতম শীর্ষ নেতা, যার কঠোর ব্যক্তিত্ব ও চরম স্বৈরাচারী শাসনের কথা বিশ্ববিদিত। এই বিপ্লবের জনক লেনিনের মৃত্যুর পর স্টালিন ১৯২৪ সালে ক্ষমতা করায়ত্ত করে বিশাল দেশটির প্রতিটি অঙ্গনে সর্বময় কর্তৃত্ব কায়েম করেছিলেন। লেনিনের উত্তরসূরি মনে করা হতো ট্রটস্কিকে। স্টালিন ১৯২৮ সালে মেক্সিকোতে তাকে নির্বাসিত করেন। ১৯৪০ সালে রুশ সরকারের গুপ্তঘাতক সেখানে গিয়ে ট্রটস্কিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। লাখ লাখ মানুষের গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত, স্টালিন স্বদেশের তাতারসহ মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অসংখ্য মানুষের ওপর নির্যাতন ও তাদের নির্বাসনের জন্য আজো সমালোচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্টালিনের সফল নেতৃত্ব সত্ত্বেও তার কৃতকর্মের কারণে তিনি কমিউনিস্ট শাসনামল থেকেই রাশিয়াসমেত সমাজতন্ত্রী জগতে ব্রাত্য হয়ে আছেন।
জর্জিয়ার এক মুচির সন্তান ‘স্টালিন’ নামটির অর্থ ‘ইস্পাত কঠিন’। জোসেপ যুগাশিভিলি ‘স্টালিন’ ছদ্মনাম নিয়ে বাস্তবেও কঠিন হৃদয়ের প্রমাণ রেখে গেছেন। তার প্রায় তিন দশকের রাজত্বের সময় ‘সর্বহারার একনায়ক’ হিসেবে ‘একদল, এক নেতা’র নির্বাচনী প্রহসন মঞ্চস্থ হতো। বশংবদ ও তল্পিবাহী কমরেডরা এভাবে ‘জনগণতন্ত্র’ কায়েম হতে দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেন। স্টালিন বলেছিলেন, To kill a few people is murder. But to kill numerous people is merely statistics. (অল্প কিছু মানুষকে মেরে ফেলা মানে, খুন করা। কিন্তু অসংখ্য লোককে হত্যা করা মানে, এটা নিছক পরিসংখ্যান)। এমন ‘গুণধর’ ব্যক্তিই বলতে পারেন, ‘নির্বাচনে ভোটের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোট গণনা।’ ভোটারের চেয়ে ‘গণনা’র কারসাজিকে বেশি মূল্য দেয়ার মতো শাসক বাংলাদেশেও থাকার প্রমাণ বারবার পাওয়া গেছে।
নির্বাচন ঘনিয়ে এলে অনেক বিচিত্র ঘটনা ঘটে; বিচিত্র দৃশ্য চোখে পড়ে। নতুন নতুন সেøাগান যেমন শোনা যায়, তেমনি বয়ে যায় ওয়াদার বন্যা। চান্দাবাজ, ধান্ধাবাজেরও অভাব হয় না। রাস্তাঘাট সয়লাব হয়ে যায় নানা বর্ণের পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে। ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠে প্রেস মালিক, কাগজ ও রঙ ব্যবসায়ী, কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, মিটিং-মিছিলের লোক সাপ্লাইয়ার, প্রমুখের।
এখন চোখে পড়ে একটি বড়সড় বর্ণাঢ্য পোস্টার। এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রতি ‘বিজেপি’র সমর্থন প্রকাশের প্রচারণা। আওয়ামী লীগ দলটি সাধারণভাবে ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে পরিচিত। এর বিরোধীরা ভারতকে যেমন ‘সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসী শক্তি’ বলে বিশ্বাস করেন, তেমনি দলটির লোকজন মনে করেন যে, ভারত হচ্ছে ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু এবং উভয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অভিন্ন’। অপর দিকে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে, নয়াদিল্লি এটা ভেবে স্বস্তি পায় যে, ‘ভারতবান্ধব’ সরকার ঢাকায় অধিষ্ঠিত। এই প্রেক্ষাপটে, সে দেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি দল এ দেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন জোগানো অস্বাভাবিক নয়।
যে পোস্টারের কথা বলছি, তা বিজেপির হলেও এই ‘বিজেপি’ ভারতের নয়। এর পুরো নাম ‘বাংলাদেশ জালালী পার্টি’। প্রাচীরপত্রে লেখা আছে, দলটি নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে জয়যুক্ত করার জন্য ‘জালালী অঙ্গীকার’ ঘোষণা করছে। এ পোস্টারের ছবিতে আওয়ামী নেতা ওবায়দুল কাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন জালালী পার্টির প্রধান। তবে ‘জালালী অঙ্গীকার’ বলতে কী বোঝায়, তা ব্যাখ্যা করা হয়নি। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তাদের স্লোগান ‘ভয় করি না বুলেট বোমা,/ নেত্রী মোদের শেখ হাসিনা।’ কিন্তু যিনি বর্তমান সরকারপ্রধান হিসেবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী, তার সমর্থকদের মুখে নয়, বরং বিরোধী দলের মুখেই বুলেট বোমার ভয় না করার ধ্বনি মানানসই।
পাদটীকা : (ক) এক ভোটার তার ভোট দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘আঙুলের এ দাগ কি সাবান দিয়ে ধুলে উঠে যাবে?’ পোলিং অফিসারের জবাব, ‘না, যাবে না। দাগটা এক বছর থাকবে।’ শুনে ওই লোক বললেন, ‘তাহলে আমাকে আরেকটু কালি দিন।’ পোলিং অফিসার অবাক হয়ে জানতে চান, ‘কালি দিয়ে কী করবেন?’ লোকটা সরল মনে বললেন, ‘চুলে লাগাব। হেয়ার ডাই লাগালে এক সপ্তাহের বেশি থাকে না।’
(খ) নির্বাচনে যিনি প্রার্থী, তার ছেলেও প্রচারণার মিছিলে। সবার মুখে, ‘আমার ভাই তোমার ভাই,/ অমুক ভাই তমুক ভাই।’ কিন্তু প্রার্থীর পুত্রপ্রবর কি ভোটের খাতিরে বাপকে ভাই ডাকতে পারে? তা মোটেও ঠিক নয়। তাই সে মিছিলের স্লোগানে সবার সাথে গলা মিলালো ঠিকই, তবে কিছুটা ভিন্ন ভাষায়-‘আমার আব্বা তোমার ভাই,/অমুক ভাই তমুক ভাই।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা