নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা এবং স্মরণীয়দের স্মরণ রাখা
- সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক
- ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৪৫
আজকের কলামটি দু’টি সম্পর্কবিহীন অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে একটি আঙ্গিকের ওপর আলোচনা। দ্বিতীয় অংশে তরুণ প্রজন্মের প্রতি একটি আবেদন।
নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা
আমার সৈনিক জীবনে বহুবারই নির্বাচনকালে ডিউটি করতে হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের সেই মহা ঐতিহাসিক নির্বাচনের সময় আমি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ছিলাম। তখন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানির একটি প্লাটুন নিয়ে আমি তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার শেরপুর থানায় অবস্থান নিয়েছিলাম। ১৯৭৩-এর ৭ মার্চের নির্বাচনের সময় আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। তখন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানি নিয়ে তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমা সদরে অবস্থান নিয়েছিলাম। ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় আমার র্যাংক ছিল মেজর এবং আমি ছিলাম সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক; আমরা দায়িত্ব পালন করেছি তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গামাটি মহকুমার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে কাপ্তাইসহ তিনটি থানায়।
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আমার র্যাংক ছিল মেজর এবং আমাদের ব্যাটালিয়ন যশোর সেনানিবাস থেকে বদলি হয়ে ঢাকা সেনানিবাসে আসার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলাম; তাই যশোর শহরের আশপাশে অতি ক্ষুদ্র কয়েকটি দায়িত্ব আমাদের ওপর ছিল; সার্বিক কোনো দায়িত্ব ছিল না। ১৯৮৬ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় আমার র্যাংক ছিল লেফনেন্যান্ট কর্নেল এবং আমি তখন মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত আমাদের স্টাফ কলেজে ইনস্ট্রাক্টর ছিলাম, সে জন্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করিনি। ৩ মার্চ ১৯৮৮ তারিখের চতুর্থ পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় আমি ছিলাম রাঙ্গামাটি জেলায় মোতায়েনকৃত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধিনায়ক এবং পুরো জেলার নির্বাচনী সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় আমার র্যাংক ছিল ব্রিগেডিয়ার। আমি ছিলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দফতরে দায়িত্ব পালনরত ‘ডাইরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশন’। তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের আহ্বানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্বাভাবিকের চেয়ে ব্যাপকতর ভূমিকা পালন করতে হয়েছিল, যেন একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়। কেন্দ্রীয়পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের ইন্টারঅ্যাকশন অতিনিবিড় ছিল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনকালে আমি ছিলাম যশোর সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) এবং আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা ছিল তৎকালীন খুলনা বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর।
১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জন্য যশোর অঞ্চলে সহায়ক ভূমিকায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা ও আদেশ জারি করার তিন দিন পর, আমার বদলি হয় যশোর থেকে ঢাকা মহানগরে। তাই ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে আমার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব ছিল না। ১৯৯৬ সালের ১৫ জুন থেকে প্রাক-অবসর ছুটিতে যাই। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় আমি আমার নেতৃত্বাধীন এনজিও (নাম : সোহাক) নিয়ে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলাম, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সমন্বয়ে। ৪ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৭ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে আমরা রেজিস্ট্রেশন পাই। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত নবম পার্লামেন্ট ইলেকশনে আমিসহ আমাদের দলের ব্যক্তিরা ৩৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি অংশগ্রহণ করেনি; ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্মতা পোষণ করে এবং ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য পোষণ করে।
এই অনুচ্ছেদের দীর্ঘ বর্ণনার মাধ্যমে আমি উপস্থাপন করতে চাচ্ছি একটি মর্ম, যথা- নির্বাচনকালীন নিরাপত্তার সঙ্গে আমাদের অনুভূতি ও বোধের সম্পর্ক গভীর।
সে জন্যই আমি নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করাকে সমীচীন মনে করেছি। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির উদ্যোগে ৭ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ঢাকা মহানগরের বারিধারা কূটনৈতিক জোনে একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। আলোচনার শিরোনাম ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা সঙ্কটগুলো। আমি (কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান) সভাপতিত্ব করি। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছয়বারের নির্বাচিত এমপি, সাবেক মন্ত্রী, মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। আলোচনার জন্য কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন মেজর (অব:) ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন। অনেকেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বিষয়টিকে সমৃদ্ধশালী করেন।
তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি। মেজর জেনারেল (অব:) ফজলে ইলাহি আকবর, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব:) মনিষ দেওয়ান, চৌহালী উপজেলার বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান মেজর (অব:) মামুন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) সৈয়দ কামরুজ্জামান, মেজর (অব:) কোহিনুর, মেজর (অব:) শিবলি সাদেক, আইটি বিশেষজ্ঞ শরীফ মাসুম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূরুল হুদা মিলু চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ঢাকা মহানগর সভাপতি আলী হোসেন ফরায়েজী, যুব কল্যাণ পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার শরীফ হোসেনসহ আরো অনেকে। আমাদের আলোচনার মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে; কিছু রাজনৈতিক, কিছু নিখাদ নিরাপত্তাবিষয়ক। ৮ অক্টোবরের বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু নয়া দিগন্ত পত্রিকায় এবং ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনে বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে। প্রধান অতিথি একটি সাংবিধানিক প্রস্তাব দেন; বর্তমান সংবিধানের অধীনেই নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা বা আংশিক নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা সম্ভব। সব বক্তাই বলেন, সরকার যদি আগ্রহী না হয়, তাহলে নির্বাচনকালে নিরাপত্তা ফলপ্রসূ করা সম্ভব নয়। সব বক্তাই প্রস্তাব করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে নির্বাচনের ১৫ বা ১২ বা ১০ দিন আগেই মোতায়েন করা প্রয়োজন, যেন জনমনে আস্থা ফিরে আসে।
অনেক বক্তাই উল্লেখ করেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেহেতু ১০ বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে আসছে, তাই তাদের মনমানসিকতা শতভাগ নিরপেক্ষ না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ ১২টি দেশের ঢাকায় অবস্থিত দূতাবাসে আমাদের পক্ষ থেকে দাওয়াতনামা পাঠানো হয়েছিল, আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি মেহমান বা পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠানোর জন্য। যুক্তরাজ্য, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়া দূতাবাস থেকে উপযুক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন এবং নিজ নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখেছিলেন। আলোচনার শেষে সারমর্ম দাঁড়ায়, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে গেলে ভোট কেন্দ্র, ভোটের সরঞ্জাম, ব্যালট পেপার, ভোটারদের আসা-যাওয়া ইত্যাদি সব কিছুকেই নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। ভোটের সময় দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের স্বাধীনতার নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। এ সব কিছুই নির্ভর করে রাজনৈতিক পরিবেশ এবং দায়িত্ব পালনরত সরকারের সদিচ্ছার ওপর।
প্রতীকী অর্থেই একজন মানুষ, একটি গ্রাম ও একটি স্কুলের নাম
বুধবার ৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে আমার বয়স ৬৯ শেষ হলো এবং বৃহস্পতিবার ৪ অক্টোবর থেকে ৭০তম বছর শুরু হলো। আনন্দ-বেদনা নিয়েই জীবন; প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির অনুভূতি নিয়েই জীবন; সাফল্য ও ব্যর্থতার কাহিনী নিয়েই জীবন। আমার জন্ম হয়েছিল চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার ভৌগোলিকভাবে একেবারেই দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে একটি নিভৃত গ্রামে। গ্রামের নাম ছিল বুড়িশ্চর। আমার দাদার নাম সৈয়দ মুহাম্মদ ইসমাইল। ১৯৫৭ সালে দাদা এবং দাদী একত্রে হজ করেছিলেন। ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে তিনি ইন্তেকাল করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তার ছিল না। এখন থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে, আমাদেরই গ্রামের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি আব্দুর রশীদ চৌধুরী একটি ফ্রি বা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন; তার নাম ছিল- রশীদিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল।
আমি রশীদিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলাম। অতঃপর আমি চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় আমার বাবার তৎকালীন কর্মস্থলে চলে যাই। বন্দর প্রাইমারি স্কুল এবং বন্দর হাইস্কুলে পড়ি ১৯৬২ সালের জুন পর্যন্ত। রশীদিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের মতো বন্দর প্রাইমারি স্কুল বা হাইস্কুলের কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠাতা নেই। কারণ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েই তাদের আবাসিক এলাকাগুলোতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল বাস্তবভিত্তিক প্রয়োজনে। বন্দর স্কুলগুলো কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটা জানলে ভালো, তবে না জানলে মারাত্মক কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু রশীদিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কেন করেছিলেন, সেটি যদি আজকের প্রজন্ম না জানে, তাহলে মারাত্মক ক্ষতি না হলেও ক্ষতি অবশ্যই আছে। আমি বুড়িশ্চর গ্রামের নাম, রশীদিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের নাম, মরহুম আব্দুর রশীদ চৌধুরীর নাম প্রতীকী অর্থেই নিলাম। কারণ, বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামের প্রত্যেকটিতেই এ রকম রশীদ চৌধুরী আছেন, এইরূপ স্কুল আছে। আমাদের গ্রামের এবং আশপাশের দু-চারটি গ্রামের মুরব্বি ছিলেন আব্দুর রশীদ চৌধুরী। শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, আমাদের গ্রাম থেকে আনুমানিক ৩ কিলোমিটার দূরে একটি বড় দীঘির সন্নিকটে তিনি একটি হাইস্কুলও স্থাপন করেছিলেন।
কিন্তু হাইস্কুলটির নাম নিজের নামে দেননি; দু’টি গ্রামের সীমান্তরেখার ওপর স্কুলটি স্থাপন করে তিনি গ্রাম দু’টির নামেই স্কুলটির নামকরণ করেন ‘কুয়াইশ-বুড়িশ্চর সম্মিলনী হাইস্কুল’। আব্দুর রশীদ চৌধুরীকে আমাদের এলাকায় বর্তমান প্রজন্ম তথা ২৫-৩০ বছরের নিচে যাদের বয়স তারা ভালো করে চেনে না। কিন্তু আব্দুর রশীদ চৌধুরী ছিলেন আমাদের এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের অগ্রপথিক। শুধু আমাদের গ্রামের আব্দুর রশীদ চৌধুরী নয়, যেমনটি উল্লেখ করলাম একটু আগেও; বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম বা জনপদেই এ রকম একেকজন শিক্ষানুরাগী বা সমাজসেবী ব্যক্তি সমাজকে আলোকিত করে গেছেন বলেই আমাদের সমাজ ও দেশ অগ্রগতি করতে পেরেছে। আমি কথাটি বলার পেছনে কারণ হলো, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যার যার এলাকার এলাকাভিত্তিক তথ্যগুলো কিন্তু হাতের নাগালে নেই।
স্মরণীয়দের স্মরণ রাখা
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ; বাংলাদেশের বাঙালি একটি স্বাধীন জাতি। আমাদের স্বাধীনতার পেছনে লাখ লাখ মানুষের রক্তদান আছে। তারও আগেকার যুগে যুগে শত শত বছরে বহু বীরপুরুষ ও বীরনারী মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করেছেন, সেবা করেছেন; কিন্তু আমরা তাদের কথা জানি না। এটি সত্য, সবার কথা বিস্তারিত জানা সম্ভব নয় এবং বিস্তারিত জানার সুযোগও নেই; কিন্তু মোটা দাগে তো জানা অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা গ্রাম-মহল্লায় যেমন আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যারা অবদান রেখেছেন তাদের কথা জানি না, তেমনি জাতীয়পর্যায়েও আমরা আমাদের অতীতের মহৎ পুরুষ-মহিলা ব্যক্তিদের কথা জানি না। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমার প্রস্তাব, আমরা আমাদের মহৎ ব্যক্তিদের জানতে পারলে ভালো; এইরূপ জ্ঞান সমাজের মধ্যে সংহতি বজায় রাখে, কর্মঠ তরুণদের অনুপ্রাণিত করে। অতীতকালে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালেও গ্রামে পাঠাগার বা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হতো। সাধারণত কোনো হাটে বা বাজারে বা যেখানে দোকানপাট আছে। অর্থাৎ যেখানে মানুষ মাঝে মধ্যেই আসা-যাওয়া করে, ওইরূপ জায়গায় লাইব্রেরির স্থান হতো। মানুষ সেখানে বই দান করত; সম্মিলিত চাঁদায় পত্রিকা রাখা হতো। সাধারণত পাড়া বা মহল্লা বা গ্রামের তরুণেরা কোনো ক্ল¬াব করলে, ক্ল¬াবের নামে বা উদ্যোগেই লাইব্রেরি চলত। এখন যানজটের যুগ, ব্যস্ততার যুগ। মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে পড়ার জন্য সুযোগ কম পায়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মনীষী প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ পাঠাগার তথা লাইব্রেরি তথা পুস্তককে মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। সব মানুষের কাছে না হলেও অবশ্যই লাখ লাখ শিশু-কিশোরের কাছে নিয়েছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাড়িগুলো মানুষকে বইমুখী করেছে। এ রকম আরো অনেক মনীষী আছেন, যারা পুস্তক তথা জ্ঞানকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন এবং নিয়ে যাওয়াটা ফলপ্রসূ হচ্ছে। দেশে এবং পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত সুবিধা মানুষের ধ্যানধারণা বদলে দিচ্ছে।
আজ থেকে সাত-আট দিন আগে একটি আড্ডায় দুষ্টুমি করে একজন বলল, তুমি যদি কোথাও ঠেকে যাও, তাহলে গুগল ভাইকে প্রশ্ন করলে সে-সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে। উত্তর দিতে পারে না এমন প্রশ্নই নেই। কিন্তু তুমি কবরে যাওয়ার পর যখন তোমার সামনে প্রশ্ন আসবে, তখন তুমি গুগল ভাইকে পাবে না। কারণ, গুগল ভাই আকাশে-বাতাসে থাকলেও সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে নেই। মোদ্দাকথা হলো, পাড়া-মহল্লায় আমরা যেন কারিগরি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নিজেদের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে চেষ্টা করি, এলাকাভিত্তিক বা গোষ্ঠীভিত্তিক বা সমাজভিত্তিক বা স্কুলভিত্তিক বা মসজিদকেন্দ্রিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন মানুষের ধ্যানধারণাকে প্রভাবান্বিত করে। জীবনযাপন প্রণালী তথা লাইফস্টাইল প্রভাবান্বিত করে। বই বিক্রি প্রথাগত নিয়মে যেমন হচ্ছে, তেমনি অনলাইনে হচ্ছে; বইগুলো ছাপানো পৃষ্ঠা ছাড়া বাতাসেও থাকে। আমি অন্তত একটি গ্রুপের সদস্য, যে গ্রুপটির নাম পাঠশালা। হাজার হাজার সদস্য আছে এই গ্রুপে। যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মহৎ কাজ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই তিনি পাঠ্যপুস্তকের বাইরের লেখাপড়াকে উৎসাহিত করছেন। আমার মতে, এটি কারিগরি প্রযুক্তির ইতিবাচক সঠিক ব্যবহার।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com.bd
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা