২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জ্বরের উত্তাপ ও ফুটবল উন্মাদনা

জ্বরের উত্তাপ ও ফুটবল উন্মাদনা - ছবি : নয়া দিগন্ত

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক স্কুলছাত্র আর্জেন্টিনার পতাকা তুলতে গিয়ে মারা গেছে বিদ্যুতের স্পর্শে। এ দিকে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় ক্ষুদ্র ও ‘ব্রাত্য’ আইসল্যান্ড আর্জেন্টিনার বিজয় ঠেকিয়ে দেয়ায় মেসির ম্যাজিক অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এতে বিষাদের ছোঁয়া বিদ্যুতের পরশের মতো অনুভূতি জাগিয়েছে সারা বিশ্বে দেশটির অসংখ্য ভক্তের অন্তরে। একই দিনের খবর, মস্কোর এক মাতাল ট্যাক্সি ড্রাইভার ফুটবল ফ্যানদের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ায় আটজন আহত। কিন্তু এসব দুর্ঘটনা আর দুঃসংবাদ কি ফুটবল ফ্যানদের উন্মাতাল উন্মাদনা কমাতে পেরেছে? নিশ্চয়ই নয়।
আর্জেন্টিনার একটি হারের খবর শুনেই ঢাকার ইবরাহীমপুরের জনৈক যুবক ক্ষোভে-দুঃখে গলায় রশি দিয়েছেন। আর সৌদি আরবের কাছে মিসরের পরাজয় দেখে মিসরীয় টিভির খোদ ধারাভাষ্যকার এই খেলার সম্প্রচারকালেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। এসব ট্র্যাজেডির কাছে তো ইংল্যান্ড আর আর্জেন্টিনার বিজয়ের দিনে অতি উল্লাস করতে গিয়ে দল দু’টির কোচদের আঘাত পাওয়া বড় ব্যাপার নয়। তবে নিজ দেশ আর্জেন্টিনার পরাজয়ে নয়, এক দিন জয় দেখে ম্যারাডোনা অসুস্থ হয়ে পড়া তার সর্বশেষ চমক বৈকি।

বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের উপস্থিতি ও উন্মাদনাকে গুরুত্ব দিতে হয়। অবশ্য ফিফা র‌্যাংকিংয়ে আমাদের যে বেহাল অবস্থা (তালিকার তলানি থেকে তৃতীয় স্থান), তাতে এটা বলা অস্বাভাবিক নয় যে, ‘আদার বেপারি হয়ে জাহাজের খবর নেয়ার দরকারটা কী?’ বাস্তবতা হলো, এবার রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার টিম হিসেবে বাংলাদেশ না থাকলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের ফুটবল টিমের জার্সি এ দেশ থেকে বানিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের সুনাম আছে দুনিয়াতে। অবশ্য অনেকের মতে, তৈরী পোশাকের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের এত আদর-কদরের কারণ, এখানে শ্রম সস্তা। তাই বানানোর ব্যয় কম; ফলে ব্যবসার মুনাফা বেশি। যা হোক, বিশ্বকাপ জার্সিগুলো বাংলাদেশে বানিয়ে নাকি অন্য দেশের সিল মারা হয়েছে। তবুও তো লেগে আছে বাংলাদেশী বস্ত্রবালিকাদের কোমল হাতের ছোঁয়া। তা ছাড়া, বিশ্বকাপে কয়েক হাজার তরুণ-স্বেচ্ছাসেবী বা কর্মীর মধ্যে বাংলাদেশেরও কেউ কেউ আছেন। ইন্টারভিউ দিয়ে, কাঠখড় পুড়িয়ে এ সুযোগ পাওয়া অন্তত আমাদের জন্য সহজ নয়।

এবার আসুন ফুটবল উন্মাদনার কথায়। ‘হুজুগে বাঙাল, হেকমতে চীন’- অনেক পুরনো প্রবাদ। যে ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল `The greatest show on Earth, তা নিয়ে বঙ্গসন্তানের উচ্ছ্বাস-উল্লাস-উন্মাদনা থাকবে না; তা কী করে হয়? তাই তো নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বহুতল ‘ব্রাজিল ভবন’ বানিয়েছেন দেশটির একজন ফ্যান। বিল্ডিংসমেত তার বাসার সব কিছু ব্রাজিলের পতাকার বর্ণে বর্ণিল। এ দিকে গরিব রিকশাচালক শুধু নিজের রিকশার রঙ আগাগোড়া আর্জেন্টিনার মতো করে ফেলেননি; নিজের নাম বদলে হয়ে গেছেন ‘মেসি মিয়া’। তবে ভাবছি সেই বাঙালি বেচারার কথা, যিনি জমি-জিরাত বেচে সাড়ে ৫ কিলোমিটার লম্বা জার্মান পতাকা বানিয়েছিলেন। এ জন্য তার নাম হয়তো গিনেস বুক অব রেকর্ডসে উঠবে, কিন্তু প্রিয় দল জার্মানি যে কোরিয়ার হাতে ধরা খেয়ে বোঁচকা বেঁধে বিদায় নিয়েছে! আগের খেলায় ভাগ্যগুণে শেষ মুহূর্তে সুইডেনকে ‘ক্রুসবিদ্ধ’ করে আশা জাগালেও জার্মানির শেষ রক্ষা হয়নি।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, এই যে এত উৎসাহ ও আয়োজন, দেশজুড়ে কয়েকটি দেশের পতাকার সয়লাব (অনেক দর্জি এ জন্য ঈদের অর্ডার না নিয়ে এসব পতাকার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন), কোথাও কোথাও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সাপোর্টারদের ঝগড়ার সাথে আগাম মারামারি, দুই দেশের জার্সির ঢঙে বানানো গেঞ্জি পরার ধুমÑ এসব দেখে ওসব দেশ কী ভাবছে? তারা মনে মনে খুশি হবে। তবে তার চেয়ে বেশি অবাক হবে। তারা একটি বড় প্রশ্নের জবাব পাবে না। তা হলো, যে বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে এত আগ্রহ ও উৎসব, এত সাজসজ্জা, সঙ্গীত ও সমারোহ; সে দেশ ফুটবল র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের দুই শ’ দেশের মধ্যেও পাত্তা পায় না কেন? মাত্র কয়েক বছরে বাংলাদেশ ১৪৭তম স্থান থেকে পেছাতে পেছাতে দুই শ’রও কয়েক ঘর পেছনে অবস্থান নিয়েছে। অথচ হংকংয়ের নিকটবর্তী ও অতি ক্ষুদ্র ম্যাকাও, ইউরোপের নগণ্য ও অপরিচিত লিচটেনস্টাইন আর নিরন্তর গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দক্ষিণ সুদানের মতো অনুন্নত গরিব দেশও ফুটবল খেলুড়েদের সারিতে আমাদের সামনে। ‘এ লজ্জা রাখিব কোথায়?’

বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে আমাদের দেশ থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক রাশিয়া গেছেন। তারা সেখানে নির্দিষ্ট এলাকায় বিশ্বকাপের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখলেও বাংলাদেশের মতো উন্মাদনা দেখেননি। একটি পত্রিকায় লেখা হয়েছে, রাশিয়ায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফুটবল প্রতিযোগিতা, অথচ খোদ রাজধানী মস্কোর বিমানবন্দর থেকে নগরীর হোটেল পর্যন্ত দীর্ঘ পথে কোথাও কোনো বিলবোর্ড, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নেই বিশ্বকাপের। প্রতিটি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের সময়ই বাংলাদেশের সর্বত্র প্রধানত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার অসংখ্য পতাকা উড়তে থাকে। মনে হয়, এটা দক্ষিণ এশিয়া নয়, ল্যাটিন আমেরিকার কোনো দেশ। এবারো বিশ্বকাপ জ্বরের উত্তাপ বাংলাদেশেই বেশি। তাই একজন অভিনেতা বলেন, আমার প্রিয় দেশের জার্সি পরে তাদের খেলা দেখব। আর জনৈকা অভিনেত্রী আরো এককাঠি ওপরে। তিনি জানিয়েছেন, শুধু তিনি নন, তার মা-ও প্রিয় দেশটির জার্সি পরিধান করে বিশ্বকাপের খেলা দেখবেন! একটি পত্রিকার খবর- ঢাকায় একজন রিকশাওয়ালা মেসি, তথা আর্জেন্টিনার এত বেশি ভক্ত যে, তিনি নিজের নাম দিয়েছেন ‘মেসি’। তার রিকশার চাকা থেকে শুরু করে পুরোটাই সাজিয়েছেন আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে। এতে আছে মেসির ছবিও। ঘুরছেন মেসির মতো জার্সি পরে। তার দৃঢ়বিশ্বাস, এবার বিশ্বকাপ জিতবে আর্জেন্টিনাই। অবশ্য রিকশার গায়ে মেসির সাথে নিজের ছবি লাগাতে ভোলেননি। কেউ বা পাকা বাড়ি বানিয়ে এর বাইরের দিকটি ব্রাজিলের পতাকার মতো করে নিয়েছেন। তদুপরি ঘরের তৈজসপত্র ও অন্যান্য জিনিসেও সে দেশের পতাকার ছাপ।
‘বাংলাদেশ’ মানে বাড়াবাড়ি- কথাটা শুনতে যত খারাপই লাগুক; এবার বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে তা আবার প্রমাণ হলো। আমাদের এ জাতি রাজনীতিতে যেমন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামে দুই ভাগে বিভক্ত, তেমনি ফুটবলে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। মাতামাতিটা এমন যে, সামর্থ্যে কুলায় না যাদের তারাও প্রিয় দেশের বিরাট জাতীয় পতাকা বানিয়ে ওড়ায়; আর সে দেশের জার্সি কিনে গায়ে চড়ায়। তখন হয়তো নিজেকে একেকজন মেসি বা নেইমার ভেবে অবাস্তব আত্মতৃপ্তি ভোগ করে।

বাঙালির হুজ্জত (হাঙ্গামা) না হলেও হুজুগ দেখার জন্য ব্রাজিলের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ‘গ্লোবো’র তিনজন সাংবাদিক বাংলাদেশে এসেছেন। আমাদের একটি পত্রিকা লিখেছে এ প্রসঙ্গে- ‘তারা বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে এ দেশের ব্রাজিল সমর্থকদের উন্মাদনা দেখছেন। নেইমারদের খেলার দিন ভক্তরা মুখে হলুদ-সবুজ রঙ মাখছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে মানুষ মারামারি করছে।’ ১৬ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশের মানুষের এমন উন্মাদনা দেখে রীতিমতো অবাক হলেন সফররত সাংবাদিকেরা। বাংলাদেশের মানুষের এহেন ‘পাগলামিতে’ বিস্ময় প্রকাশ করে এই সাংবাদিকদের একজন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের জনপ্রিয়তা দেখার জন্য অনেক দেশে গিয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশের উন্মাদনা অন্য রকম। আলোচিত হচ্ছে নেইমারের চুলের অদ্ভুত কাটিংয়ের বিষয়ও। ব্রাজিলের সাংবাদিকদের মতে, ‘ভক্তরা তার ফ্যাশন নয়, জাদু দেখতে চান।’
বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের উন্মাদনার কমতি নেই। সকার ফিভারে যেন বাংলাদেশই আক্রান্ত বেশি। এ জন্যই এখানে এত উত্তাপ। এমনিতে মওসুমের দুঃসহ তাপ। তার সাথে ‘ফুটবল জ্বর’ মিলে গা পুড়ে যাচ্ছে। তবে সাবধান থাকা চাই, কপাল যেন না পোড়ে।

এবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে যারা তাদের মধ্যে দূরপ্রাচ্যের জাপান, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব আর কালো আফ্রিকার সেনেগালও রয়েছে। সৌদিরা বিদায় নিয়েছে এদের মধ্যে সবার আগে। তবে তিন দলের মিল চমৎকার। তা হলো, তাদের দর্শক-সমর্থকেরা নিজ নিজ খেলা শেষে স্টেডিয়াম গ্যালারির আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন। এ জন্য কেউ তাদের নির্দেশ দেয়নি কিংবা এতে তারা ছোট হয়ে যাননি। প্রবাদপ্রতিম পরিশ্রমপ্রিয় জাতি হিসেবে জাপানিদের সুনাম বিশ্বজোড়া। তাদের খ্যাতি বাড়িয়েছে স্টেডিয়ামের গ্যালারি সাফ করে নিজেদের বিজয় উদযাপনের চমৎকার ঘটনা। তারা কলম্বিয়ার মতো শক্তিশালী টিমকে হারিয়েও জয়োল্লাসে নোংরা করেননি স্টেডিয়াম। স্মরণ করা ভালো, জাপানিরা ২০১৪ সালের বিশ্বকাপেও খেলা শেষে গ্যালারি পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। এ ঘটনা থেকে বাংলাদেশের মানুষের শেখার আছে। কারণ আমাদের বদনাম আছে এই বলে, ‘জাতিগতভাবে বাঙালিদের পরিচ্ছন্নতাবোধ কম।’ এটা যে নিছক অপবাদ নয়, এ দেশের রাস্তাঘাট ও ফুটপাথসহ পাবলিক প্লেসের দশাই তার প্রমাণ।

বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বশেষ খবরগুলোর একটি হলো, গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ডাবল গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে। এবার ধারণা করা হয়েছিল, জার্মানি তার সুদক্ষ কোচ জোয়াকিম লোর পরিচালনায় আবার চ্যাম্পিয়ন হতেও পারে। আর্জেন্টিনা এবার চ্যাম্পিয়ন না হলেও মানুষ ততটা অবাক হবে না, যতটা হতবাক গ্রুপ পর্ব থেকেই জার্মানির বিদায়ে। পত্রিকার প্রথম পাতায় শিরোনাম : কাঁদছে মিউনিখ কাঁদছে বার্লিন। সাথে, এই খেলার দুই নারী দর্শকের কান্নার ছবি। একটি ছবিতে দেখা যায়, জার্মানির তিন সমর্থকের একজন মাথায় হাত দিয়ে শূন্যে দৃষ্টি মেলে দিয়েছে। একজন বিষম দুঃখে মাথা নিচু করে রেখেছে। আরেকজন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছিল, তাদের আপনজনের মৃত্যুর মতো কোনো মহাসর্বনাশ ঘটে গেছে।

আসলে দুই দশক ধরে একটা ঘটনা ঘটছে, যা কাকতালীয় হলেও বিস্ময়কর। তা হচ্ছে, এক বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় যে দেশ চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে, ঠিক পরেরবারই দেশটি কেবল হেরেই যায় না, প্রথম পর্ব থেকেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদায় নিতে হয় তাদের। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স, ২০০২ সালে তাদের বিদায় ঘটে গ্রুপ পর্বেই। ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ইতালি পরেরবার গ্রুপ পর্বে বিদায় নিয়েছিল। ২০১০ সালে বিশ্বকাপজয়ী স্পেন ২০১৪-তে গ্রুপ পর্বে হেরে ছিটকে পড়েছিল। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন দল জার্মানি এবার দক্ষিণ কোরিয়ার হাতে ‘মার খেয়ে’ বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে।
ব্রাজিলের সুপারস্টার নেইমারের বান্ধবী ব্রুনা স্বপ্ন দেখছেন, নেইমারের হাতেই উঠছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি। অপর দিকে প্রতিযোগী আর্জেন্টিনার সুপারস্টার মেসির বিশ্বকাপ অধরা থেকে যেতে পারে, যদিও মেসির ঘোষণাÑ ‘স্বপ্ন একটাই, চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’ ‘ভিনগ্রহের ফুটবলার’ লায়নেল মেসির দল এবার পৃথিবী নামক গ্রহে বিশ্বকাপ শিরোপা না পেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এ তো গেল বিশ্বকাপের খেলোয়াড়দের কথা। এ দিকে বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার প্রতি ভক্তির উন্মাদনায় চলছে অন্য রকম খেলা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভার্সিটি আর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এ দুই দলের সমর্থকদের সে কী তোড়জোড় আর উত্তেজনা। উভয় দেশের সাপোর্টারদের আলাদা আলাদা কমিটি। এর পদগুলোর মধ্যে আছে ‘উত্তেজনা প্রশমন’ আর ‘প্লাস্টিক ফ্যান নির্মূল’ বিষয়ক সম্পাদকও! হলগুলোতে এক মাস আগে থেকেই ছাদ থেকে মাটি পর্যন্ত ছোঁয়া বিশাল ব্যানার ঝুলছে। অবশ্য সেই সাথে ঝুলছে বিশ্বকাপে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন দেশের ভাগ্যও।

পাদটীকা : বাংলাদেশের মানুষ প্রধানত দ্বিধাবিভক্ত। রাজনীতিতে ‘বিএনপি-আওয়ামী লীগ’; কোরবানিতে ‘গরু বা ছাগল’। তেমনি বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে ‘ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা’।
একবার আমার এক ঘনিষ্ঠজন কোরবানির সময় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি গরু না ছাগল?’ আসলে উনি আমাকে জব্দ করতে চেয়েছিলেন। বুঝতে পেরে বললাম, ‘ছিলাম তো মানুষ। তবে এত দিন আপনাদের সংস্পর্শে থাকার কারণে এখন আমাকে গরু না ছাগল মনে হচ্ছে, সেটা আপনিই ভালো বলতে পারেন।’ এই জবাব শুনে তিনি নিজেই লজ্জা পেয়ে রণে ভঙ্গ দেন।
এবার ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, পরস্পরকে প্রশ্ন করছেন, ‘আপনি আর্জেন্টিনা না ব্রাজিল’? এমন সওয়ালের জবাব দিতে দিতে অনেকে অতিষ্ঠ। কার্টুনে দেখানো হয়েছে, একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করছেন- ‘ভাই, আপনি ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা?’ উত্তরদাতা বিরক্ত হয়ে বলছেন, ‘আমি আজগর আলী ওরফে মফিজ মদন।’


আরো সংবাদ



premium cement

সকল