২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ শাবান ১৪৪৬
`

প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির আন্তঃসংযোগ

-

প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির আন্তঃসংযোগের বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া কোনো দেশ কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করতে পারে না। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয়। তাই থিংকট্যাংকগুলোর এ নিয়ে গবেষণা করা এবং সরকারকে পরামর্শ দেয়া উচিত, যাতে সামগ্রিকভাবে জাতি হিসেবে আমরা উন্নত হতে পারি এবং প্রতিরক্ষা, পানিসম্পদ ও নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি। তিনি ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ (এফএসডিএস) নামে গবেষণাধর্মী নতুন একটি ইনস্টিটিউটের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান আরো বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য সুশাসন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জাতীয় স্থিতিশীলতা অর্জনে সঠিক গবেষণাভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন অপরিহার্য। আমরা এ কাজে সর্বাত্মক সহায়তা দেবো যাতে এটি দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

সেনাপ্রধান আরো বলেন, আমাদের জন্য নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। যদি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করবে। এ জন্য প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করা না গেলে পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। এ জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ এবং বেসরকারি খাতের সব অংশীদারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে আমাদের জাতির বৃহত্তর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়। ওই অনুষ্ঠানে আরো কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা কথা বলেন। এর মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব:) এম নুরুদ্দিন খান ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত সম্পর্কেও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ভারত আজ এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে তাদের বাণিজ্যিক মন্দা চলছে, তাদের বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং একদিন তারা আমাদের দিকেই ফিরে আসতে বাধ্য হবে। আমাদের নীতির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস, আমাদের কৌশলগত গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে তুলেছে। চীন, আমেরিকা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ আমাদের ব্যাপারে আগ্রহী। আমরা তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছি, এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির সংযোগ

প্রতিরক্ষানীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নানা কারণে পরস্পর গভীরভাবে জড়িত। একটি দেশের সামরিক সক্ষমতা ও কৌশল সরাসরি তার আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এটি মূলত বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বৈদেশিক নীতির সিদ্ধান্তগুলো প্রায়ই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনুভূত হুমকি ও সুযোগ মোকাবেলার জন্য প্রতিরক্ষা কৌশলের বিকাশ এবং দিকনির্দেশনা তৈরি করে।

এই আন্তঃসংযোগ এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে একটি দেশের সামরিক শক্তি সম্ভাব্য আগ্রাসন রোধ করতে, অন্যান্য দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে বা যৌথ সামরিক মহড়া এবং ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতির’ মাধ্যমে কূটনৈতিক উদ্যোগে সমর্থন জোগাতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যার ফলে বৈদেশিক নীতির লক্ষ্যগুলো অগ্রসর হয়। আর বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারগুলো সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে চিহ্নিত করা, উদ্বেগের ভৌগোলিক এলাকা এবং উদীয়মান হুমকি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতার ধরনসহ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার ফোকাসকে নির্দেশ করে। সাথে সাথে সামরিক কূটনীতির ক্ষেত্রে যৌথ মহড়া, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং সামরিক কূটনীতির মাধ্যমে বিদেশী সামরিক বাহিনীর সাথে সক্রিয় সম্পৃক্ততা বৃহত্তর বিদেশী নীতির উদ্দেশ্য সমর্থনের মাধ্যমে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও আস্থা গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। একই সাথে বিদেশ নীতির সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়, নেতাদের অবশ্যই ঝুঁকি বা সঙ্কটে কার্যকরভাবে সাড়া দেয়ার ক্ষমতার মতো সম্ভাব্য সামরিক প্রভাব বিবেচনা করতে হবে।

একটি দেশ প্রায়ই অন্যান্য দেশের সাথে সামরিক জোট গঠন করে সম্মিলিতভাবে হুমকি প্রতিরোধ করতে। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলগুলো তাদের বিস্তৃত বিদেশী নীতির লক্ষ্যগুলোর সাথে ঐক্য তৈরি করে। আর সঙ্ঘাতে হস্তক্ষেপ করতে বা মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেও একটি অঞ্চলে স্থিতিশীলতার মতো নির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। সামরিক সক্ষমতা পরিচালনা এবং সম্ভাব্য সঙ্ঘাত প্রশমিত করার জন্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি আলোচনা ও বাস্তবায়নে বৈদেশিক নীতি বিবেচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এসব ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা কূটনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ টুলস হতে পারে। এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন প্রবিধান, কাস্টমস নীতিমালা এবং কূটনীতির পাশাপাশি জাতীয় আইনের কাঠামোর মধ্যে কাজ করে। শেষেরটি নির্দিষ্ট কাঠামোগত সমাধানগুলোর আকার দেয়, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সহযোগিতার নীতিমালা সংজ্ঞায়িত করে। প্রতিরক্ষা কূটনীতির কার্যক্রম, বৈদেশিক নীতি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার একটি উপকরণ হিসেবে, সামরিক সহযোগিতার বিকাশে এবং রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সঠিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে অবদান রাখে।

প্রতিরক্ষা কূটনীতির ধারণার সমসাময়িক উপলব্ধি। এর প্রধান লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নীতির গঠন ও বাস্তÍবায়ন এবং স্থিতিশীল, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক ও সহযোগিতা তৈরি করা যা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে, আস্থা ও বিশ্বাস জোরদার করে এবং সাধারণ লক্ষ্য অর্জন করে। প্রতিরক্ষা কূটনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো যোগাযোগের হাতিয়ার এবং আত্মবিশ্বাস তৈরির পরিমাপ হিসেবে অংশীদারদের সাথে সংলাপ বজায় রাখা।

প্রতিরক্ষা কূটনীতির প্রধান কাজ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। সমসাময়িক প্রতিরক্ষা কূটনীতি পরিবর্তিত অবস্থার সাথে ক্রমাগত অভিযোজিত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এর অর্থের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে। ধারণাগত বিন্যাস অবশ্যই তার সমসাময়িক ভূমিকা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ কাঠামোর দ্বারা রাষ্ট্রের বিদেশ নীতির সৃজনশীল সমর্থনের সম্ভাবনাগুলো বোঝার একটি শর্ত হতে হবে।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও প্রতিরক্ষানীতি

বাংলাদেশ এখন একটি অন্তর্বর্তী সময় অতিক্রম করছে। জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত এই সরকারের প্রধান কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র চালিত হওয়ার একটি টেকসই ব্যবস্থার প্রবর্তন। সংস্কারের মাত্রা নিয়ে মতের কিছু ব্যবধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান থাকলেও রাষ্ট্রকে ফ্যাসিবাদ সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে কেবল একটি নির্বাচন সম্পন্ন করে ক্ষমতা হস্তান্তর দেশের মানুষ চায় না। ফলে মৌলিক ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কার উদ্যোগ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র কৌশলের বিষয়ও রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, পররাষ্ট্রনীতি দেশের প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন হিসেবে কাজ করে। এ দেশের পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য হুমকি রোধ করা, সঙ্ঘাত এড়ানো এবং প্রতিবেশীদের সাথে আস্থা গড়ে তোলা। এ বিষয়ে মাঝে মধ্যে বিচ্যুতি দেখা গেলেও মোটাদাগে রাষ্ট্র আবার সেই ট্র্যাকে ফিরে আসে। এই ট্র্যাকে ফেরানোর ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সময়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সাথে আস্থা ও বোঝাপড়া গড়ে তুলতে চায়। বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য সঙ্ঘাত এড়ানো, তা প্রশমিত করা বা বিদূরিত করা। একই সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বহিরাগত শক্তির যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, আদর্শিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনে বাংলাদেশ তার সমুদ্র নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বার্ষিক বহুজাতিক সামরিক মহড়া কোঅপারেশন অ্যাফ্লোট রেডিনেস অ্যান্ড ট্রেনিংয়ে (ক্যারাট) অংশ নেয় বাংলাদেশ। ন্যাশনাল গার্ডের স্টেট পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ ওরেগন রাজ্যের সাথে অংশীদারিত্ব তৈরি করেছে। টেকসই প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্কসহ বিভিন্ন ওআইসি দেশের সাথেও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরি করেছে বাংলাদেশ। একই সাথে সোমালিয়া, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, কুয়েত, বসনিয়া হার্জেগোভিনা ও হাইতিতে দায়িত্ব পালনসহ জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থানের কারণে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির পরিবর্তনশীল গতিশীলতায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ভৌগোলিক সুবিধাটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এবং বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখার সুযোগ এনে দিয়েছে। পূর্বমুখী নীতির অংশ হিসেবে আসিয়ানের সাথে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি করেছে ঢাকা। এই সংস্থাগুলো আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং অভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্য ও নিরাপত্তা লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) এবং অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনসহ (ওআইসি) প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে জড়িত থাকায় বাংলাদেশের তাৎপর্য তার সীমানা ছাড়িয়ে বিস্তৃত। এসব সংযুক্তি বাংলাদেশের কূটনৈতিক আউটরিচকে উন্নত করে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে অপরিহার্য খেলোয়াড় হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরো প্রসারিত করতে হবে এবং আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বিশ্ব বাণিজ্য ও নিরাপত্তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অঞ্চল। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং শিপিং রুটে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আগ্রহের মাধ্যমে এই এলাকার কৌশলগত গুরুত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক সামুদ্রিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ করে তুলেছে। উপরন্তু, প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বৈদেশিক সম্পর্ক গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংযোগগুলো ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার কারণ দ্বারা চালিত হয়, যা আঞ্চলিক গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে। এটি জোর দেয়া অত্যাবশ্যক যে, আমাদের ‘জাতীয় স্বার্থ’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তা’, ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ এর একটি শক্তিশালী কাঠামো দ্বারা সমর্থনে আমাদের কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্যোগের মেরুদণ্ড গঠন করতে পারে। এটি আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায় অনেকাংশে অনুপস্থিত। সম্ভবত এ কারণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রতিরক্ষা কৌশল ও পররাষ্ট্রনীতির আন্তঃনির্ভরতার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে এনেছেন।

এ প্রসঙ্গে জেনারেল (অব:) ফজলে এলাহি আকবরের বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাবাহিনী জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তার উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এই সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি তার অঙ্গীকার প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান এবং প্রতিফলনকে বাড়িয়ে তোলে। এই অঞ্চলকে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাখতে আমাদের শান্তিরক্ষার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করার অপরিমেয় সম্ভাবনা রয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে, বাংলাদেশ নানামুখী চাপের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলমান উত্তেজনা, জলবায়ুজনিত বিপর্যয়, রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিভিন্ন রূপে সন্ত্রাসবাদের হুমকি বিশেষভাবে ফোকাসের দাবিদার। এই চ্যালেঞ্জগুলো এক সাথে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করা অপরিহার্য। এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সতর্ক ব্যবস্থাপনার দাবি রাখে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং জাতির বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা উভয়ের জন্যই এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা জরুরি।

জেনারেল আকবরের এই বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ যে, বাংলাদেশের একটি সমন্বিত ও ব্যাপক প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি দরকার। এই নীতিটি প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, শান্তি, কূটনীতি এবং উন্নয়নের নীতি ও পদ্ধতিগুলোকে ‘জাতীয় স্বার্থের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং বাংলাদেশকে প্রথমে’ রাখার ধারণার সাথে সারিবদ্ধ করা উচিত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ধারণার বাস্তব প্রতিফলন পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে এটি একদেশনির্ভর দেড় দশকের পররাষ্ট্র কৌশল থেকে বেরিয়ে আত্মমর্যাদানির্ভর সব অংশীজনের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কৌশল অনুসরণ করতে সক্ষম এ বিষয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনও গুরুত্বপূর্ণ। একদেশনির্ভর নীতি প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে যেমন দুর্বল করে, তেমনিভাবে পররাষ্ট্র কৌশলকেও পঙ্গু করে ফেলে, যার প্রভাব পড়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ওপর। ফ্যাসিবাদের দেড় দশকে আমরা সেটিই প্রত্যক্ষ করেছি।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
যাত্রাবাড়ীতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, ছিনতাইকারীর গুলিতে আহত ১ ছিনতাইকারী সন্দেহে টঙ্গীতে যুবককে হত্যা, উত্তরায় ২ জনকে ঝুলিয়ে গণপিটুনি একটি পরিবারকে আমানতের ৮৭ শতাংশ দেয়া হয়েছে : গভর্নর টাঙ্গাইলে বনভোজনের বাসে ডাকাতি, অস্ত্রের মুখে মালামাল লুট চীনের হাংজো দিয়াংজি ইউনিভার্সিটির সাথে ডুয়েটের সভা অনুষ্ঠিত আমিরাতে নারী জাতীয় দলের প্রথম ম্যাচ কাল নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ বুধবার কেরানীগঞ্জে পরকীয়ার জেরে গৃহবধূকে হত্যা, প্রেমিক আটক তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ কাবাডি দলের জয় জাতীয় নাগরিক কমিটির কেউ চীন সফরে যাচ্ছেন না নারায়ণগঞ্জের সমাবেশে জেলা যুবদল ও ফতুল্লা বিএনপির শো ডাউন

সকল