বারেক ফিরে চাওয়া : সত্তরের নির্বাচন
- ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:০২
সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট হয়। এর মধ্যে ১৬২টি পূর্ব পাকিস্তানে এবং ১৩৮টি পশ্চিম পাকিস্তানে। আরও তেরোটি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল (সাতটি পূর্ব পাকিস্তানে এবং ছয়টি পশ্চিম পাকিস্তানে)। নির্বাচনে দু’টি প্রধান দল, পশ্চিমভিত্তিক পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পূর্ব-ভিত্তিক নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। পূর্ব শাখায় আওয়ামী লীগ ছিল একমাত্র প্রধান দল যার কোনো প্রতিযোগী ছিল না, পক্ষান্তরে পশ্চিম শাখায়, পিপিপিকে মুসলিম লীগের মতো রক্ষণশীল দলগুলোর থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। ফলাফল ছিল আওয়ামী লীগের একতরফা বিজয়। দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৬২টি সাধারণ আসনের মধ্যে ১৬০টি এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাতটি মহিলা আসনও তারা পেয়েছিল। পিপিপি পশ্চিম পাকিস্তানে মাত্র ৮১টি সাধারণ আসন এবং পাঁচটি মহিলা আসন জেতে। ১০ দিন পর অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তার করে, যখন পিপিপি শুধু পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে বিজয়ী দল ছিল। সেখানে মার্কসবাদী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানে বিজয়ী হয়।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং পিপিপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো ফেডারেল সরকারে পূর্ব পাকিস্তানের একটি মাত্র দল চাননি বলে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করা হয়নি। পরিবর্তে, ইয়াহিয়া প্রবীণ বাঙালি রাজনীতিবিদ এবং আওয়ামী লীগের বিপরীতে অন্যতম বিজয়ী নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাকে পিপিপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে বলেন। এই পদক্ষেপ ব্যর্থ হলে অধিবেশন উদ্বোধনে বিলম্ব ঘটে, ফলে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পরিণতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়। বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইয়াহিয়া পদত্যাগ করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর হাতে পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
২২ নভেম্বর ১৯৫৪ সালে গঠিত পশ্চিম পাকিস্তানের সমন্বিত প্রদেশটি বিলুপ্ত করে চারটি প্রদেশ করা হয় : পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ। প্রতিনিধিত্বের নীতিগুলো জনসংখ্যার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছিল এবং যেহেতু পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের সম্মিলিত জনসংখ্যার চেয়ে বেশি লোক ছিল, প্রদেশটির অন্যতম দল জাতীয় পরিষদে অর্ধেকেরও বেশি আসন পেয়েছিল। নির্বাচনের এক মাস আগে পূর্ব পাকিস্তানে ভোলায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এতে আনুমানিক পাঁচ লাখ মানুষ মারা যায়। দুর্যোগ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ ১৯৭১-এর মে মাসে একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল যাতে তারা দেখার চেষ্টা করেছিল যে পাকিস্তান ভেঙে গেলে দুই ভিন্ন দেশের অর্থনীতির কী পরিণতি হবে। ২০১০ সালে ওই রিপোর্টের যে খণ্ডিত অংশ প্রকাশ করা হয় তাতে দেখা যায়, সিআইএ তখন মনে করেছিল, পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তান বড় ধরনের বাণিজ্য সঙ্কটে পড়বে। কারণ, তাদের পণ্যের যে মান তাতে বিকল্প বাজার পেতে সমস্যা হবে। সিআইএর রিপোর্টে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যত বেড়েছে, দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য ততই বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে জীবনযাত্রার মানের তারতম্য। রিপোর্টে আরো বলা হয়, ‘১৯৭০ সালের বিধ্বংসী সামুদ্রিক ঝড় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি কতটা অসহায় এবং ভঙ্গুর। ওই সাইক্লোনের পর কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পেছনে বিরাট ভূমিকা রাখে।’
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনই ছিল ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের প্রথম সরাসরি সাধারণ নির্বাচন এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে একমাত্র নির্বাচন। ১৯৬৯ সালে আবদুস সাত্তার (১৯০৬-১৯৮৫), প্রথম বাঙালি হিসাবে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন, যিনি ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করেন। নির্বাচনের জেরে বাঙালি বেসামরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরকারি পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং ইসলামাবাদে গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৭৩ সালে, আটকে পড়া বাঙালি কর্মকর্তাদের প্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে আব্দুস সাত্তার স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। পরে তিনি বাংলাদেশের সপ্তম প্রেসিডেন্ট (৩০ মে ১৯৮১-২৪ মার্চ ১৯৮২) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রায় চব্বিশটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পূর্বাঞ্চলে কোনো আসন জিততে পারেনি। আওয়ামী লীগও পশ্চিমাঞ্চলে কোনো আসন পায়নি। পশ্চিমে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা জুলফিকার ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন বামপন্থীরা ব্যবহার করেছিল, যারা যুক্তি দিয়েছিল যে মুজিব ‘পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কোনো ম্যান্ডেট বা সমর্থন পাননি’ (এই সত্য উপেক্ষা করা হয় যে পিপিপিও পূর্ব পাকিস্তানে কোনো আসনে জয়ী হয়নি)। ভুট্টো একবার উচ্চারণ করেছিলেন, ‘ইধার হাম, উদর তুম’ (আমরা এখানে শাসন করি, আপনি সেখানে শাসন করেন)Ñ এভাবে মৌখিকভাবে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে বিভক্ত করা হয়েছিল।
জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের জন্য মোট ১,৫৭৯ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগ ১৭০ জন প্রার্থী দিয়েছিল, যার মধ্যে ১৬২টি ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের ১৬২ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ ছিল আইনজীবী। ব্যবসায়ী ছিল ১৯ শতাংশ এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক ছিল ৬ শতাংশ। জামায়াতে ইসলামীর ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী, ১৫১ জন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির মাত্র ১২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, যার মধ্যে ১০৩ জন পাঞ্জাবে এবং বাকিরা সিন্ধুর। পূর্ব পাকিস্তানে দলটির কোনো প্রার্থী ছিল না। পিএমএল (কনভেনশন) ১২৪ জন প্রার্থী, পিএমএল (কাউন্সিল) ১১৯ এবং পিএমএল (কাইয়ুম) ১৩৩ জন প্রার্থী দিয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫১টি আসন। নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল এবং প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পড়ে বলে সরকার দাবি করে।
গবেষক শ্যামলী ঘোষের মতে, নির্বাচনী প্রচারণার সময় একটি পোস্টার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে দাগ কেটেছিল। এই স্লোগান ছিল, ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’ পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কিভাবে বঞ্চিত হচ্ছে সেটি তুলে ধরা হয় এই পোস্টারের মাধ্যমে। স্মৃতিচারণামূলক ‘শতাব্দী পেরিয়ে’ বই এ বামপন্থী রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ ও ছয় দফার পথে যে জোয়ার উঠেছিল, তার সামনে দক্ষিণপন্থী দলগুলো দাঁড়াতেই পারছিল না।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ভাসানী প্রথমে রাজি হলেও নভেম্বর মাসের শেষ দিকে এসে তিনি নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান। অনেকে মনে করেন, ১৯৭০ সালে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে মওলানা ভাসানী ভুল করেছেন। অনুসারীদের বক্তব্য হচ্ছে, ভাসানী যদি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকতেন তাহলে পূর্ব-পাকিস্তানে ভোট ভাগ হয়ে যেত এবং আওয়ামী লীগ হয়তো একচ্ছত্র আধিপত্য পেত না। তবে হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, ভাসানী মনে মনে চেয়েছিলেন শেখ মুজিবকে ওয়াকওভার দিতে, যাতে শেখ মুজিবুর এককভাবে বেরিয়ে আসেন। তাতে স্বাধীনতার প্রশ্নটি সহজ হতো বলে তিনি ভেবেছিলেন।’
সত্তর সালের নির্বাচনে কোনো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। ইয়াহিয়া সরকারের মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুমতি ছিল না। জি.ডব্লিউ চৌধুরীর মতে, সেই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীনে হয়েছিল। সে কারণে বিচারপতি সাত্তার কোনো প্রভাব ছাড়াই নির্বাচন করতে পেরেছিলেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক তার স্মৃতিচারণামূলক ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইতে লিখেছেন, ভোট গ্রহণের আগেই আওয়ামী লীগ কার্যত নির্বাচনে জিতে গিয়েছে। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। নির্বাচনের ফলাফল পাকিস্তানের দু’টি অংশের জনগণের মধ্যে চিন্তাধারার পার্থক্য নির্দেশ করে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পর আবার নতুন করে সঙ্কট শুরু হয়। নির্বাচনের সময় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানকে একটি প্রদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানকে চারটি প্রদেশে ভাগ করা হয়। মি. ভুট্টো প্রশ্ন তোলেন, একটি প্রদেশে জয়ী শেখ মুজিবের হাতে কিভাবে পুরো পাকিস্তানের শাসনভার তুলে দেয়া যায়? মি. ভুট্টোর এই অবস্থানের কারণে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। শেখ মুজিবকে সরকার গঠনে আহ্বান করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরুর পরিণতিতে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ।
পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা যেহেতু দেশের পশ্চিমাংশে ঘাঁটি গাড়েন, শাসন ক্ষমতাও সেখানেই কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। যদিও পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ। সেই সাথে শুরু হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে দেশের অন্য একটি অংশের নাগরিকদের প্রতি পদে পদে বৈষম্য।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেল তার ‘ডেডলি এমব্রেস‘ বইতে লিখেছেন, পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই ‘পাকিস্তানের কাছে বাংলার গুরুত্ব ছিল দ্বিতীয়’ এবং বাঙালিদের ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক’ হিসাবে দেখা হতো।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরের ২৫ বছর সেই প্রভুসুলভ মনোভাবের প্রতিফলন দেখা গেছে পদে পদে। ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে বাঙালি জনগোষ্ঠীর দূরত্ব ক্রমাগত বেড়েছে। বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব চাঙ্গা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী জেনিফার কোটস পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই নিয়ে গবেষণাধর্মী একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। ওই বইতে তিনি লেখেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতির অনেক অমিল ছিল এবং বাঙালিরা তাদের সংস্কৃতি রক্ষা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। বিশেষ করে ১৯৫৮ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও বাঙালিদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কঠোর নজরদারিতে পড়ে।
পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালি সংস্কৃতিকে ভিন্ন খাতে পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করে দেয়া। জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরো তৈরি করা হয়, যার প্রধান কাজ ছিল বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন। সরকারের নীতির স্তুতির জন্য লেখক বুদ্ধিজীবীদের নানারকম উপঢৌকন দেয়া হতো। প্রেস এবং পাবলিকেশন আইন করে ১৯৬১ সালে সংবাদপত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দারুণভাবে খর্ব করা হয়। এমনকি ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান এবং আইয়ুব খানের তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন সরকারি প্রচারমাধ্যমে রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম প্রচার নিষিদ্ধ করে দেন। নজরুল ইসলামের কবিতা প্রচারে গুরুত্ব দেয়া শুরু হয়।
লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা