১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ শাবান ১৪৪৬
`

ব্যাংক ডাকাতদের কিভাবে আইনের আওতায় আনবেন?

-

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, ব্যাংক ডাকাতরা দেশের জনগণের সম্পদ লুট করেছে। এর সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের অর্থনীতি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, এস আলম গ্রুপের সব সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ‘নগদ’-এর বিরুদ্ধেও কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টাকা পাচারের সাথে জড়িত ১২টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা দিতে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিনিধিদলও শিগগিরই আসছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সাথে কথা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে গত ১৫ বছরে দেশ থেকে যে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে, তা দেশে ফিরিয়ে আনা। এই টাকা কারা নিয়েছেন, কোথায় গেছে এগুলো চিহ্নিত করতে পারলে কাজ অনেক এগিয়ে যাবে। প্রথমে যে দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সেখানে এই টাকা-সম্পদ জব্দ করতে হবে। পরে তা দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টার এই সভায় গত ছয় মাসে দেশের অর্থনৈতিক অর্জন এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন অর্থ সচিব ড. মো: খায়রুজ্জামান। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। ওই বছরের সাময়িক হিসাবে যা ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবাসী আয়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অভিবাসনও বাড়ছে। বৈদেশিক খাতের আশাবাদী এই চিত্রের একেবারেই বিপরীত অবস্থা ব্যাংক খাতের।

লুটেরা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হবে কিভাবে?

প্রধান উপদেষ্টা ব্যাংক ডাকাতদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংককে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে প্রাথমিক কাজ করার কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রাথমিক কাজের সাথে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ বিশেষত এনএসআই ডিজিএফআই ও দুদকের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় আর্থিক অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য। অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধে দোষী ব্যক্তির শাস্তির বিধান করা হলেই প্রতিকার হয়। কিন্তু আর্থিক অপরাধের ক্ষেত্রে লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত আনার পদক্ষেপ নিতে হয়। সাধারণ অপরাধীরা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয় না বলে আইনের হাতকে সঙ্কুচিত করতে তাদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। কিন্তু যারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যাংক খাত থেকে নামে বেনামে বের করে বিদেশে পাচার করে ভিন দেশের নাগরিকত্ব পর্যন্ত গ্রহণ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা সহজ কাজ নয়। তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।

ব্যাংক লুটের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের এই কঠিন কাজে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছে বলে মনে হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা গত রোববারের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ব্যাংক লুটেরাদের আইনের মুখোমুখি করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতেও আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হলো শুধু আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা দিয়ে কি কাজ সম্পন্ন করা যায়? ৫ আগস্টের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকার এক কঠিন সময়ে প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগ দান করা হয় কর্মকর্তাদের। এই নিয়োগের ফল হলো দেউলিয়াপ্রায় আর্থিক খাতকে তাৎক্ষণিক বিপর্যয় ঠেকাতে জরুরি প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ। এটি না হলে ইতোমধ্যে বেশ কিছু ছোট বড় সমস্যাসঙ্কুল ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেতে পারত। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কায়েমি স্বার্থবাদীদের চাপ ক্রমেই বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের সংবেদনশীল পদগুলোতে বিগত সময়ের বেনিফিশিয়ারিরা দায়িত্ব পেয়ে যাচ্ছেন।

এর ফলে ব্যাংক লুটেরাদের আইনের আওতায় আনার বিষয়টি ভেতর থেকে দুর্বল হতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ ডেপুটি গভর্নরের কেউই আর ব্যাংক লুটেরাদের আইনের আওতায় আনতে আগ্রহী নন বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। এই ইউনিটই মূলত অর্থ পাচারসহ মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও পাচারের অর্থ ফেরানোর দায়িত্ব পালন করে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বিভাগের সক্রিয়তার কারণে শীর্ষ ব্যাংক লুটেরাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের পাচার করা অর্থের পরিমাণ নির্ধারণে তাৎপর্যপূর্ণ আগ্রগতি হয়। কিন্তু আকস্মিকভাবে এই বিভাগের প্রধান পদে আগের সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ পাচার হওয়ার সময়ে দায়িত্ব পালনকারী একজন কর্মকর্তাকে বসানোর পর এর কাজে স্থবিরতা নেমে আসে।

এনএসআইয়ের একটি সূত্রের তথ্য অনুসারে, মানিলন্ডারিং অপরাধসংক্রান্ত এজেন্সিগুলোর সাম্প্রতিক এক সমন্বয় সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটের পক্ষ থেকে এর প্রধান জানিয়েছেন, এখন থেকে অর্থ পাচার ও লুটপাটসংক্রান্ত কোনো নতুন তথ্য অন্য এজেন্সিকে দেয়া হবে না। কোনো তথ্য ওই সব সংস্থা থেকে চাওয়া হলেই কেবল সে তথ্য সরবরাহ করবে আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ। এই বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন যেটি হবে তা হলো নতুন করে আর কোনো অর্থ পাচারের বিষয় উদঘাটিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক লুটেরা হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তির আত্মীয়। বাকিদের মধ্যেও কম বেশি পতিত সরকারের প্রভাব কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট ছিল আর্থিক অপরাধ ও পাচার চিহ্নিতকরণের প্রধান হাতিয়ার। এই বিভাগটির হঠাৎ গতিহীন হওয়া নিয়ে সাংবাদিকরা মনিটরি পলিসি ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে প্রশ্ন করেন। গভর্নরের জবাবে তার এক ধরনের সুপ্ত অসহায়ত্ব লক্ষ করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এসব নিয়োগে কি বড় কোনো স্থান থেকে প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে?

আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার নাম প্রাথমিক নির্বাচনের তিন সদস্যের তালিকায় ছিল না। একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার বিশেষ তদবিরে সে নামটি শেষ মুহূর্তে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংবেদনশীল পদে পাচারে নীরব ভূমিকা রাখার জন্য অভিযুক্ত দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাকে কিভাবে এখন নিয়োগ দেয়া হলো সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক দুদক বা অন্য এজেন্সিকে না চাইলে তথ্য দেয়া হবে না মর্মে যে সিদ্ধান্তের কথা জানা যাচ্ছে সেটি বাস্তব হলে ব্যাংক লুটেরাদের চিহ্নিতকরণের কাজ থেমে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে এবং সেসব দেশের প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে প্রভাবশালী একটি দেশের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে পদক্ষেপ নেয়ার মতো কোনো তথ্যউপাত্ত এখনো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার নতুন নির্দেশনার পর ব্যাংক লুটেরাদের ধরার গতি কিভাবে আসবে সেটি স্পষ্ট নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যক্রম এতটাই স্বতন্ত্র যে গভর্নর চাইলেও সেখানে খুব বেশি কিছু করতে পারেন না। যত দূর জানা যায় এই বিভাগে নতুন প্রধান নিয়োগ গভর্নরের ইচ্ছা অনুসারে হয়নি। এ বিষয়ে এমন কোনো স্থান থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যেখানে তার হয়তো কিছু করার ছিল না। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা কিভাবে বাস্তবায়িত হয় সেটি দেখার বিষয়।

লুটেরাদের ধরা না গেলে কী হবে?

প্রশ্ন হলো আর্থিক খাতের লুটপাটকারীদের যদি আইনের আওতায় না আনা যায় তাহলে কী হবে? এর জবাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন মুদ্রা নীতি ঘোষণার বিবৃতিতেই পাওয়া যায়। প্রধান উপদেষ্টার লুটেরাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা প্রদানের পর দিন বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এ দিনের মুদ্রা নীতি ঘোষণার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা ব্যাংকিং শিল্পের জন্য গুরুতর উদ্বেগের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০২৪ এর সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট ১৬ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের প্রায় ১৬ শতাংশের বেশি। মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে এখন খেলাপি ঋণ বেড়ে মোট ঋণের ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি হলে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর এলসি গ্রহণের জন্য বিদেশী ব্যাংকগুলো বাড়তি চার্জ আরোপ করতে পারে। এর ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের খরচ বেড়ে যাবে যা ব্যাংকিং শিল্পের জন্য গুরুতর উদ্বেগের। আর্থিক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিক দুর্বলতা, নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি এবং অর্থ পাচার ও অবৈধভাবে পুঁজি বিদেশে পাচারের মতো দুর্নীতি, অনিয়মের মতো কারণ এর জন্য দায়ী।

মনিটরি পলিসি ঘোষণার বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বেশ কিছু ব্যাংক বর্তমানে ব্যাপক তারল্য সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বা মন্দ ঋণ, আমানতের ধীর প্রবৃদ্ধি ও দুর্বল ঋণ আদায় কার্যক্রমের কারণে এসব ব্যাংকের পরিস্থিতি আরো বাজে রূপ নিয়েছে। তাদের তারল্য বা নগদ অর্থের চাহিদাকে স্থিতিশীল করতে, বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্কট-কবলিত ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায়, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ধার নিতে দিচ্ছে। এর পরেও তাদের তহবিল চাহিদা আরো বাড়ায় এর মধ্যে কিছু ব্যাংককে (টাকা ছাপিয়ে) সাময়িক তারল্য সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিবৃতি অনুসারে, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশন সংরক্ষণ ও ঋণ আদায়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোত্তম চর্চাগুলো অনুসারে একটি বিস্তৃত গাইডলাইন অনুসরণ করছে। ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এ ধরনের গাইডলাইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে কঠোর তদারকি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিন্তু বাস্তবতা হলো এখন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাত থেকে শীর্ষ লুটেরারা কী পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে তার আনুষ্ঠানিক অঙ্ক প্রকাশ করা হয়নি। যদিও গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারের তথ্য উঠে এসেছে শ্বেতপত্রে। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ২৪০ বিলিয়ন বা দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়নি। কে কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা নামে বেনামে বের করে নিয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যানও নেই। সংবাদপত্রে শীর্ষ পাচারকারী হিসাবে খ্যাত ব্যক্তির ১১টি ব্যাংকে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা নামে বেনামে বের করার ব্যাংকভিত্তিক সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ হয়েছে। আরো ১০টি ব্যাংকের সাথে তার যে লেনদেন রয়েছে তা মিলিয়ে ৪ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হতে পারে এই অঙ্ক।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দেয়া তথ্য অনুসারে সেপ্টেম্বর ’২৪ থেকে জুন ’২৫ পর্যন্ত ৯ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের অঙ্ক ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। কোনো শীর্ষ খেলাপিই এখন আর তাদের নেয়া ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না। লুট হওয়া ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ সাবেক মালিকদের কাছে ফেরত দেয়ার যে উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছিল সেটাও অনেকটা থমকে গেছে। ব্যাংকের অর্থ পাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে বাড়ছে। রাজনৈতিকভাবে আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসতে পারে তাদের সাথে শীর্ষ খেলাপিদের নানাভাবে যোগসূত্র তৈরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক আন্দোলন যতই বাড়তে থাকবে ব্যাংক লুটেরাদের আইনের মুখোমুখি করার স্বপ্ন ততই ফিকে হয়ে যাবে। লুটেরাদের সাথে নানা সমীকরণে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নতুন বন্দোবস্ত তৈরি হতে পারে ধীরে ধীরে। সেই পথে এগোলে জুনের পরের ছয় মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যদি দেশের মোট আমানতের ৫০ শতাংশ তথা ৮-৯ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে যায় তাহলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।

এরপর যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা অর্থনীতিকে কিভাবে সামাল দেবেন কয়দিন তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন সেটি বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অর্থনৈতিক অঙ্গনের যেকোনো বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ শিকারে পরিণত হয় দেশের জনগণ। দেশের মানুষকে এ ধরনের এক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার আগেই এর প্রতিকারের রাস্তা তৈরি করা দরকার। আর এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরাট দায়িত্ব রয়ে গেছে।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙার খবরে স্বস্তি বাংলাদেশে আদানিকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহের আহ্বান আবরার হত্যা মামলায় হাইকোর্টে তৃতীয় দিনের শুনানি সাবেক মেয়র আতিকসহ ৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম সরাসরি বিমান চলাচল নিয়ে আলোচনা রাজবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা সদস্য নিহত মানিকগঞ্জে থানায় দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যের মৃত্যু সোনারগাঁওয়ে ধরা পড়ল ৮ মণ ওজনের শাপলাপাতা মাছ তরুণদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হবে : যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সাড়ে ১৬ হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে : আইন উপদেষ্টা তৌহিদী জনতাকে হুমকি নয়, সতর্ক করেছি : উপদেষ্টা মাহফুজ

সকল