০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ৯ শাবান ১৪৪৬
`

সরকারের মাথাব্যথার কারণ আওয়ামী লীগ

-

পতিত আওয়ামী লীগ এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এখনই ক্ষমতায় যেতে চায় না। তারা জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লিফলেট বিলির কর্মসূচি নিয়েছে। কয়েক স্থানে তারা ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে লিফলেট বিলি করেছে। লিফলেট বিতরণকালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতারা গ্রেফতার হয়েছে। এমনকি রাজধানীতে পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি চালিয়েছে। পাবনার সুজানগরে জনৈক আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করা হলে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দলীয় কর্মীরা। ওই নেতা অবশ্য পরে ধরাও পড়েছেন। জামালপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগ নেতা জনৈক ব্যক্তিকে জামিন না দেয়ায় আইনজীবীরা তার পক্ষ নিয়ে আদালত বর্জন করেছেন। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতারা ঘোষণা করেছেন, তারা নির্দিষ্ট দিনে লিফলেট বিলি করবেন। নাগরিক ঐক্যের নেতা ও আওয়ামী লীগের প্রাক্তন নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালন করছে, অথচ সরকার কিছুই করছে না। সরকার মনে হয় তাদের ছাড় দিচ্ছে। মান্না আওয়ামী লীগবিরোধী, এই কারণে তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করছেন; কিন্তু সরকার নিরপেক্ষ থাকতে চায়। সরকার নিজের কাঁধে দায় তুলে নিতে চায় না। সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে জনগণ নিষিদ্ধ করলে করুক, সরকার নিজে থেকে কিছু করবে না। গণবিরোধী দল নির্বাচনে এমনিতে বাতিল হয়ে যাবে। তারা ভোট না পেয়ে জনগণ থেকে সরে পড়বে। কিন্তু আওয়ামী লীগবিরোধীরা এত সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন। তারা আওয়ামী লীগকে অন্তত তিনটি নির্বাচনে বাইরে রাখতে চান। কারণ আওয়ামী লীগ তিনটি প্রশাসনিক নির্বাচন করেছিল। আওয়ামী লীগবিরোধীরা আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে আসতে দিতে চান না। কারণ তারা ২০১৪ সালে ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’, ২০১৮ সালে ‘নিশিরাতের নির্বাচন’, ২০২২ সালে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ করেছিল। আওয়ামী লীগবিরোধীরা আওয়ামী লীগকে কোনো অধিকারই দিতে চান না। কারণ তারা ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী। জুলাই থেকে আগস্টে তারা গণহত্যা চালিয়েছে। ২০১৩ সালে রাজধানীতে হেফাজতের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হাসিনার বক্তব্যের উসকানিমূলক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনগণ। তারা হামলা করেছেন ৩২ নম্বরের বাড়িতে। হাসিনার বক্তব্যের উল্টা ফল হলো। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশে ভার্চুয়ালি বক্তৃতা দিয়েছেন আর জনগণ শেখ মুজিবের ম্যুরাল উৎখাত করেছে। ওবায়দুল কাদেরের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে নোয়াখালীতে। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খুলনার শেখ বাড়ি ও রাজশাহীতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব কিছু হাসিনার বক্তৃতার ফল। ভারত সরকারের উসকানি না থাকলে এটি হতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার বারবার প্রতিবাদ করেছে; কিন্তু ভারত কর্ণপাত করেনি। বাংলাদেশ সরকার বলেছে, শেখ হাসিনাকে আইনমাফিক ফেরত দিতে হবে; কিন্তু ভারত এতে গা লাগায়নি। আওয়ামী লীগের এতদিনের দুর্নীতির দায়ে নেতারা গ্রেফতার হচ্ছিলেন। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে অস্বীকার করে টিকতে পারবেন না। তাদের এই আদালতকে স্বীকার করতে হবে। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন দিল্লি থেকে ভারতের মদদে, এটি কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। হাসিনার উসকানির ফলেই তার বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। যুবকদের সাথে অনেক বয়স্ক লোকও হাজির ছিলেন। তারা এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। হাসিনা ছাত্রদের উদ্দেশে দিল্লি থেকে বক্তৃতা না দিলে এটি হতো না।

এতদিন আওয়ামী লীগ নেতারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। এখন তারা রাজনীতির কারণে অভিযুক্ত হচ্ছেন, ভারতকে বারবার বলা হয়েছে তাকে ফেরত দেয়ার জন্য; কিন্তু তারা দেয়নি। এখন হাসিনা নাকি ভীষণ ব্যস্ত। তিনি বক্তৃতা পর্যন্ত দিচ্ছেন। তার কর্মীরা বাংলাদেশে খুব সক্রিয়। তারা লিফলেট বিলি করছেন। বিশেষ করে খুলনা ও চট্টগ্রামকে তারা বেছে নিয়েছেন এ জন্য। চট্টগ্রাম ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন এ কারণে। খুলনায় গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু এত কিছু করেও তাকে শেষরক্ষা করতে পারেনি। হাসিনার কারণে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। হাসিনা উসকানি দিতে গিয়ে নিজেই খাদে পড়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ বুঝে গেছে, তারা সহজে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এ জন্য তারা জনমত গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুবই সক্রিয়। হাসিনা যতই উসকানি দিক না কেন, কাজ হবে না। ভারতে যত ব্যস্ত থাকুক না কেন, তাতে লাভ নেই। বাংলাদেশের পায়ের তলায় মাটি থাকতে হবে। সরকার নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে চাচ্ছে; কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। সরকার চেয়েছিল আওয়ামী লীগকে জনগণই বিচার করবে; কিন্তু শেখ হাসিনার উসকানির ফল হয়েছে ভিন্ন। সরকার কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে। সরকার আওয়ামী লীগকে দমন করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর আওয়ামী লীগবিরোধী বিএনপিসহ রাজনৈতিক মহল তো আছেই। শেখ হাসিনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যত প্রচারণাই চালান না কেন, লাভ হবে না কোনো। বিক্ষুব্ধ জনগণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে এবং জুলাইয়ের শহীদদের মরণোত্তর সম্মান জানানোর দাবি করেছে। তারা রাতে গিয়েও ধানমন্ডিতে হামলা করছে। শেখ মুজিবও তাদের ক্রোধ থেকে রেহাই পাননি।


আরো সংবাদ



premium cement
হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগে বয়স ৪৮, অবসর ৭০ করার সুপারিশ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে আ’লীগ : প্রেস সচিব রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাতে বিমানবাহিনী প্রধান ঢাবি ‘ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট’-এর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত বুটেক্স স্টেশনারি স্থানান্তরের পরিকল্পনা, কিন্তু বাস্তবায়ন কবে? আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদ জুলাই আন্দোলনের অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা বরিশালে শেষ হলো তিন দিনের আবাসনমেলা বাগাতিপাড়ায় বিরল প্রজাতির নীলগাই উদ্ধার ‘অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করতে হবে’ ‘শেখ হাসিনা দেশকে এক ব্যক্তির তালুকে পরিণত করেছিল’

সকল