গৌরবের নেতৃত্বে অগৌরব প্রত্যাশিত নয়
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৪৮
যেকোনো দেশের গণ-অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব সে দেশে পরিবর্তনের অনিবার্য ধারক। পৃথিবীকে আলোড়িত করেছে ১৬৮৮ সালে সংঘটিত ব্রিটেনের এমনই আরেকটি গৌরবময় বিপ্লব। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব শুধু ফ্রান্সকেই পরিবর্তন করেনি; বরং পরবর্তীকালে পৃথিবীকে আলোকিত করেছে। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবও ফরাসি বিপ্লবের মতো পৃথিবীকে আন্দোলিত করেছে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া অবধি। পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিটি দেশ ও রাষ্ট্রে গণ-অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব ঘটেছে। পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশেও গণ-অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের ঘটনা ঘটেছে। এদেশের মানুষ ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল দৃশ্যত রক্তাক্ত বিপ্লব। ১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থানকে তারা বিপ্লব বলেছে। ওই বছরের ৭ নভেম্বরে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানও বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলন অবশেষে গণ-অভ্যুত্থানের রূপ নেয়। ২০০৯ সাল থেকে হাসিনা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করলেও শক্তি মদ-মত্ততার কাছে জয়লাভ করতে পারেনি। তবে ছাত্রসমাজের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলন স্বৈরাচারকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক রক্তনদী পেরিয়ে স্বৈরাচার উৎখাতে সক্ষম হয়। অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিগত ১৫ বছরের পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন দিয়ে স্বৈরাচারের ভিতকে কাঁপিয়ে তোলে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রবল ও শক্ত আন্দোলনের ভূমিকা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনন্য বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। এই অভ্যুত্থানে তারুণ্যের বুকে লুকিয়ে থাকা ক্ষোভ ও ক্রোধ বহ্নিশিখায় আওয়ামী স্বৈরাচার ভস্মীভূত হয়। এই সম্মিলিত তারুণ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা একক আদর্শের ধারক এরকমভাবে চিহ্নিত করা কঠিন। যেকোনো বিচার বৈশিষ্ট্যে এটি স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যে মণ্ডিত তারুণ্যের বিপ্লব। এই বিপ্লবের দৃশ্যমান উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, অদৃশ্য লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ, যেখানে বৈষম্য থাকবে না। প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকার। বিগত ১৫ বছর তথা ৫০ বছরের ঘুণে ধরা সমাজের আমূল সংস্কার চেয়েছে তারা। কাউকে ক্ষমতায় বসাতে অথবা নিছক তাড়াতে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষরণ ঘটেনি। যে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ঐক্য প্রোথিত হয়েছে ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবে, সমসাময়িক ইতিহাসে তা অভূতপূর্ব ও বিস্ময়কর। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সে অর্থে ছিল ইউনিক। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে তরুণ ও প্রবীণ নেতৃত্বের এক বিরল নজির স্থাপিত হয়।
প্রবীণ ও নবীনের এ নেতৃত্ব মানুষের মনে সীমাহীন আশা ও আকাক্সক্ষার জন্ম দেয়। প্রতিদিন দাবি-দাওয়ার এত মিছিল বাংলাদেশ কখনোই প্রত্যাশা করেনি। এর ইতিবাচক দিক হলো মানুষ তার অবারিত স্বাধীনতার অধিকার পেয়েছে। আর নেতিবাচক দিক হলো ‘অবাদ স্বাধীনতা যে আসলে স্বাধীনতাই নয়’ এটি বোঝার ব্যর্থতা। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সঙ্গতভাবেই একে বলেছেন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’। এ যেন এক নতুন দেশ নতুন জাতি ও নতুন স্বপ্ন। সংস্কারের আশায় আশায় প্লাবিত দেশ। প্লাবণে যে শুধু নতুন পানি আসে তা নয়। সেখানে আবর্জনাও ঢুকে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আকাশছোঁয়া আস্থা ও বিশ্বাস আমরা দেখেছি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনে। তা হোক ত্রাণ কিংবা ‘প্রতিবিপ্লব’ ও গণবিরোধী কার্যক্রম মোকাবেলায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই গৌরবময় ভূমিকায় অবশেষে এমন কোনো অগৌরবের ঘটনা মানুষ দেখতে চায় না, যাতে তাদের সম্মান মর্যাদা ও ইমেজের কোনো ক্ষতি হয়। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ, বিবাদে পরিণত হোক এটি নাগরিক সাধারণ চায় না। কিছু কিছু সমন্বয়কের ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি ও অন্যায় সুবিধা নেয়ার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তবে বেশির ভাগ অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সন্তুষ্টির বিষয় যেকোনো কেন্দ্রীয় তথা শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উত্থিত হয়নি। মফস্বলে ও অন্যত্র অভিযোগগুলো উত্থিত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাও সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। তবে সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে অতি সাম্প্রতিক সময়ের দু-একটি ঘটনায় নাগরিক সাধারণ আহত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনীতি নিয়ে দু’ধরনের প্রতিক্রিয়া জনমনে। প্রথমটি এরকম যে, তারা এ জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে। সুতরাং রাজনীতি করার স্বাভাবিক অধিকার তাদের রয়েছে। গণবিপ্লবের নেতৃত্ব যেহেতু তারা দিয়েছে সেহেতু গণসংস্কারের দায়-দায়িত্বও তাদের রয়েছে। তারা রাষ্ট্রব্যবস্থায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে এটিই কাম্য। তাদের পক্ষে আরো বলা হয়, দুর্নীতি গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারায় বন্ধ হবে না, এটি করতে চাইলে সৎ, সুস্থ ও সাহসী নতুন প্রজন্ম : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেই দিতে হবে। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ অংশ জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করেছে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪। অনেক সমাজতাত্ত্বিক রাজনৈতিক সমাজের গতি-প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করে মন্তব্য করেন, পরবর্তীকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব বিপদাপদের মুখোমুখি হতে পারে। এমনিতে এই মুহূর্তেই ছাত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়ামী ষড়যন্ত্র ও কায়েমি স্বার্থবাদীদের প্রতিহিংসার ঘটনা লক্ষ করা গেছে। ভবিষ্যতের সরকারের সাথে যদি তাদের বনিবনা না হয় তাহলেও তাদের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং তাদের অস্তিত্বের জন্য ঐক্যবদ্ধ দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুজব হচ্ছে দেশে ও বিদেশের বিশেষ মহল নাগরিক কমিটি ধরনের রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে অথবা ভবিষ্যতে জনপ্রিয় বিকল্প শক্তির আবির্ভাব দেখতে চাচ্ছে। কিংস পার্টি হিসেবে তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটছে, এরকম মন্তব্যের জোরালো প্রতিবাদ করেছে তারা। অপরদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্যও রয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই নাগরিক কমিটিকে সহজভাবে নিয়েছে বলে মনে হয় না। গণমাধ্যমে গরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলোর মন্তব্য যদি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে তাদের বিরূপ মন্তব্যই চোখে পড়ে। তারা বলছেন, সরকার নামানো আর সরকার চালানো এক কথা নয়। সিভিল সোসাইটির একাংশ মনে করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রকারান্তরে নাগরিক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাদের অর্জিত ভাবমর্যাদা জনপ্রিয়তা ও নিরপেক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জাতির সূর্যসন্তান হিসেবে তাদের উচিত সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা। তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রকারান্তরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করবে।
অনেকে চায় ছাত্ররা ঘরের ছেলে, ঘরে ফিরে যাক, পড়াশোনায় মনোযোগী হোক। অবশ্য ইতোমধ্যে ছাত্র নেতৃত্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পড়াশোনায় ফিরে গেছে। সমাজতত্ত্ববিদরা সতর্ক করছেন, সৎ সেনাবাহিনী যেমন রাজনীতিতে জড়ালে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তেমনি ছাত্রসমাজের নিষ্কলুষ চরিত্রে কলুষতা দেখা দিতে পারে, যদি তারা দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকে। এ সম্পর্কে বহুল উচ্চারিত প্রবাদবাক্যটি হচ্ছে- ‘Power Corrupts and Absolute Power Corrupts Absolutely’. ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজরা ছাত্র নেতৃত্বকে সৎ ও সুস্থ থাকতে দিচ্ছে না। ভবিষ্যতেও ছাত্র ক্ষমতাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলবে। সুতরাং ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে তাদের না জড়ানোই উত্তম।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা যে, ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আদর্শিক বৈপরীত্য তথা বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্য রচিত হয়েছে তা অক্ষুণ্ন্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে আশার কথা এই যে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের একটি নিজস্ব বয়ান, নতুন ব্যাখ্যা ও স্বতন্ত্র কর্মধারা সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যৎ সময় ও সুযোগের মধ্য দিয়ে তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন দিক-নির্দেশনা সৃষ্টি হতে পারে। আশা করা যায়, সামগ্রিক ছাত্র নেতৃত্ব নতুন ইতিহাস নির্মাণ করতে সক্ষম হবে।
কিন্তু ছোটখাটো ঘটনা সাধারণ মানুষকে খানিকটা হতাশ করছে। এক পক্ষের মিছিলে আরেক পক্ষ হামলা করে গুরুতর আহত করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রকারান্তরে ছাত্র নেতৃত্বকে দোষারোপ করা হচ্ছে। অপরদিকে, নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি মানিকগঞ্জে পরেরটি খোদ ঢাকায়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মানিকগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটছে। আলোচনা সভার শেষ পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে তা মারামারির পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে দু’জন আহত হয়। ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকার ডেমরা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, ‘মনে হচ্ছে তারা ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে চায় সেই ধরনের কার্যকলাপই তারা শুরু করেছেন।’ অবশ্য এ ঘটনার তদন্তে ঢাকা মহনগরের দায়িত্বশীল এবং ঘটনাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনা দুটো যদিও সামান্য, তবুও আমাদের নাগরিক মনকে তা আহত করে। রক্তের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে উঠেছে সামান্য ক্ষমতাকেন্দ্রিকতায় তা বিনষ্ট হতে দেয়া যায় না। আমরা স্বস্তির সাথে এও লক্ষ করেছি, আন্দোলনের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন গ্রুপ তাদের স্বীয় স্বার্থে নানাবিধ সংগঠন তৈরি করেছিল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের একীভূত করে সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এখনো সেখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, গোষ্ঠীস্বার্থের সঙ্ঘাত ও আদর্শিক দ্বৈধতা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই ছাত্রনেতাদের প্রজ্ঞা, কুশলতা ও দূরদৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রে তাদের অবদান স্থায়ী হবে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে গৌরবময় নেতৃত্বের অগৌরব প্রত্যাশিত নয়।
লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা