১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ মাঘ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬
`

চলমান অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

-

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার মিশ্রণে দাঁড়িয়ে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট ও আমদানি খাতে উচ্চ ব্যয় অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে।

চলমান অর্থনীতির অবস্থা

মুদ্রাস্ফীতি : বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির চাপের পেছনে বেশ কয়েকটি প্রধান কারণ কাজ করছে, যা খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।

মুদ্রাস্ফীতির কারণ

১. জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি : আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। জ্বালানির মূল্য বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও পণ্য উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে, যা সব খাতেই মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়াচ্ছে।

২. বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : বিশ্ববাজারে বিভিন্ন কৃষিপণ্য, ধাতু ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এসব পণ্য আমদানি করে, এই মূল্যবৃদ্ধি স্থানীয় বাজারেও প্রভাব ফেলছে।

৩. পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় চাহিদা বৃদ্ধি : কোভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কারণে মানুষের আয় এবং চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। উচ্চ চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে।

৪. বৈদেশিক মুদ্রাসঙ্কট : রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে ডলার ক্রয় করে পণ্য আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়ছে, যা অভ্যন্তরীণ বাজারে সরাসরি মূল্যস্ফীতি ঘটাচ্ছে।

সম্ভাব্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা

বাংলাদেশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন :
১. জ্বালানি নীতি পর্যালোচনা : অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।

২. রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ : রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।

৩. নিয়ন্ত্রিত মুদ্রানীতি : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কঠোর করে মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ঋণের সুদের হার সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

৪. বিকল্প উৎস ও সরবরাহ চেইন : খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস থেকে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করা গেলে কিছুটা চাপ কমানো সম্ভব।

মুদ্রাস্ফীতির এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা দেশের সাধারণ জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কেননা মূল্যস্ফীতি দীর্ঘমেয়াদে আয় ও ক্রয়ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

বাণিজ্য ঘাটতির কারণ

১. উচ্চ আমদানি-নির্ভরতা : বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা আমদানি-নির্ভর, বিশেষ করে কাঁচামাল, শিল্পের যন্ত্রপাতি এবং জ্বালানির ক্ষেত্রে। শিল্প খাতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে আমদানি-নির্ভরতা কমানো সম্ভব হয়নি, যা বাণিজ্য ঘাটতি আরো বাড়িয়েছে।

২. রফতানি খাতে বৈচিত্র্যের অভাব : বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান অংশ আসে পোশাক খাত থেকে, যা অন্যান্য খাতের তুলনায় অনেক বেশি নির্ভরশীল। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও কৃষিপণ্য রফতানিতে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনো মূলত পোশাক শিল্পের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা রয়ে গেছে।

৩. প্রতিযোগিতার ঘাটতি : আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সাথে। উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহে এখনো বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে, যা রফতানি আয় বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।
৪. বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট : ডলারের সঙ্কটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে আমদানি করতে উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি বাণিজ্য ঘাটতিকে আরো বাড়াচ্ছে।

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে করণীয়

১. রফতানি খাতের বৈচিত্র্যকরণ : রফতানি আয়ে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিভিন্ন খাত যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও পাট শিল্পকে আরো উৎসাহিত করতে হবে। এতে রফতানি আয়ের উৎসগুলো বৃদ্ধি পাবে এবং পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরতা কমবে।

২. স্থানীয় শিল্প উন্নয়ন : কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও নীতিসহায়তা দিয়ে স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

৩. বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ : বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করে আরো বেশি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়বে। এতে রফতানি ও আমদানির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সুবিধা হবে।

৪. বাজার বিস্তার : নতুন বাজারে পণ্য রফতানির সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। উদীয়মান বাজার যেমন আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বাজারের প্রসার ঘটানো গেলে রফতানি আয় বাড়ানো সহজ হবে।

৫. বাণিজ্য চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়ন : দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে শুল্ক ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। এতে রফতানি খরচ কমে এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক নীতির সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এ ছাড়া, উদ্ভাবনী খাতগুলোর ওপর জোর দিয়ে ও উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করে এই ঘাটতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব।

কৃষি খাতের অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষিনির্ভর। এই খাত খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, যেমন :

১. আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিয়মিত বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২. প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ঘাটতি : উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি এবং আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি এখনো পুরোপুরি গ্রামাঞ্চলে পৌঁছায়নি, যার ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো কঠিন হচ্ছে।

৩. বৈচিত্র্যহীনতা : ধান, গম ও অন্যান্য প্রধান খাদ্যশস্যের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে কৃষি খাতে বৈচিত্র্য আনতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে রফতানিযোগ্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন এবং বিদেশী বাজারের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

শিল্প খাতের অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

১. তৈরী পোশাক খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা : বাংলাদেশের রফতানি আয়ের বেশির ভাগই পোশাক শিল্প থেকে আসে। এই খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো জরুরি, কারণ যেকোনো বৈশ্বিক মন্দা বা আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার পরিবর্তন সরাসরি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।

২. উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি : বিদ্যুৎ ও জ্বালানির খরচ বৃদ্ধির কারণে শিল্প উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যা প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে কিছুটা দুর্বল করে তুলছে।

৩. প্রযুক্তি ও দক্ষতার ঘাটতি : অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদনপ্রক্রিয়া পুরনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি থাকায় শিল্প উৎপাদন সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।

৪. পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ : অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান যথাযথ পরিবেশগত মান বজায় না রেখে কাজ করে, যা ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

কৃষি ও শিল্প খাতের উন্নয়নের সম্ভাব্য করণীয়

১. কৃষি খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন : আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি, যেমন কৃষি যন্ত্রপাতি, উন্নত সেচব্যবস্থা ও কৃষি গবেষণার প্রসার ঘটানো যেতে পারে। এছাড়া, উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী ফসলের চাষ বৃদ্ধি করতে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ দরকার।

২. কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা : কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে উৎসাহিত করা গেলে রফতানিযোগ্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও বৈচিত্র্য বাড়বে এবং নতুন বাজারও খুঁজে পাওয়া যাবে।

৩. শিল্প খাতে বৈচিত্র্য আনা : তৈরী পোশাকের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, ওষুধ ও পাট শিল্পের রফতানি সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এছাড়া নতুন খাত যেমন ইলেকট্রনিক্স ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে তুললে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব।

৪. দক্ষ জনশক্তি গঠন : প্রযুক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। এতে শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে আইটি খাতের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাত বিগত দশকে দ্রুতগতিতে বিকশিত হয়েছে এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই খাতটি এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

বর্তমান অবস্থা

আইটি শিল্পের অবদান

বাংলাদেশের জিডিপিতে আইটি এবং আইটিইএস (IT-enabled Services) খাতের অবদান ১ শতাংশের বেশি। ২০২৩ সালে আইটি খাত থেকে রফতানি আয় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

প্রযুক্তি পার্ক এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার

দেশে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের আওতায় ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।

ফ্রিল্যান্সিং এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতি

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সার-ভিত্তিক দেশ। প্রতিভাবান যুবকদের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে প্রযুক্তি স্টার্টআপ, যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), ফিনটেক ও ই-কমার্স খাতে কাজ করছে।

মানবসম্পদ উন্নয়ন

বিভিন্ন আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেমন LICT প্রকল্প এবং কোডিং স্কুলের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

রফতানি আয় বৃদ্ধি

বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে আইটি রফতানি আয় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। বীমা, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে ডিজিটালাইজেশনের চাহিদা বাড়ছে।

এআই এবং অটোমেশনের ভূমিকা

এআই, মেশিন লার্নিং এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি সংক্রান্ত সেবা প্রদান করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণ

ই-গভর্ন্যান্স, স্মার্ট সিটি ও ডিজিটাল শিক্ষা খাতের মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় আইটি খাত আরো বিস্তৃত হবে।
বিদেশী বিনিয়োগ : হাইটেক পার্ক ও স্টার্টআপদের জন্য বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা চলছে।

অর্থনীতির সাথে সম্পর্ক, বেকারত্ব নিরসন

আইটি খাত তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। ফ্রিল্যান্সিং ও স্টার্টআপ সংস্কৃতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রফতানি আয়ের নতুন খাত হিসেবে আইটি খাত তৈরি করছে এক শক্তিশালী ভিত্তি।

পরিবেশবান্ধব ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার অর্থনীতিতে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করছে। বাংলাদেশের আইটি খাত সঠিকভাবে পরিচালিত হলে এটি ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারে। দক্ষ মানবসম্পদ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিদেশী বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়ে আইটি খাতের সম্ভাবনা সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

১. মেগা প্রকল্পগুলোর প্রভাব : বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান, যেগুলো পুরোপুরি চালু হলে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই প্রকল্পগুলো পণ্য পরিবহন সহজতর করবে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করবে।

২. রফতানির বৈচিত্র্যকরণ : পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্য শিল্প যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতের বিকাশের মাধ্যমে রফতানি আয়ে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব। এতে বৈদেশিক আয়ের উৎস বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান শক্তিশালী হবে।

৩. মানবসম্পদ উন্নয়ন : দেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তিতে রূপান্তর করা গেলে তা রেমিট্যান্স আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

৪. সবুজ অর্থনীতি : পরিবেশবান্ধব শিল্প ও সবুজ অর্থনীতির দিকে ধাবিত হওয়া ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং সবুজ প্রযুক্তির সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পেতে পারে।

লেখক : সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি,
নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি
e-mail : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement