নির্বাচনী সংস্কার প্রসঙ্গে একটি প্রস্তাব
- প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৮
পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নির্বাচন তথা ভোট ছিল উৎসবমুখর। কিন্তু বিগত সরকার পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা বির্তকিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিজমের পতনের পর দেশের মানুষ নতুন করে ভোট উৎসব পালন করতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। নির্বাচনী সংস্কার সবাই চাচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বোদ্ধা থেকে শুরু করে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা দু’টি প্রস্তাব দিয়েছেন। একটি হচ্ছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট এবং অপরটি আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন।
বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করা প্রয়োজন। কেননা আমাদের দেশে প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থায় সঙ্ঘাত, রক্তপাত ও হানাহানি বেশি হয়। মানুষ হত্যার মতো জঘন্যতম ঘটনাও ঘটে। নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের ব্যাপারে আমার একটি প্রস্তাব হচ্ছে জাতীয় সংসদ সদস্যের আসন ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ করা। আগের নিয়মে ৩০০ আসনে নির্বাচন এবং আনুপাতিক পদ্ধতিতে ১০০ আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নারীদের জন্য ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক আসন রাখা যেতে পারে।
নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে দু’টি প্রস্তাব এসেছে : এক, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, দুই, আনুপাতিক পদ্ধতি। আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমার মতামত হচ্ছে
এখানে কিছু সুবিধাও আছে আবার অসুবিধাও আছে। প্রথমে সুবিধাগুলো আলোচনা করব।
১. আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টিত হয়। যদি কোনো রাজনৈতিক দল মোট প্রদত্ত ভোটের ১০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে সে দল আনুপাতিক হারে ৩০টি আসন পাবে। এটি একটি বড় সুবিধা।
২. একজন ভোটার দলীয় মার্কাকে ভোট দেন। আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হলে তার দলীয় প্রার্থী হারলেও সারা দেশের প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকবে। যা বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় নেই।
৩. আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থী না থাকায় ব্যালট ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
৪. সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে সমান সুযোগ থাকবে।
৫. ভালো লোক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
৬. সঙ্ঘাত, মারামারি ও হানাহানি কম হবে।
৭. সব পার্টির সমান সুযোগ থাকবে। ছোট পার্টিগুলোর সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
আনুপাতিক পদ্ধতির অসুবিধাগুলো হচ্ছে
১. সাধারণত কোনো রাজনৈতিক দল ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পায় না। আনুপাতিক পদ্ধতিতে কোনো রাজনৈতিক দল ৫০ শতাংশ ভোট পেলেই কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে পারবে। আর কোয়ালিশন সরকার গঠন হলে ব্যর্থ হওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকে। তখন সরকার ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রের বড় ক্ষতি হয়।
২. ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে বড় দলগুলোর কাছে রাখার চেষ্টা করবে।
৩. আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিজ সংসদীয় এলাকার কাজের উন্নয়ন সেভাবে করতে পারবেন না।
৪. আনুপাতিক পদ্ধতিতেও ফ্যাসিজম ফিরে আসার শঙ্কা আছে।
৫. আনুপাতিক পদ্ধতিতে দলীয়ভাবেও দুর্নীতির চাষাবাদ হতে পারে। দল যাকে চাইবে তিনি-ই জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন। একজন অসৎ লোককে যদি দল চায় তাহলে তিনিও জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন।
৬. বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদে যারা বিশ্বাস করেন না তারাও আনুপাতিক পদ্ধতিতে ১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে যেতে পারেন।
৭. আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এলাকার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন নাও করতে পারেন।
অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ হয় না। বাংলাদেশে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় সবগুলো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল। দলীয় সরকারের অধীনে তা কিন্তু হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে।
আমি মনে করি, দু’টি পদ্ধতি নিয়ে দেশে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মিলে সবার কাছে গ্রহণীয় একটি সমন্বিত প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেন। কারণ আনুপাতিক পদ্ধতিতে সরকার গঠিত হলে সেটি বেশি দিন স্থিতিশীল নাও হতে পারে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো রাজনৈতিক দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা