সাবাস বাংলাদেশ
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৫৮
বাংলাদেশ আমাদের অহঙ্কার। আমাদের জন্ম-মৃত্যুর ঠিকানা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমাদের নাড়ির স্পন্দন। এ দেশের আলো-বাতাস, মাটি ও মানুষ আমাদের স্বপ্ন দেখায় নতুন সৃষ্টির। হাজার বছর ধরে এ দেশ সমৃদ্ধ করেছে পৃথিবীকে, মানব সভ্যতাকে। এ দেশের সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে আজকের ইউরোপ। দিল্লির প্রাণভোমরা ছিল এককালের বাংলাদেশ। শক্তি, শৌর্যের চরম প্রকাশে এ দেশ একসময় শাসন করেছে প্রায় গোটা ভারতবর্ষ। এ দেশের মসলিন সৌন্দর্য বাড়িয়েছে দিল্লির হেরেম সুন্দরীদের, মিসরীয় রমণীকুলের; অপরিহার্য ছিল ইউরোপের রাজ দরবারে। এ দেশের তোরণ দিয়েই বিভিন্ন সভ্যতা প্রবেশ করেছে ভারতে। এ দেশের মানুষ বহুবার একসাথে রুখে দাঁড়িয়েছে বহিঃশত্রুদের। তিতুমীর, ফকির মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠক এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক একটি মহাকাব্য। এ দেশের মাটি সিঞ্চিত হয়েছে অগণিত পীর, ওলামা-মাশায়েখের পদচারণায়। তারা আলোকিত করেছেন এ দেশের মানুষের আত্মা ও জীবনাচার। উজ্জীবিত করেছেন স্বাধীনতার চেতনা। তারই ধারাবাহিকতায় ঈশা খাঁ, মুসা খাঁ, রাজা প্রতাপাদিত্য আজো ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। দেশের ডাকে দল-মত ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে লড়াই করার ইতিহাস। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাস। একই সাথে ঘসেটি বেগম, জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, মীর জাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার কলঙ্কেও কলঙ্কিত বটে।
জুলাই বিপ্লবের-পরবর্তী সময়ে ঘসেটি বেগম আর মীর জাফরদের স্বরূপ আরো একবার সাধারণের সামনে এসেছে। সামনে এসেছে জগৎশেঠদের এত দিনের আবরিত মুখ। বিশ্ববাসী দেখেছে, নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্লাইভ ও ওয়াটসনদের নতুন মুখ। যাদের জিভে লালসার লালা, চোখে শঠতা আর ধূর্ততা কৃত্রিম বন্ধুত্বের আলখেল্লার আড়ালে। সভ্যতা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা আর অবমাননা দেখিয়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের উদগ্র বাসনায় উন্মত্ত হায়েনার মতো আচরণ করছে। তাদের অনুগ্রহে আমাদের স্বাধীনতা, তাদের দয়ায় আমরা খেতে পরতে পারছি এমন বকবকানিতে কান ঝালাপালা। বাংলাদেশকে অকার্যকর হিসেবে প্রমাণের জন্য তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।
তাদের নিজের দেশে ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কত সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে সে হিসাব তারা রাখে না। মনে পড়ে, যখন সংখ্যালঘু রমণীকে প্রকাশ্য দিবালোকে বিবস্ত্র করে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়, সারাবিশ্ব যার প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে তখন প্রগতিবাদী এই দাদাবাবুরা একেবারে স্পিকটি নট। তারা যখন দেশের হাজার বছরের প্রাচীন স্থাপনাগুলোকে তাদের উপাসনালয়ের ওপর নির্মিত বলে দাবি করেন তখন সংখ্যালঘু অধিকার সামাজিক সুরক্ষা এসব কেবল ‘বাত কি বাত’ হয়ে যায়। একই সাথে কানাডায় যখন দাদাবাবুদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় তখনো প্রগতিবাদীরা চুপ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, গিরগিটির মতো রঙ বদলানো বাংলাদেশের সুশীলসমাজ চুপটি করে বসে আছেন বৃহৎ প্রতিবেশীর অন্যায় আচরণে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তাদের নাক গলানো যে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত তাও যেন তারা বোঝেন না। দেশ যখন বিপন্ন, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে, আমাদের ঘাড়ে যখন সাপিনীর নিশ্বাসের ছোঁয়া, তখন সমবেতভাবে দেশ রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হওয়ার পরিবর্তে নির্বাচন নিয়ে লড়াইয়ে ব্যস্ত সবাই! আজ প্রয়োজন চিকিৎসাসেবার জন্য, বিয়ের কেনাকাটার জন্য দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের জন্য ভারত ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা। তাদের সাথে সব বাণিজ্যিক চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা। তাদের যে জনশক্তি এ দেশে কাজ করে তাদের ওপর আয়করসহ আইনানুগ শুল্ক আরোপ করা। জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করা।
যারা সীমান্তের ওপার থেকে আমাদের চোখ রাঙায় দেখায় তাদের তাঁবেদারি করার জন্য হুকুম জারি করে তারা যাই হোক বন্ধু হতে পারে না। তারা ভুলে গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল তাদেরই স্বপ্নপূরণের সুযোগ। সীমান্ত রক্ষায় লাখ কোটি ডলারের ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। পেয়েছেন পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা। সাথে ফাও হিসেবে হাজার কোটি টাকার পাকিস্তানি সমরাস্ত্র। পেয়েছেন বাংলাদেশের বাজার এবং শ্রমবাজার, চতুর্থ বৃহত্তম রেমিট্যান্স আয়ের সুযোগ। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ওপারে যে আস্ফালন দেখা যাচ্ছে তা রীতিমতো গর্হিত। তারা যেন সভ্যতা, ভদ্রতা, আদব-কায়দা, আন্তর্জাতিক আইন সব কিছুর মাথা খেয়েছেন।
ভারতের অর্থনীতি সচল রাখতে বাংলাদেশ অপরিহার্য। এই অপরিহার্য অবস্থার পরিবর্তনের আশঙ্কায় তারা আজ পাগলপারা। ভেবেছে ধমকে চুপ করে দেবে বাংলাদেশকে। তারা স্বপ্নেও ভাবেনি এ দেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, ছাত্র, শ্রমিক, মুটে, মজুর একসাথে গর্জে উঠবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়। আর একবার প্রমাণিত হলো, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। ইস্পাত কঠিন অটুট জাতীয় ঐক্যের শক্তিতে।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা