২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আগস্ট বিপ্লবের ভ্যানগার্ড

গত ৫ আগস্ট ঘটে গেল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণ-অভ্যুত্থান - ফাইল ছবি

গত ৫ আগস্ট ২০২৪ এ ঘটে গেল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণ-অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জন আকাক্সক্ষার বিপ্লব। ছাত্ররা ছিল সেই বিপ্লবের ‘ভ্যানগার্ড’। জুলাইয়ের শুরু থেকে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সেই ছাত্ররাই সদা জাগ্রত ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের জন্য কোটাপ্রথা সৃষ্টি করেন। এই কোটার জালে আটকে পড়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল ২০১৮ সালে। সেই আন্দোলন সফল হয় স্বেচ্ছাচার হাসিনার রাগের মাথায় পুরো কোটা বাতিল করে দেয়ার মাধ্যমে। তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিপি নুরের মতো ‘সিচুয়েশনাল লিডার’ হিসেবে কিছু তরুণ নেতৃত্বের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালেও জাতি দেখেছে একঝাঁক তরুণ নেতৃত্বের বিস্ফোরণ। যে বিস্ফোরণ অত্যাচারী একনায়কের সিংহাসন তছনছ করে দিয়েছে মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে!

পতিত সরকার যখন বুঝতে পারল যে, কোটাপ্রথা বাতিল করায় সরকারি চাকরিতে মেধার তোড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন আদালতের কাঁধে ভর করে পুনরায় কোটাপ্রথা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করল। এর মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয়েছিল পতিত-স্বেচ্ছাচার শেখ হাসিনার শেষের শুরু। গত জুনের ৫ তারিখে উচ্চ আদালত কোটাপ্রথা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করে।

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ছাত্ররা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু ১৪ জুলাই একনায়ক-স্বৈরাচার হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্রদেরকে রাজাকারের নাতি-পুতি বলে গালি দেন। ছাত্ররা অপমানিত হয়ে ১৪ জুলাই রাতেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ১৫ জুলাই আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজপথে ফেলে বেধড়ক পিটুনি দেয়। সারা দেশে এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে সাধারণ ছাত্ররা। এরই মধ্যে ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা করে। ফলে আন্দোলনের বারুদে আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে এবং পরবর্তী মাত্র ২০ দিনের মাথায় অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।

কিন্তু গণ-অভ্যুত্থান সফল করে যখন বিপ্লবের পথ তৈরি হলো তখন এর পথে পথে সৃষ্টি করা হতে থাকল বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর তিন দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল একেবারে বিপর্যস্ত। তাদের একাংশ পলাতক এবং অপর অংশ দ্বিধাবিভক্ত। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সামাজিক শৃঙ্খলা বিধানে নেমে আসে ছাত্ররা। তারা রাস্তায় নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেয়। প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ছাত্ররা রাজধানীসহ শহর-বন্দরে রাস্তাঘাটে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে সুনিপুণভাবে। এই সময়টায় আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতির হুমকিতে পড়ে দেশ। চারদিকে ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাইয়ের চেষ্টা চলে। ছাত্ররা তখন পাড়ায় পাড়ায় রাত জেগে পাহারা বসিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। রাত জেগে তারা মানুষের বাড়িঘর পাহারা দেয় আর দিনভর রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখে। অন্য দিকে ৫ আগস্ট বিপ্লব শুরু হওয়ার পরপরই অতিবৃষ্টি ও বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের বদান্যতায় ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়। এ সময় ছাত্ররা দ্রুত এগিয়ে আসে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে। তারা ত্রাণ সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে জীবন-মন উজাড় করে দিয়ে কাজ করে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শুরু হয় পতিত স্বৈরাচারের বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্র। নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরেও পতিত সরকারের নিয়োজিত রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিতে গড়িমসি করতে থাকেন। এই অবস্থাটি ছিল দেশের অস্তিত্বের জন্য সঙ্কটময়। ফলে ‘ভ্যানগার্ড’রা এগিয়ে আসে। তারা রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য আলটিমেটাম দেয়। ফলে দ্রুতই রাষ্ট্রপতি সংসদ বাতিলের ঘোষণা দেন। এর পরপরই আসে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কথিত এক ‘বিচার বিভাগীয়’ অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চালান। তিনি উচ্চ আদালতের সব বিচারপতিকে নিয়ে একটি গোপন সভার আয়োজন করার উদ্যোগ নেন। জানতে পেরে দেশবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তখনো নতুন সরকারের হাতে শক্তিশালী কোনো উপাদান ছিল না এই ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ ব্যর্থ করে দেয়ার মতো। আবারো সেই ছাত্র ‘ভ্যানগার্ড’ এগিয়ে এলো। তারা হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি দিলো। ফলে হাসিনার ব্যক্তিগত আজ্ঞাবহ তথাকথিত প্রধান বিচারপতি অনুষ্ঠিতব্য সেই সভা বাতিল করতে বাধ্য হন এবং পালিয়ে যান। অন্য দিকে পতিত সরকারের উচ্ছিষ্টভোগীদের ইন্ধনে দেখা দেয় আনসার বিদ্রোহ। বিদ্রোহী আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও করে। পুলিশ তখনো ছিল দুর্বল এবং হতবিহ্বল। এ সময় সমন্বয়করা ছাত্রদের নিয়ে বিদ্রোহীদের সরিয়ে দেয়ার সাহসী উদ্যোগ নেয়। এতে কিছু ছাত্র আহত হলেও বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

ইতোমধ্যে আরো একটি ষড়যন্ত্র মঞ্চায়িত হয়। বিরাজমান অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে দেশের আওয়ামী জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ ও নির্যাতন চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। হাসিনার ব্যক্তিগত বন্ধুরাষ্ট্র ভারত সেই ষড়যন্ত্রের পালে ঝড়ো বাতাস বইয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। ভারত এ সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে থাকে যে, বাংলাদেশে হাসিনার পতনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। তবে প্রকৃতপক্ষে সেই সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ছিল নিতান্তই পরীক্ষিত আওয়ামী সন্ত্রাসী হিন্দুদের ওপর। সেগুলো কোনোক্রমেই ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে করা হয়নি। এ সবকেই ভারত পুঁজি করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। আর এদেশীয় আওয়ামী দালালরা ভারতের অপপ্রচারকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য মন্দির ও হিন্দুপাড়ায় আক্রমণের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এমনকি কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ কর্মী ও হিন্দু যুবকদেরকে মন্দির আক্রমণের ঘটনায় হাতেনাতে ধরাও হয়েছে। এমন একটি নাজুক মুহূর্তে ছাত্ররা নেমে আসে বিপ্লবের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে। তারা যার যার এলাকায় মন্দিরে মন্দিরে পাহারা বসায়। দিন-রাত তারা দেশব্যাপী মন্দিরগুলো পাহারা দেয় যেন কোনো আওয়ামী দোসর উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সুযোগ না পায়। অবশ্য এ সময় বিএনপি-জামায়াতসহ বিপ্লবের পক্ষের অন্যান্য শক্তি এই মন্দির ও হিন্দুপাড়া পাহারায় ছাত্রদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।

আরো একটি প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় বিপ্লবের সফলতার পথে। উচ্চ আদালতের প্রায় একডজন বিচারক বিচারাঙ্গনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছিল। তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করার কোনো পথ নতুন সরকারের হাতে ছিল না। ফলে ‘ভ্যানগার্ড’রা রাস্তায় নামল; হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি দিলো। এতে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে ছুটিতে পাঠিয়ে বিচারিক কার্যক্রম থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এখনো বহুসংখ্যক বিচারক রয়ে গেছেন পতিত সরকারের নিয়োগকৃত। তারা যেকোনো সময় ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারেন।

প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই থিওরিটি এই ‘বিপ্লবের ভ্যানগার্ডের’ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব ‘ভ্যানগার্ডের’ মুখোশ পরে কিছু অপকর্মও করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এইচএসসি পরীক্ষা অর্ধেক সম্পন্ন হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুন সরকার সেই পরীক্ষাগুলো পুনরায় নেয়ার রুটিন প্রকাশ করলে একদল ছাত্র মিছিল করে সচিবালয়ে প্রবেশ করে। তারা শিক্ষা উপদেষ্টাকে বাধ্য করে অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিল করার জন্য। কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে সেই পরীক্ষাগুলো বাতিল করে। এটি ছিল একটি বড় ধরনের ভুল। যে ভুলটি পরবর্তীতে অকৃতকার্য ছাত্রদেরকে উৎসাহিত করেছিল ফল প্রকাশের পর ঢাকা ও ময়মনসিংহে শিক্ষা বোর্ডে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে আবারো দেখতে হতে পারে। আরো একটি দুঃখজনক প্রবণতা অভ্যুত্থানের পরপরই দেখা দেয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্র বিভিন্ন অজুহাত তুলে প্রতিষ্ঠান প্রধান, অধ্যক্ষ অথবা প্রধান শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করতে থাকে। তবে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সত্যিকার অভিযোগও ছিল।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তার কাছে উপস্থাপনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য স্ববিরোধী এবং অবিবেচনাপ্রসূত প্রতিভাত হয়। তার এই বক্তব্য অনেকের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। ফলে ‘ভ্যানগার্ডরা’ বঙ্গভবন ঘেরাও করতে যায় প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করার জন্য। কিন্তু দেশের এই অবস্থায় আলঙ্কারিক পদে অধিষ্ঠিত সর্বোচ্চ অভিভাবকের উৎখাত প্রক্রিয়া একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই রাষ্ট্রপতির অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্যের ন্যায় আমাদের ‘ভ্যানগার্ড’দের বঙ্গভবন ঘেরাও প্রক্রিয়াটিও অবিবেচনাপ্রসূত ছিল বলেই অনেকে মনে করেন।

তবে তাদের একটি বড় সফলতা হলো ‘ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের ওপর ফলপ্রসূ চাপ প্রয়োগ করা। ছাত্রলীগ প্রকৃত অর্থে হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত ‘সিভিল ফোর্স’ হয়ে উঠেছিল। গত ১৫ বছরে পৃথিবীতে যত ধরনের অপকর্ম রয়েছে সবই চর্চা করেছে এই ‘ছাত্রলীগ’। সবশেষে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনার্থে’ শত শত নিরস্ত্র ছাত্রকে তারা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। কাজেই দেশের আইনে ‘ছাত্রলীগ’ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ হতেই পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করে।

বিপ্লবের ‘ভ্যানগার্ডদের’ অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এরই মধ্যে আমরা সেগুলো প্রত্যক্ষ করেছি। বিভিন্ন স্থানে ভুয়া সমন্বয়কের আবির্ভাব হতেও দেখা গিয়েছিল। এরা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে নানান ধান্ধাবাজি করার প্রয়াস চালিয়েছিল। ছাত্ররা সাধারণভাবে মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক। অন্য দিকে তারা ‘ইনোসেন্ট’। তাদের মধ্যে রয়েছে দেশের জন্য কাজ করার প্রচণ্ড আবেগ। কিন্তু তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা যেমন কম তেমনি রাজনৈতিক পরিপক্বতার রয়েছে যথেষ্ট অভাব। কাজেই আমাদের পচে যাওয়া নষ্ট রাজনীতির সংস্কৃতি তাদেরকে যেকোনো সময় বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারে। আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ কেউ সরকার পরিচালনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন যোগ্যতার ভিত্তিতেই। এটিকে নষ্ট রাজনীতির প্রতিনিধিরা পুঁজি করতে পারে অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সমন্বয়কদের উসকে দেয়ার জন্য। যা ফাটল ধরাতে সক্ষম হবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ঐক্যের মধ্যে। যার পরিণতি সৃষ্টি করতে পারে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের নতুন উপাদান। আবার কেউ কেউ উচ্চাকাক্সক্ষী হয়ে উঠতে পারেন অথবা নিজেদের বঞ্চিত মনে করতে পারেন। এতে প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কাও থাকতে পারে। সেই সাথে চলতে থাকা বিপ্লবী অনুশীলন কাউকে কাউকে উগ্রতার দিকেও ঠেলে দিতে পারে। অর্থাৎ নিজেদের পছন্দ না হলেই সেই ইস্যুর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত হওয়ার একটি প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

৩৬ জুলাই বিপ্লবে শুধু একটি দল এবং তার সুবিধাভোগীরা নিপাত যায়নি। তাদের সাথে একটি বড় দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দেশটি মনে করে। কাজেই এই বিপ্লবের শত্রু রয়েছে ঘরে বাইরে সবখানে। এমতাবস্থায় বিপ্লবের ‘ভ্যানগার্ডদের’ যেমন সজাগ থাকতে হবে প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে তেমনি সতর্ক থাকতে হবে নিজেদের কর্মকাণ্ডের বিষয়েও। কারণ এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে ব্যর্থ হবে দেশের ১৭ কোটি মানুষ। যার পরিণতি ভোগ করতে হবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement