হজযাত্রার কাহিনী
- মীযানুল করীম
- ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৫৮
(শেষ কিস্তি)
১৯৬০ সালের দিকে আমার তাওই সাহেব পবিত্র হজে গিয়েছিলেন জাহাজযোগে। তখন চট্টগ্রাম হয়ে আরব দেশে যেতে হতো। ‘সফিনা-এ আরব’ এবং ‘সফিনা-এ-হুজ্জাজ’ নামে দু’টি জাহাজ ছিল হজযাত্রীদের বহন করার জন্য। পথে কেউ মারা গেলে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হতো পাথর বেঁধে। জাহাজ থেকে ইয়ালামলাম পাহাড় দৃষ্ট হলে ইহরাম বাঁধতে হতো হাজীদেরকে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের হাজীদের সবার পক্ষে বিমানভাড়া জোগাড় করা কঠিন। এ জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছিল বিমানের পরিবর্তে হাজীদের সমুদ্রপথে জাহাজযোগে পাঠানোর। সৌদি সরকার এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। অর্থাৎ বিমানের পরিবর্তে জাহাজের দেখা মিলবে। এই অক্টোবর মাসের মধ্যেই সামনের বছরের হাজীদের প্রাথমিক নিবন্ধন করে ফেলতে হবে।
আমাদের একদিন মদিনা শরিফে রিয়াদুল জান্নাত বা দুনিয়াতে বেহেশতের একটি টুকরো দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সৌদি পুলিশের তাণ্ডবে অনেক পুরুষেরই এটি দেখতে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি মুয়াল্লিমও দেখতে পাননি। তবে নারীরা দেখেছিলেন। মদিনা শরিফের কম্পাউন্ডের মধ্যে স্থানটি অবস্থিত। সৌদি পুলিশ আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে খুব কড়া; এমনকি মহিলা পুলিশরাও। এ ছাড়া আমাদের মদিনা শরিফের যেসব স্থানে নিয়ে গেছে সেগুলো হলো- মসজিদে নববী, কিবলাতাইন মসজিদ, একটি খেজুরবাগান ও ওহুদ পাহাড়।
মসজিদে নববীর সাথে বিরাট গোরস্থান রয়েছে। কিবলাতাইন মসজিদে মুসলমানদের নামাজের কিবলা পরিবর্তন করা হয়েছিল। খেজুরবাগানে আমরা অনেক খেজুরগাছ দেখেছিলাম। দুপুর বেলায় যাওয়াতে ওহুদ যুদ্ধের বিরাট পাহাড়ে উঠতে পারিনি। ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় এই পাহাড় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে হজরত হামজা রা: শহীদ হয়েছিলেন। মহাবীর খালেদের রণনৈপুণ্যে কাফেররা সুবিধা করতে পেরেছিল। মহাবীর খালেদ এ যুদ্ধের পরই ইসলাম গ্রহণ করেন। ওহুদের যুদ্ধে মহানবী সা:-এর দানদান শরিফ শহীদ হয়েছিল। কাফেররা সংখ্যায় অনেক বেশি থাকা সত্তে¡ও শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারেনি। রাসূল সা: বলেছিলেন, পেছনের একটি অংশ খোলা। মুসলমানরা অতদূর চিন্তা করেনি। শেষ পর্যন্ত ফাঁকা জায়গা দিয়ে আক্রমণ করা হয়। মুসলমানরা প্রথমে ছত্রভঙ্গ হলেও অচিরেই তারা মহানবী সা:-এর নেতৃত্বে প্রতি আক্রমণ চালায়। এতে কাফেররা শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারেনি। ওহুদের যুদ্ধ ছিল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য একটি বিরাট পরীক্ষা। এ পরীক্ষাতে তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিল।
আমরা ঢাকা থেকে হজযাত্রাপথে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, আমার একমাত্র শ্যালককেও মদিনা থেকে যাত্রাপথে একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে বাসে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে বিমান ধরতে অসুবিধা হয়নি। আমার মতো আমার শ্যালককেও কাস্টমসে আটকানোর কোনো কারণ জানানো হয়নি। তবে আমরা আকস্মিক এ ঝামেলায় বিব্রত হই।
এখন আবার জেদ্দায় ফিরে যাই। জেদ্দায় মার্কেটিংয়ে গিয়েছিলাম। সারি সারি দোকান। আমাদের পরিচিত একজন থাকায় সুবিধা হয়েছিল। বহুতল মার্কেটের বিরাট বিপণি। জেদ্দা অত্যাধুনিক নগরী এবং বিপণিবিতানও দেখার মতো। এখানে মেয়েদের অলঙ্কারের শেষ নেই। জেদ্দায় মসজিদে খুব ভিড়। সড়কগুলো চওড়া। মদিনা শরিফ থেকে দূরত্ব কম নয়। যদিও মানচিত্র দেখে তা আন্দাজ করা যায় না।
ফিরতি পথে মদিনা শরিফ থেকে সকাল ৯টায় বিমানযাত্রা শুরু করে ঢাকায় এসে পৌঁছাই মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে। কারণ পূর্বদিকে যেতে সময় কিছুটা বেশি লাগে। ঢাকায় এসে পড়লাম কারফিউয়ের পাল্লায়। এর মধ্যে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু হয়ে গেছে। বাসাতে আটকা পড়লাম। এর পরই ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান ও গণভবন দখল। মিডিয়ার কল্যাণে এটি সবাই দেখেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা