৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পতিত সময়ে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প

-

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা ব্যবস্থায় চোখ বুলানোর অবকাশ এসেই যায় যখন বিভিন্ন খাত ও ক্ষেত্রের শ্বেতপত্র নির্মাণের উদ্যোগ চলছে। এটি অবশ্য বলার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি যে, বাংলাদেশের প্রকাশনা এখনো শিল্প হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির হিসাব মতে, বাংলাদেশে বইয়ের প্রকাশনা ও বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো প্রকাশক-ব্যবসায়ী। তবে এসব প্রকাশকের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে কী পরিমাণ বই বের হয় তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না।

দেশে কয়েক হাজার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বই বিক্রি ও প্রকাশের সংখ্যা বিবেচনায় হাতেগোনা কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম শোনা যায়। তবে এসব প্রকাশকের অভিমত, প্রকাশনাটা এখন শুধু মধ্যম আয়ের একটি ব্যবসায় হিসেবে দাঁড়াতে পেরেছে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫ শতাংশ মধ্যপর্যায়ের প্রকাশনা শিল্প পরিবার (যেমন- ইউপিএল, মুক্তধারা, মওলা ব্রাদার্স, আগামী, অন্যপ্রকাশ ইত্যাদি) ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানভিত্তিক (যেমন- বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি), ৫ শতাংশ গ্রুপভিত্তিক (যেমন- প্রথমা, পাঠক সমাবেশ ইত্যাদি), বাকি সব শৌখিন, মৌসুমি, ক্ষুদ্রপর্যায়ের প্রকাশক কিংবা বিক্রেতা। বইয়ের ক্রেতারাও বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত- বেশির ভাগ ক্রেতা সরকারি-বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠান (৬০ শতাংশ), সাধারণ গ্রন্থাগার (৮ শতাংশ), শৌখিন পাঠক (৭ শতাংশ), হুজুগে পাঠক (১৫ শতাংশ), লেখকরা নিজে (১০ শতাংশ)। লেখকদের শ্রেণিবিন্যাস এরকম- সারবান সাহিত্য রচয়িতা (১৫ শতাংশ), একাডেমিক, গবেষক ও বিশ্লেষক (১০ শতাংশ), সাময়িক উদ্দীপ্তকারী পাঠরোচক ফিকশন রচয়িতা (৩৫ শতাংশ), শৌখিন (১৫ শতাংশ), প্রচারসর্বস্ব-আহলাদি ও ভবঘুরে লেখক বা কবি (২৫ শতাংশ)। বিগত দেড় দশকে বাংলা একাডেমির বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত, পরিবেশিত ও বিক্রীত বইয়ের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি প্রণোদনায় ব্যক্তি বন্দনা ও উপলক্ষধর্মী প্রকাশনা এবং বিক্রয় পাঠকপ্রিয় ফিকশন প্রকাশ ও বিক্রয়কে সঙ্কুচিত করেছে, একই সাথে সারবান ও সৃজনশীল রচনার প্রকাশ ও বিপণন, ক্রেতা বাজেটে সৃষ্টি হয়েছে মরাকটাল। গোটা প্রকাশনা শিল্পকে উত্তর দক্ষিণ মেরুতে বিভক্ত করেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারিপর্যায়ের প্রকাশকদের মধ্যে বেড়েছে ব্যবধান, প্রাসাদ-প্রযত্ন প্রাপ্ত ডানপন্থী লেখকদের অগ্রগামিতায় সৃজনশীল অন্যান্য লেখক প্রকাশনায়, প্রকাশকের সৌজন্য লাভে এবং বিপণনপর্যায়ে কঠিন খটখটে আচরণের শিকার হয়েছেন। পাঠ্যপুস্তক রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশনা ও বিপণন একচেটিয়া কারবারে পরিণত হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক ও বিকাশমুখী আবহ উধাও হয়েছে প্রকাশনা শিল্পজগত থেকে। প্রকাশনার অন্যতম কাঁচামাল কাগজ আমদানি এবং প্রকরণ মুদ্রণ শিল্প-সংশ্লিষ্ট কারিগর পতিত সময়ে সবাই ছিল মৌসুমি ও চাটুকারী পোষণ-তোষণে-ব্যক্তিবন্দনায় ব্যস্ততার শিকার। আর মাঝে মহামারী করোনায় পাঠকের পকেট যেমন গড়ের মাঠে পরিণত হয়েছে, ক্ষুদ্র প্রকাশকদের করেছে আরো রিক্ত। আনুকূল্য আর প্রণোদনা পকেটস্থ করেছে সুযোগসন্ধানীরা। এই বেদনা-বঞ্চনার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

এটা তাই ঠিক যে, বই প্রকাশনার কয়েক দশকের দীর্ঘ ঐতিহ্য থাকার পরও বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্প বিগত পতিত সময়ে ঠিক ততটা শক্তিশালী হতে পারেনি। কারণ এখানে এখনো বড় পুঁজির সমস্যা রয়েছে। অন্যান্য ব্যবসাতে ব্যাংকগুলো যেমন বিনিয়োগ করে প্রকাশনার ক্ষেত্রে তেমন বিনিয়োগের নজির নেই বললেই চলে। ফলে এই ব্যবসায় তোষামোদ, আনুগত্যও প্রণোদনাপ্রত্যাশী হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পাবলিকেশন্স হাউজ না থাকা, যথাযথ প্রচারণা না থাকা, বইয়ের জন্য কাগজ এখনো আমদানিনির্ভর হওয়াও কারণ হিসেবে উল্লিখিত হয়। প্রকাশকরা তাদের মুনাফার মূল অংশটি তুলে আনেন, সরকারি উৎসাহে ব্যক্তি ও দল বন্দনায় বিনিয়োগ থেকে। সাইকোফ্যান্ট ও গৃহপালিত (দলীয় বা রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক) লেখকদের বই প্রকাশ করে তাদের ঝুঁকিমুক্ত থাকতে হয়।

বর্তমান এই পরিস্থিতিতে অনেক ঐতিহ্যবাহী, মধ্যবয়সী ও নবীন প্রকাশনীও তাদের ব্যবসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি বা পারছে না। ঠিক এ সময় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ থাবায় মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে ঘটে এমনই এক অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়, যা পুরো একটি প্রজন্মের চেয়েও বেশি নিচে নামিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে। সে সময়কার উদ্যোক্তাদের ভাষ্য মতে, ‘এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রিন্টিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (পিআইএবি) ক্ষতির পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ক্ষতি সাড়ে সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির ক্ষতি ২০০ কোটিরও বেশি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প চলে মূলত বই, গার্মেন্টের আনুষঙ্গিক, ওষুধ এবং খাদ্য আনুষঙ্গিক উপকরণ ও অন্যান্য ব্যবসায়িক দ্রব্যাদি দিয়ে। এর মধ্যে বইয়ের জন্য প্রিন্টিং প্রেস আছে দুই হাজার, গার্মেন্ট আনুষঙ্গিকের জন্য দুই হাজার, খাদ্য সার্ভিসের জন্য ৫০০ এবং বাকিগুলো নানা ছোট-বড় ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত। বাজেটে প্রকাশনা খাতের জন্য নেই বরাদ্দ। অনেকেরই প্রকাশিত কোনো সৃজনশীল বই বিক্রি হয় না। সরকার সৃজনশীল অন্য বইগুলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কিনে নেয়ার বরাদ্দ না দিলে একপর্যায়ে অন্যান্য সৃজনশীল প্রকাশনার সম্ভাবনা ও বিকাশ মাঠে মারা যায়। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।’

ঢাকায় প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত ও বই প্রকাশ শুরু হয় সিপাহি বিদ্রোহের সময়। ১৮৬০ সালে হরিশচন্দ্র মিত্র ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম সাহিত্যপত্র প্রকাশ করেন। যুদ্ধের পরও এ বাংলার প্রকাশনা শিল্প গৌরবোজ্জ্বল ধারাতেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে পাঠক শ্রেণী তৈরি ও বাংলা বই প্রকাশনা বিকাশের লক্ষ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যাত্রা শুরু করে বাঙালির প্রাণের বইমেলা উৎসব। ষাটের দশক থেকে ঢাকার প্রকাশনা জগত খুবই সাবলীল হয়ে উঠছিল। বহু প্রেসে স্থাপন করা হয় আধুনিক লাইনো ও মনোমেশিন। ছাপার মান হয় উন্নত। ধীরে ধীরে সৃজনশীল বই প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু ইতোমধ্যে দেড় শ’ বছরে পা রাখলেও কাক্সিক্ষত সাফল্য পায়নি বাংলাদেশের প্রকাশনা জগত। তৈরি হয়নি উল্লে­খযোগ্য পাঠক শ্রেণী। দিন দিন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি প্রকাশনার মান ও পাঠক। তাই দেশের প্রকাশনা শিল্পের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় বিনিয়োগ করছেন। প্রায় ৭৫ বছর বয়সী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খোশরোজ কিতাব মহল একসময় সাহিত্য, উপন্যাস, আইন, ইতিহাস ও গল্পের বিভিন্ন বই প্রকাশ করত, পাঠকের চাহিদাও ছিল অনেক। কিন্তু এখন আর তেমন চাহিদা নেই, তারা এখন বাংলা একাডেমি মেলাভিত্তিক কিছু বইসহ গল্প-উপন্যাসেরও অল্পসংখ্যক বই প্রকাশ করে। এটি ঠিক, ‘ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে অনেকেই ই-বুকের প্রতি নির্ভর হওয়ায় সনাতন প্রকাশনা শিল্পের অনেকটাই ক্ষতি হচ্ছে, পাঠকও দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায় বাঁচিয়ে রাখতে সৃজনশীল বই প্রকাশ বাদ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বই, ফাইল, বুকলেট, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি ছাপাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলে কমে যাচ্ছে বই প্রকাশ, হারিয়ে যাচ্ছে বইয়ের পাঠক। দেশে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উপন্যাস ও শিশু-কিশোরদের জন্য প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বেশি এবং বিক্রিও হয় বেশি। কিন্তু সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, দর্শন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পাঠক শ্রেণী গড়ে উঠছে না। প্রকাশিত গল্প-উপন্যাসের মধ্যে জনপ্রিয় লেখকদের বই ছাড়া অন্যদের বই তেমন বিক্রি হয় না। বাংলাদেশের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তেমন বৈচিত্র্য আসেনি। যে কারণে পাঠকের অবস্থান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া ভালো বইয়ের পাঠক বৃদ্ধির জন্য শুরুতে যে প্রচারণা দরকার তা অনেক প্রকাশক করেন না। পাঠক বই সম্পর্কে আগাম তথ্য পায় না, ফলে বইও আশানুরূপ বিক্রি হয় না। প্রকাশকদের মতে, ‘আমাদের দেশ ক্রমান্বয়ে অনেক গুণী লেখক হারাচ্ছে, কিন্তু ওই হারে নতুন লেখক তেমন সৃষ্টি হচ্ছে না, তাই বইয়ের পাঠকও বাড়ছে না। যেমন- হুমায়ূন আহমেদ থাকতে তার বই দেড় থেকে দুই লাখ কপি অনেক প্রকাশকই বিক্রি করতেন। পাঠকও ছিল অনেক। এ ছাড়া আগে যেমন- তরুণ ছেলেমেয়েদের কাছে বই একটি বিনোদনের মাধ্যম ছিল, এখন কিন্তু কম্পিউটারই বিনোদনের মূল মাধ্যম হয়ে গেছে। কম্পিউটারে ইন্টারনেটে সময় দিচ্ছে সবাই। তরুণ পাঠকদের অনেকেই বই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।’ মেধাবী তরুণ পাঠকদেরও অভিমত এবং পরামর্শ হলো, ‘বর্তমান অবস্থাতে পাঠক শ্রেণীকে বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে হলে প্রকাশকদের বিকল্প ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। আর বর্তমান যেহেতু প্রযুক্তির যুগ তাদের কিছুটা প্রযুক্তিনির্ভরও হতে হবে। যেমন- প্রকাশকরা যদি ই-বুক চালু করে তাহলে ইন্টারনেটে যারা সময় ব্যয় করছে তাদের একটি অংশও পুনরায় পাঠক হয়ে উঠতে পারে। প্রকাশকরাও ই-বুক বিক্রি করে অনেক লাভবান হতে পারেন।’

পরিতাপের বিষয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে কাগজ ও মুদ্রণসামগ্রীর ভৌত ব্যবহার করে ব্যক্তি বন্দনা ও চেতনার নামে সরকারি বাজেটের টাকা অতি আগ্রহে ব্যয় করে হাজার হাজার কপি বই সব প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের পেছনে পাবলিক মানির যথেচ্ছ ব্যবহার পুরো প্রকাশনা শিল্প দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে।

একটি স্মৃতিবহ ঘটনা উল্লেখ করে আজকের এ লেখা শেষ করতে চাই। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। মাত্র ৫৪ দিন আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ঢাকার রাস্তাঘাট, বাজার, হসপিটালে যুদ্ধের দগদগে স্মৃতি তখনো স্পষ্টভাবে লেগে আছে। দেশের মতোই যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের মন। নতুন স্বপ্ন আছে কিন্তু বাস্তবে জীবন ধারণের কঠিন এক সংগ্রামে ব্যস্ত সবাই। প্রয়াত চিত্তরঞ্জন সাহা (১৯২৭-২০০৭) বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের স্বার্থের কথা ভেবেই ওই দিন বাংলা একাডেমি কর্মকর্তাদের কাছে অনুমতি নিয়ে বটতলায় বই নিয়ে বসেছিলেন। টেবিল-চেয়ারের আয়োজন ছিল না বলে চট কিনে তাতে বই সাজিয়েছিলেন। এভাবেই ঘটেছিল একুশের বইমেলার সূচনা। সেই সূচনার সুস্থ ও স্বাভাবিক সমৃদ্ধিও তোষণ পোষণ-পক্ষপাতহীন পথে উঠুক বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প এই আকিঞ্চন আকাঙ্ক্ষা সবার।

লেখক : উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক


আরো সংবাদ



premium cement