২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

টপ অর্ডারে রানখরা কি কাটবে

-


২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর সাত ও আট নম্বর ব্যাটারদের বীরত্বগাথায় ঢাকা পড়েছে ওপরের সারির ব্যাটারদের রানখরা। অথচ টেস্ট ক্রিকেটে ওপরের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেই রান আসাটা প্রত্যাশিত। লোয়ার অর্ডারে যদি বাড়তি কিছু রান আসে সেটা উপরি পাওনা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ঝলমলে আলোর উৎসবে অনেকটা আড়ালেই চলে গেছে টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার অন্ধকার অধ্যায়। বাংলাদেশের টপ অর্ডারটা তাসের ঘরের মতোই ভঙ্গুর আর প্রতিপক্ষ ভারতের ঠিক উলটো মজবুত গাঁথুনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার পাশাপাশি ভাগ্যও কিছুটা সায় দিয়েছে। ভারতের বিপক্ষে কি হবে। অজয় জাদেজা আগেই হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, ভারত আর পাকিস্তান এক নয়। বাংলাদেশও সেটি ভাবছে না। তবে সদ্যই পাকিস্তানিদের হারিয়ে যে আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার হয়েেেছ টাইগারদের হৃদয় ও মননে সেটি অতিমাত্রায় গেলেই বিপদ।

অতি বিশ্বাসের পরিণতি খারাপও হতে পারে। যেটি পূরণ হতে পারে ধৈর্য-শক্তি-কুল মানসিকতায়। টপ অর্ডার ব্যাটারদের বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল দলকে এগিয়ে নিতে পারে, বুক চেতিয়ে লড়াই পরবর্তী ব্যাটারদের জন্য সহজ হতে পারে। বোলারদের ধারাবাহিকতা ব্যাটারদের কাজটা মসৃণ করতে পারে। দলের সবাই সবার পরিপূরক হলে আরো একটি কীর্তিগাথা হতে পারে চেন্নাইয়ে।
বাংলাদেশ দলের শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের ভেতর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর। চলতি বছরে ৪ টেস্টের ৭ ইনিংসে শান্তর মোট রান ৯০, সর্বোচ্চ ৩৮। তার পরও দলকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সাফল্যের পথে নেতৃত্ব দেয়ার কৃতিত্ব বাঁচিয়ে দিয়েছে শান্তকে। মাহমুদুল হাসান জয়ের চোটের কারণে প্রায় দুই বছর পর টেস্ট একাদশে ফিরে ধৈর্যশীল প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে করা ৯৩ রান সমালোচনার মুখে ফেলতে পারবে না সাদমান ইসলামকেও।

জাকির হাসান অনিকের কোনো রক্ষাকবচই নেই। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে অন্তত হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার সুযোগ ছিল তার। কিন্তু মির হামজার ইনসুইঙ্গারে যেভাবে বোল্ড হলেন, তাতে বোঝা গেল উইকেটে বোলারদের জন্য একটু সহায়তা থাকলে সেখানে তার ব্যাট কথা বলতে চায় না। মাত্র ১২ ওভারের পুরনো বলটা খেলতে একদমই স্বস্তি পাচ্ছিলেন না এই বাঁ হাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। চলতি বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ২ টেস্টে ৪টি ইনিংস যথাক্রমে ৯, ১৯, ৫৪ ও ১৯ রানের। এই বছর ৪ টেস্টে ৮ ইনিংস জাকিরের, ১ বার নট আউট। ৭ বার আউট হয়েছেন, ৩ বার ডান হাতি পেস বোলার এবং চারবার বাঁ হাতি পেস বোলারের বলে। ক্যাচ আউট ৪ বার, ২ বার উইকেটের পেছনে আর ২ বার ফিল্ডারের হাতে। ২ বার বোল্ড, ১ বার লেগবিফোর উইকেট। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন জাকির, ৬৯টা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলার পর সাদা পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডেব্যু তার। কিন্তু শুরুর সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।

হাইপারফরম্যান্স দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন সফরে গিয়ে পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে ৮৮ রানের ইনিংসের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান জয়ের কুঁচকির চোট সাদমানকে বছর দুয়েক পর টেস্ট একাদশে ফিরিয়ে আনে। ৯৩ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসে প্রত্যাবর্তনের আনন্দের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্ট শতকের কাছে এসেও অতৃপ্তি মিশে আছে সাদমানের। তবে পরের ইনিংসগুলো আর নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়নি সাদমানের, ১০ উইকেটের জয়ে অপরাজিত ৯ রানের বেশি করার ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ১০ ও ২৪ রানের দুটো ইনিংস বাড়িয়েছে হতাশা। সাদমানের ব্যাটিংয়ের ধাঁচটা পুরনো দিনের টেস্টের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের মতো, বল ব্যাটে লাগানোর চেয়ে ছাড়তেই বেশি মনোযোগী। এতে উইকেটে লম্বা সময় কাটানো গেলেও জুটি বড় হয় না আর ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাসও খুব একটা বাড়ে না।

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ৯৩ রানের ইনিংস খেলার পথে ৪টা জুটির অংশ ছিলেন সাদমান, এর ভেতর দু’বারই তার চেয়ে পরে নামা ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক জুটিতে বেশি রানের অবদান রেখেছেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুমিনুল ও সাদমান যোগ করেন ৯৪ রান, তাতে মুমিনুলের ৫০ রান আসে ৭৬ বল থেকে আর সাদমান ৩৮ রান যোগ করেন ৭০ বল খেলে। বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান, জাকির এবং সাদমান মিলে এই বছর মোট রান করেছেন ৩০১।

 


আরো সংবাদ



premium cement