১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যাটসম্যানদের টানা ব্যর্থতা আগে দেখিনি

বিমাবন্দরে মিডিয়ার সাথে কথা বলছেন তাসকিন : সংগৃহীত -


টি-২০ বিশ্বকাপে ব্যর্থ মিশন শেষে দেখে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেশে ফিরে গতকাল সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলেন দলের সহ-অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ। ‘গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটাররা ছন্দে না থাকলে দলে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক; বিশেষ করে দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান, ফর্মে না থাকায় দলকে পিছিয়ে দিয়েছে নিশ্চিতভাবেই’- এমনটিই জানালেন দলের সহ-অধিনায়ক।

তাসকিন বলেন, ‘দুইজন সিনিয়রের অফ ফর্ম আমাদের দলে অবশ্যই প্রভাব পড়েছে। কিন্তু মাঠের বাইরে প্রভাব পড়েনি। কারণ মাঠের বাইরে তারা সবসময়ই ভালো টিমম্যান। এই যে ৪৭ দিনের মতো একসাথে ছিলাম, সবার আচরণ খুব ভালো ছিল। মাঠের বাইরে সব তো ঠিকই ছিল। আসলে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা ছন্দে না থাকলে ওই দলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশা করছি দ্রুত এসব কাটিয়ে উঠে সামনে ভালো কিছু করব।’
টি-২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তিন জয় নিয়ে সুপার এইটে ওঠে টাইগাররা। কিন্তু সুপার এইটের তিন ম্যাচের একটি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে টপঅর্ডার ও মিডল অর্ডারে ব্যর্থ ছিলেন দলের সদস্যরা। পুরো টুর্নামেন্টে সাত ম্যাচে সাকিবের রান ছিল যথাক্রমে ৮, ৩, ৬৪, ১৭, ৮, ১১ ও ০। মাহমুদুল্লাহর রান ১৬, ২০, ২৫, ১৩, ২, ১৩ ও শেষ ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে ৯ বলে ৬। এ ছাড়াও দলের ওপেনিং ব্যাটার তানজিদ হাসানের স্কোর ৩, ৯, ৩৫, ০, ০, ২৯ ও ০। লিটন দাস ৩৬, ৯, ১, ১০, ১৬, ১৩ করার পর শেষ ম্যাচে ছিলেন ৫৪ রানে অপরাজিত। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে আসে ৭, ১৪, ১, ৪, ৪১, ৪০ ও ৫ রান। তরুণ প্রতিভা তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে ৪০, ৩৭, ৯, ৯, ৪০, ৪ ও ১৪। দলের টপঅর্ডার ও মিডলঅর্ডার ব্যাটারদের রান তোলার চিত্র যদি হয় এমন, তাহলে তো ব্যর্থতা সঙ্গী হওয়া স্বাভাবিক। তবে পুরো টুর্নামেন্টেই এর থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন বোলাররা।

টি-২০ বিশ্বকাপের শুরু থেকে সব ক’টি আসরে ৯টি দেশ খেললেও শুধু বাংলাদেশ পারেনি সেমিফাইনাল খেলতে। চলতি বিশ্বকাপে সেরা চারে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে সেই সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছিলেন দলের বোলাররা। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ ছিলেন ব্যাটসম্যানরা! এর পরও সেরা আটে খেলাকে ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন তাসকিন আহমেদ। শুধু নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েই আলোচনা না করার অনুরোধও জানিয়েছেন বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক। সাথে হতাশাগুলো অবশ্য মানছেন তিনি। প্রতিশ্রুতি দিলেন ভবিষ্যতে আরো ভালো করার।

‘ধীরে ধীরে তো উন্নতি হচ্ছে। টি-২০ ক্রিকেটে শুরু থেকেই আমাদের পরিসংখ্যান ভালো ছিল না। আগের থেকে তো উন্নতি হচ্ছে। খালি মাইনাস পয়েন্ট দেখলে তো হবে না। এমনিতে মাইনাসেই আছি আমরা। প্লাসে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, করেই যাবো। আপনারা হতাশ হচ্ছেন স্বাভাবিক। আবার আমরাও আপনাদের ভালো জয় উপহার দেবো। বিশ্বাস রাখেন আমাদের ওপর। আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি।’
যোগ করেন ‘পুরো টুর্নামেন্টে ইতিবাচক দিক বোলিং বিভাগ। বোলাররা যথেষ্ট ভালো করায় সুপার এইটে উঠেছি। সর্ব প্রথম এবার টি-২০ বিশ্বকাপে আমরা তিনটি জয় পেয়েছি। মানে ইতিবাচক আছে। কিন্তু নেতিবাচকের সংখ্যাটা একটু বেশি। সবার মতো আমরাও একটু হতাশ। প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো হয়নি।’

তাসকিন বলেন, ‘বোলিং বিভাগ আগাগোড়াই কয়েকটি বছর ধরে ভালো উন্নতি করে এসেছে। সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সামনে আরো ভালো হবে। ভালোর তো শেষ নেই। আর ব্যাটিং বিপর্যয় যেটা, সত্যি বলতে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে যখন খেলা হয়েছে, তখন উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে খুব কম ছিল।’
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার পর অ্যান্টিগার তুলনামূলক ভালো উইকেটেও অবশ্য ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেড় শ’ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে তাসকিন বলেন, ব্যাটসম্যানদের টানা এমন ব্যর্থতা তিনি নিজেও আগে কখনো দেখেননি। আর বোলিং বিভাগের সাফল্যে তানজিম ও রিশাদের আলাদা করে প্রশংসা করলেন তাসকিন।

‘আপনারা যদি পরিসংখ্যান দেখেন অন্যান্য দেশের বড় বড় ব্যাটসম্যানরাও যুক্তরাষ্ট্রে ভুগেছে। সেখানে বোলারদের একটু বাড়তি সুবিধা ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার পর আমরা কিছুটা ভালো উইকেটে খেলেছি। তবে আমি বাংলাদেশ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার সময়, প্রায় ১০ বছর ধরে খেলছি, কখনোই ব্যাটিংয়ে এত লম্বা খারাপ সময় দেখিনি। আশা করি এটা খুব দ্রুত কেটে যাবে।’
‘তানজিম সাকিব, রিশাদ ওরা সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের মধ্যে ছিল সেরা পাঁচে ছিল। রিশাদ এখনো আছে। সব মিলিয়ে ভালো করেছে। এটি খুবই ইতিবাচক যে বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতের তারকারা উঠে আসবে।’
‘এখন আসলে যে জিনিসগুলো হয়ে গেছে, আমরা সবাই ব্যথিত, সমর্থকরাও হতাশ। বিশেষ করে শেষ ম্যাচটা আমাদের ১২.১ ওভারে পরিকল্পনা ছিল জেতার। সে ইন্টেন্ট নিয়েই খেলা শুরু করেছিলাম। একটা পর্যায়ে যখন দেখলাম আর হবে না ১২ ওভারে, তখন স্বাভাবিকভাবে জেতার চেষ্টা করে ওটাও পারিনি। এখন আর কী করার।’


আরো সংবাদ



premium cement