১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফুটবল রেফারিংয়ে খো খো অধিনায়ক

ফুটবল মাঠে সহকারী রেফারীর ভূমিকায় শারাবান তুহুরা। ডানে এশিয়ান খো খো’র রানার্স আপ ট্রফি হাতে তিনি : সৌজন্য -

ম্যাচটি চলছিল আতাউর রহমান কলেজ ভূঁইয়া স্পোর্টিং ক্লাব-ঢাকা রেঞ্জার্সের। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে এই ম্যাচের রেফারি ছিলেন শারাবান তহুরা। মাঠে বাঁশি হাতে তার মুভমেন্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি বেশ ফিট। প্রেস বক্সে উপস্থিত আরেক পুরুষ রেফারি তথ্য দিলেন, শারাবান তহুরাতো আরো কয়েকটি ডিসিপ্লিনে খেলে। পাশাপাশি বাংলাদেশ খো খো জাতীয় দলের অধিনায়কও। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের শুরুর দিকে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের খেলোয়াড়দের নিয়েই দল গঠন করা হতো। হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডিসহ নানা ডিসিপ্লিনে খেলা ক্রীড়াবিদরা সেই সময়ে মহিলা ফুটবল চালু রেখেছেন। এখন অবশ্য শুধু ফুটবলার ছাড়া খেলা ছাড়া অন্যদের আসার সুযোগ নেই। তবে রেফারিংয়ের ক্ষেত্রে অন্য ডিসিপ্লিনের সাথে সম্পৃক্তরা মাঠে বাঁশি হাতে বা পাতাকা হাতে অবলীলায় দায়িত্ব পালন করেন। গতকালও আতাউর রহমান কলেজ স্পোর্টিং ও শুদ্ধপুষ্করিণী যুব সংঘের ম্যাচে চতুর্থ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন ইসরাত জাহান লিজা। তিনি জুনে চীন যাবেন মর্ডান প্যানথালন বিশ্বকাপে অংশ নিতে। সাতক্ষীরার মেয়ে শারাবান তহুরা সাবেক ফুটবলার। পজিশন ছিল মিডফিল্ড। লিগে খেলা হয়নি। তবে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন। বাংলাদেশ দলেও ডাকা হয়েছিল তাকে। তবে খেলা হয়নি। ‘সমস্যার কারণে ফুটবল বেশি দিন চালিয়ে যেতে না পারার কস্টই আমাকে ফুটবল রেফারিংয়ে নিয়ে এসেছে। এখন এই রেফারিংয়েই প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। লক্ষ্য এএফসির এলিট প্যানেলে ঢুকা।’ জানান শারাবান তহুরা। ফুটবল জাতীয় দলে না খেললেও আরো চারটি ডিসিপ্লিনে তিনি লাল-সবুজ জার্সি গায়ে তুলেছেন। বাকি সব ডিসিপ্লিনেই তার পদক বা ট্রফি আছে। আর বাংলাদেশ মহিলা খো খো দলের অধিনায়ক হিসেবে গলায় তুলেছেন একটি রৌপ্য একটি ব্রোঞ্জ পদক। রৌপ্য জয় ২০১৬ সালের গৌহাটি-শিলং এস এ গেমসে। দেশকে ব্রোঞ্জ দিয়েছেন ২০১৯ কাঠমান্ডু-পোখরা এস এ গেমসে। পাশাপাশি সেপাকতাকরো, থ্রো-বল ও ডিউবল জাতীয় দলেও খেলেছেন। এই তিন ডিসিপ্লিনেও তার ট্রফি জয়ের কৃতিত্ব আছে। ২০১৮ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সেপাকটাকরো টুর্নামেন্টে রানার্সআপ বাংলাদেশ দলের সদস্য তিনি। ২০১৯ সালে থ্রো বল খেলতে মালয়েশিয়া গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। শারাবান তহুরারা মালয়েশিয়া থেকে জিতে আনেন রানার্সআপ শিরোপা। ২০১৯ সালেই ভারত সফর করা বাংলাদেশ ডিউবল দল রানার্স আপ হয়েছিল। সেই দলেও নিয়মিত সদস্য তিনি। এ ছাড়া ভারতে তিনবার অনুষ্ঠিত ডিউবল টুর্নামেন্টে স্বাগতিকদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের। তিনবারই খেলেছেন বর্তমান ফুটবল রেফারি। এর বাইরে ভারতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও চতুর্থ এশিয়ান খো খোতে বাংলাদেশকে রানার্সআপ ও তৃতীয় করেছেন তিনি। তবে এখন শুধু খো খো এবং ফুটবল রেফারিংই করেন শারাবান তহুরা। জানান, অন্য ডিসিপ্লিনেও খেলার জন্য আমাকে ডাকা হয়। ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে পারি না সেগুলোতে।’ উল্লেখ্য, উত্তরার সানবীম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ফিজিক্যাল টিচার পদে চাকরি করছেন তিনি। ২০২১ সাল থেকে ফুটবল রেফারিংয়ে আছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে খো খো জাতীয় দলে আছেন। এই দুই খেলার তুলনায় গিয়ে শারাবান তহুরা জানান, ‘খো খো হলো আমার ভালোবাসা। ফুটবল রেফারিং হলো আমার স্বপ্ন। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলাম। জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছিলাম। কিন্তু খেলতে পারিনি সমস্যার জন্য। এর পরও ফুটবলের সাথে থাকতে চাই। তাই রেফারিংয়ে আসা।’ সেকেন্ড ক্লাস রেফারি তহুরা জানান, ‘আমি আগেও ফুটবল খেলা চালিয়েছি। তবে বাঁশি বাজাতে পারিনি। সহকারী রেফারি ছিলাম। এবার মূল রেফারির দায়িত্ব পালন করছি।’ ফিফা রেফারি ও এএফসির এলিট প্যানেলে প্রবেশের স্বপ্ন লালন করা শারাবান তহুরার দেয়া তথ্য, আমার চাচা সাতক্ষীরার ফুটবল কোচ আকবর আলী। উনার হাত ধরেই ফুটবলে আসা। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ায় বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে ডাক পেলেও খেলা হয়নি। ’ রেফারিংয়ের সাথে কোচিং কোর্সও করেছেন। এএফসির ‘সি’ কোর্স করা আছে। তবে আপাতত কোচিংয়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। যেমনটি এক সাথেই চালিয়ে যাচ্ছেন ফিফা রেফারি ও কোচ জয়া চাকমা। ‘এখন রেফারিং আর খো খো নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই। যত দিন ফিটনেস থাকবে খো খো খেলা চালিয়ে যাবো। স্বপ্ন এস এ গেমসে বাংলাদেশকে এই ডিসিপ্লিনে স্বর্ণ এনে দেয়া’ বললেন শারাবান তহুরা।


আরো সংবাদ



premium cement