১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`

শেষ ওভারে সোহানের ৩০ রংপুরের জয়

কাইল মায়ার্সের শেষ ওভারে ৩০ রান তুলে রংপুর রাইডার্সকে স্মরণীয় জয় এনে দেয়া নুরুল হাসান সোহানকে জড়িয়ে ধরছেন কামরুল ইসলাম রাব্বি : ইন্টারনেট -

ভিডিও গেমের মতো দৃশ্য দেখা গেল বিপিএলে। শেষ ওভারে রংপুর রাইডার্সের জয়ের জন্য দরকার ২৬ রান। কাইল মায়ার্সের প্রথম দুই বলে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। তৃতীয় বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে আরেকটি চার মারেন এই উইকেটরক্ষক। পরের বলে এই একই প্রান্তে মারেন আরেকটি ছক্কা। শেষ দুই বলে আবারও চার ছক্কা মেরে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৩ উইকেটে রংপুরের জয় নিশ্চিত করে তিনি। টুর্নামেন্টে এটি তাদের টানা ষষ্ঠ জয়। অপরাজিত থেকে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রথম দেখায়ও ৮ উইকেটে হেরেছিল বরিশাল।
শুরুতে তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৮১ রানের জুটি, এরপর কাইল মায়ার্সের বিধ্বংসী ইনিংস এবং ফাহিম আশরাফের ছোটো ক্যামিওতে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে ১৯৭ রান করে ফরচুন বরিশাল। জবাবে ইফতিখার আহমেদের ৩৬ বলে ৪৮ ও খুশদিল শাহের ২৪ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে এবং সোহানের সাত বলে অপরাজিত ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংসে অবিশ্বাস্য এই জয়।
সোহানের ওই ইনিংসের আগে ১৯৮ রান তাড়া করতে নেমে রংপুর রীতিমতো পথ হারিয়েই ফেলছিল। পাওয়ারপ্লেতে ওভারপ্রতি ছয়ের কাছাকাছি রান, এরপর ১০ ওভার পেরোনোর আগে ৩ উইকেট খুইয়ে আশাহতই ছিল রাইডার্সরা। শেষ ১০ ওভারে দরকার ছিল ১৩০ এরও বেশি রান, যা ইঙ্গিত দিচ্ছিল এবারের বিপিএলে প্রথম হারের।
তবে সেখান থেকে রংপুরের লড়াই শুরু। ইফতিখার আহমেদ আর খুশদিল শাহর ৫৩ বলে ৯১ রানের জুটি তাদেরকে নিয়ে আসে লক্ষ্যের কাছাকাছি। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে গিয়ে ইফতিখার আউট হন শাহিন আফ্রিদির বলে। পরের ওভারে জাহানদাদ খানের শিকার হন খুশদিলও।
সে ওভারে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের কারণে আউট হলেন শেখ মাহেদি হাসানও। ১৯তম ওভার করতে আসা শাহিনকে ফিরতি ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন মাহেদি। তবে তা চলে যায় তার লেগসাইডের দিকে, ক্রিজের ওপরে, যে জায়গাটা আবার সোহানের ক্রিজে ফেরার পথ। ফলে অবধারিতভাবে তাই হয়েছে যা হওয়ার, সোহানের ধাক্কায় ক্যাচ নিতে পারেননি আফ্রিদি। আবেদন করলে অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট হন মাহেদি। অথচ সেটা যদি আউট হয়ও তাহলে আউট হওয়ার কথা সোহানের! থার্ড আম্পায়ারের ওই ভুলটি রক্ষা করে সোহানকে, যিনি পরের ওভারে রংপুরকে অবিশ্বাস্য এক জয় উপহার দেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে সাবধানী সূচনা করেন তামিম। শেখ মাহেদির প্রথম ওভার মেডেন দেন তিনি। তার সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত কিছুটা আগ্রাসী ছিলেন। দু’জন মিলে পাওয়ার প্লেতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৪৬ রান করে বরিশাল।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই জুটির ৫০ পূরণ করেন তামিম-শান্ত। ৮১ রানে ভাঙে বরিশালের ওপেনিং জুটি। ১১তম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বি প্রথমবার আক্রমণে এসে শান্ত এবং তামিমকে বিদায় করেন। তার প্রথম বল মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে ভুল করেন শান্ত। এক্সট্রা কভারে খুশদিল শাহকে ক্যাচ দেয়ার আগে ৩০ বলে ৪১ রান করেন তিনি।
এরপর উইকেটে এসেই প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান কাইল মায়ার্স। সেই ওভারের শেষ বলে মিড অফে অ্যালেক্স হেলসকে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তামিম। চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ৩৪ বলে ৪০ রান আসে তামিমের ব্যাটে। ইতিহাস গড়ার জন্য এই ম্যাচটাকেই যেন বেছে নিলেন তামিম ইকবাল। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ছুঁয়ে ফেলেছেন ৮০০০ টি-২০ রানের মাইলফলক। পরের দুই ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও নাহিদ রানা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বোলিং করলেও ১৬তম ওভারে ২২ রান দেন রাব্বি। এরপরের ওভারে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন আকিফ জাভেদ।
তার লেংথ ডেলিভারিতে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ দেখেন ১৮ বলে ২৩ রান করা তৌহিদ হৃদয়। দ্রুত রান তোলার মিশনে ক্রিজ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। ১৮তম ওভারে সাইফউদ্দিনের স্লোয়ারে পুল করতে গিয়ে ডিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। শেষদিকে ফাহিম আশরাফের ছয় বলে দুই ছক্কা ও একটি চারে ২০ রানের ইনিংসে ১৮০ রানের গণ্ডি পার হয় বরিশাল। একটি চার ও সাতটি ছক্কার ইনিংসে শেষ ওভারে ২৭তম বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মেয়ার্স। ২৯ বলে ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৭ রানে থামে তামিমের বরিশাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ফরচুন বরিশাল : ১৯৭/৫ (তামিম ৪০, শান্ত ৪১, মায়ার্স ৬১*, হৃদয় ২৩, মাহমুদুল্লাহ ২, ফাহিম ২০, জাহানদাদ ১*; শেখ মাহেদি ১/১৯, আকিফ ১/১৬, সাইফ ১/৪২, কামরুল ২/৪৭)।
রংপুর রাইডার্স : ২০২/৭ (তৌফিক ৩৮, হেলস ১, সাইফ ২২, ইফতিখার ৪৮, খুশদিল ৪৮, সোহান ৩২*, তানভির ১/৩৩, আফ্রিদি ১/৩০, জাহানদাদ ২/৪৮, ফাহিম ১/৩০, রিশাদ ১/২৬)।
ফল : রংপুর রাইডার্স ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : নুরুল হাসান সোহান।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল