২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

উইকেট বুঝতে ভুল হয়েছে সবার

অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা মেহেদি হাসান মিরাজ। ৯৭ রানে আউট হয়ে এভাবেই হতাশ হয়ে ক্রিজ ছাড়ছিলেন তিনি : নাসিম সিকদার -

প্রতিপক্ষের জন্য গর্ত খুঁড়ে তাতে নিজেরাই উল্টো পড়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। উপমহাদেশের বাইরের দল দক্ষিণ আফ্রিকা এই অঞ্চলে ১০ বছর টেস্ট জেতে না, অনভিজ্ঞতায় ভরা দলটিকে স্পিন বান্ধব উইকেটে কুপোকাত করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। একাদশে তিন স্পিনারের সঙ্গে মাত্র এক পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছিল তারা। সেটা পরে হয়েছে বুমেরাং। অ্যাওয়ে সিরিজে উইকেট বুঝতে না পারলেও অধিনায়ক কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। কিন্তু হোম গ্রাউন্ডে এমন ভুল মেনে নেয়া কঠিন। মিরপুর টেস্টেও টিম ম্যানেজমেন্ট উইকেটের ধরণ বুঝতে পারেনি। অথচ প্রতিপক্ষের স্পিনার কেশভ মহারজা জানিয়েছেন, তামিম ইকবালের সাথে উইকেটে নিয়ে কথা বলে উপকৃত হয়েছেন। তামিম যেভাবে বলেছেন, সেই মতোই উইকেট কাজ করেছে! অথচ বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট উইকেটের চরিত্র উদ্ধার করতে পারলো না!
এই নিয়ে দশ বছর পর উপমহাদেশের মাঠে টেস্ট জিতল প্রোটিয়ারা। সর্বশেষ ২০১৪ সালে গলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল তারা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বৃষ্টির কারণে তাদের দুই টেস্টই ড্র হয়। টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা এখনো অজেয় থাকল বাংলাদেশের কাছে। ১৫ টেস্ট খেলে তাদের কাছে ১৩টাই হারল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
হারের চিত্রনাট্য লেখা হয়ে গিয়েছিল প্রথম ইনিংসেই। ব্যাটারদের ব্যর্থতার মিছিলের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনশর বেশি রান করেও হার ঠেকানো যায়নি। তৃতীয় দিনই শেষ হতে পারতো ম্যাচ। সেটা না হওয়ায় বৃষ্টিকে ধন্যবাদ দিতে পারে বাংলাদেশ। চেন্নাই থেকে কানপুর হয়ে মিরপুর। দেশ বদলায়, ভেনু বদলায়, কিন্তু বদলায় না ফল কিংবা পারফরম্যান্স।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ হারে ৭ উইকেটে। চতুর্থ দিন মাত্র ১০৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম সেশনেই ৩ উইকেট হারিয়ে জিতে যায় প্রোটিয়ারা। কদিন আগেই ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে চতুর্থ দিনে হারের পর কানপুরে দুইদিন বৃষ্টির পেটে গেলেও বাংলাদেশের হার ঠেকানো যায়নি। ঘরের চেনা মাঠ মিরপুরও যেন ঠিক তাই।
দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে গেলো। দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি হবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সাকিব আল হাসানের আসা না আসাকে ঘিরে এই টেস্ট ছিল আলোচনার কেন্দ্রতে, নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছিল শেরেবাংলা স্টেডিযামের আশপাশ। বাইরে তুমুল আলোচনা থাকলেও মাঠের ক্রিকেটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল শুধু সমালোচনাই উপহার দিয়েছে।
নিজেদের মাঠে প্রোটিয়াদের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তরা লড়াই করতে পারেননি, হেরেছেন ৭ উইকেট। এই হারে সামনে আটোমেটিক চলে আসে ব্যাটিং ব্যর্থতা। সেই সঙ্গে দলের নেতিবাচক কৌশল এবং উইকেট বুঝতে না পারাটা বড় কারণ। টেস্ট শুরুর আগের দিন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, মিরপুরের উইকেট যেমন হয়, তেমন উইকেটই থাকবে। অধিনায়ককে ম্যাচ শেষে পাওয়া যায়নি। দলের হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন ৯৭ রান করা মিরাজ। তিনি অনেকটা স্বীকার করে নিয়েছেন উইকেট বুঝতে না পারার কথা, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম মিরপুরের উইকেট টার্নিং হবে। আমরা সব সময় প্রভাব বিস্তার করে এসেছি। এর আগেও খেলেছি আমরা এক পেসার নিয়ে। এমন না যে এবারই প্রথম খেললাম। সিরিজ শেষে কিংবা প্রথম ইনিংস শেষে বুঝা যায় সেটি প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি।’
উইকেট বাংলাদেশের চাওয়া অনুযায়ী এতটা টার্নিং ছিলো না। বরং আবহাওয়ার কারণে পেসাররা সিম মুভমেন্ট পেয়েছেন। কাগিসো রাবাদা ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট, ৪ উইকেট নিয়েছেন ভিয়ান মুল্ডার। প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংসে হানা দিয়ে ৩ উইকেট নিতে পেরেছিলেন হাসান মাহমুদও। হাসানের স্পেলের সময় আরেকজন পেসারের ঘাটতি টের পাওয়া গিয়েছে প্রবলভাবে। প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ উইকেট ফেলে দেয়ার পর কাইল ভেরিয়েন্না দাঁড়িয়ে যান। তার সেঞ্চুরিতে ২০২ রানের লিড হয়ে যাওয়ার পর ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর জাকের আলি অনিককে নিয়ে ১৩৮ রানের জুটিতে মিরাজ লড়াই করেছেন। দলের আশাও জাগিয়েছিলেন। তবে চতুর্থ দিনে আবার দেখা গেল পেসারদের দাপট। রাবাদা ও মুল্ডার মিলে আধঘণ্টার ভেতর মুড়ে দেন বাংলাদেশের ইনিংস। ১০৬ রানের লক্ষ্য ৩ উইকেট হারিয়ে ২২ ওভারেই তুলে ম্যাচ জিতে নেয় সফরকারীরা। তাদের ৩ উইকেট পড়েছে অনেকটা মারতে গিয়ে। তাইজুল ইসলাম ম্যাচে ৮ উইকেট নিলেও বাংলাদেশের স্পিন খেলা খুব কঠিন হয়নি সফরকারিদের।
প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম দুই পেসার খেলানোর পরও বলছেন ,‘এমন জানলে আরেকটা পেসার হয়ত খেলাতাম। আমার মনে হয় তারাও খেলাতো।’
সবাই স্বীকার করবেন, এখানে পেসার ঘাটতির একক দায় ছিল না। স্পিনার তাইজুল ভালো করলেও নাঈম হাসান ও মিরাজ প্রত্যাশা অনুযায়ী বল করতে পারেননি। চার বোলার ছিলো, এক পেসার আর তিন স্পিনার। সাধারণত পুরনো পরিসংখ্যানে তাকালে দেখা যায়, মিরপুরে স্পিনাররা প্রভাব বিস্তার করে। অথচ কন্ডিশন ভিন্ন হয়ে গিয়েছে, প্রোটিয়ারা ভালো করেছে। হাসানও ভালো করেছে। দল থেকে মিরাজের কাছে প্রত্যাশা ছিল সে ৬-৭ উইকেট নেবে, ম্যাচ জেতাবে। কিন্তু আশার সাথে বাস্তবতার ফারাক থাকায় নিজেদের মাঠে আরো একটি পরাজয়।


আরো সংবাদ



premium cement