২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মধুমালতীর হাসি

-

মধুমালতী বা মধুমঞ্জরি আমাদের গ্রামে, শহরে বাড়ির আঙিনা বা উদ্যানে লাল-সাদা ফুলের যে অপূর্ব সমারোহ আমরা দেখি, সেই ফুলটিই আসলে মধুমালতী। ঘনসবুজ পাতার মাঝে সাদা লাল গোলাপি ফুল ঝুলে থাকে থোকায় থোকায়। রাতে অনেক ফুলই ফোটে কিন্তু এমন অসাধারণ সুন্দর, স্নিগ্ধ ও সুগন্ধে পরিপূর্ণ ফুল আর হয় না। জোসনা রাতের ঝলমলে আলোয় অপরূপ মুগ্ধতা ছড়ায় মধুমালতী। রাত যত গভীর হতে থাকে ততই এর মৃদু মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মধুমালতীর মায়াবী এ রূপ মানুষকে মুগ্ধ করে সহজেই। এ ফুল প্রথমে সাদা থাকে এরপর রঙ পরিবর্তন হতে থাকে। গোলাপি পরে লাল। এ ফুলের বাংলা কোনো নাম ছিল না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছেন মধুমঞ্জরি লতা।
মধুমঞ্জরি বা মধুমালতী এর ইংরেজি নাম জধহমড়ড়হ পৎববঢ়বৎ. খুব ভালোবেসেই এই নামটি দিয়েছেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম ছঁরংয়ঁধষরং রহফরপধ. এটি ঈড়সনৎবঃধপবধব পরিবারের অন্তর্গত। মধুমালতীর হিন্দি নাম রঙ্গন-কা-বেল, বোম্বে অঞ্চলে বারোমাসি, লাল চামেলী বলা হয়। অনেকে মধুমালতীকে মাধবী লতাও বলেন। মধুমালতী বা মধুমঞ্জরি তার নামের মতোই আকর্ষণীয়। বাংলা সাহিত্যের একটি অংশজুড়ে আছে ফুলের নাম তার মধ্যে এই মধুমালতী একটি। যুগে যুগে ছড়া কবিতা গল্প গানে উঠে এসেছে।
ফুলের মিষ্টি সুবাস জড়ানো বৃষ্টিভেজা বাতাস মানুষের মনকে রাঙিয়ে দিয়ে যায় বারবার। রঙের বৈচিত্র্য, স্নিগ্ধময় সুবাস আর প্রস্ফুটন প্রাচুর্যের কারণেই ফুলপ্রেমীরা তাদের প্রিয় ফুলের তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন মধুমঞ্জরিকে বা মধুমালতীকে। ফুলপ্রেমী প্রতিটি মানুষের বাড়িতে শোভা পায় মধুমালতী। মধুমালতী ফুল মানুষ বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বাড়ির প্রবেশদ্বারে, ছাদে, ফুল বাগানে প্রভৃতি স্থানে লাগিয়ে থাকে। তাছাড়া পার্ক, উদ্যান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাগানে মধুমালতী ফুলগাছ চোখে পড়ে। গাছটির ডালপালা লম্বা হয়ে চারিদিক ছড়িয়ে যায় এবং ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়। দীর্ঘ দিনের গাছ হলে ধীরে ধীরে মূল লতাটি বেশ মোটা হয়ে যায় এবং মাটিতে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এই মিষ্টি সুবাসের ফুলগাছটি কাষ্ঠল লতাজাতীয় ঝোপালো আকৃতির ফুলগাছ। এর বৃদ্ধির জন্য বাউনি বা আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকতে হয়, যাতে ভর করে বেড়ে উঠতে পারে। এর লতা বেশ শক্ত মানের, বিশেষ করে বয়স্ক গাছের লতা। তাছাড়া বয়স্ক লতা মোটা হয়ে মোচড়ানো এবং ধূসর বর্ণ ধারণ করে। গাছের দৈর্ঘ্য ইচ্ছে অনুযায়ী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে কমবেশি করে রাখা যায়। তবে এ গাছ লতিয়ে লতিয়ে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর পাতা কিছুটা পাতলা ও খসখসে প্রকৃতির, গঠনে আয়তাকার থেকে ডিম্বাকার, রঙ সবুজ। তাছাড়া পাতাগুলো শাখায় জোড়ায় জোড়ায় সুবিন্যস্তভাবে সাজানো থাকে। লতার অগ্রভাগে গুচ্ছবদ্ধভাবে থোকায় থোকায় ফুল ধরে। ফুলে ক্ষুদ্রাকৃতির পাপড়ি সংখ্যা পাঁচটি, মাঝে পরাগ অবস্থিত, দলনল বেশ লম্বা। দলনলসহ ফুলগুলো ঝুলে থাকে। ফুলের গন্ধ বেশ মিষ্টি। গ্রীষ্মে কুড়ি আসতে শুরু করে। বর্ষাকালজুড়ে প্রচুর ফুল ফোটে। বর্ষাকালীন ফুল এটি। তবে গাছের বাড়তি যত্ন নিলে শরৎকালেও ফুল ফোটে এমনকি বছরের অন্যান্য ঋতুতেও কিছু ফুল পাওয়া যায়। সারা বছর ফুল ধরে বলেই বারোমাসি ফুল নামটি এসেছে।


আরো সংবাদ



premium cement