অনুপম দান
- নুরুল হুদা নুরী
- ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১১, আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১৭
প্রতিদিনের মতো নুগায়ের পুবের বারামখানায় দাদু ভাইয়ের সাথে বসে শীত সকালের নরম আলো হাতে-পায়ে মাখছে।
ঘরের পাশে দীঘির কালো পানিতে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুগ্ধ হয় তারা। দাদুভাই তাকে গরম চাদর মুড়িয়ে কোলে নিয়ে রোজই উপভোগ করেন অতিথি পাখির গান, দূর্বাঘাসে চিকচিক করা শিশিরের শুভ্রতা। আজ নুগায়ের কৌতূহলী মনে দাদুকে প্রশ্ন করে, দাদু অতিথি পাখিরা কেন আমাদের দেশে আসে, তাদের বাড়িই বা কোথায়?
শোনো নুগায়ের, তারা আসে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে, কারণ শীতে সেখানে তাপমাত্রা খুবই কমে যায়। বরফে ভরে যায় নদী-নালা। তাই তারা আমাদের দেশে আসে শীতকালীন অবকাশ কাটাতে। নুগায়ের অবাক হয়ে জানতে চায়, তারা কি বিমানে করে আসে?
দাদু বলেন, নাহ! তারা ডানায় ভর করে আসে।
নুগায়ের হিসাব মেলাতে পারে না কীভাবে পাখিরা পথ চিনে আর এতদূর পথ পাড়ি দেয়। চিন্তার ঘোর না কাটতেই মা নিয়ে আসে ভাঁপা পিঠা। পিঠা খেতে খেতে নুগায়ের আবার প্রশ্ন ছুড়ে দেয় দাদুকে, আচ্ছা ওরা যেহেতু আমাদের অতিথি তাহলে করিম চাচা কেন ফাঁদ পেতে তাদের হত্যা করে। এ কেমন আতিথেয়তা?
শোনো, পাখি শিকার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ বেআইনি কাজ করলে আমাদের কী করার আছে?
করার কিছু নেই মানে? আমরা তার বিরুদ্ধে প্রশাসনে নালিশ করতে পারি।
তা অবশ্যই ঠিক। দাদুভাই আমার আরেকটি প্রশ্ন আছে। আবার কী প্রশ্ন? অতিথি পাখিদের ডানা থাকার কারণে শীত থেকে বাঁচতে সাইবেরিয়া থেকে আমাদের দেশে এসেছে, কিন্তু আমাদের পাড়ার পথের শিশু, বস্তির মানুষ শীত থেকে বাঁচতে কোথায় যাবে?
দাদু তার প্রশ্ন শুনে প্রশংসার ভঙ্গিতে বললেন, এটিই হলো কাজের প্রশ্ন। উত্তর খুব সোজা। তারা কোথাও যাবে না। আমরা তাদের সাহায্য করব। গরম জামা দান করব।
নুগায়ের সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার পথে একজন টোকাই ছেলেকে খালি গায়ে কাঁপতে দেখে নিজের গায়ের নতুন সোয়েটারটি দিয়ে চলে আসে। ঘরে এলে বাবা জানতে চায়, তোমার সোয়েটার কোথায়?
নুগায়ের সোজা উত্তর দিলো, ওই টোকাই ছেলেটাকে দান করে দিয়েছি।
বাবা-মা উভয় মিলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। বাবা বললেন, তাদের জন্য পুরোনো জিনিস অলরেডি মানবিক দেয়ালে রেখে এসেছি। এমন সময় দাদু এসে জানতে চায়, কী ঘটেছে?
নুগায়ের বলে দাদু আমার লাল সোয়েটারটি আমাদের পাড়ার টোকাই ছেলেটাকে দান করে দিলাম। এখন আব্বু-আম্মু আমাকে বকা দিচ্ছে।
দাদা সোজা বলে দিলেন, ও তো ভালো কাজ করেছে। তোমরা তাকে বাহবা দেয়ার দরকার ছিল। বাবা বলে উঠলেন, পুরোনো জামা দিলেও তো চলে। এত সখের সুন্দর সোয়েটারটা তো না দিলেও পারত। দাদা রেগে গিয়ে বললেন, তোমরা কি কুরআনের এ বাণী জানো না, মহান আল্লাহ বলেছেন- ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত নেকি অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় দান না করবে।’ আর নুগায়েরের জন্য আজই গরম জামা কিনে দেবে।
দাদু ভাইয়ের আদেশে নুগায়েরের মুখে একচিলতে হাসি রেখা ফুটে ওঠে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা