২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এই সময়ে শিশুর যতœ

-

সমগ্র পৃথিবীতে এখন নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক। বাংলাদেশও নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহ থাবার বাইরে নেই। শিশুরা রয়েছে করোনার উচ্চ ঝুঁকির মাঝে। এই সময়ে কী করে শিশুকে নিরাপদে রাখা যায়, সেটাই সব মা-বাবার চিন্তা। তাই নিচের উপদেশগুলো মেনে চলুনÑ
প্রথমেই আপনার সন্তানকে বোঝান নভেল করোনাভাইরাস কী, এটি কী করে ছড়ায় এবং এর হাত থেকে বাঁচতে হলে কী করতে হয় তা শেখান। সচেতনতাই আপাতত এই রোগ থেকে বাঁচার প্রধান অস্ত্র। খেয়াল রাখুন, সে যেন আতঙ্কিত না হয়; বরং যেন এই বিপদে নিজের করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান রাখে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।
স্কুল বন্ধ দিয়েছে, তাই বলে শিশুকে কোচিং ক্লাসে, বা গান বা নাচ শেখার ক্লাস বা অন্য কোথাও নেবেন না। এই সময়ে শিশুকে কোথাও বেড়াতে নেবেন না। কোনো রেস্টুরেন্ট, শপিংমল বা পার্ক তো নয়ই, এমনকি কাছের কোনো আত্মীয়ের বাসায়ও নেবেন না। এমনকি আত্মীয়দেরকে নিজের বাসায় আসতে বলবেন না। শিশুর বাসার টিচারকেও ছুটি দিয়ে দিন কিছু দিনের জন্য। ড্রাইভার ও বাসার কাজে সাহায্যকারী ছুটা বুয়াকেও সবেতন ছুটি দিয়ে দিন। যত কষ্টই হোক, তাদের ছুটি দিতেই হবেÑ তাদের জন্য নয়, আপনার শিশুর ও পরিবারের সবার নিরাপত্তার জন্য। মনে রাখবেন, সামাজিক দূরত্বই আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ থেকে।
পরিবারের কেউ কোনো প্রয়োজনে বাইরে গেলে বাড়ি ফিরে সাথে সাথেই গোসল করতে হবে। গোসল করার আগে কিছু স্পর্শ করা যাবে না, কোথাও বসা যাবে না এবং শিশুর সামনে যাওয়া যাবে না। শিশুকেও শিখিয়ে দিন কেউ বাইরে থকে বাড়ি ফিরলে তার আশপাশে না যেতে। শিশুকে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা শেখান। কী করে হাত ধুতে হয় তা শেখান। তাকে উৎসাহিত করুন বারবার হাত ধুতে এবং হাত না ধুয়ে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে বলুন। শিশুকে প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। বাইরে থেকে আনা কোনো খাবারের প্যাকেট, টাকা ইত্যাদি যেন শিশু স্পর্শ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। যদি স্পর্শ করে ফেলে তাহলে সাথে সাথে সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত হাত ধুতে বলুন। শিশুকে বারান্দায় যেতেও নিষেধ করুন। যতটা সম্ভব দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। কারণ নতুন করে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসের জীবাণু বাতাসে ভেসে থাকতে পারে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত। আপনার আশপাশেই এমন ব্যক্তি থাকতে পারে যার দেহে নভেল করোনাভাইরাসের জীবাণু আছে, কিন্তু লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। তার মাধ্যমে বাতাসে এই জীবাণু ছড়িয়ে এক বাসা থেকে অন্য বাসায় চলে যেতে পারে।
শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান। শাকসবজি, ডিম, দুধ, ফলমূল, মাছ, গোশত, মধু ইত্যাদি রাখুন তার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। শিশুকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ খাওয়ান। মাছ-গোশত ও ডিম সময় নিয়ে ভালোভাবে রান্না করুন যেন আধা সেদ্ধ না থাকে। ঠাণ্ডা কোনো খাবার যেমন ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম ইত্যাদি শিশুকে খাওয়াবেন না। শিশুরা স্বভাবতই বাইরে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী থাকে। কিন্তু করোনার এই সময়ে শিশুকে বাইরে বের হতে দেয়া বা বন্ধুদের সাথে খেলতে দেয়ার উপায় নেই। এমনকি পাশের বাসার শিশুটির সাথেও মিশতে দেয়ার সুযোগ নেই এই পরিস্থিতিতে। অন্য দিকে স্কুলও বন্ধ দিয়ে দিয়েছে। ঘরে থেকে থেকে শিশু যেন অতিষ্ঠ হয়ে না যায় সেজন্য শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিন। একসাথে বসে গল্প করুন, লুডু খেলুন, বই পড়ে শোনান। এই দুর্যোগের সময়টি কাজে লাগান শিশুর সাথে নিজের সম্পর্কোন্নয়নে।
আপনার শিশুর যেন সময় ভালো কাটে, সেজন্য তাকে বাসার টুকটাক কাজের দায়িত্ব দিন। যেমন তার নিজের ঘর গুছিয়ে রাখা। খাবার রান্নার সময় টুকটাক মসলা এগিয়ে দেয়া। খাবার পরিবেশনে সাহায্য করা। এসব করলে সে দায়িত্বশীল হবে এবং তার সময়ও কাটবে ভালো। শিশু যদি পছন্দ করে তাহলে তাকে বাড়িতেই আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা ইত্যাদি শেখান। এই অপ্রত্যাশিত ছুটি একটি চমৎকার সুযোগ হতে পারে নতুন কোনো ভাষা শেখার জন্যও। এ সুযোগটি কাজে লাগান।


আরো সংবাদ



premium cement