বাংলাদেশের বাজারে ইউরোপের ড্যান কেক
- আলমগীর কবির
- ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
টেলিভিশনের পর্দায় ইউরোপীয় লিগের খেলা দেখার সময় মাঝেমধ্যে ক্যামেরা নিয়ে যায় স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তার দিকে। সেখানেই প্রথম ড্যান কেকের একটি গাড়ি চোখে পড়েছিল। পরে জেনেছি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই কেক তৈরি হয় ডেনমার্কে। গত কয়েক বছর ধরে এটি বাংলাদেশের বাজারেও দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, তাহলে কি ইউরোপ থেকে কেক আমদানি করা হয় বাংলাদেশে? না! ওখানকার ফর্মুলা ঠিক রেখে এই কেক তৈরি হয় ঢাকা জেলার সাভারে ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডে নির্মিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফ্যাক্টরিতে।
সম্প্রতি ড্যান কেক বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে যাওয়ার সুযোগ হয়ে ছিল সেখানে। মূলত গুণগত মান ঠিক রাখতে কতটা পরিপাটি পরিবেশে এই কেক তৈরি হয় তা দেখানোই ছিল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য। বেলা ১১টায় ঢাকা থেকে সাভারে ড্যান কেকের ফ্যাক্টরিতে পৌঁছার পর বাইরের পরিবেশ দেখে একঝলকেই মুগ্ধ আমন্ত্রিত সবাই। সেখানে অভ্যর্থনা কক্ষে ড্যান কেকের প্রস্তুতিপর্বের সময় এবং স্ট্রাগল নিয়ে ধারণা দিলেন ড্যান কেকের হেড অব প্লান কো-অপারেশন ফয়েজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ১৯৩১ সালের কথা। ‘সিমেকজার’ নামক ছোট্ট এক ড্যানিশ শহরে বাস করতেন ‘এস্কিলডসন’ নামের এক তরুণ বেকার। তিনি বেকিং-এর ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। বেকিং শিল্পকে তিনি ‘ফাইন আর্ট’-এর আরেকটি মাধ্যম হিসেবেই ভালোবাসতেন। চাইতেন মানুষের মাঝেও ‘ফাইন আর্ট অব বেকিং’-এর স্বাদ ছড়িয়ে যাক। এই ভালোবাসা এবং তা ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা থেকেই শুরু হয় ড্যান কেকের যাত্রা।
ফয়েজ আহমেদ বলেন, পথ চলার প্রথম থেকেই উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান ও চমৎকার স্বাদের কারণে ড্যান কেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে ব্যবসাও বড় হতে থাকে। এ কারণে এস্কিলডসন সিমেকজার থেকে ‘গিভ’ শহরে এসে ফ্যাক্টরি চালু করেন। তখন শুধু ‘হাফ মুন’ আর ‘সুইস রোল’ই উৎপাদন করত ড্যান কেক। গিভ শহরেও খুব দ্রুত ড্যান কেকের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ স্ন্যাক্স আইটেম থেকে ধীরে ধীরে ড্যান কেক সবার পারিবারিক সময় উপভোগের মূল উপাদানে পরিণত হয়। মানুষ পায় ‘ফাইন আর্ট অব বেকিং’-এর স্বাদ!
তার ব্রিফিংয়ের পর পরিদর্শকদের জন্য রাখা পোশাক পরে যাওয়া হয় ফ্যাক্টরির ভেতর উৎপাদনস্থলে। যেখানে গাইড হিসেবে ছিলেন কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ম্যানেজার মো: আল এমরান। প্রথমেই তিনি দেখালেন, কি নিয়মে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেন। কাজ শুরুর আগে প্রত্যেক শ্রমিকের সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে শুকাতে হয়। এ ছাড়া ভেতরে বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ করা শ্রমিকদের পোশাকও আলাদা। এর ফলে এক ইউনিটের শ্রমিকরা অন্য ইউনিটে গিয়ে সময় নষ্ট করার সুযোগ পায় না।
শ্রমিকদের সম্পর্কে জানানোর পর নিয়ে যাওয়া হয় কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স রুমে। এটি অনেকটা ল্যাবরেটরির মতো। ভোক্তাদের কাছে শতভাগ নিরাপদ পণ্য পৌঁছে দেয়া এই বিভাগের কাজ। তারপর পার্ট টু পার্ট কিভাবে তৈরি হয় কেক সেটা ঘুরে ঘুরে দেখানো হয়। মূল উৎপাদন ইউনিটে এয়ার কন্ডিশন নেই। তবে বাতাস প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। সাধারণত এ ধরনের ব্যবস্থা ওষুধ উৎপাদন কোম্পানি ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। কয়েক মাস ধরে প্যাকেটের ভেতর কেক ভালো রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় নাইট্রোজেন।
অল্প সময়ের মাঝেই সুস্বাদু ও মানসম্মত পণ্য উৎপাদনের কারণে এই ব্র্যান্ডটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মার্কেট লিডারের অবস্থান নেয় এবং একসময় স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বর্তমানে ড্যান কেকের অসংখ্য পণ্য ৩০টিরও বেশি দেশে সমাদৃত।
বাংলাদেশে ড্যান কেকের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে। ড্যান কেক এ/এস, ডেনমার্ক ও পাণ্ডুঘর লিমিটেড, বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ড্যান ফুডস লিমিটেড।
নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নানা ধরনের বেকারি আইটেম পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রেসিপি উদ্ভাবনে নিয়োজিত রয়েছে ড্যান কেক। নিত্য গবেষণা ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজারে ড্যান কেক যে পণ্যগুলো এনেছে, তাদের মাঝে অন্যতম হলো মাফিন, লেয়ার কেক, সুইস রোল, ম্যাকারুনস, পাফ পেস্ট্রি, পাউন্ড কেক, প্লেইন কেক, ফ্রুুট কেক ও ড্রাই কেক। ড্যান কেকের প্রতিটি পণ্যই যেন জীবনের কোনো না কোনো অংশের সাথে জড়িয়ে যায়। এককথায় বলা যায়, এ দেশের ভোক্তাদের কাছে পারিবারিক আবহে আনন্দময় সময় উপভোগ করার এক নতুন ‘কালচার’ বা ‘ট্রেন্ড’ নিয়ে এসেছে ড্যান কেক।
ড্যান কেক সর্বশেষ বাজারে এনেছে মার্বেল কেক। ড্যান কেক ফুড লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং মিনহাজ হোসেন এ সম্পর্কে বলেন, নিত্যনতুন পণ্য উদ্ভাবন ও সেরা গুণগত মান সরবরাহের মাধ্যমে ভোক্তাদের মন জয় করাই ড্যান কেকের লক্ষ্য। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাজারে এসেছে মার্বেল কেক। এটি মূলত ব্যানানা আর চকলেট ফ্লেবারের সমন্বয়। আমরা বিশ্বাস করি গ্রাহকরা মার্বেল কেকের স্বাদ উপভোগ করবেন।