২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বশে থাকুক ঈর্ষাকাতর মন

-

ঈর্ষা সবার মনেই কাজ করে। ঈর্ষাহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু কাউকে কাউকে ঈর্ষা একটু বেশিই পীড়া দেয়। যদি জানা থাকে ঈর্ষাকাতর মনটাকে কিভাবে বশে রাখা যায় তাহলে জীবন একটু সহজ হয়। মায়া-মমতা, ভালোবাসা, রাগ, শোক যেমন স্বাভাবিক আবেগ। ঈর্ষা বা হিংসাও তাই। কখনো কখনো মানুষের মন ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই বলে কখনোই অতিরিক্ত ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়া উচিত নয়। এতে করে নিজেরই কষ্ট বাড়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত কারো সুখ বা সাফল্য দেখে আপনি মনে মনে সেই সুখ সাফল্য নষ্ট হয়ে যাওয়া কামনা না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার পরশ্রীকাতরতা নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই ধরে নিতে হবে। লিখেছেন কাজী তানজিলা মেহনাজ
পরশ্রীকাতরতা কী?
যদি অন্যের সাফল্য কোনোভাবে আপনার ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে রাগ হওয়া স্বাভাবিক। এটি পরশ্রীকাতরতা নয়। কোনো বন্ধুর সাফল্যে কি অজানা কারণে খুব রাগ হয়? যদি অন্যের অর্জন বা সাফল্য আপনাকে সারা দিন অশান্তিতে রাখে, তাহলে সম্ভাবনা আছে যে আপনি পরশ্রীকাতরতায় ভুগছেন। ক্লাসে, অফিসে বা আত্মীয়দের মধ্যে এমন মানুষ সব সময়ই থাকবে যারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সৌভাগ্যবান, এটা মেনে নিয়ে তাদের সাথে মিশতে যদি কষ্ট হয় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের মন ঈর্ষাকাতর।

পরশ্রীকাতরতা থেকে মুক্তি পাবেন কিভাবে?
প্রথমেই বুঝতে হবে পরশ্রীকাতরতা আপনার জীবনে ভালো কিছু এনে দেবে না, শুধু আপনার শান্তি কেড়ে নেবে। হিংসার আগুনে জ্বলেপুড়ে আপনি সারা দিন কারো ওপর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন, এতে করে আপনারই সময় নষ্ট হবে, যাকে হিংসা করেন তার কিছুই হবে না। কাউকে কী কী বাঁকা কথা শুনিয়ে ছোট করা যায় সেই ফন্দি আঁটতে পারেন, এতে করে আপনি নিজেকেই ছোট করবেন। যাকে ছোট করতে চান সে হয়তো দুই মিনিট পরই ভুলে যাবে আপনি কী শুনিয়েছেন। দিন শেষে সবার চোখে আপনিই হিংসুক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলোকে ইতিবাচক রূপ দিয়ে জীবনকে সুন্দর করে তুলুন। মনে রাখবেন, আপনার পরশ্রীকাতরতা আপনাকেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়, অন্যকে নয়।

তুলনা করা বন্ধ করুন
সোস্যাল মিডিয়ার যুগে অন্যের জীবনে কী ঘটছে তা খুব সহজেই জানা যায়। তাই নিজের অজান্তে মনের মধ্যে তুলনা চলেই আসে। মনে রাখবেন, মানুষ কিন্তু নিজের সাফল্য এবং সুখই সোস্যাল মিডিয়ায় দেখায়, ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি আর কষ্ট কেউ সোস্যাল মিডিয়ায় বলে বেড়ায় না। যাকে হিংসা করছেন সেও হয়তো নিজের জীবনে কোনোভাবে দুঃখী। যেহেতু আপনি অন্যের জীবনের শতভাগ সত্য জানেন না, তাই অন্যের সাথে নিজের জীবনের তুলনা করে নিজেকে কষ্ট দেবেন না। তুলনা যদি করতেই হয়, নিজের সাথে করুন।

আপনার সমস্ত অর্জন গুরুত্বপূর্ণ
নিজের জীবনের সমস্ত অর্জনকে সম্মান দিন, মনে রাখুন কবে কী অর্জন করলেন। সেই অর্জন যত ছোটই হোক না কেন। নতুন একটি রান্না শেখা বা গাড়ি চালাতে শেখাও একটি অর্জন হিসেবে গণ্য হতে পারে। প্রতিটি অর্জনের জন্য নিজেকে বাহবা দিন। মানুষ ধীরে ধীরেই বড় হয়। যাকে হিংসা করছেন, সেও একদিন আপনার জায়গায় ছিল। ছোট ছোট অর্জনের মাধ্যমেই সে বড় হয়েছে। নিজের সুখ-দুঃখকে অন্যের সাফল্য-ব্যর্থতার সাথে বাঁধবেন না। নিজের সাফল্যে সুখ খুঁজে নিন।

নিজেকে প্রশ্ন করুন
অন্যের সাফল্য বা সুখে কেন আমি কষ্ট পাই? অন্যের সাফল্যের সাথে আমার সুখশান্তিকে কেন আমি জড়াচ্ছি? আমি কি ছোট মনের পরিচয় দিচ্ছি না? আমি চেষ্টা করলে নিজেও অনেক কিছু অর্জন করতে পারি। কেন আমি সেই পথে হাঁটছি না? অন্য কেউ ভালো কিছু অর্জন করলে কেন আমার মেনে নিতে কষ্ট হয়? এ পৃথিবীতে কি সব ভালো জিনিস পাওয়ার অধিকার আমার একার? এ প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন। এই প্রশ্নের জবাবে হয়তো নিজের মনে লুকিয়ে থাকা অনেক কথা জানতে পারবেন।

অন্যায্য পৃথিবী
এ পৃথিবীতে সব কিছু ন্যায্যভাবে হবে, এ কথা আপনাকে কে বলেছে? সব জায়গায় কি ন্যায় পাওয়া যায়? আপনি নিজের ভাগ্যকে দোষ দিতে পারেন, অন্যের প্রতি ঈর্ষাকাতর হতে পারেন। কিন্তু এসব করে কী লাভ হবে? মেনে নিন সব হিসাব-নিকাশ এ পৃথিবীতে মেলাতে পারবেন না। ভেবে দেখুন, ভাগ্য কোথাও না কোথাও আপনাকেও অন্যায্যভাবে অনেক কিছু দিয়েছে। হয়তো আপনার ক্লাসমেট ছিল একজন, যার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। আপনি দামি গাড়িতে করে ক্লাসে যেতেন, সে যেত পায়ে হেঁটে বা লোকাল বাসে চড়ে। আপনি দামি রেস্টুরেন্টে খেতেন, সে শিঙ্গাড়ার বেশি কিছু কিনে খাওয়ার ক্ষমতা রাখত না। আপনি ভাগ্যের জোরে ধনী পরিবারে জন্ম নিয়েছেন, আর সে অসচ্ছল পরিবারে। এখানে কি আপনিও ভাগ্যের কাছে ঋণী নন?

অন্য কারো জীবন পাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না
আমি যদি সে হতাম! এ কথাটি ভাবা বন্ধ করুন। আপনি আপনিই, আপনি অন্য কেউ হতে পারবেন না। এ রকম স্বপ্ন দেখলেই আপনার জীবন আরেকজনের জীবনের মতো হয়ে যাবে না। শুধু পরিশ্রম আর লেগে থাকার ক্ষমতাই আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারবে। আপনার সুখের উৎস হতে হবে নিজের সাফল্য। যদি অন্যের ব্যর্থতাকে নিজের সুখের উৎস বানিয়ে ফেলেন, তাহলে তিক্ত একটি জীবন কাটাতে হবে আপনাকে।

অপ্রাপ্তি সবার আছে
যার প্রতি ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন তার জীবনেও কিছু অপ্রাপ্তি আছে, আপনি জানেন বা না জানেন। যাকে হিংসা করছেন তার জীবনে হয়তো এমন কিছুর অভাব, যেটি আপনার জীবনে পরিপূর্ণ। বাস্তব বুঝতে চেষ্টা করুন। সবার জীবনে ব্যর্থতা আছে, সাফল্যও আছে। নিজের কী কী আছে তা ভাবুন। নিজের প্রাপ্তির হিসাব করলেই আপনি বুঝবেন আপনি কতটা ভাগ্যবান। তখন আর কারো প্রতি হিংসা হবে না।

জীবনের সৌন্দর্য ধরে রাখুন
অন্যের সাফল্যে কষ্ট পেতে পেতে নিজের জীবনের সুন্দর সময়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। জীবনের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। জীবনের মূল্যবান সময়গুলো কি অন্যের সাফল্যের কথা ভেবে কাটাতে চান? অন্য কেউ আপনার চেয়ে বেশি এগিয়ে আছে বলে কষ্ট হতেই পারে, কিন্তু তাই বলে যাকে হিংসা করেন তাকে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেবেন? এ সময়গুলো কি আর ফিরে পাবেন? এ সময়গুলো ভালো কোনো কাজে ব্যয় করুন। পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটান। নিজের ক্যারিয়ারের উন্নয়নে সময় দিন।

ইতিবাচক থাকুন
আত্মবিশ্বাসী হোন। নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটুন। কাউকে হিংসা করা মানে আপনি নিজের জীবনের ব্যর্থতাকে মেনে নিয়েছেন। কেন হিংসা করছেন? আপনার কি মনে হয় আপনি যাকে হিংসা করছেন তার মতো কিছু অর্জন করতে আপনি সক্ষম নন? পরশ্রীকাতরতা এটাই বোঝায় যে, আপনার অবচেতন মন মেনে নিয়েছে যে আপনি যাকে হিংসা করেন তার মতো জীবন পাওয়ার মতো যোগ্যতা আপনার নেই।


আরো সংবাদ



premium cement