২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

লস্করি খানের জনপদে

-


বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয় হলো রাজশাহী জেলার পুঠিয়া রাজবাড়ী। রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় এর অবস্থান। বাঘার আমবাগান ঘুরে ঠিক গোধূলি বেলায় ইতিহাস-ঐতিহ্য আর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে এখনো টিকে থাকা কালের সাক্ষী জমিদার বাড়িটিতে গিয়ে পৌঁছি। গাড়ি থেকে নেমেই ছোখ ছানাবড়া। বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ। মাঠ পেরোলেই মঠ। মন ভুলানো ঝুলবারান্দা। টেরাকোটার মিশেলে দোতলা বাড়ি। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরতলায় ওঠার পর মনের মাঝে অন্য রকম ভালো লাগা ভর করে। বাড়ির বাম পাশে পুকুর আর ডান পাশে উপাসনালয়। তবে সড়ক বিভাজনে এখন পুকুরটি আলাদা হয়েছে। বর্তমানে পুরো বাড়িটি চুনকাম করানো হয়েছে। শিগগিরই জমিদারি আমলের তৈজসপত্র দিয়ে পর্যটক আকর্ষণের জন্য মিউজিয়াম খোলা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেয়ারটেকার ঘরের দরজাগুলো খুলে আমাদের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছেন। তখনই দেখলাম থরে থরে কাচের শোকেস রাখা আছে, বাড়ির ব্যবহৃত তৈজসপত্র সাজানোর জন্য। পুঠিয়া জমিদারি সতেরো শতকের প্রথম দিকে মুঘলদের সৃষ্ট বাংলার প্রাচীনতম জমিদারিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাড়িটি মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলার বিভিন্ন প্রতœতত্ত্ব নিদর্শনের মধ্যে এই বাড়িটি অন্যতম আকর্ষণীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। এর নির্মাণকাল ১৮৯৫ সাল। রানী হেমন্তকুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে বাড়িটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। লোকমুখে প্রচলিত আছে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে নীলাম্বর রাজা উপাধি লাভ করেছিলেন। সেই থেকে পুঠিয়া জমিদার বাড়িটি রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি স্বত্ব ভাগাভাগি হলে জ্যেষ্ঠ শরিক সাড়ে পাঁচ আনা ও অন্যান্য তিন শরিক প্রত্যেকে তিন আনা অংশের মালিক হন। পুঠিয়ার জমিদারিত্ব ১৯৫০ সালের পূর্বপাকিস্তান এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্টের অধীনে বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অক্ষুণœ ছিল। বাড়িটির দেয়ালে এখনো দৃষ্টিনন্দন ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম বিদ্যমান। এ থেকেই অনুমান করা যায় মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী শৌখিনও ছিলেন বেশ। বাড়িটির আশপাশে বেশ কিছু দীঘি ও মন্দির রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দির হচ্ছে শিবমন্দির। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই চোখে পড়ার মতো পোড়া মাটির কারুকাজ। বাংলাদেশের সবচেয়ে অধিকসংখ্যক ঐতিহাসিক মন্দির রয়েছে এই পুঠিয়ায়। বিভিন্ন সময়কালে রাজবাড়ির জনহিতৈষী জমিদাররা এসব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। পুঠিয়া রাজবাড়ির নকশা ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্যরীতি অনুসারে নির্মিত। রাজা পিতাম্বর ছিলেন পুঠিয়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। রাজবাড়ির আঙ্গিনায় ঘুরতে গিয়ে ক্ষণিকের জন্য নিজেকে রাজা রাজা, জসিমকে উজির আর উজ্জ্বলকে সৈনিক থুক্কু প্রধান সেনাপতি মনে হয়েছে। ঘোর কেটে যাওয়ার পর নিজেদের আবিষ্কার করি একবিংশ শতকের অতি সাধারণ প্রজা হিসেবে। হা হা হাÑ নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসলে যা হয়। তবে বাংলার সিনেমা জগতে আমাদের নামে নাম জাভেদ, জসিম, উজ্জ্বল নায়ক হিসেবে দর্শকদের কাছে অঘোষিত সম্রাট ছিলেন। সে দিক থেকে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারি। পুঠিয়া সম্পর্কে আরেকটু না লিখলেই নয়। এই প্রাচীন জনপদের অধিপতি ছিলেন লস্করি খান। সম্রাট আকবরের শাসনামলে লস্করি খান বিদ্রোহী হয়ে উঠলে সেনাপতি মানসিংহ শাসনভার পিতাম্বরের হাতে তুলে দেন। সেই থেকেই পুঠিয়া জমিদারির গোড়াপত্তন। ব্রিটিশ-বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারি ছিল এই পুঠিয়া রাজবংশের। সম্পদের দিক থেকেও তারা ছিল ব্রিটিশ-বাংলার সবচেয়ে ধনী। সেসব আজ ইতিহাস। ভারত স্বাধীন হলে তৎকালীন পাকিস্তান সবকার জমিদারি প্রথা বাতিল করার পাশাপাশি জমিদারির সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। অতঃপর পুঠিয়া রাজবংশ ভারতে হস্তান্তরিত করা হয়। ঘুরে ঘুরে দেখার পর আমরাও বনলতা সেনের নাটোর জেলার মহাসড়ক হয়ে, হাল জামানার চরম স্বার্থবাজদের প্রিয় বসতি ঢাকা ফেরার পথ ধরি।

যাবেন কিভাবে : ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দিনে-রাতে রাজশাহীর পুঠিয়া যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির পরিবহন রয়েছে। সার্ভিস ভেদে ভাড়া ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন রেল জংশন থেকেও রাজশাহী যাওয়া যাবে। শহর থেকে পুঠিয়ার দূরত্ব মাত্র ৩২ কিলোমিটার। পুঠিয়া রাজবাড়িটিকে স্থানীয় অনেকে পাঁচআনি জমিদার বাড়ি নামেও ডাকে।

থাকা-খাওয়া : পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য রাজশাহী শহরের সাহেব বাজার, মিরেরটেক, টিক্কাপাড়া, সাধুর মোড়ে বিভিন্ন মানভেদে আবাসিক ও খাবার হেটেল রয়েছে।

ভ্রমণ তথ্য : যারা সরাসরি রাজশাহী যাবেন তাদের জন্য বাড়তি পাওনা হবে পদ্মা নদীর তীর, সেন্ট্রাল পার্ক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
জমিদার বাড়ির তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া

ছবি : দে ছুট ভ্রমণ সঙ্ঘ


আরো সংবাদ



premium cement
গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পাবেন বঞ্চিত অতিরিক্ত সচিবরা সম্পদের হিসাব জমা দিতে সময় পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা ঢালাও মামলা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ কী পাকিস্তানে জাতিগত সহিংসতায় ৩ দিনে নিহত ৮২ হেফাজত নেতাকে হত্যা মামলায় আসামি করার প্রতিবাদে স্মারকলিপি অটোরিকশাচালকদের কর্মসূচি স্থগিত, পুলিশের সাথে বৈঠক সোমবার ভারতে পালানোর সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা স্ত্রীসহ আটক রাবির নতুন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট, ফেরি চলাচল ব্যাহত সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেন সিইসি দ্বিতীয় দিনের মতো বেনাপোলে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ

সকল