সুতিতে সতেজ শিশু
কাভার ষ্টোরি- সুমনা শারমিন
- ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
শিশুদের জন্য পোশাক নির্বাচনে তাদের আরামের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক বেছে নিন, সে ক্ষেত্রে সুতি সবচেয়ে ভালো। সুতি কাপড় বাতাস চলাচলে সক্ষম এবং দ্রুত পানি শোষণ করতে পারে। শিশুরা যেহেতু বেশি ছোটাছুটি করে তাই ঘাম হয় বেশি। এ কারণে গরমকালে শিশুদের পোশাক নির্বাচনে সুতির কাপড় বেছে নিন। বিভিন্ন ধরনের ভয়েল, পাতলা তাঁত কাপড় আরামদায়ক।
গরমকালে শিশুদের হালকা রঙের পোশাক যেমনÑ আকাশি, হালকা সবুজ, হালকা গোলাপি, সাদা, ধূসর, বাদামি ইত্যাদির ওপর রঙিন ছাপা বা প্রিন্টের পোশাক বেছে নিতে পারেন। এতে শিশুদের দেখতে বেশ ভালো লাগে। শিশুদের জন্য ছোট বা মাঝারি প্রিন্টের পোশাক বেশি মানানসই। ফুল, পাতা, পাখি, জ্যামিতিক নকশা বা বল প্রিন্টের পোশাক পরাতে পারেন। এতে শিশুদের প্রাণবন্ত ও উচ্ছল লাগে। শিশুদের জন্য যে ধরনের পোশাকই নির্বাচন করা হোক না কেন, তা যেন খুব বেশি আঁটসাঁট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, আমরা সিনথেটিক পণ্যের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ছি। কিন্তু সিনথেটিক বা রাসায়নিক পণ্য ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য সিনথেটিক কাপড় সুবিধাজনক নয়। ওদের জন্য সিনথেটিকের বদলে যদি অর্গানিক কাপড় বাছাই করা যায়, তাহলে সেটাই সবচেয়ে ভালো।
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে জৈব প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় অর্গানিক কাপড়। এ প্রক্রিয়ায় সিনথেটিক পদার্থ বা রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার একেবারেই নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার হলেও তার পরিমাণ থাকে খুব অল্প। অর্গানিক কাপড় তৈরি হয় বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক তন্তু থেকে। তুলা, রেশম, পশম ও পশমিÑ এগুলো সবই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন ও প্রস্তুত করা হয়। অর্গানিক ওয়াটারপ্রুফ পোশাক, পোশাকের বোতাম ও লাইনিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় জৈব কাঠ ও রাবার।
নরম ও ঠাণ্ডা বলে সব বয়সী শিশুর জন্য অর্গানিক কাপড় আদর্শ। শিশুদের ত্বক নাজুক ও সংবেদনশীল। কড়া কেমিক্যাল ও সিনথেটিক রঙ শিশুর ত্বকের ক্ষতি করে। কয়েক বছর আগেও সিনথেটিক জামাকাপড় কেনা ছাড়া গতি ছিল না। সহজে অর্গানিক কাপড় পাওয়াও যেত না। কিন্তু বর্তমান বাজারে অর্গানিক কাপড় পাওয়া যায়।
অর্গানিক কাপড় কেনার সময় সুতি কাপড় বাছাই করুন। সুতি যেকোনো ত্বকের জন্য ভালো। এক্ষেত্রে উল প্রাকৃতিক হলেও তাতে অ্যালার্জি হতে পারে। কাপড়ে হাত বুলিয়ে দেখুন তা নরম কি না। খসখসে হলে শিশুর ত্বকে আঁচড় লাগতে পারে। ভালো মানের কাপড় কিনুন। অনেক সময় কাপড়ে সূক্ষ্ম সুতা লেগে থাকে। এগুলোকে ডাস্ট বলে। এগুলোর কারণে শিশু কাশি, হাঁচি ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারে।
শিশুর ঘুমের পরিবেশের পাশাপাশি তার ঘুমানোর পোশাকের গুরুত্বও কম নয়। আরামদায়ক পোশাক ছাড়া শিশুর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আরামের পাশাপাশি শিশুর ঘুমের পোশাকও হওয়া চাই সুন্দর, রঙিন, মজার। শিশুদের প্রায় সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায় এমন অনেক দোকান আছে ঢাকা শহরে। নবজাতক থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুর ঘুমের পোশাক পাওয়া যায়। একেবারে ছোট শিশুদের জন্য পায়জামাসহ গেঞ্জি কাপড়ের ঘুমানোর পোশাক অনেকেই পছন্দ করে। একটু বাড়ন্ত শিশুদের জন্য সুতির ঢোলা পায়জামা ও টি-শার্ট কিনছে অনেকেই।
১০ বছর বয়সী পর্যন্ত শিশুদের ঘুমানোর পোশাক পাওয়া যায়। ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য ডিজাইনেও এখানে রয়েছে ভিন্নতা। ছোট হাতা ও সুতি কাপড়ের ভিন্ন জামা-পায়জামাসহ ঘুমানোর পোশাকও পেয়ে যাবেন এখানে। ছোট ছোট পুতুল, বিভিন্ন প্রাণী বা ফুলের প্রিন্ট করা হালকা গোলাপি, ধূসর, বাদামি, ঘিয়ে, হলুদ রঙের ঘুমানোর পোশাক বেশ জনপ্রিয় বলে জানিয়েছে বিক্রয়কর্মীরা।
নবজাতকের জন্য মা-বাবা নিজেদের পছন্দমতো ঘুমানোর পোশাক কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে গুরুত্ব দেন শিশুর আরামকে। রঙের ক্ষেত্রে কিছুটা হালকা হলেই ভালো। যেমনÑ বাদামি, ঘিয়ে, ধূসর, হালকা নীল রঙের প্রাধান্য বেশি দেখা যাচ্ছে। কার্টুন বা কমিক চরিত্রের নকশা করা পোশাক পরে ঘুমাতে ভালোবাসে কার্টুনপ্রিয় শিশুরা।
এ ছাড়া ঘুমানোর পোশাক আঁটসাঁট না হয়ে একটু ঢিলাঢালা হলেই শিশু বেশি আরাম পাবে। আর শীতকাল হলেও শিশুকে সিনথেটিক কাপড়ের ঘুমানোর পোশাক একেবারেই পরানো উচিত নয়। কারণ এখন নিয়মিত তাপমাত্রা বাড়ে আবার কমে, তাই শিশু ঘেমে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
যতœআত্তি
শক্তিশালী ডিটারজেন্ট ও ওয়াশিং মেশিন অর্গানিক কাপড়ের জন্য ভালো নয়। ধোয়ার জন্য কোমল ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন। এসব কাপড় ধোয়া ও শুকানোর আগে নির্দেশনা দেখে নিন। একেক কাপড় শুকানোর পদ্ধতি আলাদা। তবে বেশি তাপমাত্রা অর্গানিক কাপড়ের জন্য ভালো নয়। ছায়ায় শুকালে অরগানিক কাপড়ের রঙ ভালো থাকে।
অর্গানিক কাপড়ে যেহেতু বিষাক্ত উপাদান থাকে না। ফলে সহজেই তা পোকামাকড় ও ফাঙ্গাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। তবে এসব সমস্যা সমাধানে কাপড়ে প্রাকৃতিক লিকুইড কীটনাশক ব্যবহার করার পর পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে।