রেড মিট ভালোর চেয়ে মন্দ বেশি
ফিচার- কাজী তানজিলা মেহনাজ
- ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
স্তন্যপায়ী প্রাণীর গোশতকে বলা হয় রেড মিট। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং আয়রনের চমৎকার একটি উৎস হলো রেড মিট, তবে অতিরিক্ত রেড মিট খাওয়া যেকোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। আজ থাকছে রেড মিটের ভালো-মন্দ দিকগুলো।
প্রথমেই জেনে নেই রেড মিট কেন খাওয়া প্রয়োজনÑ
বাড়ন্ত বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য রেড মিট একটি অপরিহার্য খাবার। রেড মিট শরীরকে বেড়ে উঠতে এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। রেড মিট আয়রনে ভরপুর, এটি শরীরের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে যা রক্তে অক্সিজেন পৌঁছাতে সহায়তা করে এবং এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করে।
রেড মিট খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও রেড মিট খেলে শরীরের জিংকের চাহিদা মেটে। শুধু সাড়ে তিন আউন্স গরুর গোশত আপনার শরীরের এক দিনের প্রয়োজনীয় জিংকের ৩৪ শতাংশ চাহিদা মেটাতে পারে। রেড মিটের এমিনো এসিড আমাদের শরীরের মাংসপেশি মেরামত করে।
রেড মিটের ভিটামিন বি-১২ মানবদেহের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, রক্তের কোষ তৈরি করে এবং ডিএনএ উৎপন্ন করে।
রেড মিটে আছে ওমেগা-৩ যা আমাদের মস্তিষ্ককে ভালো রাখে, এতে আরো আছে ম্যাগনেসিয়াম যা কিডনি, লিভার ও ব্রেইন ভালো রাখে, হাড়ের শক্তি বাড়ায়।
রেড মিট নিঃসন্দেহে আমাদের সবার শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এই উপকারী খাবারটিই হয়ে উঠতে পারে আমাদের জীবনের জন্য ঝুঁকি। অতিরিক্ত রেড মিট আমাদের জন্য যেসব বিপদ ডেকে আনতে পারে তা হলোÑ
ধারণা করা হয় রেড মিট বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে কলোরেকটাল ক্যান্সার। গবেষণায় দেখা যায় অতিরিক্ত রেড মিট ও প্রসেসড ফুড খেলে একজন ব্যক্তির কলোরেকটাল ক্যান্সারের আশঙ্কা ২০- ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। সারা পৃথিবীতে যতগুলো কলোরেকটাল ক্যান্সারের কেস আছে, তার অর্ধেকেরও বেশি দেখা গেছে উন্নত দেশগুলোতে যাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকে রেড মিট। অতিরিক্ত রেড মিট খেলে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, ব্রেস্ট ও প্রোস্টেট ক্যান্সারও হতে পারে।
অনেক বেশি পরিমাণ রেড মিট খেলে তা শরীরের জন্য এতটাই ক্ষতিকর যে এর কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিসও হতে পারে।
হার্টের জন্যও অতিরিক্ত রেড মিট খাওয়া ক্ষতিকর। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রেড মিট রাখা মানে হলো প্রতিদিন আপনি আপনার শরীরে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে জায়গা দিচ্ছেন। এতে করে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে যার ফলাফল শুধু হাই ব্লাডপ্রেশারই না, এটা বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওভাসকুলার অসুখ, হার্ট-এটাক ও ব্রেইন স্ট্রোক পর্যন্তও গড়াতে পারে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি রিসার্চ টিম গবেষণা করে রেড মিটের সাথে অকালমৃত্যুর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। যারা সবচেয়ে বেশি রেড মিট খেয়েছে এবং নিয়মিত রেড মিট খেয়েও শারীরিক পরিশ্রম যেমন ব্যায়াম থেকে বিরত ছিল তারা ক্যান্সার ও কার্ডিওভাসকুলার রোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে, পরিণতিতে তাদের মধ্যে অকালমৃত্যুর হার বেশি দেখা গেছে।
কতটুকু রেড মিট খাওয়া যাবে?
প্রতি সপ্তাহে কতটুকু রেড মিট খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, একজন মানুষ প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৭০ গ্রাম রেড মিট খেতে পারবে। আরো ভালো হয় যদি এটাও দুই ভাগে খাওয়া হয়, এক বেলায় ৮৫ গ্রাম এবং আরেক বেলায় ৮৫ গ্রাম। আর প্রোটিনের জন্য শুধু রেড মিটের ওপর ভরসা না করে অন্যান্য উৎস থেকেও প্রোটিন খেতে হবে। যেমন : মুরগি, মাছ, ডাল।
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ক্যান্সার রিসার্চ অনুযায়ী, একজন মানুষের কোনোমতেই এক সপ্তাহে ৫১০ গ্রামের বেশি রান্না করা রেড মিট খাওয়া উচিত নয়। এই ৫১০ গ্রামও একবারে নয়, সর্বোচ্চ ৮৫ গ্রাম করে ছয় বারে খেতে হবে।
আমেরিকার রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান বনি টব ডিক্স বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের খাবারে গোশতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখছি, প্রতি সপ্তাহে বেশ কয়েকবার গোশত খেতে না পারার কোনো কারণই নেই। আমাদের সবার উচিত সপ্তাহে অন্তত ৩ বার ৩ আউন্স (৩ আউন্স = ৮৫ গ্রাম) রেড মিট খাওয়া। তবে বনি টব ডিক্স সপ্তাহে একদিন সবাইকে গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেন।
কেমন রেড মিট খাওয়া উচিত
রেড মিট বেছে নেয়ার সময় চেষ্টা করুন যেন তা হয় পাতলা করে কাটা, এবং যতটা সম্ভব চর্বিমুক্ত। গোশত ও চর্বির অনুপাত হতে হবে ৯২ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ। মানে ৯২ শতাংশ গোশত ও ৮ শতাংশ চর্বি, চর্বির অনুপাত কম হলে চলবে কিন্তু এর বেশি যেন না হয়। গোশত কাটার সময় অতিরিক্ত তেল-চর্বি কেটে বাদ দিয়ে দিতে হবে।
যে রেড মিট একদমই খাওয়া যাবে না
যদিও সপ্তাহে ছয়বার পর্যন্ত রেড মিট খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ, বিশেষজ্ঞরা যে গোশত খাওয়ার অনুমতি আমাদের একদমই দেন না তা হলো প্রসেসড মিট। যেমনÑ সসেজ, নাগেটস, সালামি, বেকন ইত্যাদি। প্রসেসড গোশত প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম, ফ্যাট ও নাইট্রেট আছে কোলন ক্যান্সার ও স্টমাক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।