১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দীর্ঘ দিন মহাকাশে আটকে সুনিতা উইলিয়ামস, গুরুতর অসুস্থ

দীর্ঘ দিন মহাকাশে আটকে সুনিতা উইলিয়ামস, গুরুতর অসুস্থ - সংগৃহীত

গত পাঁচ মাস ধরে মহাকাশযানের ছোট্ট গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ সুনিতা উইলিয়ামসের দুনিয়া। এক দিন এক দিন করে মহাকাশে ১৫০ দিন পার করে ফেলেছেন সুনিতা ও তার সঙ্গী বুচ উইলমোর। সম্প্রতি নাসার পক্ষ থেকে সুনিতার যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে তার জন্য উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্ববাসীর।

সময় যত এগোচ্ছে, বাড়ছে আশঙ্কাও। দীর্ঘ দিন ধরে মহাকাশে আটকে থাকায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে সুনিতা ও বুচের।

যদিও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বার বার দাবি করেছে, তাদের প্রাণের ঝুঁকি নেই।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সুনিতার যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা গেছে, এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোচরের স্বাস্থ্যের অবনতি লক্ষ্য করার মতো। এই পাঁচ মাসে তার ওজন এতটাই কমেছে যে সুনিতাকে অত্যন্ত শীর্ণকায় লাগছে। দীর্ঘায়িত মহাকাশ সফরের কারণে এই শারীরিক অবনতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে নাসারও।

সুনিতার স্বাস্থ্যের ওপর কড়া নজর রাখছে নাসা। মূলত আট দিনের নির্ধারিত মহাকাশ সফরের পরিধি বেড়ে পাঁচ মাসে দাঁড়িয়েছে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে। এই অভিযানের সাথে নাসার যেসব কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত তারাও সুনিতার শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে চিন্তিত বলে জানা গেছে।

তার ওজন দ্রুত স্থিতিশীল করা দরকার এবং এই মুহূর্তে সুনিতাদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে মনে করছেন নাসার এক কর্মকর্তা। তিনি এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

গত ৫ জুন ফ্লোরিডা থেকে সুনিতাদের নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল বোয়িং স্টারলাইনার। গন্তব্য ছিল মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন। ওই সময় সুনিতার ওজন ছিল ৬৩ কেজি।

দিন যতই গড়িয়েছে ওজন ক্রমেই কমেছে সুনিতার। মহাকাশে ওজন স্থিতিশীল রাখতে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে হয় মহাকাশচারীদের।

শুধুমাত্র ওজন বজায় রাখার জন্য মহাকাশ সফরের সময় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার ক্যালোরির খাবার খেতে হয় নভোচরদের। সেই পরিমাণ খাবার শরীরকে না দিলে শরীর ভাঙতে শুরু করে ও দ্রুত ওজন কমতে থাকে।

অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করে পেশী এবং হাড় শক্তিশালী রাখতে মহাকাশচারীদের প্রতিদিন দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করতে হয়।

সুনীতার সাম্প্রতিক ছবিগুলো প্রকাশ্যে আসার এক মাস আগেই নাসার চিকিৎসকেরা তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছিল। তারা সুনিতার ওজন কমা নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত ছিলেন।

নাসার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মহাকাশ ভ্রমণের সময় বিপাকের পরিবর্তনের কারণে পুরুষ নভোচরদের তুলনায় দ্রুত পেশী ক্ষয় অনুভব করেন নারী মহাকাশচারীরা।

শরীরের ওপর অভিকর্ষের নিরবচ্ছিন্ন টান না থাকায় মহাকাশে মানবদেহের পেশী ও হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। দু’সপ্তাহ পরেই পেশীর ঘনত্ব ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ছয় মাস থাকলে তা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

খুব বেশি দিন মহাকাশে থাকলে দ্রুত হারে কমতে থাকে লাল রক্তকণিকার পরিমাণ। সেক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে রক্তাল্পতার মতো শারীরিক সমস্যাও।

গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকাশে থাককালীন প্রতি সেকেন্ডে দু’লাখের বদলে তিন লাখ লোহিত কণিকা ধ্বংস হয়ে যায় নভোচরদের।

নাসা জানিয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুনিতাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। নতুন করে একটি মহাকাশযান পাঠানো হবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে (আইএসএস)। তত দিন সুনিতারা সেখানেই থাকবেন।
ফেব্রুয়ারিতে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের ‘ক্রু ড্রাগন’ মহাকাশযানের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

নাসার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমান সুনিতা ও বুচ। তাদের ওজন যাতে না কমে যায় তার জন্য পুষ্টিকর খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নিজের শারীরিক সমস্যা নিয়েই অবশ্য মোটেই চিন্তিত নন সুনিতা। কিছু দিন আগে মহাকাশ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন সুনিতারা। সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর তারা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, মহাকাশই তাদের ঘর। সেখানে থাকতে তাদের ভালোই লাগছে।

এমনকি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই নিজের ৫৯তম জন্মদিন কাটান সুনিতা। গত সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে পালন করেছেন নিজের জন্মদিন। তবে আয়োজন বলতে নাসার দেয়া বিশেষ কাজ করে জন্মদিন কেটেছে সুনিতার।

পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে আইএসএসে রয়েছেন সুনিতারা। সেখানে বসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তিনি। সেই ব্যবস্থা করেছে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। ১৯৯৭ সাল থেকে মহাকাশে বসে মার্কিন ভোটে অংশ নিতে পারেন দেশটির নাগরিক-মহাকাশচারীরা। ওই বছর টেক্সাসের আইনসভা একটি বিল পাশ করেছিল, যাতে নাসার মহাকাশচারীরা মহাকাশে বসেই ভোট দিতে পারেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement