জমজম কূপের পানি কেন এতে গুরুত্বপূর্ণ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৪ জুন ২০২৪, ১৪:৩০
সারাবিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম জমজম কূপের পানিকে ‘অত্যন্ত পবিত্র’ বলে মনে করেন।
সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদুল হারামের ভেতরে এই জমজম কূপটি অবস্থিত। মুসলিমদের কাছে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত কাবাঘরের মাত্র ২০ মিটার দূরে এর অবস্থান।
প্রতিবছর যে লাখ লাখ মুসলিম হজ বা ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে যান তাদের বেশিভাগই জমজম কূপের পানি নিয়ে দেশে ফেরেন।
হজ পালন করে এসেছেন অথচ জমজম কূপের পানি আনেনি এমন মানুষ বেশ বিরল।
শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়–স্বজনদের মধ্যে এই পানি বিতরণের রেওয়াজ দেখা যায়। তাদের প্রত্যাশা এই পানি পান করলে বিপদ, রোগ কিংবা যে কোনো অকল্যাণ দূর হবে।
কিন্তু মুসলিমদের কাছে কেন জমজম কূপের পানি এতে গুরুত্বপূর্ণ? সেটির কিছু ঐতিহাসিক দিক রয়েছে।
জমজম কূপের ইতিহাস
মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, হাজার হাজার বছর আগে নবী হযরত ইব্রাহিম আ:-এর স্ত্রী হযরত হাজেরা ও ছেলে ইসমাইল আ:-এর পানির তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আল্লাহ এই কূপটি সৃষ্টি করেছিলেন।
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের সুরা ইব্রাহিমে এই কূপটি সৃষ্টির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া ইসলামের বিভিন্ন ইতিহাসের বইয়ে এর গল্পটি তুলে ধরা হয়েছে।
ইমাম বুখারি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ৮৬০ সালে ছয় খণ্ডের হাদিস সংকলন করেন, যেটি সহিহ আল বুখারি হিসেবে পরিচিত।
ইমাম বুখারি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস সহিহ বুখারিতে এই কূপের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।
এতে বলা হয়, ইব্রাহিম আ: আল্লাহর নির্দেশে তার স্ত্রী হাজেরা এবং ছেলে ইসমাইল আ:-কে মক্কায় কাবা ঘরের কাছে নিয়ে যান। তখন মক্কা অনাবাদী মরুভূমি ছিল। সেখানে কোনো মানুষ ছিল না, এমনকি পানির ব্যবস্থাও ছিল না।
সহিহ আল বুখারি হাদিসের বর্ণনা মতে, আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তার ওপর বিশ্বাস রেখে তাদের কিছু খেজুর ও পানি দিয়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে রেখে চলে যান ইব্রাহিম আ:।
এই গ্রন্থে নবী ইব্রাহিম আ: এবং তার স্ত্রী হযরত হাজেরার মধ্যে কিছু কথোপকথন তুলে ধরা হয়।
সেখানে হাজেরা তার স্বামী নবী ইব্রাহিম আ:-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আমাদেরকে এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন যেখানে না আছে কোনো সাহায্যকারী আর না আছে কোনো ব্যবস্থা।’ কিন্তু ইব্রাহিম তার দিকে তাকাননি।
সবশেষে হাজেরা প্রশ্ন করেন, এর আদেশ কি আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন? উত্তরে ইব্রাহিম আ: হ্যা বললে ফিরে আসেন হাজেরা। এমনটাই বর্ণনা করা হয়েছে সহিহ আল বুখারি হাদিসে।
তবে কয়েক দিনের মধ্যে তাদের এ খাবার শেষ হয়ে যায়। শিশু ইসমাইল পানির তৃষ্ণায় কান্না শুরু করে। তার মা হাজেরা পানির খোঁজে এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন এবং একইসাথে আল্লাহর সাহায্য চান।
তিনি পানির খোঁজে মরিয়া হয়ে দুই পাহাড় সাফা এবং মারওয়ায় সাতবার দৌড়াতে থাকেন।
সহিহ আল বুখারি হাদিসে আরো বর্ণনা করা হয়েছে, মারওয়া পাহাড়ে একজন ফেরেশতাকে দেখতে পেলেন। সেই ফেরেশতা জিবরাইল পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটিতে আঘাত করছিল তখন ঝর্ণার মতো পানি বের হতে লাগলে।
আরেকজন ফার্সি চিন্তাবিদ ও ইসলামিক পন্ডিত ইমাম ইবনে জারির আল তাবারি তার লেখা ‘তারিখু তাবারি’ র প্রথম খণ্ডে এ বিষয়ে উল্লেখ করেন।
ইমাম ইবনে জারির আল তাবারি লিখেন, হাজেরা যখন শিশু ইসমাইলের কাছে আসেন তখন সে তৃষ্ণায় পা দিয়ে মাটি সরাচ্ছিল। ফেরেশতা জিবরাইল হাজেরার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে ইব্রাহিমের সন্তানের মা বলে পরিচয় দেন।
একইসাথে ‘তিনি কার ভরসায় আপনাদের রেখে গেলেন?’ প্রশ্নে হাজেরা বলেন, ‘আল্লাহর ওপর ভরসা করে রেখে গেছেন।’ এরপর জিবরাইল বলেন, ‘তাহলে তো তার ভরসাতেই রেখে গেছেন, যিনি যথেষ্ট।’ এরপর ইসমাইল মাটিতে পা দিয়ে আঘাত করলে জমজমের পানি প্রবাহিত হয়।
ইমাম ইবনে জারির আল তাবারি বর্ণনা দেন, ‘হাজেরা লক্ষ্য করেন যে স্থানে ইসমাইল আঘাত করছে সে স্থান থেকে পানি বের হচ্ছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করে তিনি ছেলে ইসমাইলকে পানি পান করান।’
হাজেরা তখন পানি শেষ হয়ে যায় কিনা এমন আশঙ্কা করেন। এ আশঙ্কায় এর চারদিকে বালি ও পাথর দিয়ে বাঁধ দেন। ইব্রাহিম আ:-এর স্ত্রী ও সন্তানরা যখন মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত ও অসহায় অবস্থায় পড়ে ছিলেন, তখন এই পানিই তাদের প্রাণে বাঁচিয়েছিল বলে মনে করা হয়।
সৌদি আরবের জিওলজিক্যাল সার্ভের অধীনে একটি জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, জমজম শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে জম জম শব্দ-গুচ্ছ থেকে। এর অর্থ ‘প্রবাহ বন্ধ করা’।
ঝর্ণার পানি ধরে রাখার জন্য পানি যাতে পড়ে না যায় তাই হাজেরা বারবার এই শব্দ উচ্চারণ করছিলেন। পরবর্তীতে ঝর্ণাটি একটি কূপে রূপান্তরিত হয়। আর জমজম কূপ নামকরণ করা হয়।
ওই সময় জমজমের এই পানি দেখেই জুরহুম গোত্রের একদল অধিবাসী সেখানে বসতি স্থাপন করে। কূপটিকে ঘিরে মরুভূমিতে চলাচলকারী কাফেলার জন্য বিশ্রামের জায়গায় পরিণত হয়।
পরবর্তীতে আল্লাহর ঘর হিসেবে পরিচিত কাবা ঘর পুনর্নির্মাণে ফিরে আসেন ইব্রাহিম আ:। এটি মূলত প্রথম নবী আদম আ:-এর সময় নির্মিত বলে বিশ্বাস করা হয়।
এটি মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় স্থান। অর্থাৎ মক্কা নগরী জনবসতিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম উপলক্ষ ছিল এই জমজম কূপটি। কাবাঘরটি এখন পবিত্র মসজিদ আল হারামের মধ্যে অবস্থিত। কাবাঘরের কাছে পূর্ব কোণে ২০ মিটার দুরে এই জমজম কূপটি অবস্থিত।
এই কূপকে ঘিরে ধীরে ধীরে অনুর্বর মরুভূমির মক্কা একটি বাণিজ্য নগরীতে পরিণত হয়।
মুসলিমদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
ইসলামের ইতিহাসবিদরা বলছেন, আল্লাহর নির্দেশে অনুর্বর মরুভূমিতে ইব্রাহিম শিশুপুত্রসহ মা হাজেরাকে রেখে আসেন। এর উদ্দেশ্য হলো এর মাধ্যমে মক্কা জায়গাটা আবাদ হবে, কাবাঘর পুনর্নির্মাণ হবে, জমজম চালু হবে, কাবাঘরে মানুষ হজ করতে আসবে। মূলত এর অংশ হিসেবে জমজম কূপের সৃষ্টি হয়।
তবে এটি এতে গুরুত্বপূর্ণ কেন মুসলিমদের কাছে?
বাংলাদেশের ইসলামি-আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর আল্লাহর আদেশে বিশ্ববাসীকে হজের দাওয়াত দিয়েছিলেন ইব্রাহিম আ:। হজের ইতিহাসের সাথে জমজমের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তবে হজের সময় জমজম কুয়ার কাছে উপস্থিত হওয়া বা পানি পান করা হজের আহকাম, আরকান বা ফরজ- ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত নয়। হজের অংশ হিসেবে তাওয়াফের পরে সাঈর আগে হাজিরা মহানবী সা:-এর সুন্নত হিসেবে পানি পান করেন।’
মুসলিম ইতিহাসবিদ ইমাম তাবারানির ‘আল মুজামুল কাবির’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, নবী মুহাম্মদ সা: নিজেই জমজমের পানিকে শ্রেষ্ঠ পানি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন- ‘জমজম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্য ও রোগ থেকে মুক্তি।’
ভিসি রশীদ বলেন, ‘এটি আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র কুয়া পৃথিবীতে, আর নেই। ফলে মুসলিমরা বিশ্বাস করে আল্লাহর রহমতের এ পানি খেলে রোগ-বালাই, বিপদ-আপদ মুক্ত হবে। তাই এটি হাজিরা নিয়ে আসে ও বিশ্বাস থেকে পান করেন। এসব কারণে জমজমের গুরুত্ব এতে বেশি। এমনকি হাদিসেও এর ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।’
কূপটির বৈশিষ্ট্য ও রক্ষণাবেক্ষণ
‘সৌদি গেজেট’ সংবাদপত্র অনুযায়ী, জমজমের কূপটিকে বিশ্বের ‘প্রাচীনতম কূপ’ বলে ধারণা করা হয়। কারণ গত পাঁচ হাজার বছর ধরে এখান থেকে একটানা পানি পাওয়া যাচ্ছে।
সৌদি আরবের জিওলজিক্যাল সার্ভের জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার এই পানির কুয়োর মান, গভীরতা, অম্লতার মাত্রা বা তাপমাত্রার দিকে নিয়মিত নজর রাখে।
জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার এই কূপের পানি সরবরাহ ও বণ্টন ব্যবস্থা পরিচালনা করে।
এটি মক্কা ও মদিনায় ফিল্টারিং ও স্টোরেজ প্ল্যান্টের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের গুনমানের নিশ্চয়তা বিধান করে।
এটি ৩০ মিটার গভীর। তারপরেও এটি প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে ১৮ লিটার পানি পাম্প করতে পারে।
আরব নিউজ সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ৭০০ মিলিয়ন সৌদি মুদ্রা ব্যয় করে জমজম কূপের পানি উত্তোলন, তদারকি ও বিতরণ (কেপিজেড ডব্লিউ) প্রকল্প করেছে।
মসজিদুল হারামের পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে কুদাইয়ের কেপিজেড ডব্লিউ প্ল্যান্টে ভূগর্ভস্থ পাইপের সাহায্যে পানি সরবরাহ করা হয়। এখানে পানি পরিশোধন করে জীবানুমুক্ত করা হয়।
পরে দু’টি জলাধারে পানি সরবরাহ করা হয়। প্রথমটি কুদাইতে যার ধারণক্ষমতা ১০ হাজার ঘনমিটার। একইসাথে মক্কার মসজিদে পানির ফোয়ারাগুলোতে সরবরাহ করা হয়।
কুদাই থেকে মদিনার বাদশাহ আবদুল আজিজ সাবিল জলাধারে প্রতিদিন ট্যাঙ্কার ট্রাকের একটি বহর চার লাখ লিটার পর্যন্ত পানি পরিবহন করা হয়। এর ধারণক্ষমতা ১৬ হাজার ঘনমিটার। এখান থেকে নবীর মসজিদে পানি সরবরাহ করা হয়।
পরিবহনের সময় পানি যাতে কোনোভাবে দূষিত না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়।
জমজম কূপ সৃষ্টির পর থেকে বালু ও পাথর দিয়ে ঘেরা ছিল। দড়ি এবং বালতি দিয়ে এই কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করা হতো।
খনন বা সংস্কার কাজ
জুরহুম গোত্র সেখানে বসতি গড়ার পর ইসমাইল আ: সেই গোত্রের এক নারীকে বিয়ে করেন। একটা সময় এই গোত্র অন্যদের এই কূপের পানি ব্যবহারে বাধা দিলে মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়। পরে একটা সময় ময়লায় আবদ্ধ হয়ে এই কূপটি অব্যবহৃত ও অনাবিষ্কৃত থাকে বলে ইসলামের ইতিহাস গবেষকরা বলেন।
ইসলামি গবেষকদের মতে, পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদ সা: এর দাদা আবদুল মুত্তালিব দীর্ঘদিন এই কূপের সন্ধান করেও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে তিনি স্বপ্নে এর সন্ধান পান।
বাংলাদেশের ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মাওলানা মো: আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলেন, ‘জমজম কূপ একসময় ময়লা আবর্জনায় কালের গ্রাসে হারিয়ে যায়। রাসুল সা:-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব দীর্ঘদিন খুঁজেও পাচ্ছিলেন না। একদিন তাকে স্বপ্নে দেখানো হলো প্রিয় সন্তানকে কোরবানি দিলে এর সন্ধান দেয়া হবে। তার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিল রাসুল সা:-এর বাবা আব্দুল্লাহ। তার অন্য ছেলেরা এই ছেলেকে কোরবানি দিতে নিষেধ করে, ১০০ উট কোরবানি দেয়ার কথা বলে। এরপর ১০০ উট কোরবানি দেয়ার কথা বললে আল্লাহ আবার জমজম কূপের পানি বের হওয়ার নির্দেশ দেন। সেই থেকে এটির পানির প্রবাহ হাজার হাজার বছর ধরে চলছে।’
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে।
এটিতে বলা হয়েছে, ওই সময় মক্কা ছিল জুরহুম গোত্রের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাদের পাপের কারণে তাদের ওপর অভিশাপ নেমে আসে। হারিয়ে যায় জমজম কুয়া। ফলে তারা মক্কা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
নবী মুহাম্মদ সা:-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব পরবর্তীতে স্বপ্নে পেয়ে এটি পুনরায় আবিষ্কার করেন। এরপর থেকে এটির অস্তিত্ব বহমান ছিল। কারণ তখন মুহাম্মদ সা: মক্কায় ইসলামের অভয়ারণ্য তৈরি করেছিলেন।
এই আর্টিকেলে বলা হচ্ছে, যদিও মক্কায় এই জমজম কূপই একমাত্র নয়। কাবার অভ্যন্তরে একটি শুষ্ক গর্তও কখনো কখনো ‘কাবার কূপ’ নামে পরিচয় দেয়া হয়।
পরে বিভিন্ন সময়েও এটির সংস্কার করেছিল রক্ষণাবেক্ষণে থাকা তৎকালীন সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে কূপটির ব্যাপক সংস্কার করে।
হজের সাথে কূপের সম্পর্ক কী?
হজ পালনের কোনো প্রক্রিয়ার সাথে জমজম কূপের পানির কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, হজ পালনের সময় এটি একটি অনুষঙ্গ মাত্র। কিন্তু হজ পালনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশের ইসলামি-আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘এটা হজের একটা অনুষঙ্গ। হজের তিনটি ফরজ, পাঁচটি ওয়াজিব। এর মধ্যে জমজমের কোনো বিষয় নেই। মসজিদুল হারামের ভেতরে সব জমজমের পানি। তাই হজ পালনের সময় তৃষ্ণা মেটাতে এ পানি পান করতে হয়। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন এটা আল্লাহর কুদরতের পানি। মূলত হজ পালনের সাথে এ কুয়ার সরাসরি সম্পর্ক নেই। হজ্জের ইতিহাসের সাথে জমজমের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ ইব্রাহিম আ:, হাজেরা রা:, ইসমাইল আ:-এর কারণে জমজম সৃষ্টি হয়।’
জমজমের পানির মান কেমন?
সৌদি আরব থেকে পর্যটকরা পানি পরিবহন করতে পারলেও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য রফতানি করা যায় না।
সৌদি কর্তৃপক্ষ জানায়, জমজম কুয়া তদারকি করার জন্য এবং পানির গুণমান বিশ্লেষণ করার জন্য সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভের অধীনে একটি স্বতন্ত্র সেন্টার- জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট জুহাইর নওয়াব বলেন, ‘আমাদের বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন-জমজমের অবস্থা তদারকি করে। প্রতিদিন আমরা পানির স্বাদ পরীক্ষা করার জন্য তিনটা নমুনা সংগ্রহ করি। এটা দূষিত নয় বলে এতে প্রমাণিত। একইসাথে বোতলজাত করার আগে জীবাণুমুক্ত করতে আমরা আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করি।’
যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, জমজম কুয়ার পানি রোগ-জীবাণুমুক্ত। এই পানিতে সিরাম ইউরিক এসিড স্বাভাবিক মাত্রার চেয়েও কম বলে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। একইসাথে এটি লিভারের জন্যও নিরাপদ। মানব স্বাস্থ্যের জন্য এই কুয়ার পানি নিরাপদ এবং উপকারী প্রভাব রয়েছে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
একই ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জমজমের পানি নিয়ে আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
পানির আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সব প্যারামিটার সঠিক মাত্রায় রয়েছে জমজমের পানিতে। এতে গ্রহণযোগ্য রাসায়নিক প্রোফাইল রয়েছে বলে বলা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা