২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

দীর্ঘ কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক ‘সাতৈর শাহী মসজিদ’

সাতৈর শাহী মসজিদ। - ছবি : সংগৃহীত

ঐতিহাসিক ‘সাতৈর শাহী মসজিদ’। চতুর্থদশ শতাব্দীতে নির্মিত সুপ্রাচীন এ মসজিদ ফরিদপুর এলাকার ইসলামী ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন। এটি বর্তমানের ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের সাতৈর গ্রামে অবস্থিত। সুলতানি আমলের সতেরোটি টাকশাল শহরের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল ভূষণা, এই ভূষণা রাজ্যের সুপ্রাচীন নৌবন্দর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল মধুমতি নদীর তীরবর্তী সাতৈর ও তার আশপাশের অঞ্চল। এজন্য সাতৈর এবং এখানে অবস্থিত ‘সাতৈর শাহি মসজিদ’ সেকাল থেকেই ভৌগলিক ও ঐতিহাসিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া মসজিদের পাশ ঘেঁষেই চলে গেছে ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড বা শেরশাহ সড়ক।

বর্গাকার এই মসজিদটি বাইরের দিক থেকে ১৭.৮ মিটার এবং ভেতরের দিক থেকে ১৩.৮ মিটার। কথিত আছে, ভূমি থেকে মসজিদটির মেঝে প্রায় ০.৭৬ মিটার উঁচু ছিল, বর্তমানে এটি ০.৬ মিটার উঁচু। মোট ৯টি কন্দ আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির ভেতরে পাথরের তৈরি চারটি স্তম্ভ, দেয়ালে এবং দেয়ালের গা সংলগ্ন মোট ১২টি পিলার রয়েছে। গম্বুজগুলো পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। আরব দেশীয় মসজিদগুলোর মতো মোট তিনটি মেহরাব আছে, যার কেন্দ্রটি তুলনামূলকভাবে বড়। তবে এখন মসজিদটি সেই পুরনো আকৃতিতে নেই; সংস্কার ও পরিবর্ধনের ফলে তার মূল অবকাঠামো কিছুটা ঢেকে গেছে।

ঐতিহাসিক এ মসজিদের নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে; কেউকেউ এটাকে মোগল আমলের অনন্য কীর্তি মনে করেন। এও বলা হয়- এটি বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সমসাময়িককালে নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সব থেকে নির্ভরযোগ্য মনে করা হয় ভূষণা রাজ্যের ইতিহাস গ্রন্থের রচয়িতা কবি সমর চক্রবর্তীকে। ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি মসজিদটিকে সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের গোড়াপত্তনকৃত হোসেন শাহী রাজবংশের শাসন আমলেই (১৪৯৪ থেকে ১৫৩৮ খৃষ্টাব্দ) নির্মিত স্থাপনা বলে মত দিয়েছেন। ধারণা করা হয়- আলাউদ্দীন হোসেন শাহ তার পীরের সম্মানে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির মিনারের গঠনশৈলী ও ইটের আকার দেখে বিশেষজ্ঞমহল এটিকে সে আমলের ইমারত হিসেবে-ই শনাক্ত করেছেন।

জানা যায়, ভূষণা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর সাতৈরে এক সময় অনেক অলি-আল্লাহ ও দরবেশের বসবাস ছিল। তারা আরব অঞ্চল থেকে এখানে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন। বর্তমান মসজিদটির চত্বর ও আশপাশ এলাকায় অন্তত ১২ জন ওলির সমাধি আজও এখানে বিদ্যামান। ‘সাতৈর’ এর নামকরণের কারণও তা-ই বলে; অলি-আউলিয়াদের বসবাসের জন্য এ এলাকার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘শাহে তুর’, ফার্সি এ শব্দ যুগলের অর্থ অলির পাহাড়। এই ‘শাহে তুর’-ই এক কালে সাতৈরে পরিণত হয়।

সাতৈরে আসা বুজুর্গদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন-হজরত শায়খ শাহ আলী ছাতুরী রহ:। শায়খ ছাতুরী রহ: চতুর্দশ শতকে এদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আগমন করেন বলে অনুমিত হয়। ইসলাম প্রচারের জন্য তাকে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা দেন এবং তার কামালিয়্যাত ও ত্যাগী জীবনযাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে সুলতান তার কাছে মুরিদ হন বলে অনেক ঐতিহাসিক দলিল পেশ করেছেন।

১৫১৯ সালে সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের ইন্তেকাল হয়। বাংলার সিংহাসনে বসেন তার পুত্র নসরত শাহ (শাসনামল: ১৫১৯-১৫৩২)। তিনিও পিতার মতো ধর্মপরায়ন সুলতান ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, পিতার পীরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি-ই সাতৈর শাহি মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদটি নির্মাণ সম্পর্কে স্থানীয়ভাবে আরো অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে; নির্মাণের পর এ এলাকা হিন্দু রাজারা দখলে নিলে এটি সম্পূর্ণ পরিত্যাক্ত হয়ে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে নতুনভাবে মসজিদটি আবিস্কৃত হলে স্থানীয়রা মনে করেন, মসজিদটি আল্লাহর হুকুমে এক রাতে মাটি ফেড়ে গজিয়ে উঠেছে। কেননা, চারপাশের দেয়ালগুলো তুলনামূলক একটু নিচু ও মাটিতে দেবে ছিল।

এ বিশ্বাস থেকে অনেকে এটি তীর্থ স্থান মনে করে এবং নানা ধরনের মানত নিয়ে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখনো অসংখ্য মানুষ আসে। এ ছাড়াও মসজিদটি নিয়ে বেশ কিছু কুসংস্কার চালু আছে; যেমন-মসজিদের ভিতরের খুঁটি চারটি বিভিন্ন সময়ে হাসি-কান্না করে, মসজিদের পিলারগুলোর কাছে যা আশা করা যায় তাই পাওয়া যায়, মসজিদের ইট বাড়িতে রাখলে উঁইপোকা লাগে না, মসজিদের ধুলা গায়ে মাখলে যে কোনো ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মসজিদে এসে মানত করলে নিঃসন্তানদের সন্তান হয় ইত্যাদি।

তবে এলাকার আলেমরা এগুলোকে কুসংস্কার, মিথ্যা, বানোয়াট কাহিনী ও ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী বলে চিহ্নিত করেছেন। কয়েক দশক আগে এখানে চৈত্র মাসের শুরুতে মেলা বসতো। শিরকের ছড়াছড়ি দেখে তারা মেলাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন দেওবন্দী আলেমদের তত্ত্ববধানে পরিচালিত মসজিদ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার অনেকটাই কমে আসছে।


আরো সংবাদ



premium cement
বানিয়াচংয়ে দানবক্সের টাকা নেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক আইনের শাসন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাসূলের সা. আদর্শ অনুসরণ করতে হবে দেবীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিহত জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বাগাঁথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস শিক্ষা ও গণমাধ্যমসহ বেশ কিছু সংস্কার কমিশনের পরিকল্পনা রয়েছে : নাহিদ ইসলাম ঢাবিতে গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের দাফন সম্পন্ন, বিচার দাবি বাংলাদেশে ‘অলিগার্ক’দের শিল্প কারখানার ভবিষ্যৎ কী দৌলতদিয়ায় ২৬টি অটোরিকশাসহ চোর চক্রের প্রধান গ্রেফতার ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়’ ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণের জন্য ইসরাইলে কারাগার! অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর ৭ দিনের রিমান্ডে

সকল