২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাথরুম করার ইসলামি বিধান

বাথরুম করার বিধান - ছবি : সংগ্রহ

জীব-জগতের প্রস্রাব-পায়খানা করার প্রক্রিয়া আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত নেয়ামত। বিশেষ করে সৃষ্টির সেরাজীব মানুষের জন্য মহা নেয়ামত। মানুষ সুস্থ থাকার জন্য স্বাভাবিকভাবে নিয়মিত প্রস্রাব-পায়খানা হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হবে, ইসলাম তার আদব বা শিষ্টাচারও বলে দিয়েছে। নিচে এর সংক্ষিপ্ত সুন্নত-বিধান উপস্থাপন করা হলো-

১. প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় মাথা ঢেকে রাখা। (বায়হাকি, হাদিস নং ৪৫৬) একেবারে খালি মাথায় টয়লেটে যাওয়া ঠিক নয়। তখন কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে রাখার কথা সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়িন থেকে প্রমাণিত। উরওয়া রহ: তাঁর পিতা বিখ্যাত সাহাবি যুবায়ের রা: থেকে বর্ণনা করেন, একবার আবু বকর সিদ্দিক রা: লোকদের উদ্দেশে খুতবা দিতে গিয়ে বলেন, হে মুসলমানরা! তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে লজ্জা বজায় রাখ। ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই আমি যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য লোকালয় থেকে দূরে যাই, তখন আমি আমার রবের প্রতি লজ্জাবনত হয়ে মাথা ঢেকে নিই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং ১১৩৩)
২. জুতা-সেন্ডেল পায়ে দিয়ে টয়লেটে যাওয়া। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ : ১৮৫/ কানযুল উম্মাল, হাদিস নং ১৭৮৭২)
৩. টয়লেটে প্রবেশের আগে এই দোয়া পড়া- বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবায়িস। অর্থ হে আল্লাহ! দুষ্টু পুরুষ জিন এবং দুষ্ট মহিলা জিনদের অত্যাচার থেকে তোমার পানাহ চাই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং ৫)

৪. দোয়া পড়ার পর টয়লেটে আগে বাম পা প্রবেশ করানো। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩২)
৫. কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসা। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ১৪৪) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, পায়খানা-প্রস্রাব করার সময় কিবলামুখী হয়ে বা কিবলা পেছনে রেখে বসবে না। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন টয়লেটে আসে, তখন সে যেন কিবলামুখী না হয়, বা কিবলার দিকে পিঠ না দেয়। (সহিহ বুখারি : ১/৬৬, হাদিস নং ১৪৪)
৬. যথাসম্ভব বসার নিকটবর্তী হয়ে ছতর খোলা এবং বসা অবস্থায় প্রস্রাব-পায়খানা করা, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা। (নাসায়ি : হাদিস নং ২৯/ তিরমিজি : হাদিস নং ১৪)
৭. প্রস্রাব ও নাপাক পানির ছিটা থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকা। (বুখারি শরিফ : হাদিস নং ২১৮)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তোমরা প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করো। কেননা বেশির ভাগ কবরের আজাব এ কারণেই হয়ে থাকে। (দারাকুতনি : হা/৪৫৩, হাকেম পৃ. ১/১৮৩)
৮. পানি খরচ করার আগে ঢিলা-কুলুখ (বা টয়লেট পেপার) ব্যবহার করা। (বায়হাকি : হাদিস নং ৫১৭) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মলত্যাগ করার পর তিনটি ঢিলা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। এরপর পানি দ্বারা ধৌত করবে। (ইবনে মাজাহ)

৯. ঢিলা ও পানি খরচ করার সময় বাম হাত ব্যবহার করা। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ১৫৪) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যখন তোমরা টয়লেটে যাবে, তখন লজ্জাস্থানকে ডান হাতে স্পর্শ করবে না এবং ডান হাতে শৌচক্রিয়া করবে না। (মুসলিম)।
১০. প্রস্রাবের ফোঁটা আসা বন্ধ হওয়ার জন্য আড়ালে সামান্য চলাফেরা করা। (ইবনে মাজাহ : হাদিস নং ৩২৬) তবে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু আচরণ না করা।
১১. যেখানে প্রস্রাব-পায়খানার জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই, সেখানে এমনভাবে বসা যেন ছতর নজরে না পড়ে। (আবু দাউদ : হাদিস নং ২)
১২. প্রস্রাবের জন্য নরম বা এমন স্থান খুঁজে নেয়া যেখান থেকে প্রস্রাবের ছিটা শরীরে বা কাপড়ে না লাগে। (আবু দাউদ : হাদিস নং ৩)

১৩. ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা। (সহিহ ইবনে খুযাইমা : হাদিস নং ৮৩)
১৪. ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (আবু দাউদ : হাদিস নং ৩২)
১৫. তেমনিভাবে প্রবল বাতাসের দিকে মুখ করে প্রস্রাব করা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, প্রস্রাব করার ইচ্ছা করলে, সে জন্য একটা উপযোগী স্থান খুঁজে নেবে। যেমন, পর্দার দিকে লক্ষ্য রাখবে এবং বাতাসের দিকে মুখ করে বসবে না। (আবু দাউদ)
১৬. অজু-গোসলের স্থানে বা স্থির পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, প্রবহমান নয়Ñ এমন স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না। যেমন-পুকুর, হাউজ ইত্যাদি। গোসলখানায় প্রস্রাব করবে না। কেননা, বেশির ভাগ সন্দেহ এর দ্বারাই সৃষ্টি হয়ে থাকে। (তিরমিজি)
১৭. প্রস্রাব-পায়খানার ক্ষেত্রে অন্যান্য আদব শিক্ষা দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, কোনো গর্তের মধ্যে প্রস্রাব করবে না। (আবু দাউদ) মলত্যাগের সময় কথা বলবে না। (মুসনাদে আহমাদ) পানির ঘাটে, রাস্তার মধ্যে, ছায়ার স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করবে না। (আবু দাউদ)
১৮. হাড্ডি, কয়লা, কাগজ, গাছের কাঁচা পাতা, খাদ্যদ্রব্য, শুকনো গোবর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা নিষেধ। (তিরমিজি)

১৯. প্রস্রাব করা অবস্থায় কেউ সালাম দিলে পবিত্রতা অর্জনের পর তার জবাব দেয়া মুস্তাহাব (যদি সালামদাতা উপস্থিত থাকে)। নতুবা প্রয়োজন সেরে এসে অজু বা তায়াম্মুম ছাড়াও জবাব দেয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ সা: সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করতেন। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
২০. বাইরে এসে এই দোয়া পড়া- গুফরানাকা আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনার হুকুমে প্রস্রাব-পায়খানা হয়ে যাওয়ায় যে স্বস্তি ও অফুরন্ত কল্যাণ লাভ হয়েছে, তার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতে না পারায় আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এর আরেকটি তাৎপর্য হলো, হে আল্লাহ! আপনার দয়ায় যেভাবে আমার দেহের ময়লা বের হয়ে স্বস্তি লাভ করেছি, তেমনি আমার যাবতীয় অসৎ কর্মের পাপ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (আবু দাউদ : হাদিস নং ৩০/ ইবনে মাজাহ : হাদিস নং ৩০১)
লেখক : তরুণ আলেম ও লেখক


আরো সংবাদ



premium cement