২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই : মিয়া গোলাম পরওয়ার

আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই : মিয়া গোলাম পরওয়ার - ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় হোটেল আর রহমান মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা আমির মো: আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জহুরুল হক সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (সাবেক এমপি), বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্র ইউনিট সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা আমির ডা. আব্দুর রহিম সরকার।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমির বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুল ওয়ারেছ, অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুস সালেক, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা সাইদুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি জনাব নুরুন্নবী প্রধান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য জনাব মো: সাইফুল ইসলাম মন্ডল, মো: ফয়সাল কবির, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি জনাব ওমর সানি আকন্দ, জেলা সেক্রেটারী ফেরদৌস সরকার রুম্মানসহ উপজেলা নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অর্জিত এ দেশকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে যারা মুক্ত করেছে সেই সকল শহীদদের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ। আমরা সর্ববস্থায় সেই সকল শহীদ পরিবারের পাশে আছি। আমাদের দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে এখন দেশকে নতুন করে গড়তে হবে। যারা শহীদ হয়েছেন তারা আমাদের জাতীয় বীর। শহীদ পরিবারের স্বজনদের চোখের পানি ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসে ফ্যাসিবাদের পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস পড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা গুলি চালিয়ে আমার দেশের ছাত্র হত্যা করে লাশে আগুনে পুড়িয়ে দেয় তাদের বিচার করতেই হবে। আমরা এই নির্মম, নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করে গণহত্যা চালিয়েছে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে, গুম করেছে দেশের মানুষ তাদের কোনোদিন ক্ষমা করবে না। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গা বাধিয়ে দেয়ার জন্য তারা অনেক চেষ্টা করেছে। অথচ তাদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশী হিন্দু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমাদের সকলকে একযোগে নতুন অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে হবে। ওরা আমাদের কথা বলার অধিকার কেঁড়ে নিয়েছিল আমাদের ভোটাধিকার কেঁড়ে নিয়েছিল।

ফ্যাসিবাদী সরকারের অত্যাচারী শাসক শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এই বাংলার মাটিতে স্বৈরাচারী হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে জনরোষে পড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

আবার ভারতে বসে বাংলাদেশের মাটিতে রেখে যাওয়া দাসদের নিয়ে নতুন করে স্বড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে শেখ হাসিনা।

এই ষড়যন্ত্র আপামর জনতাকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। বিগত ১৫ বছর যেভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জুলুম নির্যাতন ও গুম করেছে, হত্যা করেছে সেই স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের এমন নৃসংশ রাজনীতি এই বাংলার জনগণ আর কখনো মেনে নিবে না।

বর্তমান অন্তবর্তিকালীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত খুনি হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিচারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এতে শতভাগ সহযোগিতা করবে।’

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা আমাদের কাজে যেন বাধা তৈরি করতে না পারে। ছাত্রজনতার বিপ্লবের সময় আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা হাজার হাজার খুনের নেতৃত্ব দিয়েছে। নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে লাশ বিকৃত করছে। লাশ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী নেতাদের নামে মিথ্যা সাজানো বানোয়াট মিথ্যা এজাহার ও স্বাক্ষী, বাদি বানিয়ে বিচারের নামে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার কোনটির সাথে আমাদের নেতাকর্মী সম্পর্ক ছিল না। ছাত্রজনতার আন্দোলনে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শহীদের ঘটনা পুরো বিশ্বকে জাগিয়ে তুলছেন। সন্তান হারানো বাবা-মাই জানে কি হারিয়েছেন। আমরা সান্তনা দেই। কিন্তু তাদের হৃদয় জানে সন্তান হারানো কত বেদনা।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

মতবিনিময় সভা শেষ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্চ থেকে নেমে দর্শকসারিতে বসা শহীদ পরিবারের সদস্যদের কাছে যান। তাদের শান্তনা দেন এবং প্রত্যেক পরিবারে এক লাখ করে টাকা তুলে দেন তিনি। এর আগেও বিভিন্ন সময় এক লাখ করে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।

বিশেষ অতিথি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে কেবলমাত্র ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। ছাত্ররা এদেশের মানুষকে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে উদ্ধার করেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার আমাদের দুর্নীতিমুক্ত দুজন মন্ত্রীসহ মোট সাতজন নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে। সারা দেশে জামায়াতের ৪০০ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে। এই জালিম সরকার হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে চার বছরের শিশুকে হত্যা করেছে। অবশ্যই এদের বিচার করতে হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement