২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঝুঁকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ভাঙন আতঙ্কে ৩০ হাজার পরিবার

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় আতঙ্ক ও ভোগান্তিতে দিনপার করছেন হাজারো মানুষ। জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় পানিতে তলিয়ে যেতে পারে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। তাই দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন নীলফামারী ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে পাউবোর আওতাভুক্ত বেড়িবাঁধ ৩৫ কিলোমিটার। যা পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে ৭ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের দুই ধারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য টিনের চালার ঝুঁপড়ির বসতি। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০ হাজার পরিবারের বসবাস বাঁধের ভিতরে ও বাহিরে তিস্তার চর এলাকায়। দুর্যোগকালীন সময়ে বাড়ি ছেড়ে বেড়িবাঁধে অবস্থান নেন তারা। ভিটেমাটিহারা এসব মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

এদিকে বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে বাঁধের অনেক স্থান ভেঙে পড়েছে। আবার অনেক স্থান ধসে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। উজানের ঢলে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তিস্তার ভাঙনে ভিটেহারা সুরুজ্জামান মিয়া (৫২) নয়া দিগন্তকে জানান, তিস্তা নদীপাড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ঢালে তিনি পরিবার নিয়ে বাস করেন। পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। দুই বছর আগে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভিটেহারা হয় তার পরিবার। এখন তিস্তার পানি বাড়লেই তাদের আতঙ্কে দিন কাটে। কারণ, নদীতে পানি বাড়লেই বসতভিটা আবার ভেসে যাবে।

সুরুজ্জামান মিয়া নতুন করে ঘর তৈরি করতে পারলেও, দিনমজুর মোন্নাফ আলী, এরশাদ ও হাসনা বানুর পরিবারের ওই সুযোগ হয়নি। চোখের পলকে বাঁধ ভেঙে তাদের বসতভিটাসহ জমানো অর্থ পুরোটাই গিলে নিয়েছে তিস্তা। সেখানে এখন বিশাল গর্ত। পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ধারেই আত্মীয়ের বাড়িতে। সেই আশ্রয়টুকুও এখন আর নিরাপদ নয়।

জানা গেছে, সুরজ্জামান, মোন্নাফ আলী, এরশাদ ও হাসনা বানুদের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেস্বর গ্রামে। এলাকাটা ভারত থেকে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার প্রবেশ মুখ কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্টে ভারত-বাংলা যৌথবাঁধ লাগোয়া।

সুরুজ্জামান মিয়া জানান, ‘হঠাৎ উজানের ঢলে বেড়িবাঁধের সাথে তাদের বসতভিটাও ভেসে গিয়েছিল। তখন কোনোমতে গাছ আকড়ে ধরে বেঁচেছিলেন আছিয়া। পরে নতুন করে বালুর বাঁধ সংস্কার হয়। নতুন বাঁধের ভেতরে আবার বসতি গড়েছেন তারা। কিন্তু সেই বাঁধ এখনো ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। মজবুদ বাঁধ থাকলে ভয় থাকত না।

এদিকে, শুধু মোন্নাফ আলী, এরশাদ ও হাসনা বানুরা নয় তিস্তার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বেড়িবাঁধের ঢালে বাস করছেন উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার।

পাউবোর ডালিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ‘তাদের আওতায় ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দুর্যোগের সময় কোথাও ভাঙন দেখা দিলে তা মোকাবেলায় জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement