২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ত্রিমুখী বাধায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ব্লোকেড কর্মসূচি পণ্ড

- ছবি : নয়া দিগন্ত

পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের ত্রিমুখী বাধা ও হামলায় কোটা বিরোধী ছাত্রসমাজ পূর্ব নির্ধারিত বাংলা ব্লোকেড করতে পারেনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে আছে কোটা বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে মডার্ণ মোড়ে সড়ক অবরোধের জন্য ক্যাম্পাস থেকে বের হতে থাকলে ২ নম্বর গেটের সামনে তাদের প্রথমে বাধা দেয় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম। এ সময় প্রক্টরিয়াল টিমের সাথে শিক্ষার্থীদের সমস্যা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীমের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তারা ব্যানার কেড়ে নেয় এবং ধাওয়া দেয়। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা তৈরি হলে প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আধা ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

কোটা বিরোধী সাধারণ ছাত্রদের সমন্বয়কারী শামসুর রহমান সুমন জানান, ‘আমাদের পূর্ব নির্ধারিত অবরোধ কর্মসূচি ছিল। মিছিল শুরুর আগেই আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আন্দোলন না করার নির্দেশ দেন। তাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে ক্যাম্পাস থেকে আমরা কয়েক শ’ সাধারণ শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে মডার্ণ মোড়ের জন্য যাচ্ছিলাম। পথে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটেই প্রথমে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি আমাদের বাধা দেয়। পরে তাদের সামনেই ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালায়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আমাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে দেয়নি। তারা আমাদের ব্যানার কেড়ে নিয়েছে। আমরা খুব ভীতির মধ্যে আছি।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার দাবি, ‘ক্যাম্পাসে তারা মিছিল করতে পারবে। আমাদের কোনো বাধা নেই। তারাই আমাদের বলেছিল তাদের নেতৃত্ব সঙ্কট। তারা মিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধের দিকে যাচ্ছিল। প্রক্টর তাদের বাধা দিয়েছেন। কিন্তু তারা প্রক্টরের ওপর চড়াও হয়েছেন। তখন সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি, যেহেতেু এটা আদালত একটা রায় দিয়েছেন। সেজন্য আর এ নিয়ে আন্দোলনের কোনো যুক্তি নেই। আমরা সবাইকে ক্লাস পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং অবরোধ করে জনদূর্ভোগ না করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ সব ব্যাপারে প্রক্টর শরিফুল ইসলাম জানান, ‘আমার ওপর হামলা কিংবা আমাদের পক্ষ থেকে সাধারণ ছাত্রদের বাধা দেয়া এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা ক্যাম্পাসের বাহিরে যাচ্ছিল। আমরা তাদের না যেতে অনুরোধ করতেছিলাম। এ সময় সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। সাথে সাথেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখন ক্যাম্পাসে কোনো উত্তেজনা নেই।’

এ দিকে, এ ঘটনার আগে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক ও পার্কের মোড়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। তারা ক্যাম্পাসে অস্থীতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করা, ক্লাস পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং অবরোধ না করার দাবি সংবলিত ব্যানার নিয়ে প্রায় ঘণ্টা খানেক মিছিল করে।

ক্যাম্পাসের সাধারণ ছাত্ররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ভয় দেখিয়ে জোড় করে অনেককেই ছাত্রলীগ তাদের মিছিলে যেতে বাধ্য করেছে। সাধারণ ছাত্ররা যেন আর আন্দোলন না করে সেজন্য বিভিন্নভাবে তাদের শাসানো হচ্ছে। যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে ছাত্রলীগ এবং আইনশৃঙখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। এতে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বাড়ছে উত্তেজনা।

সার্বিক বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। সরকার শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তারা যাতে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে সেটার জন্য আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবো আমরা।’


আরো সংবাদ



premium cement