২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রুহিয়ায় তৈমুর রহমানের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল

রুহিয়ায় তৈমুর রহমানের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল - নয়া দিগন্ত

ঠাকুরগাঁও বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমানের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে। বুধবার ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাত ফাজিল মাদরাসা মাঠে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

তৈমুর রহমানের জানাজায় সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন লাখো মানুষ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাদরাসা মাঠ মানুষে ভরে যায়। মাঠ ছাড়িয়ে পাশের রাস্তা, পুকুরপাড়, বিল্ডিংয়ের ছাদে দাঁড়িয়ে মানুষকে জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়।

জানাজায় অংশ নেয়া ৬০ বছর বয়সী রমজান আলী বলেন, তিনি নেতার প্রতি ভালোবাসা থেকে জানাজায় এসেছেন। জেলার বাইরে থেকে অনেক মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

বেলা ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় তৈমুর রহমানের জানাজা। জানাজা পড়ান সালন্দর আলেয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো: আবুল হাসান ত্ব-হার। এর আগে তৈমুর রহমানের সম্মানে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। জানাজায় অংশ নেন ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

জানাজা শুরুর আগে তৈমুর রহমানের বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম রিপন তার বাবার জন্য দোয়া কামনাসহ কোনো অপরাধ বা ভুলত্রুটি করে থাকলে মাফ করে দেয়ার আবেদন জানান। তৈমুর রহমানের কাছে কারো কোনো পাওনা থাকলে তারা তা পরিশোধ করবেন বলে জানান।

সিঙ্গাপুর থেকে মোবাইল ফোনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর জানাজায় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, ‘তৈমুর রহমান আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও পছন্দের মানুষ ছিলেন।’

তৈমুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিএনপির পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীনসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের নেতাদের তৈমুর রহমানের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

জানাজার আগে রুহিয়ার ঐতিহাসিক ছালেহিয়া দারুচ্ছুন্নাত ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো: মুজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আজ তৈমুর রহমানের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল দেখা বোঝা যায় তিনি কতটা ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি অনেক ক্ষমতাধর লোক ছিলেন। অনেক টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শূণ্য হাতে বিদায় নিয়েছেন। তার সততায় তার সম্মান আজ এত ওপরে উঠেছে। তার কাছ থেকে সবার শিক্ষা নেয়া উচিত।’

পঞ্চগড় জেলা থেকে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এত মানুষের ভিড় ঠেলে কফিনে রাখা তৈমুর রহমানের কাছে যেতে পারিনি। কিন্তু আমার জীবনে দেখা ক্ষমতাধর এই সৎ, স্বচ্ছ, নিরহংকার ও নির্লোভ প্রিয় লোকটির জানাজায় অংশ নিতে পেরে শান্তি পাচ্ছি।’

এর আগে, মঙ্গলবার দুপুর থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সকালের মধ্যে জানাজার সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন পুলিশ সদস্যরা।

তৈমুর রহমান ক্যানসারসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ভারতের মুম্বাইয়ে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে যান। সম্প্রতি সেখান তার অস্ত্রোপচার হয়। আগামী ৯ মার্চ সেখান থেকে তার দেশে ফেরার কথা ছিল।

তৈমুর রহমান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদে কয়েক দফা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।

২০০৯ সালের কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি ও তৈমুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন।


আরো সংবাদ



premium cement