২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া - ছবি : নয়া দিগন্ত

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীণ বিডি লিমিটেড নামক পরচুলা কারখানায় শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক। শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ চলাকালে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানায় প্রবেশ করে।

তারা কারখানায় ব্যাপক ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে কারখানার প্রায় ৫০টি কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউসহ অন্য যন্ত্রাংশ বাইরে বের করে নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় অফিসের ফ্লোরে রক্ষিত ২০টি মোটরসাইকেল, ৩০টি বাইসাইকেল, দুইটি কাভার্ড ভ্যানেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এসব জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। শ্রমিকরা এভারগ্রীণের কর্মরত কর্মকর্তাদেরও এলোপাথারী মারপিট করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ফলে পুরো ইপিজেড এলাকায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি হওয়ায় উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।

খবর পেয়ে উত্তরা ইপিজেডসহ নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তারপরও উত্তেজিত শ্রমিকদের বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় র‌্যাব-১৩ নীলফামারী সিপিসি-২ এর সদস্যসহ সেনাবাহিনীর একটি দল উপস্থিত হয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে।

বেলা ১১টার দিকে নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিনা রহমান, বেপজার জিএম এনামুল হক, পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ ছুটে এলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। এতে জেলা প্রশাসক তাদের দাবি অনুযায়ী সুষ্টু সমাধানের আশ্বাস দেয়ায় শ্রমিকরা শান্ত হয়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

শ্রমিকরা জানায়, দীর্ঘ দিন থেকে তারা এভারগ্রীণ কোম্পানিতে চাকরি করে আসছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ইচ্ছেমতো ছাটাই (ফায়ার) করছে। বিশেষ করে যাদের চাকরির মেয়াদ প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাদেরকে তুচ্ছ অজুহাতে ছাটাই করা হচ্ছে এবং তাদেরকেই আবার নতুন করে আবেদন নিয়ে অর্ধেক বেতনে চাকরি দিচ্ছে। এতে যারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতো তারা ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও এ কোম্পানিতে বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। এভাবে শ্রমিক ছাটাই ও নতুন নিয়োগের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর মাধ্যমে তামাশা শুরু করেছে এভারগ্রীণ কোম্পানি।

তারা আরো বলেন, মূলত শ্রমিকদের রক্তে ঘাম পানি করা শ্রমে আজ এভারগ্রীণ এ পর্যায়ে উঠে এসেছে। অথচ সেই শ্রমিকদেরকেই সম্পূর্ণ বেআইনী ও অমানবিকভাবে ছাটাই করে চলেছে তারা। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তাহলেই শ্রমিকদের সাথে এহেন অমানবিক ও আইন বিরুদ্ধ অপকর্মের মূল হোতাসহ প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।

শ্রমিকরা বলেন, করোনাকালীন ক্ম্পোনি বন্ধ থাকায় এমনিতে আমরা চরম দূরাবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ আমাদের জীবন জীবিকা নিয়ে অমানবিক আচরণ করছেন। এর প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে উস্কানিমূলকভাবে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি।

এ ব্যাপারে এভারগ্রীণের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উত্তরা ইপিজেডে দায়িত্বরত (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন) বেপজা’র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো: এনামুল হক জানান, উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত অন্য কোম্পানিগুলোতে তেমন কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই। এভারগ্রীণের শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে আমি আগে থেকেই জানি। সে অনুযায়ী কোম্পানির কর্তৃপক্ষসহ আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি সমাধানের জন্য উদ্যোগ চলমান আছে। এরই মধ্যে এ ধরণের ঘটনা ঘটে গেলো। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা নেবো। মালিক পক্ষ ক্ষতি মেনে নিয়েছে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সাথে বসে একটা সমাধান করা হবে।

জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ইপিজেডগুলো যেহেতু বেপজা’র আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয় তাই এ ব্যাপারে বেপজা কর্তৃপক্ষই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে তা করতে হবে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন কোনো শ্রমিক যেনো বঞ্চনা বা বৈষম্যের শিকার না হয়। তাই মালিক পক্ষের কাছে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমরা আদেশ দিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement