নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার
- জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ি (কুড়িগ্রাম)
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৪
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বারোমাসিয়া নদীর ওপর নির্মিত একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়া এই সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করছেন। দীর্ঘদিনেও এই অঞ্চলে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়রা ভয়াবহ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
এই বাঁশের সাঁকোটি পশ্চিম প্রান্তের কান্দাপাড়া, ঝাউকুটি, চর গোরক মন্ডপ গ্রাম এবং পূর্ব প্রান্তের পশ্চিম ফুলমতি, বালাহাট ও নাওডাঙ্গা গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, কৃষক এবং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রোগী বহন করতেও দেখা যায়। কিন্তু ভঙ্গুর অবস্থার কারণে সাঁকোটি পাড়ি দেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করি। বর্ষাকালে অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।’
চর গোরক মণ্ডপ কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন কর্মী বলেন, ‘রোগীদের এই সাঁকো দিয়ে আনতে গিয়ে আমরা বেশ কষ্টে পড়ি। মাঝেমধ্যে রোগী পড়ে গিয়ে আরো গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়।’
কৃষি প্রধান এই এলাকার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে কৃষিপণ্য বাজারে সঠিক সময়ে পৌঁছায় না। এতে স্থানীয় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উৎপাদিত ফসলের বিপণন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই এলাকার অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
একজন কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্য যদি ঠিক সময়ে বাজারে পৌঁছানো যেত, তাহলে আমরা ভালো দাম পেতাম। কিন্তু রাস্তা-ঘাটের এমন অবস্থায় আমাদের সব লাভই মাটি হয়ে যায়।’
বারোমাসিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় স্থানীয় মানুষ চাঁদা তুলে নিজেরাই সাঁকোটি তৈরি ও মেরামত করেন। যদিও এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। প্রতিবার বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থানীয়দের নতুন করে মেরামতের কাজ করতে হয়।
নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও নির্বাচনের পরে আর তাদের দেখা মেলে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তাদের এই সমস্যা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে।
স্থানীয় জনগণ বারোমাসিয়া নদীর ওপর দ্রুত একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানান। তারা মনে করেন, স্থায়ী সেতু নির্মাণ হলে শুধু যাতায়াতের ঝুঁকিই কমবে না, এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তা বড় ভূমিকা রাখবে।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, ‘বারোমাসিয়া নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে আমরা চেষ্টা করছি। তবে এখনো কোনো ফল পাইনি।’
সরকারি পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে এই জনদুর্ভোগ আরো দীর্ঘায়িত হবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এই অঞ্চলের মানুষের মৌলিক চাহিদা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা