কুড়িগ্রামে খেজুর রসের ঐতিহ্যে ভাটা
- জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭, আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৯
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগের কারণে খেজুর রসের ঐতিহ্যে ভাটা দেখা দিয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের এই ঐতিহ্য অনেক দিনের। শীত এলেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তৈরি করা পাটালির গন্ধে মুখর হয়ে ওঠে গ্রামের প্রতিটি কোণা।
খেজুরের রস সংগ্রহ ও পান করা এ দেশের একটি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। শীতকালে এই অঞ্চলে খেজুরের রসের কদর বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবার এই উপজেলার দৃশ্যপট ভিন্ন।
উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রামরাম সেন গ্রামের গাছি রেজাউল ইসলাম এর সাথে দেখা হয়। তিনি প্রতি বছর খেজুর রস বিক্রি করে সংসারের খরচ চালান। কিন্তু এবার তিনি গ্রামে ঘুরে ঘুরে রস বিক্রি করতে গিয়েও ফিরে আসছেন খালি হাতে।
রেজাউল ইসলাম জানান, ‘আগে সকাল হলেই মানুষ লাইনে দাঁড়াতো রস কেনার জন্য। এবার রস নিয়ে ঘুরেও আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই নিপাহ ভাইরাসের কারণে ভয় পাচ্ছে।‘
উপজেলার রামরাম সেন গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা সকালে উঠে রস খেতাম, কোনো রোগের কথা ভাবতাম না। এখন সবাই নিপাহ ভাইরাসের কথা বলে। তাই মন চাইলেও খাওয়ার সাহস পাই না।’
উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারের সুমন মিয়া বলেন, ‘শীতকাল এলেই রস খেতে মন চায়। কিন্তু টিভিতে দেখিয়েছে যে বাদুড় রসের হাঁড়িতে মুখ দেয়। এতে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই খেতে ভয় পাই।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ। এর মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি। ২০২২-২৩ সালে দেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন এবং ২০২৪ সালে পাঁচজন মারা যান। কাঁচা খেজুরের রসে বাদুড়ের লালা মিশ্রিত হওয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। ফলে কাঁচা রস পান করলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেজুর রসে বাদুড়ের লালা বা মল পড়ে গেলে ওই রস থেকে সহজেই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এই সতর্কবার্তাই মূলত গ্রামবাসীদের রস থেকে দূরে রাখছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘খেজুর রস যদি ঢেকে রাখা হয় এবং পরিষ্কারভাবে সংগ্রহ করা হয়, তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তবে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’