১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্লাস্টিকের দাপটেও টি‌কে আছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

- ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রকৃতির সাথে মানুষের বন্ধন সুদূরপ্রসারী। সেই বন্ধনের নিদর্শন বহন করে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। আধুনিক প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা এবং সৌখিন সামগ্রীর ব্যবহার কমলেও মৃৎশিল্প আজও টিকে আছে তার নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে। কালের বিবর্তন আর আধুনিক জীবনের পরিবর্তনের ফলে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি সামগ্রীর জনপ্রিয়তায় মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারে মাটির জিনিস বিক্রি করতে দেখা যায় চন্দ্রখানা কুমারটারী গ্রামের নরেশ চন্দ্রকে। তিনি জানান, ‘ধান তোলার মৌসুমে কিছুটা চাহিদা থাকলেও বছরের বাকি সময় মাটির সামগ্রীর তেমন বিক্রি নেই। আগের মতো ব্যবসা আর ভালো চলে না।’

আরেক মৃৎশিল্পী পরেশ বলেন, ‘এক সময় মৃৎশিল্প আমাদের পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস ছিল। কিন্তু এখন বাজারে প্লাস্টিক ও মেলামাইনের দাপটে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি। পুঁজি ও ঋণ সহযোগিতার অভাব আমাদের পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলেছে।’

তবে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন এই শিল্পীরা। প্লাস্টিক এবং অ্যালুমিনিয়ামের কম খরচে তৈরি পণ্যের সহজলভ্যতা তাদের আয়ের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তবু তারা হাল ছাড়েননি। মৃৎশিল্পীরা নতুন ডিজাইন ও আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে তাদের পণ্যগুলোকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছেন।

মৃৎশিল্পীদের প্রধান সমস্যা হলো পুঁজি সঙ্কট ও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার অসুবিধা। আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহও শিল্পটিকে সঙ্কটের মুখে ফেলেছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ললিত মোহন রায় বলেন, ‘মৃৎশিল্পের চাহিদা কমে যাওয়ায় প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে প্রতিযোগিতা করা মৃৎশিল্পীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে শিল্পটি আবার পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।’

স্থানীয়রা মনে করছেন, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে মৃৎশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement